আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৫
Tanisha Sultana
বাইকে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে জিহাতকে জড়িয়ে রাই। ওই দৃশ্যটা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছে না। ও তো কারো হ্মতি করে নি। বা কারো সাথে বাজে বিহেব করে নি তাহলে ওই ছেলেটা ওর সাথে এমনটা কেনো করলো? সবাইকে এক পালায় মাপা ঠিক না। ওই জঘন্য ছেলেটা ওকে টাচ করছে এটা ভেবেই গা গিনগিন করছে। সবটা আপির জন্য হয়েছে। তবুও রাইয়ের রুহির প্রতি কোনো রাগ নেই।
জিহাতের পিঠে মাথা রাখে রাই। জিহাত একহাতে রাইয়ের হাত ধরে আর অন্য হাত দিয়ে বাইক চালায়। রাইদের বাড়ির সামনে এসে বাইক থামায়। রাই রোবটের মতো নামে।
“তুমি ভেতরে যাও আমি আসছি
” কোথায় যাবেন?
“আর্জেন্ট কাজ আছে।
রাইয়ের গালে হাত দিয়ে জিহাত চলে যায়। রাই দাঁড়িয়ে থাকে। যতখন জিহাতকে দেখা যায় ততোখন রাই দাঁড়িয়ে থাকে।
কলিং বেল বাজতেই রুহি দরজা খুলে দেয়।
” তুই
রাই ভেতরে ঢুকে বলে
“কেনো আসতে পারি না?
” তা পারিস। একা এসেছিস? না কি জিহাত তাড়িয়ে দিছে তোকে?
“হুমম তাড়িয়ে দিছে।
রুহি খুশি হয়ে রাইকে জড়িয়ে ধরে।
” আমি জানতাম আমার জিহাত আমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে থাকতেই পারে না। তোর জন্য আমি নিজে ছেলে খুঁজে দেবো।
রাই ঠোঁট মেলে একটু হাসে।
“তুমি আমার বোন
তাচ্ছিল্য ভাবে বলেই রাই রুমে চলে যায়। লম্বা একটা সাওয়ার নেয়। কোমরে দুটো নখের দাগ বসে গেছে। কিছুটা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। রাই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
সাওয়ার শেষে চেঞ্জ করে ভেজা জামাকাপড় হাতে নিয়ে বের হয়। দেখে রুহি আয়নার সামনে বসে সাজছে। রাই একটু তাকিয়ে জামাকাপড় মেলে দিয়ে আসে। চুল থেকে টাওয়াল সরিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
” রাই আমার জন্য কোনো গিফট আনলি না? প্রতিবছর কোনো গিফট দিস
রুহি লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বলে।
রাই চোখ বন্ধ করে বলে
“তোর গিফট জিহাতের কাছে।
রুহি লাফিয়ে ওঠে। রুহি ভেবেছিলো এই বছর হয়ত জিহাত গিফট দেবে না।
” জিহাত আমার জন্য গিফট কিনেছে? আমি জানতাম কিনবে। ও তো আমার জন্য পাগল।
রাইয়ের “আমার জন্য পাগল” কথাটা খুব লাগে। চোখ খুলে ফেলে।
রুহি নাচতে নাচতে বেরিয়ে যায়।
রাইদের বাড়িতে রুহির কয়েকটা ফ্রেন্ড আসে বার্থডে উপলক্ষে। রাই ওদের জিহাত সম্পর্কে এটা ওটা বলছে। রাইয়ের বাবা কেক আনতে গেছিলো। খুব ছোটমট ভালো প্রতিবছরই ওদের জন্মদিন পালন করা হয়।
সন্ধা হয়ে গেলো কিন্তু জিহাতের খবর নেই। রাই কয়েকবার জিহাতকে কল দেয় কিন্তু জিহাত রিসিভ করে না।
রাইয়ের বাবা মা রাইয়ের রুমে আসে। দুপুরে রাই এসেছে এখনো রুম থেকে বের হয় নি। তারওপর আবার রুহি গিয়ে ওদের বলেছে জিহাত রাইকে তাড়িয়ে দিছে।
“রাই ওই ইডিয়েটটা তোমাকে তাড়িয়ে দিছে?
বাবার প্রশ্নে রাই উঠে বসে।
” না তো। ওর একটু কাজ পড়ে গেছে। একটু পরেই চলে আসবে।
এই কথাটা শুনে রাইয়ের মা খুব খুশি হয়। কারণ তিনি চায় রাই জিহাতের সাথেই থাকুক।
“নিশ্চয় মারামারি করতে গেছে।
রাইয়ের বাবা বিরবির করে বলে
” এই তো আমি চলে এসেছি
জিহাত রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে। ঘেমে নেয়ে একাকার। রাইয়ের পাশে ধপ করে শুয়ে পড়ে জিহাত।
“কোন রাজকার্য করে এসেছো?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে রাইয়ের বাবা।
” সেটা সবার আগে আপনিই জানতে পারবেন।
বাঁকা হেসে বলে জিহাত।
“অসভ্য ছেলে
” আহহ কি হচ্ছে? প্রথমবার মেয়ে জামাই বাড়িতে এসেছে। তাদের আপ্যায়ন করবে তা না
“এই তো আমার কিউট শাশুড়ী মা। আমাকে এক গ্লাস শরবত বানিয়ে দিন তো।
” আমি নিয়ে আসছ
রাই ওঠার জন্য প্রস্তুতি নেয়। জিহাত রাইয়ের হাত ধরে।
“তুমি আমার কাছেই থাকো।
” ভদ্রতা টুকু শেখেনি এই ছেলে
রাগে ফুসতে ফুসতে চলে যায় রাইয়ের বাবা। রাইয়ের মা মনে মনে দোয়া করে চলে যায়।
ওনারা চলে যেতেই রাই চোখ গরম করে বলে
“এটা কি হলো?
