আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১০

0
9548

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১০
Tanisha Sultana

“বোরকা খোলো
জিহাত খাটের ওপর বালিশে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বলে। রাই চমকে ওঠে

” বোরকা কেনো খুলবো?
থেমে থেমে বলে রাই।

“বাড়িতে মানুষ বোরকা পড়ে থাকে?
জিহাত সোজাসুজি বলে। রাই আমতাআমতা করে বলে
” নাহহহ

“তাহলে? তারাতাড়ি খুলো

রাই বিছানা থেকে নেমে বোরকা খোলে। ওড়না গলায় পেচিয়ে দৌড় দিতে যায় তার আগেই জিহাত হাত ধরে ফেলে।

” কোথায় যাচ্ছো আমার অনাগত বেবির মা?

রাই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে
“আসসলে আআআমার খুব খখখখিদে পেয়েছে।

জিহাত একটানে রাইকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রাই জিহাতের বুকে হুমড়ি খেয়ে পরে। জিহাতের উন্নক্ত বুকে ঠোঁট লেগে যায় রাইয়ের। দুইজনেই কারেন্টের মতো শক খায়। রাই সরে আসতে যায় কিন্তু জিহাত শক্ত করে ধরে রাখে। রাই জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। রাইয়ের শ্বাস জিহাতের বুকে বারি খায়।

” একটা কথা বলো তো?
জিহাত রাইকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলে। রাই পিছিয়ে গিয়ে বলে

“কিহহহহ

” ভালোটালো বেসে ফেলছো না কি আমাকে?
দুই হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে বলে জিহাত।

রাই এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। “ভালোটালো বেসে ফেলছো না কি” কথাটা কানে বাজছে। “নাহহ ভালো বাসবো কেন? আমি তো জাস্ট আপির ফিউচার বরকে সোজা করার জন্য করেছি” কথা গুলো বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু গলায় আটকে যাচ্ছে কথাগুলো। মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। শুকনো একটা ঢোক গিলে।

জিহাতের দিকে তাকাতেই জিহাত ভ্রু নাচায় মানে উওর চাইছে। রাই চোখ আবার নামিয়ে নেয়।

“না আসলে আআমি

“আসলে নকলে পড়ে শুনবো। আগে স্ট্রেট এন্সার দাও

রাই এবার খুব বিপদে পড়েছে। কি করবে ভাবছে।

জিহাত রাইয়ের পাশে বসে।
“এতো ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমার উওর চায় না। কিন্তু বাবা আমি হবোই

রাই আবার চোখ বড়বড় করে তাকায় জিহাতের দিকে। জিহাতের মুখে বাঁকা হাসি।
রাই কিছুটা পিছয়ে যায়। জিহাত রাইয়ের ওড়না টান দিয়ে নিয়ে যায়। রাই এবার কেঁদে ফেলে। শব্দ করে কাঁদে রাই। রাইয়ের কান্না দেখে জিহাত ঘাবড়ে যায়।

” সরি ভেরি সরি রাই। আমি জাস্ট তোমাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম। তুমি কেঁদে ফেলবে ভাবতে পারি নি
বিচলিত হয়ে বলে জিহাত। রাই ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।

“প্লিজ কেঁদো না রাই। কাঁদলে আবার জ্বর আসবে তোমার। প্লিজ কান্না বন্ধ করো।
জিহাত রাইয়ের দুই গালে হাত দিয়ে বলে। রাই জিহাতকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। জিহাত রাইয়ের মাথায় হাত বুলায়। আর কাঁদতে বারণ করে না।
রাই কেনো কাঁদছে এটা রাই নিজেও জানে না। ভীষন কান্না পাচ্ছে। রাইয়ের শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে। জিহাত সেটা খুব ভালো আচ করতে পারছে।

এখন আর রাই কান্না করছে না। শুধু ফুপিয়ে যাচ্ছে। জিহাতের বুকে থাকতে ভালোই লাগছে। নিজেকে নিরাপদ নিরাপদ লাগছে। জিহাত চোখ বন্ধ করে মুহুর্তটাকে উপভোগ করছে। রাই নরেচরে ওঠে। সরে আসতে চায়। জিহাত মাথাটা চেপে ধরে

” চোখ বন্ধ করে মুহুর্তটাকে অনুভব করো।

“ভালো লাগছে না

” ট্রাস্ট মি ভালো লাগবে

রাই আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে নেয়। সত্যিই মুহুর্তটা দারুণ।

“থ্যাংক্স রাই

রাই জিহাতের বুকে মাথা রেখেই বলে
” কেনো?

