#আমার নিষ্ঠুর মনোহর
#লেখনীতে – #মাহানুর
#পর্ব – ১০
ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙছে নিরুপমা। বিয়ের পর আজই প্রথম ফুরফুরে লাগছে তার। নিরুপমা পাশে তাকিয়ে অরহানকে কোথাও দেখতে পায় না।
“লোকটা মনে হয় সারারাত বিনিদ্র রজনী যাপন করেছেন” এই কথা বলে নিরুপমা নিজে নিজেই ফিক করে হেসে উঠে। অরহান ব্যায়াম করে সবে মাত্র রুমে প্রবেশ করছিল নিরুপমাকে ঘুম থেকে উঠেই হাসতে দেখে অরহান ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
” সকাল সকাল পাগল হয়ে গেলে নাকি?”
অরহানের কথা শুনে নিরুপমা মুখ ভেংচি দেয়। বিছানা থেকে নেমে অরহানের সামনে গিয়ে হঠাৎ করেই তাকে জড়িয়ে ধরে। অরহান ভেবেছিলো নিরুপমা উঠার সাথে সাথেই সে আবার তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করবে। কিন্তু নিরুকে অরহান আবার জব্দ করতে ব্যর্থ হয়।
নিরুপমা অরহানের বুক থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে এমন এক মিষ্টি হাসি দেয় যেনো অরহান তার কতো বছরের প্রেমিক পুরুষ!
অরহানের ইচ্ছে করছে এখনই নিরুকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে, ঠোঁটে চুমু এঁকে দিতে। কিন্তু অরহান তা করবে না যদি নিরু তার দুর্বলতা ধরে ফেলে তাহলে সর্বনাশ!
অরহান নিরুপমাকে বারবার এটাই বুঝাতে চায় যে, সে ভোগের বস্তু ছাড়া আর কিছু নয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিরুপমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে অরহান বলে,” যাও গিয়ে নাস্তা বানাও আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।”
অরহান ভাবে ব্যাস এখনই শুরু করবে আবার বেয়াদবি। অরহানও নিরুকে বকা দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়।
নিরুপমা ভেতরে ভেতরে জ্বললেও মুখে জোরপূর্বক হাসি এনে বলে, “ঠিকাছে, আপনি রেডি হয়ে নীচে আসুন,” এই বলে নিরুপমা নীচে চলে যায়।
অরহান আরো একবার টাস্কি খায়।
“মুহূর্তে কারো ব্যক্তিত্ব কিভাবে বদলে যেতে পারে । আগেই তো ভালো ছিলো দু চারটা কথা শুনিয়ে দেওয়া যেতো এখন তো চাইলেও কঠোর হতে পারি না।”( অরহান)
অরহান পরক্ষনেই নিজের সাথে আবার দ্বিমত পোষণ করে বলে,”কেনো পারবো না অবশ্যই পারবো। ”
অরহান আনমনে এসব চিন্তা করে ইউনিফর্ম হাতে নিয়ে তৈরি হতে থাকে ডিউটিতে যাওয়ার জন্য।
নিরুপমা রান্নাঘরে গিয়ে আনমনে ভাবতে থাকে আমি কিছুই ভুলবো না সব মনে রাখবো। কিছুক্ষণ পর নিরুপমা মিনুকে এই বাসায় আসতে দেখে খুশী হয়।
মিনু নিরুপমাকে এটা সেটা এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করতে থাকে।
টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখার সময় নিরুপমা মিনুর দৃষ্টির আড়ালে আবসার আহ্সানের প্লেটের মধ্যে লবণের পরিমাণ বেশি দিয়ে দেয়।
অরহান, অরহানের বাবা আর মা ডাইনিং টেবিলের সামনে আসলে নিরুপমা সবাইকে খাবার সার্ভ করতে থাকে। অরহান খাচ্ছে আর আড়চোখে নিরুপমাকে দেখছে হঠাৎ নিজের বাবার হুংকারে অরহান চকিত হয়ে তার পানে তাকায়। আবসার খাবার মুখে দিয়েই ওয়াক ওয়াক করে ফেলে দেয়। অবন্তিকা ভয়ে কাঁপতে থাকে ।
আবসার আহ্সান চিল্লিয়ে ওঠেন,” এ কি অখাদ্য বানিয়েছো ? লবণ দিয়ে ভরে দিয়েছো? বাপ মা কি রান্নাবান্নাও শিখায়নি? আহাম্মক মেয়ে কোথাকার।”
অরহান অবাক হয়ে তার বাবার দিকে চেয়ে থাকে। রান্না তো ঠিকই হয়েছে। তাহলে কি তার বাবা ইচ্ছে করেই আবার অশান্তি করছেন?
