আমার নিষ্ঠুর মনোহর #লেখনীতে – #মাহানুর #পর্ব – ৭

0
17

#আমার নিষ্ঠুর মনোহর
#লেখনীতে – #মাহানুর
#পর্ব – ৭

বিছানায় লাল টুকটুকে শাড়ি আর হালকা কিছু গহনা দেখে নিরুপমা খানিকটা অবাক হয়। অরহান ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার সময় এসব নিয়ে এসেছে।

নিরুপমা শাড়িটি হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। অরহান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে নিরুপমাকে বলে,”কাল তোমাকে তোমার শশুরবাড়িতে নিয়ে যাবো। বাবা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন । সুন্দর করে মার্জিত ভাবে এই শাড়ি পরে তৈরি হয়ে থাকবে সকালে। আমার সকালে ক্যান্টনমেন্টে কিছু কাজ আছে সেটা সেরে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবো।”

অরহানের এই কথা শুনে নিরুপমার মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। নিরুপমা মনে মনে ভাবে শশুরবাড়িতে গেলে হয়তো অরহানের নিষ্ঠুরতা থেকে খানিকটা রেহাই পাবে সে।

কিন্তু নিরুপমার অবুঝ মন কি আর বুঝতে পারে যে সেখানে আরো বড় অমানুষ তাকে শায়েস্তা করার জন্য বসে আছে!

__________
সকালবেলা

নিরুপমা সুন্দর করে শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে নেয়। আজ সে ভীষণ খুশি। যা তার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

অরহান গাড়িতেই বসে রয়েছিল। লুকিং গ্লাসে নিরুপমাকে আসতে দেখে অরহান নিরুপমার পানে তাকায়। ভীষণ মিষ্টি লাগছে নিরুপমাকে। একরাশ মুগ্ধতায় ছেয়ে যায় অরহানের মন।

তবে নিরুপমা গাড়ির সামনে চলে আসলে অরহান নিজের মুখশ্রীতে আবার সেই গাম্ভীর্যপূর্ণ ভাব এনে কর্কশ কন্ঠে বলে,” “এতো দেরি লাগে আসতে। তোমার জন্য কি আমি সারাদিন অপেক্ষা করবো?এখন ওঠো গাড়িতে।”

মুহূর্তে নিরুপমার হাস্যোজ্বল মুখশ্রীতে অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসে। নিরুপমার চুপসে যাওয়া চেহারা দেখে অরহানের ভেতরে ভেতরে ভীষণ খারাপ অনুভূত হয়। কিন্তু অরহান কিছুতেই নিরুপমাকে বুঝতে দিতে চায় না যে তাকে দেখে সে মুগ্ধ হয়েছে।

নিরুপমা গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হয়ে অরহানের দিকে কাঁচুমাচু করে তাকায় ।

” আমাকে দিয়ে কাজ না করাতে পারলে তো তোমার শান্তি হয় না। একটা গাড়ির ডোর পর্যন্ত খুলতে পারো না । পারো শুধু তেজ দেখাতে,” অরহান এসব বলতে বলতে গাড়ির দরজা খুলে দেয়।

নিরুপমা গাড়িতে উঠে বসে। হঠাৎ অরহানকে নিজের সামনে এগিয়ে আসতে দেখে নিরুপমা চেঁচিয়ে ওঠে, “কি.. কি করছেন?”

“আমি সিট বেল্ট লাগাচ্ছি damn it। তোমাকে সিট বেল্ট বাঁধতে বললে তো সেটাও পারবে না।”

অরহান নিরুপমার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে।

__________

বাসায় বসে নিজের ছেলে আর পুত্রবধূর অপেক্ষা করছেন অবন্তিকা।নিরূপমার ছবি দেখে ভীষণ পছন্দ করেছেন অবন্তিকা। তবে মনে মনে তার ভীষণ দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। মেয়েটা মানিয়ে নিতে পারবে তো!

কলিং বেলের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে অবন্তিকার। মেইডরা এসে দরজা খুলে দেয়। অবন্তিকা এগিয়ে যান দরজার দিকে। অরহান আর নিরুপমা একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।

“মাশাআল্লাহ্, কতো মিষ্টি দেখতে একটা পুতুল নিয়ে এসেছিস অরহান,” অবন্তিকা নিরুপমার থুতনিতে হাত রেখে বলেন।

অরহান অবন্তিকার কথায় তেমন পাত্তা না দিয়েই ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বলে, ” আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি মা পারলে তোমার পুত্রবধূকে কিছু মেনার্স শিখিয়ে দিয়ো।”

নিরুপমা অবাক হয়ে যায়। নিজের মায়ের সাথে ভালোভাবে কথাও বললো না অরহান। যার আচরণ নিজের মায়ের সাথেই এতটা রুষ্ট সে নিজের বিবাহিতা স্ত্রীর সাথেই বা কি ভালো আচরণ করবে।

অবন্তিকা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য নিরুপমাকে নিয়ে সোফায় বসান।

“মা একটু বসো তো। তোমায় একটু দেখি। অরহানের কথায় মন খারাপ করো না কেমন। ছেলেটা এমনই।”

