আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৪
Tanisha Sultana
“বাইক থামান
জিহাত বাইক থামায়। হেলমেট খুলে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি হয়েছে?
রাই বাইক থেকে নেমে জিহাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলে
“আজ তো আপির বার্থডে
” তো
“আমি প্রতিবছরই আপিকে কিছু না কিছু গিফট করি। কিন্তু এখন আমার কাছে টাকা নেই। বাবার কাছে টাকা চাইতেও কেমন লাগছে
মাথা নিচু করে বলে রাই।
জিহাত রাইয়ের থুতনি ধরে রাইয়ের মুখটা উঁচু করে
” আমার সাথে তুমি এতো ফর্মালিটি করো কেনো? হাজবেন্ড না ভাবো বন্ধু তো ভাবো? তাহলে? আমি আর তুমি তো একই। স্বামী আমি তোমার। তো যেটা তুমি বাবার কাছে নিরদ্বিধায় বলতে পারো সেটা আমাকেও বলতে পারো। বুঝছো পিচ্চি?
রাই হাসি মুখে বলে
“হুমমম
” চলো রুহি মেডামের জন্য গিফট কিনে আনি।
রাইয়ের হাত ধরে শপিংমলে ঢুকে জিহাত। শাড়ির দোকানে যায়। রুহি কখনো শাড়ি পড়ে নি তাই রাই ভাবলো একটা শাড়ি গিফট করবে। দোকানদার এতোগুলো শাড়ি বের করে। রাই কমলা রংয়ের একটা শাড়ি চুজ করে। আর জিহাত রাইয়ের জন্য হালকা গোলাপি রংয়ের একটা শাড়ি কিনে। শপিংমল দিয়ে হাত ধরে হাঁটছে রাই আর জিহাত।
“আমার জন্য কেনো কিনলেন?
” আমার বউকে তো আমি কখনো কিছু দেই নি তাই আজ দিলাম।
“আমি তো আপনাকে কোনো গিফট দিলাম না।
” আমাকে গিফট দিবা?
“হুমমম
” কি গিফট দিবা?
“আপনার কি গিফট চায়?
” শিওর দিবে তো?
“১০০%
” এখন কিছু দিতে হবে না। কয়েকবছর পরে এক ডজন বেবি দিয়ো
এক গাল হেসে বলে জিহাত। রাই জিহাতের পিঠপ কয়েকটা কিল দেয়।
“মারো কেন?
” এতো বাজে কেন আপনি?
“জাস্ট বললাম তাতেই এমন
” ধ্যাত
“ধ্যাত কি?
” আপনার মাথা
“আমার মাথা কি
রাই দাঁড়িয়ে যায়।
” মাথা নিচু করুন
“কেনো?
জিহাত ভ্রু কুচকে বলে
” বলছি করুন
জিহাত মাথা নিচু করে। রাই জিহাতের চুল টেনে দেয়। জিহাত ব্যাথায় “আহহ” করে ওঠে
“গুন্ডী বউ
” হুমমম। আমার যখন রাগ হবে আপনি চুপ থাকবেন। আবার আপনার যখন রাগ হবে আমি চুপ থাকবো। কেমন?
“হুমমমম আমার বউ + বন্ধু
বাইকে বসে ওরা। জিহাত রাইয়ের কলেজে রাইকে নামিয়ে দেয়। রাই বাইক থেকে নেমে জিহাতের চুলগুলো ঠিক করে দেয়। জিহাতও রাইয়ের চুল গুলো ঠিক করে দেয়। তারপর দুজনেই হেসে ফেলে।
“জিহাত
কারো কন্ঠে ওরা দুজনই ওই দিকে তাকায়। রাইদের কলেজের পিন্সিপাল ম্যাম হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।
” মা
বলেই জিহাত লাফ দিয়ে বাইক থেকে নেমে ম্যামকে জড়িয়ে ধরে।
“মা কে ভুলে গেছিস বাবা
চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে ম্যামের। রাইয়ের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। ম্যাম ওনার মা হলে ওনার বাড়িতে যিনি আছে উনি কে?
” সরি মা
“থাক আর সরি বলতে হবে না।
উনি জিহাতের মুখে হাত বুলিয়ে বলে
” কতো শুকিয়ে গেছিস তুই
জিহাত মুচকি হাসে। রাইয়ের দিকে ওনার চোখ পড়ে।
“আরে রাই দাঁড়িয়ে আছো যে? কিছু বলবে?
