আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৩
Tanisha Sultana
“এটা কিন্তু ঠিক না
রাই পিছিয়ে গিয়ে কাচুমাচু হয়ে বলে।
” কেনো ঠিক না? তুমি আছো আমি আছি। আর কি লাগে?
জিহাত রাইয়ের দিকে এগিয়ে বলে্
“আমরা,কিন্তু ফ্রেন্ড
” তো
“ফ্রেন্ডের সাথে রোমাঞ্চ করা যায় না।
মাথা নিচু করে বলে রাই।
একদম খাটের শেষ প্রান্তে চলে গেছে। জিহাত রাইয়ের মুখে ফু দিয়ে বলে
” আমি তোমার সাথে রোমাঞ্চ করতে চাইছি?
ভ্রু কুচকে বলে জিহাত।
রাই বোকা বনে যায়। নিজের কথায় এবার নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে রাই। বিছানা চাদরটা খামচে ধরে আছে। জিহাত রাইয়ের আরো একটু কাছে যায়।
“প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।
ঠোঁট কামড়ে বলে রাই।
” আমি তো তোমাকে ধরিই নি
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে জিহাত। রাই ধাপ করে চোখ খুলে। সত্যিই তো জিহাত রাইকে ছোঁয় নি। জিহাতের নিশ্বাস রাইয়ের মুখে পড়ছে। জিহাতের চোখের দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
জিহাত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাইকে দেখছে। আয়নার মতো স্বচ্ছ মেয়েটা। সরল। এর মধ্যে কখনো কোনো চালাকি থাকতেই পারে না।
নিচের ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ খিঁচে বন্ধ করে আছে রাই। বেপারটা জিহাতের বেশ ভালো লাগছে। বউ তো এমনই হওয়ার উচিত। বকা দিয়ে কাঁদবে আবার সরি বললে সব রাগ মাটি হয়ে যাবে।
রাই গোলাপি ঠোঁটটা একটু ছুঁয়ে দেওয়ার খুব লোভ হচ্ছে জিহাতের। জীবনে অনেক মেয়েকে দেখেছে খুব কাছ থেকে। কিন্তু কখনো কোনো মেয়ের প্রতি এভাবে দুর্বল হয় নি।
জিহাত রাইয়ের দুই গালে হাত দেয়। রাই চমকে চোখ খোলে। জিহাতকে কেমন অন্য রকম লাগছে।
“কককি করছেন?
” এখনও কিছু করি নি তবে এবার করবো
রাই একটু ভয় পায়। জিহাত রাইয়ের ঠোঁটের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। রাই সেটা বুঝতে পেরে ঠোঁটে হাত দেয়। জিহাত হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে।
“এটা কি হলো
রাই ঠোঁট থেকে হাত সরাচ্ছেই না। জিহাত বাঁকা হেসে রাইয়ের দুই গালে দুটো পাপ্পি দিয়ে সরে যায়। রাই চমকে তাকিয়ে আছে। এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। জিহাত সরতেই রাই ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে গালে দেয়।
” এটা কি হলো?
জিহাত টাওয়াল গলায় পেচাতে পেচাতে বলে
“আমার করে বুঝিয়ে দেই
রাই সাথে সাথে জোরে বলে ওঠে
” নাহহহ
জিহাত মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়। জিহাত যাওয়ার পরেই রাই হেসে ফেলে।
“পাগল একটা।
রাইয়ের ফোনে ফোন আসে। বাবা কল দিয়েছে।
” হ্যাঁ বাবা বলো
“আজ আমাদের বাড়িতে আসবে তো?
” যদি উনি
“ওই বেয়াদবটার কোনো কথা শুনবে না। তুমি তোমার মতো চলে আসো। নাহলে আমি আসছি
” তোমার আসতে হবে না। আমি একাই যেতে পারবো
“ঠিক আছে।
রাই ফোনটা রেখে মন খারাপ করে বসে থাকে। জিহাত মুখ মুছতে মুছতে বের হয়।
” কি হলো? মুড অফ কেনো?
“বাবা যেতে বলেছে।
” ঠিক আছে বিকেলে নিয়ে যাবো
“সত্যি আপনি যাবেন?