“অরহান এ কি মেয়ে বিয়ে করে এনেছো তুমি? কিছুই তো পারে না? সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করে দিলো।”( আবসার)
আবসার ভেবেছিলো অরহান হয়তো এখনই নিরুপমাকে ঠাটিয়ে চড় মারবে কিন্তু অরহান নিরুপমাকে কিছুই বলে না। উল্টো গম্ভীর কণ্ঠে মিনুকে ডাক দিয়ে বলে অন্য কিছু বানিয়ে দিতে বাবার জন্য।
ছেলের এই আচরণে আবসার অবাক হয়ে যান। আবসারের ইচ্ছে হলো নিরুপমাকে মেরে শায়েস্তা করতে কিন্তু ছেলের সামনে কিভাবে ছেলের বৌয়ের গায়ে হাত তুলবেন। তাই রাগে কটমট করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় রইলো না।
অরহান খেতে নিলে আবসার আবার বলে উঠলেন,” এই অখাদ্য আবার খাচ্ছো কেনো অরহান?”
অরহান শান্ত দৃষ্টিতে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি ইদানিং লবণ একটু বেশীই খাই বাবা।”
নিরুপমা ভয় পাওয়ার নাটক করে মাঝে মাঝে মুচকি মুচকি হাসছিল। কেউই নিরুপমার এই চালাকি ধরতে পারলো না অবন্তিকা ছাড়া।
__________
অরহান ডিউটিতে যাওয়ার জন্য বের হতে গিয়েও নিরুপমার পানে একবার তাকিয়ে বলে,” আমি বের হচ্ছি নিরু।”
নিরুপমা কান্না করতে করতে অরহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে,” বিশ্বাস করুন,আমি তো অনেক সাবধানে রান্না করলাম তারপরও লবণ কি করে বেশি হয়ে গেলো সত্যি আমি বুঝতে পারছি না।’
অরহান এই প্রথম নিরুপমার মাথার হাত রেখে বললো,”বাবার সবসময় সবকিছু একটু বেশিই পারফেক্ট চাই সেইজন্য হয়তো তিনি এসব বলেছেন।তুমি আরেকটু খেয়াল রেখো। আমি বের হচ্ছি।”
অরহান চলে গেলে নিরুপমা নিজে নিজেই বলতে থাকে,”আপনার মনে ধীরে ধীরে যে বিষ ঢুকাচ্ছি তার প্রতিফলন তো এখনই দেখিয়ে দিচ্ছেন। ”
“দেখো সাবধানে নীরু ধরা পড়লে কিন্তু তোমার খবর আছে “( অবন্তিকা)
মামণি! তো..তুমি ?( নিরুপমা)
“আমি কিন্তু সব বুঝেছি নিরু। অরহানের বাবা বা অরহান কেউই যদি খাবার চেক করতো তুমি কিন্তু সাথে সাথেই ধরা পড়ে যেতে। ভাগ্যিস ওরা জলদিতে ছিল।”( অবন্তিকা)
“মামণি আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। এমনটা না করলে ওনারা দুইজন মিলে আমাকে কোণঠাসা করে ফেলতো।”( নিরুপমা)
অবন্তিকা নিরুপমার মাথায় হাত রেখে বলেন,” আমি তো তোমার সেফটির কথা ভাবছি নিরু। অরহানের বাবা তোমার কান্ড ধরে ফেললে আজ কি যেতো। ভাবতেই গা শিউরে উঠে! যা করবে সাবধানে করবে তবে খেয়াল রেখো মামণি বেশি বাড়াবাড়ি যাতে না হয়ে যায়।”
“ওহ মামণি। তুমি বেস্ট। তুমি না থাকলে আমার যে কি হতো ,” নিরুপমা অবন্তিকাকে জড়িয়ে ধরে।
“চলো এইবার তুমি খেয়ে নাও নিরু” ( অবন্তিকা)
__________
আবসার আর অরহান জিপে করে হেড কোয়ার্টারের দিকে যাচ্ছে আজ তাদের বোর্ড মিটিং রয়েছে। সারাটা রাস্তা অরহান তেমন কোনো কথা বলেনি তার বাবার সাথে। আবসার প্রশ্ন করলে শুধু উত্তর দিয়েছে।
ছেলের এই পরিবর্তন দৃষ্টি এড়ায়নি আবসারের। ছেলের সামনে নিজের ইমেজ ধরে রাখার জন্য আবসার বলে উঠলেন,” আমি ভাবছি তুমি বিয়ে যখন করেই ফেলেছো। এইবার বৌভাতের আয়োজন করা উচিৎ। এত বড় অফিসার হয়ে ছেলের বউয়ের জন্য অনুষ্ঠান না করলে কথা উঠবে।”
