আমার নিষ্ঠুর মনোহর
লেখনীতে – মাহানুর
পর্ব – ৩
অরহান ইউনিফর্ম পরিধান করে ফিটফাট হয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসে। তবে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে অরহান খানিকটা অবাক হয়ে যায়।
নিরুপমা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে চা পান করছে। টেবিলে খাবারের ছিটেফোঁটাও নেই। অরহান বিষয়টা বুঝতে পেরে ডেভিল হাসি দেয়। তার মানে তার সদ্য বিয়ে করে আনা সুন্দরী রমণী তার কথার অবাধ্য হয়েছে।
অরহান নিরুপমার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
মিনু পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সেখান থেকে কেটে পড়ে। অহেতুক ঝামেলায় না জড়ানোই উত্তম।
অরহান শান্ত কন্ঠে শুধায়,” কাজ টা ঠিক করলে না নিরু। মেজর অরহান আহ্সান এর কথার অবাধ্য হওয়ার পরিণাম এখন তুমি হারে হারে টের পাবে।”
নিরুপমা তার কথা না শুনার ভান করে বসে থাকে। এতে অরহানের পুরুষ সত্তায় গিয়ে আঘাত লাগে সে নিরুপমার হাত ধরে টেনে দাঁড় করায়। ভয়ে নিরুপমার হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে যায়। তবে নিরুপমা অরহানকে বুঝতে দেয় না যে সে ভয় পেয়েছে।
নিরুপমা কন্ঠে জোর এনে বলা শুরু করে,”মানবো না আমি আপনার কোনো কথা। কি করবেন আপনি? ”
অরহান নিরুপমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,” কি করবো আমি জানতে চাও, তাই না?”
অরহান নিরুপমাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। প্যান্টের বেল্ট খুলে নিজের হাতে পেঁচাতে থাকে।
নিরুপমার এখন ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায়। সে একটু একটু করে পিছাতে থাকে।
“কি করছেন আপনি!,” কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নিরুপমা শুধায়।
“এমনিতে না বেশি বুঝো। এখন বুঝতে পারছো না কি করবো আমি।”( অরহান)
অরহান যেই না বেল্ট দিয়ে নিরুপমাকে মারতে যাবে তখনি তার হাত না চাইতেও থেমে যায়। নিরুপমার ভয়ার্ত মুখশ্রীর দিকে সে অপলক চেয়ে থাকে। অদ্ভূত এক দমবন্ধ করা অনুভূতি তার হৃৎস্পন্দনকে কম্পিত করতে থাকে।
যেই অরহান মানুষকে মারতে, কষ্ট দিতে পৈচাশিক এক আনন্দ পায় আজ এই দুর্বল রমণীকে আঘাত করার সময় কেনো তার হাত বরফের ন্যায় জমে গেলো!
অরহানের এইবার নিজের উপরই প্রচণ্ড রাগ হলো সে তার সামনে থাকা চেয়ারে সজোরে লাত্থি দিলো।
নিরুপমা এতক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে রেখেছিল। ভাংচুরের বিকট শব্দে সে চোঁখ তুলে তাকায়।
অরহান হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ভেঙ্গে চুরমার করছে। নিরূপমা এসব দেখে ভয়ে কাঁপতে থাকে। নিরুপমার মনে হয় সে হয়তো ঘুমন্ত কোনো বাঘকে জাগিয়ে তুলেছে।
অরহান এইবার নিরুপমার দিকে তাকায়। নিরুপমার অসহায় চাহনিতে অরহান আবার হারিয়ে যায়। অরহান নিরুপমার সামনে গিয়ে বসে।
“নারীর সবচেয়ে মোহনীয় রূপ কি জানো? ( অরহান)
নিরুপমা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অরহানের মুখশ্রীর দিকে তাকায়।
অরহান নিরুপমার সামনে মুখ এনে বলে,”নারীর সবচেয়ে মোহনীয় রূপ হচ্ছে তার অসহায়ত্ব। তুমি অসহায় নিরু। তুমি শুধু তেজই দেখাতে পারবে। আর কোনো কিছু করার মুরত তোমার নেই।”
অরহান রাগান্বিত দৃষ্টিতে নিরুপমার দিকে এক পলক তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নিজের ইউনিফর্ম ঠিক করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
নিরুপমা ঠাঁয় বসে থাকে। ভয়ে এখনো তার শরীর কাঁপছে। অরহান যদিও তার গায়ে হাত তুলেনি তবুও নিরুপমার মনে প্রচণ্ড আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
নিরুপমা নিজে নিজেই বলতে থাকে,” না না, এই অমানুষের সাথে আমি আর থাকবো না। ওনার সাথে থাকলে কখন না কখন আমাকে মেরেই ফেলবে ঠিক নেই! আমি দরকার হলে না খেয়ে মরবো তবুও এই বাড়িতে আর এক মুহুর্তও থাকবো না হ্যাঁ..।
নিরুপমা উঠে দাঁড়ায়।
_____________
অন্যদিকে
অরহান ড্রাইভ করছে আর নিজের পুরুষ সত্তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে।
“এইটুকু একটা পুচকি মেয়ে আমার কথার অবাধ্য হলো অথচ আমি তাকে একটা টোকাও দিতে পারলাম না ! ছিঃ অরহান ছিঃ shame on you.
আজকে বাসায় গিয়ে নেই তোমার খবর আছে নিরু। আমার সাথে বেয়াদবি করে তুমি পার পাবে না । ”
_________
নিরুপমা বাসা থেকে বেরিয়ে মেইন রোডে চলে যায়। রাস্তা না চিনার কারণে নিরুপমা এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। তখনি ভুলবশত নিরুপমার একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে। গাড়িতে বসা লোকটি সাথে সাথে ব্রেক করার কারণে নিরুপমা বেঁচে যায় তবে পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পায়।
লোকটি গাড়ি থেকে নেমে বলে উঠে,” মিসেস আহ্সান আপনি? I am so sorry Medam . আমি আসলে খেয়াল করিনি।”
নিরুপমা লোকটিকে চিনতে পারে না। লোকটি নিরুপমাকে গাড়িতে বসার জন্য অনুরোধ করে।তবে নিরুপমা রাজি হয় না।
” ম্যাডাম প্লিজ গাড়িতে বসুন আমি আপনাকে এখনই হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি নাহলে অরহান স্যার আমাকে আস্ত রাখবেন না।”
নিরুপমা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
লোকটি নিরুপমাকে গাড়িতে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন বের করে অরহানের নম্বরে ফোন করে।
অরহান বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে।
” কি হয়েছে ক্যাপ্টেন আরিফ খন্দকার?”
“স্যার ওই আসলে….. আ ”
“আমতা আমতা না করে সোজা মূল কথা বলো কুইক।”( অরহান)
“স্যার আপনার স্ত্রী এক্সিডেন্ট করেছেন তাই আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।”
অরহান স্তব্ধ হয়ে যায়। আবার সেই দমবন্ধ করা অনুভূতি তাঁর হৃৎস্পন্দনকে কম্পিত করতে থাকে।
অরহান গাড়ি ঘুরিয়ে সাথে সাথে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়।
চলবে….