জিহাত আধশোয়া হয়ে বলে
” কেনো দেখতে পাও নি?
“বাবা মা কি ভাবলো?
” কি ভাবলো?
“মাথা মোটা একটা
” তোমারই জামাই। এবার চটপট পেট বের করো
রাই ছিটকে দুই হাত দুরে গিয়ে বলে
“কিহহহ
” পেট বের করতে বলছি।
“ইম্পসিবল
” ধমক শুনতে না চাইলে তারাতাড়ি পেট বের করে ফেলো।
জিহাত সোজাসাপ্টা বলে দেয়। রাই কামিজ শক্ত করে ধরে বলে
“এটা ঠিক না
” কেনো ঠিক না।
“আমাদের তো এখনও কালেমা পড়ে তিন কবুল বলে বিয়ে হয় নি।?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে রাই।
জিহাত লাফ দিয়ে উঠে বসে। ভ্রু কুচকে তাকায় রাইয়ের দিকে।
” তোমার মাথায় কি সব সময় উল্টাপাল্টা চিন্তা ঘুরে।
রাই বোকার মতো তাকায় জিহাতের দিকে।
“যেখানে আবির নামক বিড়াল খামছে দিছে সেখানে মলম লাগাবো। নাহলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।
রাই দাঁত দিয়ে জিভ কাঁমড়ে ধরে। ছি কি একটা লজ্জাজনক বেপার। জিহাতের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।
” তবে তুমি যদি বলো তবে
শয়তানির হাসি দিয়ে বলে জিহাত। রাই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে জিহাতের হাতের ওপর হাত দেয়। মানে চুপ করতে বলছে জিহাতকে।
“ওকে থামলাম। এবার বলো এরকমটা কোনো মনে হলো?
” আসলে বিকেলে একটা মুভি দেখলাম। সেখানে
থেমে থেমে বলে রাই।
জিহাত শব্দ করে হেসে ফেলে। রাইয়ের মাথায় একটা চাটি মেরে বলে
“তুমি সত্যিই একটা পিচ্চি। হে খোদা শেষ পর্যন্ত একটা বাচ্চা মেয়ে ছিলো আমার কপালে
রাই এখনো লজ্জা পাচ্ছে।
” মুখটা এমন হঠাৎ টমেটোর মতো হয়ে গেলো কেনো? ওহহ বুঝেছি বেশি বেশি টমেটো খাওয়ার ফল এটা
রাই ভ্রু কুচকে তাকায়। রাই ভাবছে আমি লজ্জা পেয়েছি আর এই লোকটা বুঝলো না।
“তাড়াতাড়ি পেট দেখাও। তোমার মা চলে আসবে আবার।
” আমি একা পারবো
“থাপ্পড় খেতে না চাইলে দেখাও
রাই চোখ বন্ধ করে হ্মত জায়গা থেকে কামিজ সরায়। ফর্সা পেটটা লাল হয়ে গেছে। কিছু রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে গেছে। আবার জিহাতের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। খুব যত্ন করে কালো রক্ত মুছিয়ে দিয়ে মলম লাগিয়ে দেয় জিহাত। রাইয়ের একটু একটু জ্বলছে। জিহাত ফু দিচ্ছে।
” ওই শ****** না মরা পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।
দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলে জিহাত।
রাই চোখ খুলে জিহাতের দিকে তাকায়। জিহাতের মুখটা দেখে রাই ঢোক গিলে।
“আআমি ককি ককিছু করেছি?
তুতলিয়ে বলে রাই। জিহাত চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে রাগটা একটু কমায়। তারপর একটু হেসে বলে
” তুমি কিছু করো নাই
“তাহলে এতো রেগে আছেন কেনো?
তখন রুহি এসে রাইয়ের গালে ঠাস করে একটা চর মারে। জিহাত হাত মুঠো করে ফেলে। আচমকা এমটা হওয়ায় রাই ছিটকে পরে যায়। খাটের পয়ার সাথে বাড়ি খেয়ে কপালের কিছুটা অংশ কেটে যায়। রুহি রাইকে উঠিয়ে আরো একটা চড় মারে রাই খাট থেকেই পড়ে যায়। আর রাইয়ের কাছে যেতে নিলে জিহাত…..
চলবে