আবসার ঘরের ভেতরে যতোই খারাপ আচরণ করুক না কেনো বাড়ির বাহিরে সে সবার কাছে নিতান্তই ভালো একজন মানুষ। অবন্তিকাকেও তিনি যেকোনো ইভেন্টে সাথে নিয়ে গেলে তার সাথে সবার সামনে খুবই ভালো আচরণ করে যাতে বাহিরের মানুষ আবসারের আসল রূপ বুঝতে না পারে। অবন্তিকাও নিজের সন্তান আর জীবনের ভয়ে বাহিরের মানুষের সামনে সুখী দম্পতি হওয়ার নাটক করে।
” পরশু ডেট ঠিক করেছি আমি কারণ এরপর কিছুদিনের জন্য আমার ঢাকার বাইরে একটি অভিযানে যেতে হবে। তোমার এর মধ্যে জরুরি কোনো কাজ থাকলে আজ কালের মধ্যে সেরে ফেলো।” (আবসার)
অরহান সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।
তবে অরহানের মাথা থেকে কিছুতেই বাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনার স্মৃতি দূর হয় না। মনের মধ্যে এক দ্বন্দ্ব আর অস্থিরতা যেনো বাসা বেঁধে বসেছে। নিরুপমার কথা যেনো কিছুতেই মন থেকে বের করতে পারছে না সে। নিরু যে বিয়ের পর এইভাবে তার হৃদয়ের অস্থিরতার কারণ হবে সেটা আগে বুঝতে পারলে হয়তো অরহান কখনোই তাকে নিজের জীবনে জড়াতো না।
অরহান আনমনেই ভেবে চলেছে,”সকালে আসার সময় আমি এটা কি করলাম? নিরুর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে আরো প্রশ্রয় দিয়ে দিলাম, সীট!”
__________
অরহান ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ তার বাবার কথা মনে পড়ে যায় নিরুর বৌভাত করা হলে তো তাকে লেহেঙ্গা বা শাড়ি কিছু একটা দিতে হবে। অরহান গাড়ি ঘুরিয়ে শপিংমলের দিকে অগ্রসর হয়। অরহান নিজেও জানে না সে কেনো বার বার নিরুর কথা এতো ভাবছে কিন্তু তার ভাবতে ভালো লাগছে সে কিছুতেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
শপিংমলে গিয়ে অরহান পরে আরেক বিপাকে। এসব মেয়েদের ড্রেসের ব্যাপারে অরহানের তেমন কোনো ধারণা নেই তখনি হঠাৎ অরহানের চোঁখ যায় একটি বেবি পিংক কালারের লেহেঙ্গার দিকে। অরহান মনে মনে নিরুকে এই লেহেঙ্গায় কল্পনা করতে থাকে। অবশেষে অরহান এই কালারটাই নিরুর জন্য চয়েস করে।
____________
জানালা দিয়ে অরহানের গাড়ি আসতে দেখে নিরুপমা মুখ ভেংচি দেয়। “আবার এই অসভ্য লোকটার সামনে গিয়ে মেকি হাসি হাসতে হবে, উফফ।”
নিরুপমা দরজা খুলে দেয়। অরহানের হাতে শপিং ব্যাগ দেখে নিরুপমা উৎসুক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।
“কি এইটা ?” নিরুপমা ব্যাগে হাত দিয়ে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করে। অরহান ব্যাগটা নিরুপমার হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে নেয়।
“বাসায় ভালোমতো ঢুকলামও না বাঁদরামি শুরু করে দিয়েছো। এখন তোমার স্বামীপ্রেম কোথায় গেলো? যাও আমার জন্য শরবত বানিয়ে নিয়ে এসো।”
নিরুপমা মনে মনে অরহানের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে শরবত বানাতে চলে যায়।
“অসভ্য লোক। আমার খুশি দেখতে পারে না। কি এনেছে দেখালে কি হতো? ইচ্ছে করছে শরবতে থু থু দিয়ে দেই। নিতান্তই ভালো মানুষ বলে ছেড়ে দিলাম ,হুহ্ “( নিরুপমা)
নিরুপমা অরহানের দিকে শরবত এগিয়ে দিয়ে দৌঁড়ে বিছানায় রাখা শপিং ব্যাগ ঘাটতে থাকে।
