আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৬
Tanisha Sultana
জিহাত রুহির হাত ধরে। আগুন চোখে তাকায় রুহির দিকে। রুহি আগে কখনো জিহাতের এই রুপ দেখে নি। ভরকে যায় রুহি
জিহাত রুহির দুইগালে চারটা চর মারে। রুহি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিহাত ওকে মারলো এটা রুহির বিশ্বাস হচ্ছে না। চোখের পানি বাঁধ ভেঙে ঝরঝর করে পরে।
“বলেছিলাম রুহি অবহেলা করো না হারিয়ে ফেলবে। এখন হারিয়ে ফেলছো। দোষ তোমার। আমি জীবনে সব থেকে বড় ভুল করেছিলাম তোর মতো একটা বারো**** সাথে নিজেকে জড়িয়ে। এখন আমি তাকে পেয়ে গেছি যে আমার বউ হওয়ার যোগ্য। আমাদের মাঝখানে আসলে তোমাকে খুন করতে আমি দু বার ভাববো না।
রাই তাকায় জিহাতের দিকে। কতো সহজে খুন করার কথা বললো।
” জিহাত আআমি
রুহি কাঁদতে কাঁদতে জিহাতের হাত ধরতে যায়।
জিহাত হাটটট বলে কিছুটা পিছিয়ে যায়।
“আমি সেই জিহাত না যে তোর নেকাকান্না দেখে গলে যাবো। আজ তোর বার্থডে তাই সিনক্রিয়েট করতে চায় না। নাহলে আমার বউকে টাচ করার মজা বুঝিয়ে দিতাম।
রুহি হেঁচকি তুলে বলে
” তুমি একজন ক্রিমিনাল। সেটা রাই জানলে তোমার সাথে কখনোই থাকবে না।
ক্রিমিনাল শব্দটা শুনে রাই চমকে ওঠে। জিহাতের মুখটাও ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
জিহাত রাইয়ের কাছে গিয়ে হাঁটু মুরে বসে
“এতো বোকা কেনো তুমি? একটা বাইরের মেয়ে তোমাকে থাপ্পড় মারলো আর তুমি কিছু বলতে পারলা না? ভিতুর ডিম একটা।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে জিহাত। রাই জিহাতের ধমকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
” খালি পারো কথায় কথায় কান্না করতে। আর কিছু পারো তুমি?
রাই এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে।
রাইয়ের বাবা মা দৌড়ে আসে। আসলে ওরা আওয়াজ শুনেছে। রাইকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে রাইয়ের মা দৌড়ে যায়
” রাই কি হয়েছে?
“নিশ্চয় এই বেয়াদবটা রাইকে আঘাত করেছে।
জিহাতের দিকে তেড়ে গিয়ে বলে।
রাই মাথা ধরে উঠে বসে।
” কতোটা কেটে গেছে কপাল
বিচলিত হয়ে বলে রাইয়ের মা।
“মা আমি ঠিক আছি।
হেঁচকি তুলে বলে রাই।
রুহি নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। জিহাতের অনেক কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে রাইয়ের বাবা মাকে কিন্তু রাইয়ের কথা ভেবে বলছে না। জিহাত গিয়ে রাইয়ের হাত ধরে
” চলো
“কোথায় যাবো
জিহাত উওর না দিয়ে হাঁটা শুরু করে
” তুমি এভাবে আমার মেয়েকে নিয়ে যেতে পারো না।
জিহাত থেমে যায়। শান্ত চোখে রাইয়ের বাবার দিকে তাকায়।
“আপনি আটকাবেন আমায়?
