আমার হৃদয়ে তুমি,পর্বঃ৮
Tanisha Sultana (Writer)
আজ তিশার বিয়ে। শাশুড়ী মা মারুকে শাড়ি গহনা দিয়ে গেছে। মারু ওগুলো হাতে নিয়ে বসে আছে। পরবে কি পরবে না ভাবছে। পান্ত রুমে আসে। মারু পান্তর সামনে দাঁড়ায়
“বলছিলাম আমি কি বিয়ের ওখানে যাবো
” তোমার ইচ্ছা। আর সব বিষয়ে পারমিশন নিয়ে তুমি কি এটা বোঝাতে চাও তুমি আমার কথা ছাড়া এক পা সরো না
“তা না
” হুম তাই মারু। এসব করে তুমি যদি আমায় ইমপ্রেস করতে চাও তবে তুমি ভুল করছো।
মারুর এবার রাগ হয়
“আমি আপনার বউ গার্লফ্রেন্ড না যে আপনাকে ইমপ্রেস করবো। ইমপ্রেস করার জন্য আমি কিচ্ছু করছি না। আমি একটা ভুল করেছি তার জন্য সরিও বলেছি। আরে ফাঁসির আসামির শেষ কথাটাও শোনা হয় আর আপনি
” তোমার কি মনে হয় না তুমিও ফাঁশির আসামির থেকে কম নও। খুনি তুমি
মারু এবার চুপ হয়ে যায়।
“লিসেন মারু তুমি যে কয় দিন এখানে থাকবে আমার রহ্মিতা হয়ে থাকবে। বউ হয়ে না। সো তোমার যা ইচ্ছে করতে পারো। আই ডন্ট কেয়ার।
” পান্ত তুমি এটা বলতে পারলে
“হুম পারলাম। যখন তুমি আমাকে কুকুর ছোটলোক এগুলো বলতে। তখন তুমি কি করে বলতে পারতে
” এতোটা অপছন্দ করো
“তুমি যতটা ভাবো তার চেয়েও বেশি
” এতোটাই অপ্রিয় আমি
“অপ্রিয় কি না জানি না। তবে তুমি নিজেই নিজের সম্মান নষ্ট করেছো। আমার পরিবারের কেউ যদি জানতে পারে তুমিই সেই মেয়ে তোমাকে কাঁচা গিলে খাবে। সো বিকেয়ারফুল
আর হ্যাঁ সবার সাথে নরমাল বিহেব করো না কেনো? তুমি সবাই কে এটা জানাতে চাও আমি তোমার সাথে বাজে বিহেব করি
” নাহহহ
“তাহলে নরমাল বিহেব করবা। আর এতো আমার পিছু ঘুরবা না বিরক্ত লাগে
পান্ত চলে যায়
বিশ্বাস কাঁচের দেয়ালের মতো। একবার ভেঙে গেলে আর জোরা লাগে না। যদিও জোরা লাগে তার মাঝে দাগ গুলো থেকেই যায়। পান্তর বিশ্বাস ভেঙে গেছে যা কখনো জোরা লাগার নয়।
মারু কেনো রকম শাড়ি গহনা পরে অনুষ্ঠানে যায়। সবার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলে। পান্ত ওর বন্ধুদের সাথে মজা করছে। মারু নামের কেউ আছে সেদিকে খেয়াল নেই।
” মারুফা
বাবা মাকে দেখে মারু বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। মারুর বাবা হকচকিয়ে যায়। মারু সাধারণত কখনো কাঁদে না। যত কষ্টি হোক
“মা কি হয়েছে বল আমায়
মারু বাবাকে ছেড়ে চোখ মুছে বলে
” অনেক দিন পরে তোমাদের দেখলাম তাই কান্না করে দিয়েছি।
মারু বাবা মায়ের সাথে গল্প করতে থাকে। মারুর মা মারুকে পানি আনতে পাঠায়। মারু পানি আনার জন্য যেতেই শাশুড়ী ডাকে
“হুম মা বলো
” কি হয়েছে তোর
“কই কিছু না তো
” মিথ্যে কেনো বলছিস
“সত্যি কিছু হয় নি
” পান্তর সাথে ঝামেলা হয়েছে
“নাহহহ
” পান্ত তোকে ভালোবাসে
“জানি না
” এটা কেমন কথা
“বাবা পানি খাবে
” এরিয়ে যাচ্ছিস
“তুমি আমাকে যে প্রশ্ন করছো তার উওর আমার জানা নেই
” কেনো?
