আমার তুমি❤️,পর্বঃ০৬

0
6135

আমার তুমি❤️,পর্বঃ০৬
লেখিকাঃ ফারজানা তাবাসসুম

″কি হলো বউ!! কি ভাবো গো তুমি?″

আয়াশের এমন আদুরে গলায় বলা কথাগুলো আমি যেনো ঠিক হজম করতে পারছি না। আমি কিঞ্চিৎ হা হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আমাকে এখনো তার কোলেই বসিয়ে রেখেছেন।

″আদ্রি??″

″হু″

″এইভাবে তাকিয়ে কেন আছে আমার বউটা??″

এই লোক নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেতো আমাকে দু’চোখে সহ্য ই করতে পারতো না।আর আজ কি হলো?? এমন বউ বউ করছে কেন??(মনে মনে ভাবছে আদ্রি)

কোল থেকে উঠে ছিটকে দূরে সরে দাড়ালাম।আমতা আমতা করে বললামঃ

–আপনার ক্ কী,,,হ্ হ,য়েছে? এ্,,এমন কেন করছেন?

–কেমন করছি? (আদ্রির দিকে এগোতে এগোতে)
–আ,,আপনি!!আমার দিকে এইভাবে এগোচ্ছেন কেন??(পিছিয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেছে আদ্রির। ঢোক গিলে অতি দ্রুত কথা চারটি বলে ফেললো সে)

আয়াশ তার গতিতে আমার দিকে এগিয়েই যাচ্ছে। এইদিকে আমি চোখ ছোট ছোট করে একবার তার দিকে তাকাচ্ছি ত, একবার চোখ বুঝছি। চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারলাম,আয়াশ আমার একদম কাছে চলে এসেছে, তার নিশ্বাস আমার চোখে-মুখে এসে উপচে পড়ছে। কোমড়ে কারো শক্ত শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে হাল্কা কেপে উঠলাম।পিট পিট করে চোখজোড়া খুলে সামনে তাকালাম,আয়াশের বুকের দিকে নজর গেলো আমার। তার থেকে অনেকটা খাটো হওয়ায় মাথাটা খানিকটা উচু করে তার মুখপানে তাকালাম আমি। দু’টো নেশাতুর চোখের দৃষ্টি আমার দিকে, সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। লজ্জারা এসে ভীড় জমাচ্ছে আমার চোখে-মুখে। আচমকা আয়াশ আমার গলায় মুখ গুজে দিলো,সাথে সাথে ফ্রিজড হয়ে গেলাম আমি।আয়াশ মুখ তুলে আমার থুতনি ধরে উচু করলো,ফু দিলো আমার মুখে। অবাধ্য চুল গুলো সামনে থেকে সরে গেলো। চোখ বুজা অবস্থাতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো আমার। ধীরে ধীরে চোখ খুললাম আমি।আয়াশ মাতাল করা এক হাসি দিলেন।
সাথে সাথেই আমায় ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন।কর্কশ কণ্ঠে বললেনঃ

″What the hell are you thinking??? ″

………

চোখ খুলে তাকালাম আমি। তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। এইটা কি ছিলো??? চারদিকে চোখ বুলালাম একবার।আমার মুখে সাথে সাথে বিরক্তি আর হতাশা এসে ভর করলো।

এইটা স্বপ্ন ছিলো?? ধুরর। কই ভাবলাম সত্যি সত্যি আয়াশ আমাকে মেনে নিয়েছে। আমাকে বলবে যে,,,আদ্রি ভালোবাসি তোমায় তা না স্বপ্নের মাঝেও আমাকে আশা দিয়ে নিরাশ করলো।

.…

হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় বসলাম। দেয়াল ঘড়িটা জানান দিচ্ছে এখন সকাল ৭টা বাজে।কিন্তু কাল বিকালে ত আয়াশ এসেছিলো!!তাহলে এখন সে কোথায়? রাতেই বা কই ছিলেন উনি? আর আমার রাতের কোনো কথা মনে পড়ছে না কেনো? উফফ্!! মাথাটাও অসম্ভব পরিমানে ব্যাথা করছে।

আদ্রি ঘুম থেকে উঠে পড়েছো?(ভিতরে আসতে আসতে বললো আদ্রির ভাবী)

–হুম! ভাবী,,হাল্কা হেসে উত্তর দিলাম আমি।ভাবীকে কেমন যেনো টেনসড লাগছে,তাই আমি ভাবীকে জিজ্ঞেস করলামঃ

কি হয়েছে ভাবী?কোনো বিষয় নিয়ে টেনশনে আছো?