” প্রয়োজনে আটকাবো
কাটকাট গলায় বলে
“পারবেন না। রাই আমার বউ। আমি যা খুশি করতে পারি। আপনি বাঁধা দেওয়ার কেউ না।
” প্রথমত তোমাদের ডিভোর্স পেপার আমি রেডি করে ফেলেছি। আর দ্বিতীয়ত আমি চাইলে অনেক কিছুই পারি।
“ডিভোর্স আমি দিবো না। দেখি কি করতে পারেন আপনি।
” তোমাকে আমি দেখে নেবো। বেয়াদব বেহায়া ছেলে।
জিহাত ওনার কথা পাত্তা না দিয়ে রাইকে নিয়ে ছাঁদে চলে যায়। রাই তো কেঁদেই যাচ্ছে।
সূর্য ডুবে যাচ্ছে। পশ্চিম আকাশের এক কোন লাল হচ্ছে গেছে। এটাকে হয়ত গোধূলি বলে। রাই জিহাতের কাঁধে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছে। জিহাত বাঁধা দিচ্ছে না। জিহাত বাঁধা দিচ্ছে না বলে রাই বেশি করে কাঁদছে।
“কান্না শেষ হলে বলো
রাই চট করে কাঁধ থেকে মাথা সরায়। জিহাত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে
” কান্না শেষ? দেখো আমার শার্টটা পুরো ভিজিয়ে ফেলছো। সিরিয়াসলি তোমার চোখে এতো পানি কি করে থাকে। ওহহহ বুঝতে পারছি। আমার চোখের পানি তোমার চোখে ট্রান্সফার করা হইছে
রাই ধরাম করে জিহাতের পিঠে কিল মারে।
“মারো কেন?
” আপনার জন্য সবটা হইছে।
নাক টেনে বলে রাই।
“সরি ইয়ার। আমি কি জানতাম না কি তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে?
” তাহলে আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না।
“সত্যি বলতে না।
” সর তুই এখান থেকে
রাই কিছুটা দুরে গিয়ে বলে
“সরি তো
” লাগবো না তোর সরি। আবার আমাকে ধমক ও দিছেন
রাই আবারও কান্না করে দেয়।
“আরে বাবা সরি সরি সরি সরি সরি সরি এতোগুলা সরি
” লাগবো না লাগবো না লাগবো না লাগবো না
“কান ধরছি
জিহাত কান ধরে সরি বলে। রাই ফিক করে হেসে ফেলে। জিহাতও হাসে।
” আপনি তখন আমাকে বকলেন কেনো?
“ওই ফালতু মেয়েটা তোমায় আঘাত করলো তুমি কিছু বললে না।
আবার জিহাতের মাঝে একটু একটু রাগ চলে আসে। রাই বেপারটা বুঝতে পেরে বলে
” কপালে ব্যাথা করছে। ব্যান্ডেস লাগিয়ে দেন
জিহাত কাটা জায়গা ক্লিন করে ব্যান্ডেস লাগিয়ে দেয় খুব যন্ত করে।
জিহাত রাইকে বুকে জড়িয়ে বলে
” ছোট বেলায় মা বলতো তুমি যা হারাবে তার থেকে বেটার কিছু পাবে। এই কথাটা আমি কখনোই বিশ্বাস করি নি। কারণ আমি ছোট বেলা থেকে হারিয়েই আসছি। কখনো কিছু পাই নি। কিন্তু তোমাকে পাওয়ার পর কথাটা বিশ্বাস করি।
রাই মন দিয়ে কথা গুলো শুনছে।
“একটা প্রশ্ন করি?
“নাহহহহ। যা দেখছো দেখে যাও। কোনো প্রশ্ন করো না। সময়ই তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেবে
রাই চুপ করে যায়। জিহাতও কিছু বলে না।
রাতে আর রুহির কেক কাটার সময় জিহাত যায় না। রাই যায়। শত হোক বউ তো। এই নিয়ে জিহাতের ভীষণ রাগ হয়। কেক কাটা হয়ে গেলে রাই জিহাতের জন্য খাবার নিয়ে রুমে আসে। দেখে জিহাত একটা হিন্দি মুভি দেখছে। জিহাতের পাশে টেবিলে খাবারটা নামায় জিহাত। তারপর জিহাতের পাশে বসে
” খেয়ে নিন
জিহাত মুখ ঘুরিয়ে টিভিতে মনোযোগ দেয়। রাই রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টায়। জিহাত রেগে যায়।
“তুমি পাল্টালে কেনো?
রাই আস্তে করে উঠে যেতে নেয়। জিহাত শক্ত করে হাত ধরে।
” ইয়ে মানে আপনি খাচ্ছেন না
“তাই চ্যানেল পাল্টাবে? ভালোই সাহস বেরেছে দেখি। তাহলে সাহস একটু কমিয়ে দেই?
বাঁকা হেসে বলে জিহাত
রাই কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে
” কান্দুম কইলাম
“কান্দো তো দেখি
” এটা ঠিক না
“এটাই ঠিক
বলেই জিহাত
চলবে