আমার তুমি❤️,পর্বঃ০৫[ ভ্যাম্পায়ার পার্ট]

0
5515

আমার তুমি❤️,পর্বঃ০৫[ ভ্যাম্পায়ার পার্ট]
লেখিকাঃ ফারজানা তাবাসসুম

—″ভ্যাম্পায়ার কোথা থেকে আসবে নিভান। তুই ও কী এইসব আজগুবি কথায় বিশ্বাস করিস? ভ্যাম্পায়ার বলতে কিছু হয় না। ঐটা ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা উপন্যাসের মতোই নিছক কল্পনায় তৈরী গল্প। তুই ভালো করে দেখ অন্যকিছুর কামড় হতে পারে এইটা। তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।″

নিভান কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে বিরক্তমাখা কন্ঠে বলে-

″তোর কি মনে হয় ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা উপন্যাসের কোনো সত্যতা নেই। ওখানে উল্লেখ আছে রক্তচোষার। আর রক্তচোষা মানেই ভ্যাম্পায়ার। আর ভ্যাম্পায়ার শব্দটা আজকালের শব্দ নয়!! এইটা ১৮ শতক থেকেই প্রচলিত আর জনপ্রিয়। তুই কি ভাবিস এইগুলো শুধুই মানুষের নিছক কল্পনা??

আয়াশ ডন্টকেয়ার ভাব নিয়ে বলে–

″হুম আমার কাছে এইগুলো নিছক কল্পনা ছাড়া কিছুই না।থাক বুঝেছি তুই বলতে পারবি না এইটা কিসের কামড় দরকার নেই বলার। আমি একটু বেশীই সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলাম এই বিষয়ে।এই কামড়ের ফলে আদ্রির মাঝে কোনো ইফেক্ট পড়েনি।তাই আমার উচিত হয়নি খামোখা এতো টেনশন করার″

নিভান নিচের ফ্লোরের দিকে নজর দিয়ে বাকা হেসে বললোঃ

″বিশ্বাস করছিস নাতো?……

আয়াশ নিভানের কথায় সায় না দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়িয়ে বললোঃ

—আজ তাহলে চলি রে। মেডিকেল এ রোগীরা অপেক্ষায় আছে আমার জন্য।

″আবার আরেকদিন আসবো, তোর ভ্যাম্পায়ারের গল্প শুনতে″ জোড়ে হেসে বললো আয়াশ। প্রতিউত্তরে নিভান এক মেকি হাসি দিলো। বেরিয়ে আসলো আয়াশ সেখান থেকে।

!!

!!

—কি করছিস তুই আদ্রি? হাত কেটে ফেলবিতো।মন কই তোর?

মার কথায় টনক নড়ে উঠতেই হুশে ফিরলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি পেয়াজের যাচ্ছিকি তাই অবস্থা করে ফেলেছি।আরেকটুর জন্য হাতের আঙুলটা বেচে গেছে।ভাবী মশকরা করে বললোঃ

—আমাদের আদ্রির মনে হয় মন টিকছে না এই বাড়িতে। বর – কে খুব বেশীই মনে পড়ছে, তাই না আদ্রি? খুব বেশীই আদরযত্নে রাখে হয়তো বর। আমাদের যত্ন-আত্তি মনে হয় কম হচ্ছে।

ভাবীর কথা শুনে একটা জোরপূর্বক হাসির রেখা টানলাম মুখে। মনে মনে ভাবছি,,,হুম ভাবী খুব যত্নেই রাখেন উনি।চোখের কোন পানিতে ভরে উঠলো।

ভাবী আর মা রান্না করছে।আজ একটু বেশীই জমকালো ভাবে রান্না হচ্ছে। কারণ জিজ্ঞাসা করতে গেলে বলছে কোন এক বিশেষ মেহমান নাকি আসবে বাড়িতে। আমি আর বেশী কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না।

″মা আমি আমার রুমে যাচ্ছি।″

মা তার রান্নার ব্যাস্ততার মাঝেই উত্তর দিলোঃ

–″হুম যা।আর শুন বিকালে রেডি হয়ে থাকিস।″

আমি প্রশ্নাতুর ভঙিতে বললামঃ

–কেনো?

