আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১২

0
7565

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১২
Tanisha Sultana

“আমি জানি আপনি কখনো এমনটা বলবেন না

“এতো কনফিডেন্স

” হুমমম

“কাউকে ভালো লাগে তোমার? আই মিন কোনো ক্রাশ আছে?

রাই একটু মুচকি হাসে
” হুমমম আমার একজন পছন্দের মানুষ আছে। তাকে আমার এতোটা ভালো লাগে। তাকে দেখলেই কেমন একটা অদ্ভুত ফিলিংস হয়।

জিহাত এক দৃষ্টিতে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা কাউকে ভালো বাসে। জিহাত এটা মেনে নিতে পারবে না।
চোখ মুখ লাল হয়ে যায় জিহাতের। কপালের রগটা ফুটে ওঠে। উঠে বসে অগ্নি দৃষ্টিতে রাইয়ের দিকে তাকায়।

রাই জিহাতের এমন রুপ দেখে ভেবাচেকা খেয়ে যায়। এখানে রাগের মতো কি বললো রাই বুঝতে পারছে না।
“আপনি রেগে গেলেন কেনো?
মাথা নিচু করে ঢোক গিলে বলে রাই।

” ওই ছেলেটা কে?
কর্কশ গলায় বলে জিহাত।
জিহাতের এমন সহজ প্রশ্নেই রাই ভয় পেয়ে যায়।

“আসসলে

জিহাত রাইকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে

” বউ তুই আমার। ডিভোর্স দেই নি তোকে এখনো। সাহস হয় কি করে আমার সামনে অন্য ছেলেকে ভালো লাগে এটা বলিস। মেরে ফেলে দেবো

রাই ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়। রাইয়ের মুখের কাছে মুখ নিয়ে জিহাত কথাগুলো বলছে ফলে জিহাতের নিশ্বাস রাইয়ের মুখে আছড়ে পড়ছে। টপটপ করে পানি পড়ছে রাইয়ের চোখ দিয়ে।

“আমি বাজে খারাপ বেয়াদব তবুও আমি তোর হাসবেন্ড। যতখন আমার সামনে থাকবি তোর গোটা দুনিয়াটা আমি। অন্য ছেলের নাম মুখেও আনবি না।

রাই কেঁদেই যাচ্ছে। জিহাত রাইয়ের কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এরকম রিয়াক্ট করাটা ঠিক হয় নি। কিন্তু রাইয়ের মুখে অন্য ছেলের কথা শুনে ধপ করে জিহাতের মাথায় রক্ত চড়ে বসে।

” আপনিও তো আমার সামনে কতো মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলেন, আপির কথা বলেন আমি কি আপনাকে বকি? বকি না তো। আপনি প্রমিজ করেও আমাকে বলেন

কাঁদতে কাঁদতে বলে রাই। জিহাত কিছু বলছে না। কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রাইয়ের কথা শুনছে।

“আপনি আমার সামনে মেয়েদের সাথে নিকনিক করেন। আমি তো কিছু বলি না। তাহলে আপনি কেনো বকেন? আপনি আপনার মতো থাকেন আমাকেও আমার মতো থাকতে দিন
হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে রাই। জিহাত মুচকি হাসে। রাই জিহাতকে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে ইচ্ছে মতো মারতে থাকে। জিহাত রাইয়ের দুই হাত ধরে

” রিভেঞ্জ নিচ্ছে?
জ্বলে না কি?
এটা তো ভালো লহ্মন না
শয়তানির হাসি দিয়ে বলে জিহাত।

“একদম জ্বলে না। কে আপনি? কি হই আমি আপনার? কেউ না
অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে বলে রাই। জিহাত রাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
” আমি আগে এরকম ছিলাম না। মারামারি করতাম নেশা করতাম। বাট মেয়ের নেশা ছিলো না। তোমার বোনকে ভুলতেই এই পথ বেছে নিয়েছিলাম।

রাই কিছু বলে না। জিহাতের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। পৃথিবীতে সব থেকে শান্তির স্থান এটাই। এখানে যদি সারাজীবন মাথা রেখে কাটাতে পারতো। রাই নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয়। এটা ভাবা ঠিক না। জিহাত কখনোই রাইয়ের ছিলো না। না কখনো হবে।

রাই যখন জিহাতকে প্রথম দেখেছিলো রুহির সাথে তখন রাই এসএসসি পরীক্ষাথী। তখনই জিহাতকে ভালো লাগতো জিহাতকে। কখনো কখনো আফসোস হতো ইসসস যদি এই ছেলেটা আপুকে এতোটা ভালো না বাসতো।

“রাই

জিহাতের ডাকে রাই ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।

” কথায় কথায় এভাবে কাঁদতে হয় না।চোখের পানি অনেক মূল্যবান। এটাকে অপচয় করা ঠিক না।
জিহাত রাইয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে।