“আমার ব্রেকআপ করানোর জন্য। আসলে আমিও চাইছিলাম এমনটা হোক কিন্তু কোনো রিজন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সো এতোগুলো ধন্যবাদ।

” ওই মেয়েটা কে?

“মিহির কথা বলছো?

” হবে হয়ত

“আমার বেষ্টফ্রেন্ড বা পার্টনার বলতে পারো। ও কিন্তু আমার গার্লফ্রেন্ড না।

রাই একটু ঠোঁট মেলে হাসে। জিহাত বুঝতে পেরে নিজেও একটু হাসে।

“দাভাই
জেসি হুরমুর করে রুমে ঢুকে বলে।

” ওহহহ সরি সরি ভুল সময় ঢুকে পড়ছি

পেছন ঘুরে বলে জেসি। জিহাত আর রাই ছিটকে পাঁচহাত দুরে চলে যায়। রাই তো লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।

“ততুই এখানে কেনো?

জিহাত দাঁড়িয়ে বলে

” ও এখন কেমন পজিশনে আছিস তোরা?
ওভারে দাঁড়িয়েই বলে জেসি।

“এতো ঢং করার কিছু নেই। বল কেনো এসেছিস?

জেসি জিহাতের দিকে তাকিয়ে বলে

” তোর বউকে নিতে এসেছিলাম। কিন্তু আমি তো আর জানি না তোমারা

জেসি কথা শেষ করার আগেই জিহাত ধমকে বলে

“খুব পাকা হইছিস তুই

“হুমম তা হয়েছি। ভাবি চলো তো আমার সাথে।
জেসি রাইকে টানতে শুরু করে। রাই লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। কিরকম একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে রাই।

” জেসি তুমি যাও আমি আসছি
মাথা নিচু রেখেই বলে রাই। জেসি একবার জিহাতের দিকে তাকায় আর একবার রাইয়ের দিকে।
“ঠিক আছে

জেসি বেরিয়ে যাওয়ার সময় দরজা টেনে দিয়ে যায়।

” ওর সাথে গেলে না কেনো? কিভাববে এখন ও

“ফ্রেশ হবো তাই গেলাম না। এভাবে গেলে সবাই বলবে আমি কেনো কেঁদেছি। আমি যদি বলে দেই আপনি আমার ওড়না টেনে নিয়ে গেছিলেন বলে কেঁদেছি তাহলে তো আপনি লজ্জা পাবেন তাই গেলাম না।

” কথার ফুলঝুরি

“হুমমম

রাই সুতি আকাশি রঙের থ্রি পিছ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। জিহাত সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বেলকনিতে যায়।
সাওয়ার শেষে টাওয়াল দিয়ে চুল পেচিয়ে হাতে ভেজা জামা নিয়ে বের হয়। রুমে জিহাত নেই। হয়ত বেরিয়ে গেছে। খাটের ওপর ওড়না রেখে টাওয়াল চুল থেকে সরাতে সরাতে বেলকনিতে যায়। ভেজা জামাকাপড় রোদে মেলবে বলপ।জিহাত সবে ধোঁয়া মুখে নিয়ে আকাশে ওড়াবে। তখন রাইকে দেখে থেমে যায়।
ভেজা চুলে কাউকে এতো রূপসী লাগতে পারে সেটা রাইকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না।

রাই বেলকনির দরজায় গিয়ে জিহাতকে দেখে থমকে যায়। জিহাত হা করে তাকিয়ে আছে। হাতে আধখাওয়া সিগারেট। রাই জিহাতকে পাশ কাটিয়ে বেলকনির রেলিং এ জামা মেলতে থাকে। জিহাত তখনও তাকিয়ে আছে

” আমি সিগারেট না খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো?

“সিগারেটের থেকে তোমাকে বেশি ভালো লাগছে।
মুচকি হেসে বলে জিহাত।

রাই বালতিটা হাতে নিয়ে জিহাতেী দিকে ঘুরে বলে
” ঢং দেখে বাঁচি না। সরেন
জিহাত রাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে

“যদি না সরি

” তাহলে ধাক্কা দিয়ে চলে যাবো
বলেই একটা ভেংচি কেটে জিহাতকে ধাক্কা দিয়ে রুমে চলে আসে। জিহাত বুকের পা পাশে হাত দেয়।
“এই মেয়েটা আমায় পাগল করে ছাড়বে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here