″আরে আদ্রি তুমি রেডি হয়ে থেকো বাকিটা পড়ে জানলেও হবে″কথাটা বলে ভাবী আর মা ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো।আমি আর কিছু বললাম না।নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। ″নির্ঘাত এরা পাগল হয়ে গেছে″।

.…

আজ সকাল থেকে আয়াশের সময়ই কাটছে না। সে তার মেডিকেলের কাজও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেটানোর চেষ্টা করছে। আজ কতো রোগীর প্রেসক্রিপশন লিখতে গিয়ে ঔষধের নাম পর্যন্ত ভুলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর এইসবের একটাই কারন তা হলো ″আদ্রি ″।এই চারটা দিন যে আয়াশের কিভাবে কেটেছে তা সে নিজেই জানে। ভেবেছিলো আদ্রিকে দূরে রাখলে হয়তো আদ্রির প্রতি যে মায়া সৃষ্টি হয়েছে তা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু কে জানতো এইভাবে দূরে রাখার কারনে তা কমবে বইকি?? উলটে আরো হাজারগুন বেশী বৃদ্ধি হবে।

এই তো দুই দিন আগের কথা,,,,

আয়াশ তার রুমে বসে কিছু কাগজপত্র দেখছিলো। আয়াশের বার বার মনে হচ্ছে এই বুঝি আদ্রি তার আশেপাশে ঘুর ঘুর করছে আর বলছে″ এই যে শুনুন না!! এখন কিছু খেয়ে নিন।কখন থেকে বসে কাজ করে যাচ্ছেন″

বাসার কাজের বুয়া মালতি। এইসময় ঘরে ঢুকলো। আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বললোঃ

—″!! সাহেব কিছু খাইবেন? কফি আনুম?″

………(আয়াশ চুপ করে কি যেনো ভাবছে)

মালতি এইবার একটু জোরে বললোঃ

″আয়াশ বাবা কফি আনমু নাকি আফনার জন্যে?″

আহ্ আদ্রি এতো কথা বলো কেনো কিছু খাবো না আমি। দেখছো না কাজ করছি!!!,,, বিরক্তি মাখা কন্ঠে।

মালতি ঠোঁট টিপে হাসতে থাকে। হঠাৎ আয়াশের টনক নেড়ে উঠে,,,আরে আদ্রিতো বাসায় নেই!! সঙ্গে সঙ্গে পাশে তাকায় আয়াশ।কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে যায়,,মুখে গম্ভীর্য টেনে বলে,,

— না মালতি, আমি কিছু খাবো না। যেতে পারো তুমি।

মালতি ″আচ্ছা″ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

এখান থেকেই শুরু হয় আয়াশের এইরকম আচরন। উঠতে বসতে শুধু আদ্রির নামই বার বার তার মুখে চলে আসে। আয়াশ ভেবে পায় না এইসবের কারন কী? আয়াশ তাই ঠিক করে আদ্রিকে বাসায় নিয়ে আসবে। যা হবার হবে কিন্তু এখন তাকে আগে ঠিক হতে হবে। আয়াশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে, আদ্রি ওর কাছে না আসা পর্যন্ত, আয়াশের এমন উঠতে বসতে আদ্রির নাম জপ করা কখনই কমবে না।

……

আয়াশ মেডেকিলের সব কাজ শেষ করে, সোজা আদ্রির বাবার বাসায় চলে আসলো।

আদ্রি আর তার ভাবী বসার ঘরে বসে গল্প করছিলো তখনি কলিংবেলের শব্দ কানে বাজে তাদের। ভাবী উঠে যেতে চাইলে তাকে যেতে দেয় না আদ্রি কারন তার ভাবীর এখন প্রেগনেন্সির ৮ মাস চলছে, তাই তাকে সবসময় শুয়ে, বসেই দিন কাটাতে হয়।

আদ্রি গিয়ে দরজা খুলেই অবাক হয়ে যায়। মুখ কিঞ্চিৎ হা হয়ে যায় তার। কারন সামনে আয়াশ দাঁড়িয়ে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সোজা মেডিকেল থেকে এখানে এসেছে। ঘামে গাড় নীল শার্টের কিছু জায়গা একদম ভিজে আছে। হাতা কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। কপালে, কানের কাছে, গলায় বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখে – মুখে অস্থিরতা। আদ্রির যেনো এই আয়াশ কে দেখে আবার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।

আদ্রি!!

……

আদ্রি??

……

আদ্রিইইই???? আয়াশের তিন নাম্বারের জোরে ডাকার কারনে হুশে ফিরলাম। নিজে ঠিক করে স্বাভাবিক ভাবে বললামঃ

–আপনি এখানে???? অবাকের শুরে।

আয়াশের কিছু বলার আগেই আদ্রির মা সেখানে আসলেন। আদ্রিকে ধমকের শুরে বললেনঃ

কিরে আদ্রি তোর বুদ্ধি – সুদ্ধি সব লোপ পেয়ে গেছে নাকি?? জামাই এসেছে কই তাকে ঘরে আসতে বলবি তা না জেরা করে যাচ্ছে, সে কেনো এখানে এসেছে। মা আমাকে উপেক্ষা করে আয়াশের কাছে গেলো ওকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। আমি এখনো ঠাই মেরে এখানেই দাঁড়িয়ে আছি। আমি বুঝতে পারলাম না,আয়াশ নিজে থেকে এ বাড়িতে এসেছে!!! তার জন্যই মা আর ভাবী তখন ওমন করেছিলো!!!