খুশি হয়ে বলে রাই।
” হুমমম তোমাকে আমি একা যেতে দেবো না।
“চলুন ব্রেকফাস্ট করবেন
” আমি রুমেই করি
“আজ সবার সাথে করবেন
” কখনোই না
“আপনি যাবেন না আপনার ঘাড় যাবে
রাই মোরা টেনে জিহাতের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে দেয়।
” কমপ্লেন খেয়ে বড় হতে হবে।
“এরকমই ঠিক আছে
” কি করে ঠিক আছে? আপনার সাথে ঝগড়া হলে আমি তো কখনোই আপনার চুল ছিড়তে পারবো না।
“তাও ঠিক
” হুমমম
মন খারাপ করে বলে রাই।
“কোনো বেপার না। ঝগড়ার সময় আমি বসে পড়বো তুমি চুল ছিড়বে কেমন?
” আমার টুনুমুনু জামাই
জিহাতের গাল টেনে বলে রাই।
“আমার পাগলি বউ
রাইয়ের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে জিহাত।
” এবার চলুন
“রাই শোনো আমার কথা
” আপনি সবার সাথে না খেলে আমি আজ খাবার মুখে তুলবোই না
গাল ফুলিয়ে বলে রাই। জিহাতের আর কি করার বাধ্য হয়ে রাইয়ের সাথে যায়।
জিহাতকে চেয়ারে বসিয়ে সবাইকে ডাকে রাই। সবাই চলে আসে।
জেসি জিহাতের পাশে বসে পড়ে।
“আন্টি আপনারাও বসে পড়ুন আজ আমি খাবার সার্ভ করবো।
” তুমি এতো কষ্ট করে রান্না করতে গেলে কেনো?
জেসির মা বলে
“আমার একটুও কষ্ট হয় নাই। খুব ভালো লেগেছে।
জিহাতের মাকেও জোর করে রাই বসিয়ে দেয়।
” ইসস আংকেলরা থাকলে আরও ভালো হতো। তবে বেপার না ওনারা আসলে আমি আবার রান্না করবো
জিহাতের মা রাইকে দেখছে। এতো মিষ্টি মেয়ে। সব কিছু কেমন সহজেই মিটিয়ে দিচ্ছে।
রাই শাশুড়ী পাতে আর একটু নুডলস দিয়ে বলে
“আন্টি আপনি খাচ্ছেন না কেনো?
জিহাতের মা একটু হেসে বলে
” এই তো খাচ্ছি
জিহাত কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে খায়। অনেক দিন পরিবারের সাথে খাওয়া হয় না। কোনোরকম খেয়ে জিহাত উঠে চলে যায়। একে একে সবার খাওয়া শেষ হয়। শাশুড়ী থালাবাসন মাজতে যায়। রাই জিহাতের এটোপ্লেটে নিজের জন্য খাবার নেয়। তারপর খেয়ে নেয়।
রুমে এসে দেখে জিহাত ফোন দেখছে। রাই কলেজ ড্রেসটা জলদি করে পরে নেয়। তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বিনুনি করে।
“কলেজ যাবে
” হুমম কাল যায় নি
“কখন ফিরবে
” ওই তো একটাই ক্লাস শেষ
“আমি তোমায় নিয়ে আসবো।
” আপনি পড়ালেখা করেন না?
“হুমম করি তো
” কই আপনার বই খাতা তো দেখি না।
“বই নেই কিন্তু মাঝে মাঝে ভার্সিটিতে যায়। আমি তো তোমার আপির এক ইয়ারের সিনিয়র।
” ওহহহ
“আপি বলে নি?
” কখনো জিজ্ঞেস করা হয় নি
“ওহহহ
রেডি হয়ে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে জিহাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। জিহাত ফোনের থেকে চোখ ফিরিয়ে রাইয়ের দিকে তাকায়। আজ রাই চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক নিয়েছে। দারুণ লাগছে।
” আসি
“নাহহহ
রাই ভ্রু কুচকে জিহাতের দিকে তাকায়। জিহাত পকেট থেকে রুমাল বের করে রাইয়ের ঠোঁট মুছিয়ে দেয়।
” এটা কি হলো?
রাই কিছুটা রেগে বলে
“তুমি আমার সামনে সেজেগুজে বসে থাকবে। নিজের সৌন্দর্য স্বামী ছাড়া অন্য কাউকে দেখাতে হয় না। বুঝলে
রাই রাগি ভাবেই বলে
” আসছি
“আমিও যাবো তোমার সাথে
” কেনো?
“আমি বউকে একা ছাড়বো না
” ইহহহহহ ঢং
“হুমম
জিহাত শার্ট পড়ে রাইয়ের হাত ধরে বেরিয়ে যায়।
বাইকে রাই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিহাতের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বসে রাই। জিহাত অনমনেই গান গেয়ে ওঠে
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতে তুমি বলোতো?
চলবে