আমার নিষ্ঠুর মনোহর
লেখনীতে -মাহানুর
পর্ব – ২
অরহান উত্তরের অপেক্ষায় নিরুপমার দিকে চেয়ে আছে। নিরুপমা নিশ্চুপ হয়ে চোখমুখ শক্ত করে বসে আছে।
নিরুপমার ইচ্ছে করছে এখনই এই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে কিন্তু এতো রাতে নিরুপমা যাবেই বা কোথায়!
“নীরবতা সম্মতির লক্ষণ”( অরহান)
“নিজের স্ত্রীর অসম্মান হওয়া মানে নিজের অসম্মান হওয়া । এতো বড়ো পদে চাকরি করেন অথচ এইটুকু জানেন না!”(নিরুপমা)
“ক্যাচাং ক্যাচাং কথা বলার অভ্যাস আছে দেখছি তোমার। কিন্তু আমার সাথে থাকতে হলে গলা নিচু করেই কথা বলতে হবে। যদি কথা না শুনো তবে কিভাবে কথা শুনাতে হয় সেটাও খুব ভালো করে জানা আছে আমার। আর অরহান আহ্সান এর স্ত্রীকে বাহিরের কোনো মানুষ অসম্মান করার সাহসও কোনোদিন করবে না”
“আমি বাহিরের মানুষের কথা বলছি না আমি আপনার নিজের কথা বলছি। কোনো পুরুষ নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে কিভাবে অপমান করতে পারে! এই শিক্ষা পেয়েছেন আপনি আপনার পরিবার থেকে। ”
অরহানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সে রাগান্বিত হয়ে আছে। নিরুপমার সামনে এগিয়ে এসে হাত দিয়ে নিরুপমার গাল চেপে ধরে শান্ত কন্ঠে অরহান বলে উঠলো,” আমার পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যোগ্যতা তোমার নেই নিরু। মেয়ে মানুষের এত তেজ থাকতে নেই। তোমায় আমি একদিনেই সোজা বানিয়ে ফেলবো।”
অরহান নিরুপমাকে এক ঝটকায় বিছানায় ফেলে দেয়। তার শাড়ীর আঁচল সরিয়ে ঘাড়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে অজস্র চুমু খেতে থাকে।
নিরুপমার রাগে ঘৃণায় সারা শরীর ঘিনঘিন করছে স্বামী নামক এই অমানুষটার ছোঁয়া সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে নিরুপমার।
অরহানের সেই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে যেনো এক নেশায় মত্ত হয়েছে। এই নেশার নাম নারীনেশা। এই নারী আর কেউ নয় তার বিবাহিতা স্ত্রী ,তার সম্পত্তি এসব ভেবে অরহান যেনো আরো উত্তেজিত হচ্ছে।
___________
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে নিরুপমা। স্বামী নামক সেই অমানুষটা কাল সারারাত তাকে ভোগ করেছে অথচ সে কিছুই করতে পারেনি। নিজের গায়ে অরহানের বসানো লালসার চিহ্ন জ্বলজ্বল করতে দেখে নিরুপমার দুঃখ রাগে পরিণত হয়। এই অমানুষটার সাথে আর যাইহোক সংসার করা সম্ভব নয়।
কিন্তু নিরুপমা কি করবে চলে যাবে? তবে চলে যাবার কোনো পথ যে তার খোলা নেই।
নিরুপমা গোসল শেষ করে একটি মেরুন রঙের সুতি শাড়ি পড়ে নিজের চুল গুলো মুছতে থাকে তখনই তার নজর যায় বিছানার দিকে। অরহান সেখানে নেই তার মানে সে উঠে গেছে।
নিরুপমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভেজা কাপড় মেলতে থাকে তখনই তার দৃষ্টি যায় বাহিরের বাগানের দিকে।
অরহান পুশআপ করছে, তাও আবার খালি গায়ে। শরীর বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। না চাইতেও অদ্ভুত এক আকর্ষণ কাজ করলো নিরুপমার মধ্যে।নিরুপমা আজ ভালো করে অরহানের দিকে লক্ষ্য করলো। অসম্ভব সুদর্শন দেখতে অরহান কিন্তু এই সুদর্শন পুরুষের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর ব্যক্তিসত্তা।
নিরুপমা নিজের ভাগ্যের উপর ভীষণ অভিমান করতে থাকে। বিয়ে নিয়ে তার সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিল এই নিষ্ঠুর পুরুষটি।
নিরুপমা ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে অরহানের ডাকে। অরহান ততক্ষণে রুমে চলে এসেছে।তোয়ালে দিয়ে নিজের শরীরের ঘাম মুছতে মুছতে অরহান বলতে থাকে,”আমি গোসলে যাচ্ছি এসে যেনো টেবিলে সমস্ত নাস্তা রেডি দেখি। আর তা না হলে তোমার খবর আছে নিরু।”
নিরুপমা রাগে গজগজ করতে করতে অরহানের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে থাকে। পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে এই অসভ্য লোকটাই কেনো তার কপালে জুটলো ? নিরুপমা আফসোস করতে করতে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
কাজের মেয়ে মিনু ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিরুপমা যেতেই মিনু তার হাত ধরে বলল,” ভাবী আমারে মাফ কইরা দিয়েন অরহান ভাই আপনারে কোনো সাহায্য করতে নিষেধ করছেন।”
একথা শুনে নিরুপমার মেজাজ আরো বিগড়ে যায়।বিয়ের পর মেয়েরা সব কাজ করে ঠিকই কিন্তু ভালোবেসে করে। অরহান যদি একটু ভালোভাবে কথা বলতো তাহলে হয়তো নিরুপমা সত্যি সত্যি সব কাজই করে দিত কিন্তু এখন সে কিছুই করবে না।
নিরুপমা মনে মনে বলতে থাকে,” আমিও দেখি অবাধ্য হওয়ার জন্য এই অমানুষটা আমাকে কি শাস্তি দেয়।”
চলবে…..