আমার নিষ্ঠুর মনোহর লেখনীতে – মাহানুর পর্ব – ৪

0
16

আমার নিষ্ঠুর মনোহর
লেখনীতে – মাহানুর
পর্ব – ৪

হাসপাতাল বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে নিরুপমা।কিছুক্ষণ আগে নার্সরা ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে গেছেন।

আরিফ রুমের বাহিরে দরজার পাশেই অপরাধীর ন্যায় দাঁড়িয়ে রয়েছিল। যদিও তার দোষ নেই তবুও তার ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছে। অরহানকে আসতে দেখে আরিফ সোজা হয়ে স্যালুট দেয়।

আরিফ আমতা আমতা করে বলতে থাকে ,”স্যার আমি আসলে খেয়াল করিনি যে ম্যাডাম আমার গাড়ির সামনে এসে পড়বেন। মানে আসলে ম্যাডাম হয়তো ভুলবশত রাস্তার মাঝে এসে পড়েছিলেন।”

অরহান এইবার নিরুপমার দিকে তাকায়। চোঁখ মুখ লাল হয়ে গেছে। মুখের মধ্যে এখনো ভয়ের ছাপ ফুটে রয়েছে। নিরুকে সুস্থ দেখে অরহান ভেতরে ভেতরে স্বস্তি অনুভব করে।

অরহান নিরুপমার দিকে এগিয়ে যায়। নিরুপমার হার্টবিট বাড়তে থাকে। সকালের ঘটনা এখনো ভুলতে পারেনি সে।

কিন্তু অরহান নিরুপমাকে অবাক করে দিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বলে,” রাস্তায় চলার সময় আশেপাশের গাড়িগুলো ভালোভাবে দেখে পার হবে কেমন। আর তোমার বেশি লাগেনি তো কই দেখি …”

অরহান এমন ভান করছে যেনো সে নিরুপমার ভীষণ কেয়ার করে। তবে নিরুপমা ভালোভাবেই বুঝতে পারে অরহান ক্যাপ্টেন আরিফের সামনে ইচ্ছে করেই নাটক করছে। রাগে সে অরহানের হাত সরিয়ে দেয়।

অরহান নিরুপমার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দেয়। তারপর আরিফের পানে চেয়ে বলে,” Thank you,Captain Arif , আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য। আপনি এইবার আসতে পারেন।”

আরিফ যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় তখনি ডাক্তার রুমে প্রবেশ করে।

আরিফকে দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে ডাক্তার বলে উঠলেন,”আপনার ওয়াইফ ঠিক আছেন। তবে পায়ে সামান্য ফ্র্যাকচার হয়েছে। আমরা মেডিসিন দিয়ে দিয়েছি আপনি চাইলে আজ বিকেলেই ওনাকে নিয়ে যেতে পারেন।”

ডাক্তারের মুখে এই কথা শুনে রাগে অরহানের শিরা উপশিরা কাঁপতে লাগলো। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে অরহান নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করল। দাঁতে দাঁত চেপে অরহান বলে উঠলো,”ডাক্তার সাহেব আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। মিসেস নিরুপমা আহ্সান আমার স্ত্রী।”

অরহানের রাগান্বিত স্বর আরিফ খুব ভালো করেই চিনে। ভয়ে তার হাত পা থরথর করে কাঁপতে থাকে।

” দুঃখিত,আমি বুঝতে পারিনি। আপনার ওয়াইফকে আজই হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে নিয়ে যেতে পারবেন । তবে ওনার পায়ে অনেকটা আঘাত লেগেছে। শুকাতে সময় লাগবে। ততদিন টাইম মতো মেডিসিন নিতে বলবেন। ”

উক্ত কথা বলে ডাক্তার সাহেব সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান।

” ক্যাপ্টেন আরিফ খন্দকার, আপনিও এইবার আসতে পারেন,” অরহান রাগে কটমট করে বলতে থাকে।

আরিফও দেরি না করে স্যালুট দিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়ে।

অরহান নিরুপমার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে। মুহুর্তের মধ্যেই চোখের ধরন পাল্টে যায় তার।

“আমার পারমিশন না নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছো কেনো? আর গাড়ির নীচে পড়লেই বা কিভাবে? নাকি অন্য কোনো প্ল্যান ছিলো? ”

“অন্য কি প্ল্যান থাকবে?”