” না,মানে কিছু না। যাচ্ছি
রাই চলে যায়।
“তো রুহি কেমন আছে?
জিহাতের মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে। আসলে জিহাত অনেকবার রুহিকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে গেছিলো।
” আরে মা বাদ দাও। ভার্সিটিতে যাবো। কাল তোমার বাড়িতে যাবো। ভালো মন্দ কিছু রান্না করে রেখো।
বলেই জিহাত মায়ের কপালে চুমু দিয়ে বাই বলে চলে যায়।
“পাগল একটা
দুই বেল শেষে হওয়ার পরেই রাইদের ক্লাস শেষ হয়ে যায়। আসলে তৃতীয় বেলের স্যার আসে নি। ইশান আর রাই ক্যান্টিনে যাচ্ছে। ইশান অনেক কথাই বলে যাচ্ছে। রাইয়ের কানে তা পৌছাচ্ছে না। ওর মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে জিহাতের দুটো মা কি করে হয়?
আবিরের সাথে ধাক্কা খায় রাই। আবির রাইয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে। কোমরে নখ বিধিয়ে দেয়। রাই ধাক্কা দিয়ে আবিরকে দুরে সরিয়ে দিতে যায়। আবির শক্ত করে ধরে। আচমকা এমনটা হওয়ায় রাইয়ের হাত পা কাঁপছে। রাইয়ের কাঁপা দেখে আবির রাইকে ছেড়ে দেয়।
” তুই ঠিক আছিস রাই?
উত্তেজিত হয়ে বলে ইশান।
রাই চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে মাথা নারায়। মানে ঠিক আছে।
“আরে রাই দেখে হাঁটবে তো। আমি না থাকলে তো পড়েই যেতে।
বাঁকা হেসে বলে আবির। আবিরের হাসিটা রাইয়ের ভালো লাগে না। কোমর জ্বলছে।
” ধন্যবাদ ভাই
বলেই রাই হাটা শুরু করে
“রাই
রাই দাঁড়িয়ে যায়। ইশানও দাঁড়ায়।
” তোমাকে বাঁচালাম আর তুমি জাস্ট ধন্যবাদ দিলে।
রাই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। সামনের ছোট চুল গুলো মুখে পড়ছে রাইয়ের। আবির রাইয়ের মুখে হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দেয়। রাই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে
“এক্সকিউজ মি ভাই। রাই এসব পছন্দ করে না।
ইশান বলে
” ওর বোনের কাছে তো হাগ, কিস এগুলো সিম্পল বিষয়। তাহলে ওর কাছে কেনো নয়? আমি একটু ছুঁলে কি গায়ে ফোসকা পড়বে না কি?
“সবাই তো আর এক না ভাই।
” ও কিছু বলছে না। তুমি বলছো কেনো?
“আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না ও ভয়ে নার্ভাস হয়ে গেছে?
” তুমি কি ওর চামচা?
“বলে পারেন ওরকমই।
ইশান রাইয়ের হাত ধরে নিয়ে যায়। আবিরের সামনে থেকে যেতেই রাই হাফ ছাড়ে। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পরে।
কলেজের গেটের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জিহাত। রাই সেটা কলেজের ক্যানটিন থেকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে জিহাতের কাছে যায়। রাইয়ের মুখটা দেখেই জিহাতের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।
” রাই কি হয়েছে?
জিহাত বাইক থেকে নেমে বলে। রাই জিহাতকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে ফেলে। জিহাত ভরকে যায়।
“রাই কি হয়েছে? বলো আমায়?
” ও আমার সাথে
হেঁচকির জন্য বলতে পারছে না।
জিহাত দুইগালে হাত দিয়ে বলে
“কে? তোমার সাথে কি করেছে?
ইশান দৌড়ে আসে। জিহাতকে সবটা বলে। জিহাতের চোখ লাল হয়ে ওঠে। রাই কেঁদেই যাচ্ছে জিহাতের বুকে মুখ লুকিয়ে।
” ওকে তো খুন করে ফেলবো।
রাই শান্ত হও।
চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে জিহাত।
“এইটুকুতে কেউ এমন ভাবে কাঁদে? কবে বড় হবা তুমি? পিচ্চিটা
মুচকি হেসে বলে জিহাত।
রাই একটু স্বাভাবিক হয়।
জিহাত ইশানকে ইশারা করে ইশান চলে যায়।
” চলো
চলবে