“কাল আপুর বার্থডে। গতবছর কতো কষ্ট করে রুমে গিয়ে স্বর্নের আংটি দিয়ে বার্থডে উইশ করেছিলেন। এবার আর গাছ বেয়ে কষ্ট করতে হবে না। আমি আপুকে কাল ডেকে নেবো।

জিহাত কয়েক সেকেন্ডের জন্য ধমকে যায়। কাল রুহির বার্থডে এটা জিহাতের মনেই নেই। এই মেয়েটা আমার জীবনটাকে রাতারাতি বদলে দিলো।
জিহাত এক গাল হাসে। সেই হাসিটা রাই দেখে না।

” এরকম একটা কিউট বউ থাকতে কেউ এক্স এর কথা ভাবে? আমি ভুলে গেছি। মনে করালে তোমারই লস।

রাই একটু হাসে।
“নিজের জিনিস নিজের কাছে যত্ন করে রাখতে শিখো। শ্রীময়ীর মতো এতো মহান হতে গেলে দেখবা জুঁইয়ের মতো একটা সতীন চলে আসবে। তখন দুজনে টুল টানাটানি করবে। আমাকে বাড়ি ছাড়তে হবে।

রাই ফিক হেসে ফেলে। জিহাতও হাসে। কিছুটা সময় দুজনই চুপ থাকে। জিহাতের ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে জিহাত বলে
” রাই আমি একটু বেরোবো। তুমি রুমে এসে বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো

“কোথায় যাবেন এতো রাতে?

রাইয়ের কথা জিহাতের কানে পৌঁছানোর আগেই জিহাত দৌড়ে বেরিয়ে যায়। রাই রুমে এসে বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে দুইজনের বিছানা ঠিক করে। ঘুম আসছে না। টিভি চালিয়ে কিছুখন টিভি দেখে। জিহাতের আসার খবর নেই।
বাড়ির মেইন দরজার কাছে গিয়ে রাই পায়চারি করে। কখন আসবে জিহাত?
একটা সময় রাই দরজার কাছে থাকা সিঙ্গেল সোফায় ঘুমিয়ে পরে।

খুব সকালে রাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলেই দেখে রাইয়ের সামনেই জিহাতের বিছানায় জিহাত হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। রাই এক লাফে উঠে বসে।
” কখন আসলো উনি?
মনে মনে ভাবে। তারপর মুচকি হেসে জিহাতের গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে গিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। ভরের হাওয়া না কি ভালো। কিছুটা সময় বেলকনিতে কাটিয়ে যখন দেখে পূর্ব আকাশটা লাল হয়ে আসছে তখন রুমে চলে আসে।
ঘুম আর আসবে না। তাই রুম থেকে বের হয়। দেখে এখনও কেউ ঘুম থেকে ওঠে নি। রদই কিচেনে চলে যায়। তেমন কিছু রান্না পারে না রাই৷ শুধু নুডলসটাই রান্না করতে পারে। কোমরে ওড়না গুজে সারা কিচেন খুঁজে নুডলস বের করে। তারপর ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে চটপট নুডলস রান্না করে ফেলে। তারপর ভাবে শুধু নুডলস দিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে কেমন দেখায়? আরও কিছু রান্না করা উচিৎ।
ইউটিউব দেখে লুচি বানানো শেখে।তারপর চটপট লুচি বানিয়ে ফেলে। দেখতে তেমন ভালো হয় না। লুচি ডিম ভাজি আর নুডলস। এবার চা বানায় তাও আবার ইউটিউব দেখে। মনে মনে ইউটিউবকে এতোগুলো ধন্যবাদ দেয়।

চা বানিয়ে খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে জিহাতের জন্য চা নিয়ে রাই রুমে চলে যায়। চায়ের কাপ টেবিলে রেখে। জিহাতকে ডাকে

“এই যে উঠুন

জিহাত একটু নরেচরে আবার ঘুমায়। রাই এবার আস্তে করে জিহাতের পাশে বসে গরম চায়ের কাপে জিহাতের হাতের একটা আঙুল ডুবিয়ে দেয়। গরম ছেকা পেয়ে জিহাত লাফ দিয়ে উঠে। আঙুল মুখে দেয়। রাই চায়ের কাপটা রেখে দৌড় দিতে যায়। তার আগেই জিহাত হাত ধরে ফেলে।

” আমার কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলে আর তোমাকপ আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো।

“না মানে আসলে
জিহাত রাইয়ের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। রাই ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

” ভয় পাও কেঁদে ফেলো বলে আজ তোমাকে আমি ছেড়ে দেবো না। চোখ দিয়ে একটুও পানি বের হলে দ্বিগুন শাস্তি পাবে। বুঝলে কাঁদুনি
রাই ভাবছিলো কান্না করে দেবে। কিন্তু জিহাতের কথা শুনে কান্নাও আসছে না।

“এবারের মতো বেঁচে গেলে আর কখনোই ওনার সাথে বদমাইশি করবো না

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here