“সময় হলে বলবো
মারু চলে যায়। রাফিনের মুখোমুখি হয়
“তুমি এখানে?
” এখানে এসে কি ভুল করে ফেললাম না কি
“রাফিন এটা আমার শশুরবাড়ি তুমি এখানে আসতে পারো না
” এটা তোমার শশুরবাড়ি হয়ে গেলো।বাহহহ মারু দারুণ। এতোদিন আমাকে স্বপ্ন দেখালে আমার সাথে পালাবে আর এখন আমার সাথে কথাি বলো না। সমস্যা কি তোমার
“রাফিন আমি
” কি তুমি? দেখেছো পান্ত আমার থেকেও বেশি স্মার্ট পয়সাওয়ালা এখন পান্তকে মনে ধরেছে। যে পান্তকে তুমি দুচোখে সয্য করতে পারতে না। পথ থেকে সরানোর জন্য বিষ খাইয়ে দিছিলে সেই পান্ত তোমার বর হয়ে গেলো। রাতারাতি তুমিও তার দেওয়ানা হয়ে গেলে।
কিভাবে পারো তুমি? তোমার থেকে শেখা উচিৎ। একটা মেয়ে কতোটা খারাপ হলে এমন করতে পারে
“তুমি পান্তকে বিষ খাওয়াতে বলেছিলে
” তো তুমি খাইয়ে দিলে। এখন তো বলছি চলো আমার সাথে যাচ্ছ না কেনো?
“রাফিন যাও এখান থেকে
” গেলে তোমায় নিয়ে যাবো
“আমি যাবো না
মারু দৌড়ে চলে যায় ওখান থেকে। নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
পান্তর হাসির শব্দে মারু সামনে তাকায়। পাগলের মতো হাসছে পান্ত
” আপনি এভাবে হাসছেন কেনো?
“আমার বউ একটা ছলনাময়ী তাই হাসছি। কতো ভালো কপাল আমার
” আমি রাফিনকে
“ডেকেছিলে। দুইজনকেই নাচাতে চেয়েছিলে কিন্তু রাফিন হাত ছাড়া হয়ে গেলো। এবার রাফিন সামজ ভাইয়ের এই গানটা গাইবে
গল্প গুলো সব মিথ্যে ছিলো বুঝতে পারি নি আমি
মিথ্যে সপন দেখিয়ে কোথায় হারালে ওরে ছলনাময়ী
বুকে জড়িয়ে কেঁদে বলেছিলে আমায় ছেড়ে যেনো না
কোথায় গেলো তোমার মিথ্যে কান্না এখন কি মনে পরে না।।।।।
“আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো এবার রাফিনেরটা শেষ করবে। আই হেট ইউ মারুফা ইয়াসমিন। হেট ইউ
” আমি কিচ্ছু করি নি
“আমি ভাবতাম তুমি কিচ্ছু করো নি। কিন্তু বিয়ের পরও তুমি কন্টিনিউ রাফিনের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছ এটাকে কি বলবে। কেনো করো এমন? কিসের অভাবে? মারু একটা সময় তো মানুষ একটু পরিবর্তন হতে চায়,ভালো হতে চায়। তোমার মনে হয় না এভাবে আর কতোদিন চলবে। আমার ভালো হওয়া উচিৎ। বদলানো উচিৎ।
” আমি মরে গেলে ভালো হয় তাই না
“হুম খুব ভালো হয়। এই শহরে ছলনাময়ীর জায়গা নেই। মরে যাও তুমি। আই ডোন্ট কেয়ার। আমি তো হাঁপ ছেড়ে বাঁচবো।
পান্ত বেরিয়ে যায়। মারু কান্না করে।
পান্ত চলে গেছে একসপ্তাহ হলো। মারুফা পান্তদের বাড়িতেই থাকে। পান্ত একবারের জন্যও মারুফার খোজ নেয় নি। এদিকে মারুফা কয়েকদিন যাবৎ বমি করছে। মাথা ঘুমছে৷ শাশুড়ী আজ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলো ডাক্তার বলেছে মারু প্রেগন্যান্ট। কথা শুনে সবাই খুব খুশি। শুধু মারুফার মুখে হাসি নেই
