আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১১

0
9305

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১১
Tanisha Sultana

রাই চুলটা আঁচড়িয়ে বাইরে বের হয়। শরীরে হালকা হালকা জ্বর অনুভব করছে। খিদেও পেয়েছে প্রচুর। ওড়নাটা মাথায় দেয়। রাই ওর মাকে দেখে রাইয়ের দাদু বাড়ির মানুষের সামনে গেলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে যায়।
জিহাতের বাবা কয়েকদিনের জন্য ঢাকা যাচ্ছে। ব্যাগপএ গুছিয়ে রাই আর জিহাতের জন্য অপেক্ষা করছে। রাই নিচে নামতেই তিনি বলে

“আসি রাই। সাবধানে থেকো।

” আপনিও সাবধানে যাবেন

“বলছি জিহাত কি করছে?

” আমি কি ডাকবো ওনাকে?

“না রে মা। ও আসবে না। হয়ত ভালো বাবা হতে পারি নি
হতাশার নিশ্বাস ফেলে জিহাতের বাবা। রাইয়ের খুব খারাপ লাগে।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে জিহাতের রুমের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে যায় জিহাতের বাবা।
প্রায় সন্ধা হয়ে গেছে। কাকিমা আর জিহাত মা হাঁটতে বের হইছে। জেসি একটু বেরিয়েছে। রাই কিচেনে খাবার খুঁজে কিন্তু পায় না। হতাশ হয়ে রুমে চলে যায়।
জিহাত রুমে নেই। নিশ্চয় বেলকনিতে আছে। রাই বেলকানিতে যায়। দেখে জিহাত এখনো সিগারেট খাচ্ছে। ফ্লোরে বসে গ্রিলে হেলান দিয়ে বসে। ফ্লোরে সিগারেটের খোলা ছাই সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

“আপনি এখনো সিগারেট খাচ্ছেন?
দরজার কাছে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলে রাই।

জিহাত সিগারেটের ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে বলে
” এটাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড

“আপনার বাবা ঢাকা গেলো জানেন?

” বাদ দাও

“কেনো?

“আমার পারসোনাল লাইফে প্লিজ তুমি ঢুকো না

রাই চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নেয়।
“কেনো ঢুকবো না? আর ঢুকলে কি করবেন? বকবেন ধমকাবেন? জানেন কতো কষ্ট পায় আপনার পরিবার? আপনার বাবা বারবার আপনার রুমের দিকে তাকিয়ে ছিলো

“যখন আমি কষ্ট পেয়েছি তখন কেউ ছিলো না। তোমাকে বকতে তোমার সাথে অশান্তি করতে আমার ভালো লাগে না। কয়েকদিন পরে তো চলেই যাবে তাহলে এখন এতো গিন্নি হয়ে কি লাভ বলো
জিহাত তো ঠিকি বলেছে।

রাই রুমে চলে আসে। খাটে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরে। কিছুখনের মধ্যেই জ্বর চলে আসে।
জিহাত পুরো এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করে রুমে এসে দেখে রাই ঘুমিয়ে গেছে। রাইয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর এসেছে তবে একটু একটু।
জিহাত মদের বোতল নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। গ্লাসে মদ ঢেলে বসে আছে জিহাত। একটা মন খেতে চাইছে আর একটা মন বলছে মদ খেলে তুই মাতাল হয়ে যাবি তখন যদি রাইয়ের জ্বর বেরে যায় তখন রাইকে কে দেখবে?

জিহাত গ্লাসে ঢালা মদ আবার বোতলে ঢেলে রুমে চলে আসে। রাই এপাশ ওপাশ করছে।
জিহাত বুঝতে পারে ওর খিদে পেয়েছে তাই কিচেনে চলে যায়। জিহাতের মা খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলো জিহাতকে দেখে জিহাতের দিকে তাকায়।
জিহাত কয়েকবার জেসিকে ডাকে।

“জেসি বাসায় নেই। তোমার কি লাগবে আমাকে বলতে পারো
যযদি তুমি চাও
মাথা নিচু করে বলে জিহাতের মা

” খাবার লাগবে
মুখ ঘুরিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে জিহাত। জিহাতের মা খুশি হয়ে তারাহুরো করে খাবার বারে। এই প্রথমবার তার ছেলে তার কাছে খাবার চাইলো।

