আমার নিষ্ঠুর মনোহর #লেখনীতে – #মাহানুর #পর্ব – ৯

0
18

#আমার নিষ্ঠুর মনোহর
#লেখনীতে – #মাহানুর
#পর্ব – ৯

অরহান নিরুপমার দিকে অবাক নয়নে চেয়ে আছে। হুট করে তার তেজি রমণী এরকম নমনীয় আচরণ করছে কেনো!

অরহান ভ্রু কুঁচকে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। টেবিলে হরেক রকমের খাবার সাঁজানো দেখে অরহান নিরুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,”এগুলো কে বানিয়েছে?”

নিরুপমা আবার মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”কেনো আমি বানিয়েছি।

অরহান,” তুমি!”

“অবাক হচ্ছেন কেনো স্বামীসেবা করা তো আমার কর্তব্য।”( নিরুপমা)

অরহান ধমক দিয়ে বলে,”এই মেয়ে কি শুরু করেছো ? আমাকে কি বোকা মনে হয়?”

“ওমা, আপনার মতো এতো বড় অফিসার কে আমি বোকা ভাবতে যাবো কেনো! আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন তাড়াতাড়ি নাহলে খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।” (নিরুপমা)

নিরুপমার মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে অরহানের রাগে গা জ্বলে যায়। সে কিছু না বলে রাগে কটমট করতে করতে ফ্রেশ হতে চলে যায়। মনে মনে ভাবে,” এতো ন্যাকামি করছে কেনো হঠাৎ করে?”

অরহান ফ্রেশ হয়ে নীচে এসে খাবার টেবিলে বসে। নিরুপমা অরহানকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। অরহান যেনো অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে।

যেই মেয়ে সকালে তার কাছে তালাক চেয়ে কান্নাকাটি করেছে এখন সে তাকেই রান্নাবান্না করে বেড়ে খাওয়াচ্ছে!

নিরুপমা খাবার বেড়ে দিয়ে অরহানের দিকে তাকিয়ে বলে,” কি হলো বসে আছেন যে? খাওয়া শুরু করুন।”

অরহান একবার খাবারের দিকে তাকিয়ে আবার নিরুপমার দিকে তাকায়। মনে মনে ভাবে “খাবারে কিছু মিলিয়ে দিলো নাকি? ”

“কি হলো খাওয়া শুরু করুন না ,” ( নিরুপমা ন্যাকা কন্ঠে আবার ঘ্যানঘ্যান করে উঠে)

অরহান নিরুপমার এই ন্যাকামি সহ্য করতে না পেরে খাওয়া শুরু করে।

অরহান খাবার মুখে দিতেই আরো একবার বিস্মিত হয়। খাবার অনেক সুস্বাদু হয়েছে। মনে মনে নিরুপমার প্রশংসা করলেও অরহান মুখে কিছুই বলে না। খাওয়া দাওয়া শেষ করে গম্ভীর মুখ করে উঠে যায়।

কিন্তু অরহান এখন পড়েছে আরেক বিপদে যেখানেই যাচ্ছে নিরুপমা তার পিছে পিছে যাচ্ছে।

শেষে বিরক্ত হয়ে অরহান ধমকে বলে উঠে,” কি শুরু করেছো? আমার পিছা কেনো করছো?

“তো কি করবো?”( নিরুপমা)

“যা ইচ্ছা তা করো কিন্তু আমাকে জ্বালানো বন্ধ করো।” ( অরহান)

“আমি আবার আপনাকে কই জ্বালালাম।”( নিরুপমা)

অরহান এইবার রেগে নিরুপমার বাহু চেপে ধরে,” এমন কেনো করছো তুমি হ্যাঁ? হঠাৎ তোমার এতো স্বামী প্রেম জাগ্রত হয়ে গেলো কেনো। ইচ্ছে করে আমাকে ক্ষেপাচ্ছো কেনো নীরু? ভালো হবে না কিন্তু।”

“আমি স্বামীসেবা করলেও দোষ না করলেও দোষ। তাহলে আপনিই বলুন আমি কি করবো?”(নিরুপমা)

অরহান রেগে নিরুপমাকে নিজের থেকে সরিয়ে চলে যেতে নিলে নিরুপমা অরহানের গালে আলতো করে স্পর্শ করে অরহানের মুখ নিজের দিকে ঘুরায়।

তারপর মুধুর কণ্ঠে শুধায়,” আমি কতো সুন্দর করে আপনার জন্য সেঁজেছি দেখবেন না?”

অরহান এইবার নিরুপমার দিকে ভালোকরে তাকায় এতক্ষণ নিরুপমার ন্যাকামির জন্যে তাকে ভালোকরে পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি অরহান। নিরুপমাকে সত্যিই অপূর্ব লাগছে। যেনো নীল শাড়িতে কোনো নীল পরী দাঁড়িয়ে আছে।

অরহানের সমস্ত রাগ,বিরক্তি মুহুর্তে উধাও হয়ে যায়। মোহগ্রস্ত হয়ে নিরুপমার কোমর জড়িয়ে নিজের দিকে এনে অরহান জিজ্ঞেস করে,” সকালে আমার কাছ থেকে মুক্তি চেয়ে এখন আবার আমার কাছেই ধরা দিচ্ছো কেনো?”