……

দিহান শোন বাবা তোকে আজ কিছু কথা বলি। তুই জানতে চেয়েছিলি না?আমি কেনো তোকে আদ্রির থেকে দূরে সড়িয়ে রাখলাম? তাহলে শুন সেই কারনটা হলো, তুই এক মানুষ রুপি রোক্তচোষা প্রানী।

নিজের মার মুখ থেকে এমন কথা শুনে চমকে গেলো দিহান। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললোঃ

–বাহ্,,আম্মু বাহ্। নিজের দোষ ঢাকতে তুমি নিজের ছেলেকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দিলে?তুমি কি বলতে চাও? আমি ভ্যাম্পায়ার? তাহলে তুমি মানুষ আমার আব্বু ও মানুষ ছিলো। দু জন মানুষের ঘর থেকে আমি ভ্যাম্পায়ার জন্ম নিলাম? হাহ্।আমাকে বোঝাতে এসো না আম্মু।

কারন আমি একজন ভ্যাম্পায়ার। তাই তোর শরীরে মানুষ আর ভ্যাম্পায়ার দুইজনের রক্তই আছে। তুই যদি শুধু ভ্যাম্পায়ার হতি তাহলে আদ্রির সাথে তোর বিয়ে দিতে আমার কোনো আপত্তি ছিলো না। কারন তখন তোর কোনো ক্ষতি হতো না কিন্তু তুই অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার তাই অন্য এক মানুষ নারীর সাথে যদি তোর শারীরিক সম্পর্ক হয় তাহলে তুই মারা যাবি। তাই একজন ভ্যাম্পায়ার এর সাথেই তোর সম্পর্ক তৈরী হবে, কোনো মানুষের সাথে নয়।

বিশ্বাস করিনা তোমার এইসব আজগুবি কথা, আম্মু।

তাহলে চল ছাদে। আজ আকাশে চাঁদ ও আছে। তুই চাদের আলোতে গেলে এক আলাদা শক্তি অনুভব করবি। তোর পিঠে ডানা গজাবে। আমার মনে হয় এতো টুকুই যথেষ্ট তোকে বিশ্বাস করানোর জন্য।

দিহান তার মা র সাথে ছাদে গেলো।তার বিশ্বাস হচ্ছে না।তার মা তাকে যা যা বলেছে সব সত্যি।

……

″আপনি এখানে কেনো এসেছেন?″

আয়াশ রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলো। আদ্রির এমন আহামরি কথায় ভ্রু কুচকে এলো তার।

″আমার শ্বশুর বাড়ি। আমি আসবো না তো কে আসবে?? ″

আয়াশের এমন ডোন্ট কেয়ার ভাবের কথায় আদ্রি কিছুটা ভড়কে যায়। আয়াশের সামনে এসে কোমরে দুই হাত দিয়ে বলে,,

দেখুন মি:আয়াশ আরহাম। এইটা আপনার বাড়ি না বুঝলেন। এইটা আমার বাড়ি তাই এখানে আপনার এইরকম ভাব চলবে না।হুহ্!!

আয়াশ আদ্রির কথাকে পাত্তা দিচ্ছে না দেখে আদ্রি আরো বেশি ভড়কে যায়। এক আঙুল খাড়া করে আয়াশের দিকে তেড়ে তাকে কিছু বলার আগেই আয়াশ আদ্রির হাত ধরে এক হেচকা টানে আয়াশের কোলের উপর বসিয়ে দেয়। আদ্রি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,,,,,

—দ্,, দেখুন….

–দেখাও বউ কি দেখাবা?? সব দেখতে রাজি।বলেই দুষ্টু হাসি দিলো আয়াশ।

আয়াশের এমন কথায় আদ্রির কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বেরুচ্ছে। তার থেকেও সে বেশী অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে,, এই চারদিনে আয়াশের এতো পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব??.

!
!
!

চলবে

(আসসালামু আলাইকুম?

ভ্যাম্পায়ার এর কথাগুলো নিছকই কল্পনা মাত্র।এখানে কেও সত্যতা খুজতে আসবেন না। আর অনেকেই অবাক হয়েছেন যে শুরুতে এমন সাধারন কিন্তু মাঝে হঠাৎ ভ্যাম্পায়ার কোথা থেকে আসলো। বইয়ের কভার দেখে তার মান যাচাই করবেন না তেমনি গল্পের নাম দেখে গল্পের থিম যাচাই করবেন না। আমি ভ্যাম্পায়ার এর ইতি খুব শীঘ্রই টানবো। আমারও মনে হচ্ছে এখানে ভ্যাম্পায়ার মানাবে না।তাই ভ্যাম্পায়ার এর কথা আগামী দুই পর্বের মাঝেই শেষ করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here