আদ্রির ভাবী (লায়লা) কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললো:

–ও কিছু না আদ্রি। আসলে এখন প্রেগনেন্সির ৮ মাস যেতে চললো।তাই এখন একটু নারভাস লাগছে আর কি!! এর বেশি কিছু না। ( আদ্রির কাছে এসে বসলো লায়লা)

আরে ভাবী এতো টেনশন নিও না। সব ভালোভাবেই মিটে যাবে দেখো!!

লায়লা অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিলো,,″হুম″

আচ্ছা ভাবী!! কাল কি হয়েছিলো? আর আয়াশ না কাল এসেছিলো? সে ই বা কোথায়? আমি কিছু মনে করতে পারছি না কেনো কালকে রাতের কথা? (নিজের মাথায় হাত রেখে বললো আদ্রি)

লায়লা এখন আদ্রিকে কি বলবে। কিছু বুঝতে পারছে না। ঘাবড়ে যাচ্ছে সে।

″আদ্রি কাল তুমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে।″

আদ্রি আর লায়লা দু’জনেই দরজার দিকে তাকালো। আয়াশ দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা ফাইল।চোখ গুলো লাল,রাতে ঘুময়নি বোঝা যাচ্ছে,চুল গুলো উসকো খুসকো, শার্টের ইঙ্ক এলোমেলো। আয়াশের এমন অবস্থা দেখে মনে এক অজানা আশঙ্কা এসে বাসা বাধলো। উঠে দাঁড়িয়ে এলোমেলো পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।

কী হয়েছে আয়াশ আপনার? এইরকম হাল কেনো আপনার? ঠিক আছেন আপনি? আর আমি কাল কখন সেন্সলেস হয়েছিলাম?আমার ত মনে পড়ছে না( ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো আদ্রি)

আয়াশ নিজেকে শক্ত করলো। হাসি মুখে উত্তর দিলো:

– আসলে তোমার শরীর দুর্বল ছিলো তাই তুমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে।

লায়লাও আয়াশের কথায় সায় দিয়ে বললোঃ

হ্যা হ্যা!! আদ্রি, আয়াশ ঠিক বলেছে। এর জন্য আয়াশ কাল তোমার চেক-আপ করে, তার চেম্বারে গিয়েছিলো।তোমার জন্য মেডিসিন আনতে।

আমার কাছে কেন যেনো,,আয়াশ আর ভাবীর কথার মাঝে ঘটকা লাগলো। তারা ত আর আমায় মিথ্যা বলবে না। তাই আর বেশী কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না।

………

আয়াশ আমাকে নিয়ে আজ বাসায় চলে এসেছে। আয়াশকে আজ অন্যরকম লাগছে। সে আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাচ্ছে না তার থেকে বেশী অবাক করার জিনিস হলো,আয়াশ আমাকে বাড়ি ফেরার পর থেকে একটা ধমক ও দেননি। এক আলাদা কেয়ারিং এ রাখছেন উনি আমাকে। এমনটা মনে হচ্ছে আমার।

বেলকনিতে বসে বসে ভাবছি,,

তাহলে কি আমার সকালের স্বপ্ন কোনোভাবে সত্যি হতে যাচ্ছে?? মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার।

………

আজ শুক্রবার আয়াশ মসজিদে গেছে। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করছে,,

হে আল্লাহ!!! তুমি আদ্রিকে ঠিক করে দাও। মেয়েটা বড্ড বেশী ভালো। আমার দেওয়া এতো কষ্টকে সহ্য করে সে আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে গেছে। এখন যখন আমিও তাকে ভালোবাসতে চাইছি।তুমি তাকে আমার থেকে দূরে সড়িয়ে দিও না আল্লাহ্!! আজ আমি কথা দিচ্ছি, আদ্রিকে আমি আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবো।কোনো অভিযোগের সুযোগ দিবো না। ওকে প্রতিটা ক্ষনে প্রতিটা মুহুর্তে আগলে রাখবো আমি। শুধু তুমি তোমার রহমত আমাদের উপর বর্ষণ করো।

চোখের পানি টপ টপ করে পড়ছে আয়াশের মোনাজাতের জন্য তোলা দু’হাতে।

!!