“এই যে

জিহাতের সামনে খাবার ধরে বলে জিহাতের মা

” ধন্যবাদ
বলেই খাবার নিয়ে রুমে চলে যায় জিহাত। রুমে এসে দেখে রাই পেটে হাত দিয়ে খাটের মাঝখানে বসে আছে

“ঘুম ভেঙে গেছে

রাই জিহাতের দিকে না তাকিয়েই গাল ফুলিয়ে বলে
” আমার পারসোনাল লাইফে প্লিজ ইন্টরফেওর করবেন না

রাইয়ের কথায় জিহাত একটু হাসে। টেবিলে খাবার রেখে রাইয়ের সামনে বসে

“ভালোই তো নকল করতে শিখে গেছো

রাই জিহাতের দিকে পেছন ঘুরে বসে।

” সরি রাই

“কিসের সরি? কে আমি আপনার?
রাইয়ের এমন প্রশ্নে জিহাত ঘাবড়ে যায়।

” এটা কেমন প্রশ্ন?

রাই জিহাতের দিকে তাকিয়ে বলে

“এটাই প্রশ্ন। কে আমি বলুন?

” তুমি আমার ব

“বেস্ট ফ্রেন্ড তো? আমি মনে করি কালেমা না পড়ে তিন কবুল না বললে কখনো বিয়ে হয় না। আপনার আর আমার এটা কোনো বিয়েই না। জাস্ট আপনার জেদ আর আমার শাস্তি।

জিহাত মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।

” আমি আপনাকে বন্ধু মনে করি। আপনিই তো বলেছিলেন আমরা ফ্রেন্ড।

“হুমম

” তাহলে আমাদের মধ্যে এতো সিক্রেট কেনো? কেনো পারেন না আপনার মধ্যে থাকা সব কথা আমাকে বলে দিতে? আমি কি আপনার রিয়েল বন্ধু হতে পারি নি? না কি আমাকে বিশ্বাস করেন না?
একদমে কথাগুলো বলে দম নেয় রাই। জিহাত রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে

“কি হলো তাকিয়ে আছেন কেনো?

” তুমি আমার কষ্ট গুলো ভাগ করে নেবে? আমার হাতটা শক্ত করে ধরবে? পাশে থাকবে আমার?

রাই জিহাতের হাত ধরে।

“এই ধরলাম হাত। দেখুন কতো শক্ত করে ধরেছি। কখনো ছাড়বো না। আমি সারাজীবন আপনার বন্ধু হয়ে থাকবো। আমাদের মধ্যে কোনো সিক্রেট থাকবে না। আমি কখনো আপনার থেকে কোনো কথা লুকোবো না। আপনিও লুকোবেন না।

জিহাত রাইয়ের হাতের ওপর আরেকটা হাত দেয়।

” তোমার খুব খিদে পেয়েছে। আমার খিদে পেয়েছে। আগে খেয়ে নেই তারপর সারা রাত গল্প করবো কেমন

রাই ওয়াশরুম গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসে। জিহাত ভাত মেখে রাইয়ের মুখের সামনে ধরে। রাই ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষে বেলকনিতে এসে বসে রাই আর জিহাত। রাই খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আসে জিহাতের থেকে ওর কষ্টের কথা শুনবে বলে।

“রাই একটা কথা বলো তো?

” কি?

“যদি তুমি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাও তাহলে কি থেকে যাবে

রাই একটু হাসে
” যা আমার না আমি তা থেকে দুরে দুরে থাকি।

“আমি তোমার না?

” নাহহহহ

“তাহলে কার আমি?

” আপনি যাকে আপনার মনে করেন আপনি তার।

“ওহহহ

” আমার থেকে চলে গিয়ে নতুন কাউকে বিয়ে করবে নিশ্চয়

“বিয়ে করবো তো অবশ্যই কিন্তু অনেক পরে। আগে নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলবো তারপর

” গুডড

জিহাত রাইয়ের কোলে শুয়ে পরে। রাই প্রথমে চমকে গেলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
তোমার মনে আমার জন্য এতটুকু অনুভূতি থাকলে আমি তোমাকে কখনো যেতে দেবো না। দরকার হলে বেঁধে রাখবো তোমায়
মনে মনে বলে জিহাত।

রাই জিহাতের চুল গুলো দিয়ে টিকলি বাঁধছে।

রাই আমি যদি তোমায় লাভ ইউ বলি তাহলে তোমার রিয়াকশন কেমন হবে?

জিহাতের এরকম প্রশ্নে রাই চমকে ওঠে। কি বলবে এখন রাই?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here