“আপনি চলে যাওয়ার পর আমি অনেক ভেবেছি অনেক”( নিরুপমা)

তারপর? ( অরহান)

“তারপর আমার মনে হয়েছে যেহেতু আপনি এখন আমায় যেতে দিবেন না তাহলে নিজের ভাগ্যকে মেনে নেওয়াই এখন আমার জন্য উত্তম।” ( নিরুপমা)

নিরুপমার জবাবে অরহান সন্তুষ্ট হয়। অরহান নিরুপমাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কিন্তু নিরুপমা বিছানা থেকে উঠে অরহানকে জড়িয়ে তাকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর নিজে অরহানের সাথে লেপ্টে যায়। বিড়ালের মতো অরহানের গালে গাল ঘষতে থাকে।

নিরুপমার এরকম কান্ডে অরহানের পাগলপ্রায় অবস্থা। অরহান নিরুপমার ঘাড়ে গলায় চুমু খেতে থাকে। অরহান পুনরায় নিরূপমাকে নিজের নিচে ফেলে নেশাগ্রস্ত ভাবে চেয়ে থাকে নিরুপমার পানে। নিরুপমার মুখের সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে থাকে।

নিরুপমা দুই হাত দিয়ে অরহানের কাঁধ জড়িয়ে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে,”আপনার স্ত্রীর গায়ে কেউ হাত তোলার চেষ্টা করলে আপনি কি করবেন?”

“আমি তার হাত ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিবো”( অরহান)

“আজকে আপনার বাবা আমার গায়ে হাত তুলতে নিয়েছিলেন.. “( নিরুপমা)

নিরুপমার এই কথা শুনে অরহান নিরুপমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে কেমন যেন ভাবনায় মগ্ন হয়ে যায়।

নিরুপমা উঠে বসে অরহানের বাহুতে মাথা রেখে বলে,”মামণি সামনে এসে পড়ায় চড়টা ওনার গালে লাগে।”

অরহান নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বলে,” নিশ্চয়ই তুমি বাবার সাথে কোনো বেয়াদবি করেছো?”

নিরুপমা করুন কন্ঠে বলে,” বিশ্বাস করুন, আমি কোনো বেয়াদবি করিনি। মামণি আমার জন্যে খাবার আনতে গেছিলেন বলে বাবা রেগে গিয়েছিলেন।”

অরহান নিরুপমার কথায় না চাইতেও বিশ্বাস করে কারণ তার বাবার আচরণ সর্ম্পকে তার জানা আছে। ছোটো থাকতে তার বাবা ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে তার মাকে মারধর করতেন ইনফ্যাক্ট এখনো করেন।

অরহান নিরুপমার দিকে প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে তাকিয়ে বলে ,” ঘুমিয়ে পড়ো”

অরহান বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় চলে যায়। নিরুপমা অরহানের যাওয়ার পানে চেয়ে দুষ্ট হাসি দিয়ে মনে মনে বলে,”এইতো দিয়েছি আগুন লাগিয়ে। ”

নিরুপমা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।
______________

অন্যদিকে

অরহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছে।

” মেয়েটা বাড়িতে আসলো একদিনও হলো না অথচ বাবা এখনই মারধর শুরু করে দিলো! নিরু বেয়াদবি করলেও তো একটা কথা ছিলো।”

অরহান প্রায় অনেক্ষন বারান্দায় সময় কাটিয়ে রুমে চলে আসে।

নিরুপমা এতক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। নিরুপমার ঘুমন্ত মুখের দিকে অরহান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ অরহানের নজর যায় নিরুপমার গালের দিকে।

অরহান মনে মনে ভাবে,” নিরুর তুলতুলে গালে একটু জোরে টাচ করলেই লাল বর্ণ ধারণ করে যদি আজ চড়টা নিরুর গালে লাগতো তাহলে অরহান কি সেই দাগ সহ্য করতে পারতো?”

অরহান নিজের মনের এই প্রশ্নের কোনো উত্তর ভেবে পায় না। ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড রাগ অনুভূত হয় তার।

অরহান নিরুপমার পাশে শুয়ে আনমনে ভাবতে থাকে,”আচ্ছা বাবা যে মায়ের গায়ে রোজ হাত তুলে বাবার কি খারাপ লাগে না? কই আমি তো নিরুর এতো বেয়াদবির পরও এখন পর্যন্ত ওর গায়ে একটা টোকাও দিতে পারলাম না।”

অরহান আবার নিজেই নিজের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলে, “না না আমি পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা। আমাকে আরো কঠোর হতে হবে হ্যাঁ।”

এভাবেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেটে যায় অরহানের সারারাত।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here