“সেটা তো তুমিই ভালো বলতে পারবে নিরু। আর ওই আরিফ তোমাকে কিভাবে নিয়ে এলো? তুমি তো পায়ে ব্যথা পেয়েছো। ওকি তোমাকে টাচ করে গাড়িতে উঠিয়েছে? Answer me damm it..”

“আপনি কি সব আবোল তাবোল কথা বলছেন। ওনি আপনার স্ত্রীকে বাঁচিয়েছেন কোথায় কৃতজ্ঞ হবেন তা নয় উল্টো বাজে কথা বলছেন।”

” তুমি আমার স্ত্রী,নিরু। তোমাকে শুধু আমি স্পর্শ করবো আর কেউ না । আর ওই আহাম্মক ডাক্তার কি বলে গেলো ! কতবড় কলিজা! আমার সামনে আমার স্ত্রীকে অন্যের স্ত্রী বলে সম্বোধন করে ”

“ডাক্তার কি সেটা ইচ্ছে করে করেছে নাকি? ”

“তুমি মনে হয় খুব খুশি হয়েছো”

” এই অসভ্য লোকের সাথে তর্ক করে লাভ নেই। কথা পেঁচাতেই থাকবে ।” (নিরুপমা মনে মনে বলতে থাকে)

অরহান নিরুপমাকে হঠাৎ করেই কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকে।

“আরে আরে কি করছেন আপনি?” ( নিরুপমা)

“চুপ একদম চুপ। আবার তর্ক শুরু করলে আঁছাড় মেরে ফেলে দিবো”( অরহান)

____________

অরহান নিরুপমাকে বাসায় নিয়ে আসে। তারপর বেডে বসিয়ে দিয়ে বলে,” এখন আমি ডিউটিতে যাচ্ছি । রাতে বাসায় আসার পর সকালে আমার সাথে করা বেয়াদবির শাস্তি দিবো। ”

এই বলে অরহান নিজের হ্যাট ঠিক করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। নিরুপমা অবাক দৃষ্টিতে অরহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।

“ধুর এক্সিডেন্ট না হলে আজই এই নরক থেকে মুক্তি পেয়ে যেতাম আমি,” নিরুপমা আনমনে বসে বসে এসব ভাবতে থাকে। একটু পর মিনু রুমে প্রবেশ করে।

” ভাবী এখন কেমন আছেন?”

“একটু স্বাভাবিক। আচ্ছা ওনি কি সবসময় একাই থাকেন? ( নিরুপমা)

“কেনো ভাবী আপনে জানেন না?( মিনু)

“না মানে আসলে আমাদের বিয়ের সময় আমি ওনার বাবা মা কাউকেই দেখিনি।” ( নিরুপমা)

অরহান ভাইয়ের বাবার এই বিয়েতে কোনো মত ছিল না। অরহান ভাইয়ের বাবাও আর্মির বড় অফিসার নিরুপমা ভাবী। অরহান ভাইয়ের বিয়ে তিনি তার বন্ধুর মেয়ের সাথে ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু ভাই রাজি হন নাই। আর আপনারে বিয়ে কইরা আনছেন।(মিনু)

তাহলে এটা কার বাসা?( নিরুপমা)

এটা আর্মি কোয়ার্টার ভাবী। ভাই জিদ কইরা এখানে থাকেন। ওনার মা আমারে এখানে পাঠাইসেন ভাইয়ের রান্নাবান্না কইরা দেবার জন্যে। আমি আগে ওনার বাবা মার বাসায় কাজ করতাম। (মিনু)

” ওনার মাও কি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না?”( নিরুপমা)

খালার ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা আবার কেউ জানতে চায় নাকি ভাবী। তবে আপনার ছবি খালায় দেইখা পছন্দ করছেন কিন্তু খালুর ভয়ে আসেন নাই? ( মিনু)

“ওহ্ আচ্ছা “( নিরুপমা)

মিনু: ভাবী আমি গিয়া রান্নাবাড়ি সারি। নইলে ভাই আইসা আবার রাগারাগি করবো। আপনে বইলেন আপনেই রাঁধছেন সব। আর কিছু লাগলে ডাক দিয়েন।

মিনু চলে যায় আর নিরুপমা আবার ভাবনার জগৎতে ডুব দেয়।

“এই অমানুষটা তো আমাকে ভালো ও বাসে না তাহলে বাবার অমতে বিয়ে করার কি দরকার ছিল। এনি তো দেখছি নিষ্ঠুর হওয়ার পাশাপাশি অদ্ভুতও বটে!”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here