অরহান নিরুপমার কাণ্ড দেখে মনে মনে হাসতে থাকে।
” এতো কৌতূহল কেনো এই মেয়েটার?” ( অরহান)
নিরুপমা লেহেঙ্গা আর সাথে ম্যাচিং করা অর্নামেন্টস দেখে খুশি হলেও কিছু একটা ভেবে মুখ কালো করে ফেলে।
“কি হলো মুখ এমন করছে কেনো? পছন্দ হলো না নাকি?”( অরহান মনে মনে ভাবতে থাকে)
নিরুপমা অরহানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,”এগুলো কেনো এনেছেন? আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে কি আরেকটা বিয়ে করবেন আপনি? আবার কোন অসহায় মেয়েকে ধরে আনার প্ল্যান আপনার?”
নিরুপমার এই বোকা বোকা কথা শুনে অরহান নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না হো হো করে হেঁসে দেয়।
নিরুপমা আজ প্রথমবার অরহানের সত্যিকারের হাসিমুখ দেখলো। অরহানকে নিরু সবসময় গোমড়া মুখে দেখেই অভ্যস্ত। একটা মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর হয়তো হাসিতেই লাগে। কিন্তু নিরুপমার এই মুহূর্তে অরহানের হাসি ভালো লাগলো না। সে টান দিয়ে অরহানের হাত থেকে শরবত এর গ্লাস নিয়ে নিলো।
অরহান এইবার নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,” তুমি সত্যিই বোকা নিরু। আর আমার হাত থেকে শরবত নিয়ে নিলে কেনো? আবার বেয়াদবি শুরু করে দিলে।”
“আপনি যদি আরেকটা বিয়ে করেন তাহলে কিন্তু আমি…”( নিরুপমা)
অরহান এইবার ডেভিল একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু কি? কি করবে তুমি?”
“আপনার শরবতে থু থু দিয়ে দিবো” (নিরুপমা)
অরহান নিরুপমার এই কথা হজম করতে পারে না।
“ছিঃ নিরু! কি খচ্চর তুমি! এক মিনিট তুমি কি রান্না করার পর জিদ করে আবার খাবারে থু থু দিয়ে দাও নাকি? ইসসসস, ইয়াক!”( অরহান)
“যা ভেবে খুশী হন তাই ভাবতে পারেন” ( নিরুপমা)
“পরশু তোমার বৌভাত অনুষ্ঠান করবেন বাবা। এইজন্য আমি এই লেহেঙ্গা তোমার জন্য নিয়ে এসেছি বোকা মেয়ে।”( অরহান)
নিরুপমা এইবার ধরা খায়। সে ভাবতেও পারে নি তার জন্য অনুষ্ঠান করা হবে। নিরুপমা ফ্যালফ্যাল করে অরহানের তাকিয়ে তার দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দেয়।
“এই নিন প্রাণপ্রিয় স্বামী?”( নিরুপমা)
“হয়েছে আর ন্যাকামি করতে হবে না। আর এই শরবত তুমিই খাও। কে জানে থু থু দিয়েই নিয়ে এসেছো নাকি ধমক খেয়ে।” ( অরহান)
অরহান হাতের ঘড়ি খুলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
নিরুপমা শরবত খেতে খেতে মনে মনে ভাবে,” যাক ভালোই হয়েছে এখন আমাকে দিয়ে কাজ করানোর আগে একশবার ভাববে।”
অরহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিরুপমা আয়নার সামনে লেহেঙ্গা নিজের গায়ে জড়িয়ে দেখছে। নিরুপমা অরহানকে খেয়াল করেনি। একটু জোড়ে জোড়েই নিরুপমা বলে উঠে,” যাক এই কাঠখোট্টা মেজরটার রুচি একটু হলেও আছে।”
“কি বললে তুমি?” ( অরহান)
নিরুপমা অরহানকে দেখে চমকে যায়। অরহানের সামনে থেকে একটু একটু করে পিছাতে থাকে। তবে অরহান নিরুর একদম কাছে এসে পড়ে।
“আমার সামনে পিরিত দেখিয়ে আমার অবর্তমানে বদনাম করে বেড়াও। একটা কূটনী বুড়ী তুমি নিরু।”( অরহান)
