আমার নিষ্ঠুর মনোহর #লেখনীতে – #মাহানুর #পর্ব – ৮

0
17

#আমার নিষ্ঠুর মনোহর
#লেখনীতে – #মাহানুর
#পর্ব – ৮

আজ থেকে অনেক বছর আগে আমিও ঠিক তোমার জায়গায় ছিলাম নিরুপমা। এরকমই অসহায়। মেয়েরা চাইলেও সব ছেড়ে চলে যেতে পারে না।কেনো জানো? এই সমাজের জন্যই। আমি ভাবতেও পারিনি অরহানটাও একদিন তার বাবার মতোই হয়ে যাবে! কিন্তু বিশ্বাস করো আমার অরহান আগে এমন ছিল না। ছোটবেলায় ওর মনও ভীষণ নরম ছিলো। কিন্তু অরহানের বাবা তার সাথেও প্রচুর স্ট্রিক্ট ছিলেন। আমি বাঁধা দিতে নিলে ছেলের সামনেই আমাকে মারধর শুরু করে দিতেন।

অরহানকে তিনিই বুঝিয়েছিলেন ,”এটাই হচ্ছে পুরুষত্ব।” ছোটো থাকতে অরহান কান্নাকাটি করতে নিলে তার বাবা তাকে কাঁদতেও দিতেন না। এক উগ্র পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব রয়েছে তোমার শশুরের। ছেলেকেও সেটাই শিখিয়েছেন। আমার ধারের সামনেও ছেলেকে বেশি ঘেঁষতে দেননি। ধীরে ধীরে অরহানটা কেমন রুড হয়ে গেছে।

অরহানকে তার বাবা সবসময় আর্মি অফিসার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার অরহানের তো সঙ্গীতের দিকে ঝোঁক ছিল তার বাবার জন্য অরহান সেই শখটাও ছেড়ে দিলো। এমনটা নয় যে অরহানের তার মায়ের প্রতি কোনো টান নেই । অরহানের আমার দিকেও টান রয়েছে কিন্তু অরহান সেটা প্রকাশ করতে পারে না।

তবে তুমি জানো ওনার বন্ধুর মেয়ে লামিয়ার সাথে তার বাবা যখন অরহানের বিয়ে ঠিক করলেন তখন জীবনে প্রথমবার অরহান তার বাবার অবাধ্য হয়েছিলো। তোমাকে পছন্দ করে বলেই তো অরহান তোমাকে বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে।

নিরুপমা এইবার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠে,” না মামণি, আপনার ছেলে পছন্দ করে আমাকে বিয়ে করে আনে নি। সে আমাকে বিয়ে করেছে আমার অসহায়ত্ব দেখে। ভেবেছে আমার সাথে যেমন খুশি তেমন আচরণ করবে। আপনি এতো অত্যাচার সহ্য করে সংসার করেছেন ঠিকই কিন্তু আমি পারবো না। আমি গরিব বলে কি মানুষ না নাকি!”

অবন্তিকা নিরুপমার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে।

” নিরুপমা মা একটু শান্ত হয়ে বসো। অরহান তোমাকে বললো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে। নিজের ছেলেকে একটু হলেও তো আমি চিনি ও এসব বলছে নিজের ইগো স্যাটিসফাইড করার জন্য। ”

“আপনার ছেলে যদি আমাকে এখানে থাকতে বাধ্য করে তবে আমিও তার কোনো কথা শুনবো না মামণি।”(নিরুপমা)

“ঠিকাছে মা তুমি একটু শান্ত হওয়ার চেষ্টা করো। এখন আপাতত কিছু খেয়ে নাও। আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি।”

___________

সৈনিকদের ট্রেনিং চলছে। অরহান শীতল দৃষ্টিতে সেখানেই তাকিয়ে রয়েছে। ক্যাপ্টেন আরিফ সৈনিকদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে আর আড়চোখে অরহানকে মাঝে মাঝে দেখছে এ যেনো ঝড় আসার আগে পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আরিফ ভেতরে ভেতরে আতঙ্কে আছে।

” এই অরহান স্যার চোঁখ মুখ শক্ত করে রেখেছেন কেনো? আজ তো সৈনিকদের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বেন মনে হচ্ছে”( আরিফ)

কিছুক্ষণ পর হলোও তাই অরহান হুংকার দিয়ে উঠলো।

” তোমাদের ট্রেনিং এর যা নমুনা দেখছি পরবর্তী মিশনে তোমরা আমার নাম ডুবাবে আহম্মকরা!”