আরও দুদিন কেটে গেলে। পান্তকে জানানো হয়েছে কথাটা তবুও পান্ত আসলো না। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মারু
” আমিই একমাত্র অভাগা নারী যার প্রেগন্যান্সির খবর পেয়েও বর একবার খবর নিলো না। জানতে চাইলো না আমি কেমন আছি। এরকম লাইফের থেকে মরে যাওয়াও ভালো।
“মারু
মারু চোখ খুলে পেছনে তাকিয়ে দেখে পান্ত। মারুর চোখে মুখে হাসির ঝলক ফুটে ওঠে
” যদি তুমি বাচ্চাটাকে নষ্ট করতে চাও তবে আমি তোমায় হেল্প করবো। আমার একটা ভুলের জন্য তোমার ফিউচার নষ্ট হয়ে যাক এটা আমি চায় না।
মারু দৌড়ে গিয়ে পান্তর পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে
“আমি বাচ্চাটা নষ্ট করতে পারবো না। প্লিজ এমন করবেন না
” আমি একজন বেইমানের গর্ভে আমার সন্তানকে রাখতে চায় না।
“আমি ভালো হয়ে যাবো। একজন ভালো মা হবো।
” পারবি না রে
“একটা সুযোগ দাও পান্ত। একটা সুযোগ। এই নিষ্পাপ বাচ্চাটার জন্য
পান্ত মারুকে উঠায়।
” ঠিক আছে একটা সুযোগ দিলাম কিন্তু এর পর কিছু দেখলে আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য দুরে সরিয়ে দেবো।
মারু মুচকি হেসে পান্তকে জড়িয়ে ধরে
মান অভিমানের পালা শেষ করে পান্ত মারুর নতুন জীবন শুরু হয়৷ আগলে রাখে পান্ত মারুকে। অনেক অভিমান অভিযোগ প্রতিশোধ নেওয়ার বাকি ছিলো কিন্তু একটা খবর সব পাল্টে দিলো। মারুকে মারুর সম্মান ফিরিয়ে দিলো। হয়ত মারু এখন ভালো হয়ে যাবে। এই ছোট্ট প্রানটা তার বেইমান মাকে একজন শ্রেষ্ঠ মা বানিয়ে দেবে।
পান্ত আজ মারুর জন্য একটা শাড়ি কিনে নিয়ে আসে। এই প্রথম মারুকে ভালোবেসে কিছু গিফট করবে। রুমটা অন্য রকম করে রুমটা সাজায়। বাবুদের ছবি দিয়ে সাজায়। কিছু ফুলও আনে। আজ পান্ত তার বেবির আম্মুকে প্রপোজ করবে। ভালোবাসি বলবে।
মারু ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে
“থ্যাংক্স সোনা। আমাকে এতো ভালো একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য। তোমার পাপার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেনো জানি আমার মনে হচ্ছে এতো ভালোবাসা বেশি দিন থাকবে না। আমি তোমার পাপার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। আমি অন্যায় করেছি। তার ফল আমাকে ভোগ করতে হবে। আচ্ছা আমি যদি মরে যাই তাহলে কি তুমি তোমার পাপা আমাকে মিছ করবে। এই ছলনাময়ীর কথা মনে পরবে। না কি আমার মতো বেইমান মায়ের কথা পান্ত কখনো ওর সন্তানকে জানতে দেবে না।
পেটে হাত দিয়ে আনমনে মারু বলছে
চলবে