আমার বর,পর্ব: ০১

0
3952

আমার বর,পর্ব: ০১
লেখা : মিশু মনি

ঘুম থেকে উঠেই শুনি আজ আমার বিয়ে!
যতবেশি অবাক হয়েছি,তারচেয়ে বেশি বিব্রত বোধ করছি।আচমকা নিজের বিয়ের কথা শুনলে কেমন লাগে?
কিন্তু ব্যাপার সেটা নয়,আসল কথা হচ্ছে বর নাকি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। বিদ্যুতের খুটির মত লম্বা।আর আমার যে উচ্চতা, তার পাশে দাড়ালে মনে হবে ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে বনমানুষ দাড়িয়ে।
চেঁচামেচি শুরু করে দিলাম। আম্মু বলল,ছেলে খুব সুন্দর। তোর পছন্দ হবে।
– আচমকা বিয়ে ক্যান?
– বিয়ের অনুমতি পাইছে।আর তাছাড়া ছেলের আব্বা আম্মা এই সপ্তাহেই হজ্বে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্যই…
– কিন্তু আম্মু,ছেলের হাইট এত বেশি যে আমাকে তার পাশে মানাবে না।
– ছেলে যখন রাজি,তোর অসুবিধা কি?
– ছেলে নিশ্চয় মানসিক সমস্যাগ্রস্ত।
– ছেলে ভালো।সে বাবার মতের বাইরে যাবেনা।ওর বাবার ইচ্ছে তোকে মেয়ে বানাবেন।
– তাহলে তুমি বরং ওই মুরুব্বি কে বিয়ে করে ফেলো। আমি ওনাকে আব্বা বলব।
আম্মু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,পাগলী। এমন পাত্র হাতছারা করলে পাপ হবে।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আম্মু বেরিয়ে গেল।
.
অনেক কষ্টে ছেলের মোবাইল নাম্বার জোগার করে কল দিলাম। যদি বিয়ে টা আটকানো যায়,কিন্তু মোবাইল বন্ধ।
অবশেষে হবু শ্বাশুরি মাকে কল দিয়ে আমার আপত্তির কারন জানালাম। তিনি বললেন,পেন্সিল হিল পড়ে একসাথে বের হবা।
– কিন্তু আনটি,ও যখন অফিসে বের হবে,ওর কপালে এক টা চুমু দেয়ার মত ভাগ্য আমার হবেনা।
– কেন হবেনা? টুলের উপর দারিয়ে চুমু দিবা।
.
অনেক চেষ্টা করেও কিছুই লাভ হল না।পাত্রের নাম তন্ময়।সবারই খুব পছন্দ হয়েছে।
আমি পড়েছি মহা যন্ত্রনায়।কিছুদিন আগে এক বৃদ্ধকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। নিজের রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছিলাম। তিনিই এখন আমার শ্বশুর হওয়ার ইচ্ছে পোষন করেছেন। হজ্ব করতে যাবেন, সকলেই তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়েতে মত দিয়েছেন। আমার ব্যাপার টা কেউ বুঝল না।
.
কবুল বলার পর একসাথে খেতে বসলাম। তখন আমার বরকে ভালো ভাবে দেখলাম। ওর চোখে যেন আগুন ঝরছে।হয়ত ওকেও জোর করে রাজি করানো হয়েছে।জানিনা কি আছে কপালে!
.
রাত সাড়ে দশ টায় শ্বশুরবাড়িতে পৌছলাম।
ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলাম।
.
আমার আখাম্বা বর রুমে ঢুকেই আমাকে আপাদমস্তক দেখতে লাগল।
তারপর বলল,short মেয়েদের ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে।আর তুমি আমার short বউ।তুমি এখন মহা এলার্জি।
– জেনে শুনে বিয়ে করেন নাই?
– বিয়ের কথা অনেক আগেই শুনেছি।short বলে contact করার ইচ্ছা হয়নি।
– তাহলে বিয়ে করলেন কেন? আজব তো! আমি তো আজ সকালে উঠে জানলে পারলাম আমার বিয়ে!
– তুমিতো intelligent গার্ল।ছেলে defence এ job করে শুনেই নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেলা।নিজের হাইট টা দেখবা না?
– অনেক চেষ্টা করেছি।কাজ হয়নি।আপনার এলার্জি থাকলে বিয়ে করার কি দরকার ছিল? বাবাকে বলতে পারতেন কথা টা।
– আব্বু হজ্বে যাচ্ছেন। শেষ ইচ্ছে পুর্ন করব না?
– তাহলে এখন আমাকে কথা শুনাচ্ছেন কেন? আর আপনার বাবা তো আমায় দেখেছেন। তিনি কেন এক টা short মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে গেলেন?
– ওই যে রক্তের ঋণ শোধ করবেন বলে।
– এভাবে ঝগড়া করতে থাকলে ঋণ শোধ হবে?
– তাহলে কি তোমাকে নিয়ে শুয়ে পড়ব?
আমি বললাম,আপনি কি করবেন জানিনা।আমি শোব।ঘুম পাচ্ছে।
– আমার ভিতরে আগুন জ্বলছে আর তোমাকে ঘুমাতে দিবো?
– তাহলে কি ফায়ার সার্ভিস ডাকব?
– যা খুশি করো।আমি তোমাকে মেনে নিতে পারব না ব্যস।
– তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিন।
– ডিভোর্স দেয়ার জন্য বিয়ে করছি?
– তাহলে কি ঝগড়া করার জন্য বিয়ে করছেন?
– নাহ।রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য বিয়ে করছি।
– ছাড়তেও চান না,মানতেও চান না।এক টা সিদ্ধান্তে তো আসতে হবে?
– বাহ! বিয়ের রাতেই ডিভোর্স চাইছ,লক্ষি মেয়ে তুমি।
– দেখুন আমার দিক থেকে কোনো অসুবিধা নাই।আপ্নিই তো অপমান করছেন।
– তাহলে কি করব? নিজের হাইট টা তো দেখবা।
– অনেক চেষ্টা করছি বিয়ে আটকাতে। পারিনি।যদি আমার বয় ফ্রেন্ড থাকত,অবশ্যই পালিয়ে যেতাম। আপনার গার্ল ফ্রেন্ড ছিল না?
– ছিল even এখনো আছে।পুরা ক্যাটরিনা কাইফের মত দেখতে।হাইট ৫ ফুট ৫.
– আবারো আমাকে অপমান করছেন। আপনি কি চাচ্ছেন আমি নিজেই আপনাকে ছেড়ে দিই?
– যদি বলি তাই?
– ওকে।আপনার আব্বা আম্মা হজ্ব থেকে ফিরে আসুক,then সিদ্ধান্তে আসা যাবে।
– ওকে ডান।
.
আমি ব্যাগ থেকে হেডফোন বের করে গান শুনতে লাগলাম। এরকম কিছু ঘটতে পারে ভেবে সারাদিনে নিজেকে প্রস্তুত করেই রেখেছি যাতে এখন কষ্ট না হয়।
.
তন্ময় চিৎকার করে বলল,কোথায় শোব?
– চিল্লাচ্ছেন কেন?
– চারবার বলেছি।শুনতে পাওনি।
– আমার পাশে ঘুমান।
– impossible.
– তাহলে ওয়াশরুমে গিয়ে ঘুমান।
-কথা কম বলবা।এটা আমার বাড়ি।
– আমি এ বাড়ির বউ।
চুপ করে গান শুনতে লাগলাম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here