মসজিদ থেকে বেরিয়ে ফোনটা হাতে নিলো আয়াশ। দেশের নামকরা ব্রেইন সার্জন ডক্টর আয়মান রহমান ফোন করেছে।আয়াশ ফোনটা রিসিভ করলো,,

–হ্যালো!ডক্টর।

–হ্যালো! ডক্টর আয়াশ! আমি আপনার স্ত্রীর রিপোর্ট গুলো দেখেছি। এখন ফোনে সব বলা পসিবল হচ্ছে না। আপনি একবার আমার সাথে পার্সোনালি দেখা করুন।

–ওকে ডক্টর আমি আজ বিকালেই আপনার সাথে দেখা করছি।

–হুম।

……

একটা কফিশপে বসে আছে আয়াশ। কিছুক্ষন পর ডক্টর রহমান সেখানে আসলেন। আয়াশ তাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। ডক্টর আয়মান তার সাথে কুশল বিনিময় করে সেখানে বসলেন।

″ডক্টর রিপোর্ট দেখে কি বুঝলেন আপনি?″(আয়াশ)

দেখুন মি:আয়াশ আপনার স্ত্রীর ব্যাপারটা একটু ক্রিটিকাল।আপনার স্ত্রীর ছোটো বেলা থেকেই ব্রেনে একটা ছোট্ট টিউমার ছিলো। সেই টিউমারের জন্য এতোদিন কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও এখন দেখা দিচ্ছে। টিউমারটি অপারেশন করতে হবে,, আর!!!

আর???? আর কি ডক্টর!!
বলুন।(আয়াশ চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো)

–অপারেশন এর পর আপনার স্ত্রী তার স্মৃতিশক্তি হারাতে পারে।

থমকে গেলো আয়াশ।এর মানে আদ্রি আয়াশকেও ভুলে যাবে? বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো তার।

ডক্টর রহমান আয়াশের কাধে হাত রেখে বললোঃ

আমি বুঝতে পারছি এই মুহুর্তে আপনার অবস্থা।কিন্তু আমাদের হাতে কিছু নেই, যা করার আল্লাহ্ তায়ালাই করবেন।তবে একটা উপায় আছে।কিন্তু এইটা নিশ্চিত আপনার স্ত্রী অপারেশন এর পর যেকোনো মুহুর্তে তার স্মৃতিশক্তি যেতে পারে,আবার নাও যেতে পারে।আমি সিওরিটি দিতে পারছি না।

আয়াশের নজর ফ্লোরের দিকে। তার কাছে এই কথাগুলোকে এই মুহুর্তে কাটার মতো লাগছে।মানতে কষ্ট হচ্ছে।বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। আদ্রি কি তার থেকে দূরে সরে যাবে??

″সত্যিই আমরা কেমন যেনো। কাছের মানুষ যখন নিজের কাছে থাকে তখন তাকে দূরে ঠেলে দেই।কিন্তু যখন বুঝতে পারি মানুষটা দূরে সরে যাচ্ছে, তখনি তাকে নিজের আপন করার জন্য উঠে পরে লাগি!! অদ্ভুত নাহ্??″

……

আদ্রি গুনগুন করে গাইছে আর রুমটাকে সাজাচ্ছে।

কিছুক্ষন পর রুমটা কে সাজিয়ে রুমের সেন্টারে দাড়ালো আদ্রি। পুরো রুমটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো কতক্ষণ। তারপর কোমরে দুইহাত দিয়ে একটা হাসি দিলো আদ্রি।

হঠাৎ আমার চোখ গেলো সোফায় পরে
থাকা আয়াশের নীল রঙের টি-শার্টের
উপর। গেলাম সেখানে। ফট করে শার্টটা তুলে নিলাম হাতে।চোখ ছোট ছোট করে
ভ্রু কুচকে নিলাম। দু’হাতে শার্টটা মেলে ধরলাম আমার সামনে, শাসনের সুরে বলা শুরু করলামঃ

–মি:আয়াশ আরহাম!! আপনার ঘরের একটা জিনিস ও এখন পর্যন্ত আমায় টাচ করতে দেননি।কিন্তু আজ আমি এই রুমটাকে পুরো নিজের মতো করে সাজালাম। দেখি আজ আপনি আমায় কি করতে পারেন হুহ্!!! আজ আপন্……….

–কি করছো তুমি আদ্রি??

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here