নিরুপমা চোখ মুখ ফুলিয়ে অরহানের কথা হজম করে যাচ্ছে। অরহান স্পষ্ট বুঝতে পারছে নিরু রেগে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। নিরুর ফুলে থাকা গাল দেখে অরহান নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না। টুকুস করে নিরুর গালে একটা চুমু দিয়ে দেয়। নিরুপমা চোখ বড় বড় করে ফেলে। অরহান নিরুপমাকে নিজের আরো কাছে এনে আদর করতে নিতেই যাবে তখনি অরহানের বাবার ডাক পড়ে যায়।
বাড়ির ভেতর পা রাখা মাত্রই আধিপত্য দেখানো শুরু করেছেন আবসার। অরহান আর নিরুপমাকে কাজের লোক দিয়ে ডেকে ড্রয়িংরুমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অরহান নিরুপমাকে নিয়ে তার বাবার কাছে গেলে আবসার কর্কশ কন্ঠে শুধায়,” শুনো মেয়ে , তোমার মতো অজপাড়া গায়ের মেয়ের জন্য পরশু বৌভাতের অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হচ্ছি। অনুষ্ঠানে অনেক বড়ো বড়ো অফিসাররা উপস্থিত হবেন। যথাসম্ভব স্বাভাবিক আচরণ ও মিষ্টি ব্যবহার করবে। কেউ যেনো উল্টো পাল্টা কিছু বুঝতে না পারে। আর এই শাড়ি নাও এটা বৌভাতের দিন পড়বে।তোমার জন্য অহেতুক টাকা খরচ করে গহনা কিনে লাভ নেই তাই অবন্তিকার গহনা গুলো পড়বে আবার অনুষ্ঠান শেষে ফেরত দিয়ে দিবে।”
অবন্তিকাও সোফার পাশে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। করুন চোখে নিরুর নিকে তাকিয়ে ইশারায় সান্ত্বনা দেয় সে।
নিরুপমা মাথা নাড়িয়ে শাড়িটা হাতে নিয়ে অরহানের দিকে তাকায়। অরহান নিরুপমার চোঁখের দৃষ্টি বুঝতে পেরেও কোনো প্রতিক্রিয়া না করে নিজের রুমে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর নিরুপমা রুমে প্রবেশ করে অরহানকে ভেতরে দেখতে না পেয়ে বারান্দার দিকে দৃষ্টিপাত করে অরহানকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। নিরুপমা গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় গিয়ে অরহানকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে,” এখন আমি কি করবো ? আপনার দেওয়া লেহেঙ্গা পড়বো নাকি বাবার দেওয়া শাড়ি?”
অরহান গম্ভীর কণ্ঠে শুধায়,” অবশ্যই বাবা যেটা এনেছেন সেটাই পড়বে।”
নিরুপমা অরহানকে আর না ঘেঁটে রুমের ভেতর চলে যায়। কিন্তু অরহান বারান্দায়ই দাঁড়িয়ে থাকে । অরহানের মন মেজাজ পুরুপুরিই বিগড়ে গেছে। সে তীব্রভাবে চেয়েছিলো নিরু তার পছন্দ করে আনা লেহেঙ্গাটাই পরিধান করুক। কিন্তু তার কিছুই করার বা বলার নেই।
অরহান নিরুপমার কাছে গিয়ে তাকে আষ্টেপিষ্টে আঁকড়ে ধরে। অরহানের সমস্ত অস্থিরতা যেনো নিরুর সান্নিধ্য পেলে দূর হয়ে যায়। নিরু অরহানকে এখন আর কোনো বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে না। উল্টো আরো উস্কানি দেয়। অরহান নিরুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে নিজের অস্থিরতা কমানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে গেলো।
কিন্তু অরহান কি আর জানে এই অদ্ভূত দমবন্ধ করে দেওয়া অস্থিরতা বা অনুভুতি তার আজীবনের সঙ্গী হয়ে যাচ্ছে।
চলবে…
( ভুল /ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🌸)