অরহান প্রায় অনেক্ষন সৈনিকদের ঝারি দিয়ে নিজের মনের ঝাল মেটালো।

__________

“তুমি খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছো”( আবসার)

নির.. নিরুপমার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। মেয়েটা হয়তো না খেয়েই আছে ( অবন্তিকা)

বাহ্ রে ওই মেয়ে বাড়িতে আসলো এক দিনও হলো না এখন থেকেই অন্যদের দিয়ে কাজ করানো শুরু করেছে। কোথায় সে?( আবসার)

“না না ও আমাকে কিছুই বলেনি আপনি শুধু শুধু…”

“চুপ একদম চুপ । কোথায় সেই মেয়ে ডাকো ওকে” ( আবসার)

আবসার আহ্সানের চিল্লাচিল্লি শুনে নিরুপমা নিচে নেমে আসে।

আবসার নিরুপমার দিকে এগিয়ে এসে যেই না নিরুপমাকে চড় মারতে যাবে অবন্তিকা নিরুপমার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় যার কারণে চড়টা নিরুপমার গায়ে না লেগে অবন্তিকার গায়ে লাগে ।

আকস্মিক এই ঘটনায় নিরুপমা হতবাক হয়ে যায়। আবসার আহ্সান আরও কয়টা কটু বাক্য বলে চলে যান। পুরোটা সময় অবন্তিকা নিরুপমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল যাতে তার গায়ে আঁচড় না লাগে।

“নিরু মা তুমি ঘরে যাও। তোমাকে এই বাড়িতে থেকে অত্যাচার সহ্য করতে হবে না আমি অরহানের বাবা বের হয়ে যাওয়ার পর তোমাকে এই বাড়ি থেকে বের হতে সাহায্য করবো।” ( অবন্তিকা)

নিরুপমা কাঁপা কাঁপা পায়ে রুমের দিকে এগিয়ে যায়। মনের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ জন্ম নেয় তার। আজ নিরুপমা ভয়ে কাঁপছে না রাগে কাঁপছে।

আবসার আহ্সান চলে যাওয়ার পর অবন্তিকা নিরুপমার কাছে এগিয়ে আসেন। তাকে কিছু টাকা আর তার কিছু গহনা ধরিয়ে দিয়ে বলেন,” মামণি তুমি এগুলো রাখো এর চেয়ে বেশি আমি তোমাকে আর সাহায্য করতে পারবো না। আবসার বের হয়ে গেছে আর অরহানও এখন বাসায় নেই তুমি এখন চলে যেতে পারবে।”

নিরুপমা এইবার অদ্ভুত শান্ত কন্ঠে শুধায়, ” না মামণি, আমি আর এখন নিজের সমস্যা থেকে পালানোর চেষ্টা করবো না। ধরলাম আমি চলেও গেলাম। তারপর আরেকটা অসহায় মেয়েকে ধরে এনে একই ভাবে কষ্ট দেওয়া হবে। এই অত্যাচারের অবসান হওয়াটা জরুরী মামণি।আমি কোথাও যাবো না।”

“নিরুপমা! সব কিছু এতো সহজ না মা। আমি এত বছরেও সংসারের জন্য সব করে ওনার মন পাইনি। তুমি প্রতিবাদ করলে অরহানের বাবা তোমাকে মেরেই ফেলবেন।”( অবন্তিকা)

নিরুপমা ফ্রিজ থেকে বরফ এনে অবন্তিকার গালে লাগাতে থাকে।

“চিন্তা করো না মামণি। আমি আর মুখে কিছুই বলবো না তবে কিছু একটা তো আমি করবোই।” ( নিরুপমা)

নিরুপমা অবন্তিকাকে সামলে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। তারপর রান্না করা শুরু করে। নিরুপমার এই কাণ্ড দেখে অবন্তিকা অবাক হয়ে যান।

নিরুপমা রহস্যময় হাসি দিয়ে অবন্তিকাকে বলে,”মামণি তুমি যাও রেস্ট নাও। ”

নিরুপমা সুন্দর করে রান্না করে টেবিলে খাবার সাজাতে থাকে। তারপর নিজের রুমে গিয়ে ল্যাগেজ থেকে সুন্দর একটি নীল রঙের শাড়ি বের করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

শাড়িটি নিজের গায়ে জড়িয়ে নিরুপমা নিজে নিজেই বলে উঠে,” আমি এইবার কাটা দিয়েই কাটা তুলবো”

_________

অন্যদিকে অরহান ড্রাইভ করে বাসায় আসছে। নিরুপমার আচরণে অরহান শুধু যে রাগ তা নয় অবাকও বটে। সে নিরুপমাকে অনেকটাই নরম ভেবেছিলো। কিন্তু নিরু তো কথায় কথায় তার সাথে বেয়াদবি করে।

আচ্ছা তার মাকেও তো তার বাবা কত অত্যাচার করতো কই তার মা তো কোনোদিন পাল্টা জবাব দেওয়ার সাহস করেনি। ছোটোবেলায় তার রাগ লাগলেও ধীরে ধীরে তার মনে হয়েছে এটাই স্বাভাবিক।

অরহান বাসায় পৌঁছে যায়। কলিংবেল বাজাতে বাজাতে ভাবতে থাকে,”এখন না জানি কি বেয়াদবি করে বসে। করলেও কি আমিও ছেড়ে দেবো না”

নিরুপমা দরজা খুলে অরহানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়। অরহান হঠাৎ করে নিরুপমাকে এই রূপে দেখে বড়সড়ো একটা ধাক্কা খায়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here