আমার নিষ্ঠুর মনোহর #লেখনীতে – #মাহানুর #পর্ব – ৬

0
19

#আমার নিষ্ঠুর মনোহর
#লেখনীতে – #মাহানুর
#পর্ব – ৬

“আজ ডিউটি শেষে আমার সাথে দেখা করবে অরহান। জরুরী কথা আছে” ফোনে নিজের বাবার ম্যাসেজ দেখে মুচকি হাসে অরহান। সে জানে তার বাবা বেশিদিন তাকে ছাড়া থাকতে পারবেন না।

অরহান জগিং শেষে বাসায় ফিরে যেই না রুমে প্রবেশ করবে তখনি রুমে থাকা নিরুপমা চিৎকার করে উঠে।

“এখন রুমে আসবেন না প্লিজ।”

কিন্তু কে শুনে কার কথা অরহান ঠিকই রুমে প্রবেশ করে ডেভিল হাসি দেয়।

“আমার রুমে আমাকেই প্রবেশ করতে নিষেধ করছো Not Fair, নিরু”

নিরুপমা শাড়ির আঁচল ভালোকরে ঠিক করে,”দেখেছেন না আমি শাড়ি পড়ছি।আপনি প্লিজ পরে আসুন। ”

অরহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুমে ডুকে সোফায় বসে পরে।

নিরুপমা রাগে গজগজ করতে থাকে।

” এই মিনুটাও কোথায় গেলো। এখন আমি শাড়ির কুঁচি ঠিক করবো কিভাবে?

নিরুপমা আড়চোখে অরহানের দিকে তাকায়। অরহান সোফায় বসে নিউজপেপার পড়ছিল।

“শুনুন না, আমার শাড়ির কুঁচিটা একটু ঠিক করে দিন প্লিজ”( নিরুপমা)

“আমি তোমাকে বিয়ে করে এনেছি নিজের কাজকাম করে দেওয়ার জন্য আর তুমি কিনা আমাকে দিয়েই নিজের কাজ করাতে চাচ্ছো। Listen carefully, অরহান আহ্সান কখনো কোনো মেয়ের সামনে ঝুঁকে না।”

“আমি আপনাকে ঝুঁকতে কোথায় বলছি। আমি বলছি শাড়ির কুঁচিটা একটু ঠিক করে দিতে।”

“হ্যাঁ তো। শাড়ির কুঁচি ঠিক করতেও তো ঝুঁকতেই হবে “, অরহান ভ্রু কুঁচকে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে।

নিরুপমা মুখ ভেংচি দিয়ে অরহানকে মনে মনে গালি দিতে থাকে।

” ব্যাডা খাটাশ। সাঁধেই কি অমানুষ বলি! নিষ্ঠুর কোথাকার। ”

নিরুপমার মাথায় এইবার একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসে। পায়ে হাত দিয়ে ব্যথা পাওয়ার নাটক করতে থাকে।

” ওমাগো! কি ব্যথা। ইশশ্” ( নিরুপমা)

অরহান নিউজপেপার পড়ার বাহানায় আড়চোখে নিরুপমাকে দেখছিল। নিরুপমার ব্যাথায় কাঁতর কন্ঠ শুনে অরহানের মায়া হয়। ভেতর ভেতর নিরুপমাকে সাহায্য করার ইচ্ছা থাকলেও নিজের পুরুষ সত্ত্বার ইগো রক্ষার্থে সে চুপচাপ বসে থাকে।

নিরুপমা অরহানকে একইভাবে বসে থাকতে দেখে আবারও দু চারটা বকুনি মনে মনে দিয়ে দেয়। গলার স্বর আরো করুন করে হায়হুতাশ করতে থাকে।

অরহান এইবার নিজের ইগো বিসর্জন দিয়ে বাধ্য হয়ে নিরুপমার সামনে গিয়ে তার শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে থাকে। কুঁচি গুঁজে দেয়ার সময় পেটে অরহানের হাতের স্পর্শ পেয়ে নিরুপমা কেঁপে উঠে অরহানের হাত খামচে ধরে।

অরহান শাড়ির কুঁচি গুঁজে দিয়ে নিরুপমার দিকে তাকায়। নিরুপমার চুলের মুঠি ধরে বলে , “আজ তোমার কাজ করে দিয়েছি বলে ভেবো না যে তোমার গোলাম হয়ে গেছি।”

অরহান মূলত নিজের ইগো স্যাটিসফাইড করার জন্যই নিরুপমার সাথে এমন আচরণ করছে। নিরুপমাও অরহানকে পাল্টা জবাব দিতে নিলে তার চোঁখ পড়ে অরহানের ঠোঁটের দিকে। ঠোঁটের একপাশে রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে রয়েছে। নিরুপমার মনে পড়ে কাল রাতে অরহান তার সাথে জোর করার কারণে সে অরহানের ঠোঁটে জোরে কামড় বসিয়ে দিয়েছিলো।

নিরুপমার মনে মনে খারাপ লাগে।নিরুপমা অরহানের ঠোঁটের কাটা জায়গায় হাত দিয়ে দেখতে থাকে। আচমকা নিরুপমা অরহানের সেই কাটা জায়গায় নিজের অধর স্পর্শ করে।

নিরুপমার এহেন আচরণে অরহান বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। যেই হাত দিয়ে নিরুপমার চুল ধরে রেখেছিল অরহান সেই হাতের বাঁধন হালকা হতে থাকে।