নিরুপমাকে নিজের হাতের বালা খুলে পড়িয়ে দেন অবন্তিকা।

কিছুক্ষণ পরেই কালো রঙের একটি জিপ গাড়ি প্রবেশ করে আহ্সান বাড়িতে। অবন্তিকা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন আবসার আহ্সান বাড়িতে প্রবেশ করছেন। অবন্তিকা তড়িঘড়ি করে নিরুপমার মাথায় কাপড় দিয়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে যান।

“নিরুপমা, ইনি হচ্ছেন তোমার শশুরমশাই। এসো সালাম করো”

নিরুপমা এসে সালাম করলেও আবসার কোনো প্রতিক্রিয়া করেন না উল্টো বলতে থাকেন।

“শোনো , মেয়ে আমার ছেলে একপ্রকার আমার অমতেই এই বিয়েটা করেছে। যদিও তোমার মতো অজপাড়া গায়ের মেয়ের এই বাড়ির বউ হবার কোনো যোগ্যতা নেই তবুও আমি তোমাকে এই বাড়িতে আসার অনুমতি দিয়েছি। এই বাড়ির কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে যা অবন্তিকা তোমাকে শিখিয়ে দিবে। মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মতই থাকবে। নিজের সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করবে না আর কোনরকম খাপছাড়া আচরণ করবে না,” এই বলে আবসার আহ্সান সেখান থেকে সরাসরি নিজের রুমে চলে যান।

নিরুপমা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। এ কোন অজানা নরকে সে এসে পড়লো! মনের মধ্যে যে আশার আলো জ্বলে উঠেছিলো সেটাও নিভে যায়।

অবন্তিকা নিরুপমাকে সামলে নিয়ে বলে উঠেন,” ওনার কথায় কিছু মনে করো না মা। তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।”

নিরুপমা আনমনে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। মনে তার হাজারো প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে। নিরুপমা অরহানের রুমের সামনে এসে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।

অরহান রুমের মধ্যে বসেই নিরুপমার আসার অপেক্ষা করছিলো।

নিরুপমাকে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরহান তাড়া দিতে থাকে, “কি হলো নিরু? তোমাকে কি আলাদা করে ভেতরে আসার জন্য দাওয়াত দিতে হবে। ”

নিরুপমা রুমের ভিতরে প্রবেশ করতেই এমন কিছু বলে যা শোনার জন্য অরহান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

“আমি আপনার সাথে সংসার করতে পারবো না। আমি তালাক চাই। আমাকে প্লিজ এই নরক থেকে মুক্তি দিন”

নিরুপমার উক্ত কথা শুনে অরহান হতবাক হয়ে যায়। অজান্তেই মনের ভেতর অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করে যা প্রচণ্ড রাগে রূপ নেয়। তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চায় এটা ভেবেই অরহানের ইগোতে গিয়ে লাগে। রাগে তার কান গরম হয়ে যায়। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করে অরহান।

“শশুরবাড়িতে প্রবেশ করলে এক মিনিটও হলো না আর এখনই এসব অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলছো? কোথায় যাবে এখন তুমি তালাক নিয়ে?”

যেদিকে দুই চোঁখ যায় চলে যাবো তবুও এতো অপমানের মধ্যে আমি থাকতে চাই না!( নিরুপমা)

“তাহলে বাসর রাতে যাওনি কেনো? এখন তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে হবে নিরু। তোমাকে এখন আমার চাই ই চাই” ( অরহান)

আপনার তো নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য শুধু একটা শরীরের প্রয়োজন আমি চলে গেলেই বা আপনার মত বড়লোকদের ক্ষতি কি! ( নিরুপমা)

নিরুপমার এহেন কটু বাক্য শুনে রাগে অরহানের মাথা আউট হয়ে যায়। নিরুপমার গাল চেপে ধরে অরহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,” খুবই বেয়াদপ মেয়ে তুমি নিরু। এখানে এসে দেখছি তোমার তেজ আরো বেড়ে গেছে। আমার থেকে তালাক নিয়ে তুমি কি করবে অন্য কারো সাথে সংসার করবে! তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে এসব কথা বলার। তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে আর আমার এই নিষ্ঠুরতাই সহ্য করতে হবে। আমি ডিসাইড করবো আমি কার সাথে থাকবো আর থাকবো না ”

অরহান নিরুপমার গাল জোরে চেপে ধরায় নিরুপমার ফর্সা গাল লাল বর্ণ ধারণ করে। যা দেখে অরহানের নিরুপমার প্রতি মায়া হয়।

অরহান নিরুপমাকে ছেড়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। নিরুপমা ধপ করে বিছানায় বসে পরে অঝোর ধারায় কান্না করতে থাকে।

অবন্তিকা আহ্সান অরহানকে রাগে বেরিয়ে যেতে দেখে ঠিকই তাঁদের ঝগড়ার বিষয়টি আঁচ করতে পারেন। অবন্তিকা দৌঁড়ে নিরুপমার কাছে এগিয়ে যান। নিরুপমাকে বুকে জড়িয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here