হঠাৎ নিরুপমার হুশ ফিরে এলে সে অরহানের অধর ছেড়ে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়।

তবে ততোক্ষণে অরহান এক ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে কম্পিত হতে থাকে তার। নিরুপমাকে অরহান টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।

নিরুপমা চমকে সরে যেতে নিলেও অরহানের হৃদয়ের স্পন্দন শুনে থেমে যায়। অরহান নিরুপমাকে এমনভাবে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে যেনো তার হৃদয়ের এই অস্বাভাবিক কম্পনকে নিরুপমাই থামাতে পারবে।

নিরুপমাও হয়তো এই প্রথম অরহানের স্পর্শে ভালোবাসা অনুভব করে। তারা কতক্ষণ এভাবে ছিল কেউ জানে না। কিন্তু তাদের এই সুন্দর মুহূর্তে ব্যাঘাত ঘটাতে মিনু সেখানে চলে আসে।

চোঁখে হাত দিয়ে মিনু বলে,” মাফ কইরেন ভাইয়া-ভাবী আমি কিছু দেখি নাই,” এই বলে মিনু দৌঁড় ..

নিরুপমা অরহানকে সরিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।

অরহান প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে শুধায়,” এই মিনুর বাচ্চা আর আসার সময় পেলো না । দিলো আমার সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট করে।”

নিরুপমা অরহানের দৃষ্টি থেকে বাঁচতে তাড়াতাড়ি দৌঁড় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

অরহান চেঁচিয়ে বলতে থাকে,” আবার দৌঁড় দেওয়া হচ্ছে এইবার পড়ে গেলে আমি আর কোলে নিতে পারবো না।”

নিরুপমা ভেংচি কেটে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। মিনু নিরুপমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সেটা দেখে নিরুপমা আরো লজ্জা পেয়ে যায়।

” আরে ভাবী লজ্জা পাইয়েন না। প্রথম প্রথম এমনই হয়। আমিও আমার বিয়ের প্রথম প্রথম এমনই লজ্জায় লাল হইয়া থাকতাম,” এই বলে মিনু দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে।

মিনুর এরূপ কাণ্ড দেখে নিরুপমা খিলখিল করে হেসে উঠে। অরহান তখন রান্নাঘরের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো নিরুপমার হাসির শব্দ শুনে সে থমকে দাঁড়ায়।

নিরুপমার হাসিমাখা মুখ আজই অরহান প্রথম দর্শন করলো। অদ্ভুত এক ভালো লাগা দোলা দিলো তার মনে। অজান্তেই অরহানের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠলো। নিরুপমা পিছে ফিরে তাকাতেই অরহান আবার নিজের মুখে বিরক্তি নিয়ে আসলো।

নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়লো। অরহান জানে নিরুপমা রান্না করবে না জিদ করে। তবে আজ কেনো যেনো তার নিরুপমার সাথে অহেতুক ঝগড়ায় জড়াতে ইচ্ছে করছে না।

নিরুপমা অরহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলতে থাকে,” দেখেছো মিনু , কেমন কাঠখোট্টা তোমার অরহান ভাই। আমার হাসি সহ্য করতে না পেরে নাস্তা না করেই বেরিয়ে গেছে।”

সে কি ভাবী ভাই আপনার হাসি সহ্য করতে পারবে না কেনো?( মিনু)

“সেটা আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না মিনু।”( নিরুপমা)

আচ্ছা ভাবী আপনে নাস্তা কইরা নেন । ঠাণ্ডা হইয়া যাইবো। তারপর ঔষুধ খাইয়া নিয়েন।( মিনু)

নিরুপমা মিনুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়।

_________

“আমাকে না জানিয়ে হুট করেই এক অজপাড়া গায়ের মেয়েকে বিয়ে করে এনে তাকে সরকারি কোয়ার্টারে উঠিয়েছো। এরকম হঠকারী সিদ্ধান্ত তুমি কিভাবে নিতে পারলে অরহান? কি সমস্যা ছিল লামিয়া মেয়েটার মধ্যে? তোমার জন্য পারফেক্ট ম্যাচ ছিল সে।”( আবসার আহ্সান)

“বাবা আমি লামিয়াকে কখনোই বিয়ে করতে চাইনি এটা তুমি খুব ভালো করেই জানো। আর আমি তো লামিয়াকেও বিষয় টা ক্লিয়ার করেছি।”( অরহান)

“তাই বলে অজপাড়া গায়ের এক গরিব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করে ফেলবে? সে কি এতো বড় বংশের বউ হবার যোগ্য?”

“বাবা নিরুপমা তো আর বাড়ির বাহিরে যাবে না থাকবে তো ঘরের ভিতরেই। তাহলে এত যোগ্যতা থেকেই বা কি লাভ? আর তাছাড়া আমি ইচ্ছে করেই খুঁজে এরকম গরিব অসহায় মেয়েকে বিয়ে করেছি যাতে আমার কথামতো তাকে চালাতে পারি।”

আবসার আহ্সান অবাক হয়ে যান। তার ছেলে তো নিষ্ঠুরতায় তার থেকেও এক ডিগ্রি উপরে। মনে মনে ছেলেকে বাহবা দিতে ভুলেন না তিনি।

“কালই তোমার বৌকে বাসায় নিয়ে আসবে। বাড়ির বৌ বাড়ির বাহিরে থাকলে ভালো দেখায় না।” ( আবসার আহ্সান)

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here