আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৭

0
7773

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৭
Taniaha Sultana

“কথায় কথায় আপনি এতো কাছে কেনো চলে আসেন? আমার হার্ট লাফায়। যখন তখন বেরিয়ে যেতে পারে।
ভয়ার্তক চোখে বুকে হাত দিয়ে বলে রাই। জিহাত ভ্রু কুচকে তাকায়।

” মানে এখন তোমার কাছেও আসা যাবে না?

“সেটা না। বাট আপনি কেমন করে তাকান আর

” আর
জিহাত হাত ভাজ করে বসে বলে

“সকালে
মাথা নিচু করে বলে রাই।

“সকালে কি

“কিস

” ও হেলো ওটাকে পাপ্পি বলে। তুমি কখনো ছোট বাচ্চাদের পাপ্পি দাও নাই।

রাই ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায়
“আমি বাচ্চা

” তো কি নিজেকে বড় মনে করো না কি?

“ঠিক আছে আমি বাচ্চা। হুটহাট করে আমার সাথে একদম চিপকাবেন না।

” কেনো?

“খারাপ লাগে। বাচ্চা তো

” লাগুক। আমার কি? আমার তো ভালো লাগে।
শয়তানীর হাসি দিয়ে বলে জিহাত। রাই এক পলক জিহাতের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। জিহাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে কিন্তু যদি জিহাত হেংলা ভাবে তাই তাকিয়ে থাকে না।
জিহাত মাথার নিচে হাত দিয়ে শুয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে
“তুমি ও আর আসার সময় পেলে না

” আমি এসেছি বলে আপনার বিরক্ত লাগছে? চোখ পাকিয়ে বলে রাই।

“৯৯% যাও না তোমার আপির কাছে। এখানে কি চায়?

” এভাবে বলেন কেন? আপি আমার বড়। ও আমাকে মারতেই পারে তাই বলে আমি ওর সাথে থাকবো না,কথা বলবো না এমনটা তো নয়।

জিহাত রাইকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে

“একদম বাংলা ছিনেমা আর স্টার জলসার নায়িকাদের মতো নেকামি করবা না। আসছে বোন বোন করতে।
মুখ ঘুরিয়ে বলে জিহাত।

“আসলে আপি সবটা মানতে পারছে না। আমিও তো মানতে পারছিলাম না। আপনি আপির জন্য কতো পাগল ছিলেন। আপির কথায় উঠতেন আবার বসতেন। আপির একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য কতো কিছু করতেন। সেই আপনি এখন আপনিকে সয্যই করতে পারেন না।

” কাম অন রাই। এসব কিছু পাস্ট। এসব কথা মনে পড়লে নিজেকেই কেমন ছোট ছোট লাগে। তুমি শুধু ফিউচার নিয়ে ভাববা। আপি বাবা মা এদের নিয়ে ভাবার দিন শেষ। এবার তোমর ভাবনা থাকবে শুধু আমাকে নিয়ে। ওকে
জিহাত রাইয়ের দুই গালে হাত দিয়ে বলে

রাই মাথা নারায়।

“একটু চালাক হও রাই৷ বোকাদের সবাই শুধু ঠকায়। তাদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। আমি তো আর সারা জীবন তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারবো না তাই না?
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে জিহাত

” হুমমম

টিভির স্কিনে চোখ পড়ে রাইয়ের। সেখানে খবরে একটা লোকের ছবি দেখাচ্ছে। যে না কি এক সাথে বিশটা লোককে খুন করেছে কিন্তু কোনো প্রমাণ না পাওয়ার লোকটাকে ছেড়ে দিচ্ছেন পুলিশ।
রাই লোকটার চেহারা দেখে কাঁপতে থাকে। চাপদাঁড়ি কিছুটা বড়। মাথায় বড়বড় চুল। কালো জিন্স কালো জ্যাকেট। জ্যাকেটের নিচে সাদা টিশার্ট চোখে কালো সানগ্লাস। অতিরিক্ত ভর্সা। শরীরে টোকা দিলেই রক্ত ঝড়বে এমন অবস্থা। লোকটার মুখে বাঁকা হাসি।
জিহাত ঠাস করে রাইয়ের হাত থেকে রিমোট টা নিয়ে টিভি বন্ধ করে দেয়। রাইয়ের হুমম ফেরে। এতোখন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। জিহাতের দিকে তাকায়।
“রাই ককি হলো?
জিহাত ও কিছুটা ভরকে যায়।

” ওওই লোকটাকে আমি চিনি
ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে রাই। জিহাত ঘামতে শুধু করেছে।
“কি করে চিনো?

” আপনার আর আমার যেদিন বিয়ে হয়ে ছিলো সেদিন এই লোকটাই আমার মুখে স্প্রে দেয় আর আমি অঙ্গান হয়ে যায়।
জিহাত এবার শুকনো ঢোক গিলে।

“আপনি চিনেন এনাকে?
জিহাতকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় রাই।

” আআমি
শুকনো ঢোক গিলে বলে জিহাত

“হ্যাঁ আপনি চিনেন ওনাকে?

” চিনবো না কেনো? উনি তো সাগর খান। সবাই চেনে এনাকে। কতো বড় কিলার উনি।
এক নাগারে কথা গুলো বলে জিহাত।

রাই আনমনে বলে
“ওহহহ

জিহাত প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে
” রাই খাবারটা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

“ওহহহ হ্যাঁ

রাই খাবারের প্লেট আনে।
” নিন খান

“তুমি খেয়েছো?

” নাহহহ ওদের সাথে খাবো।

“তাহলে আমিও ওদের সাথেই খাবো।

” কিন্তু আপনি তো একা একা খেতে পছন্দ করেন?

“হ্যাঁ করি বাট আজ ওদের সাথে খেতে চায়

” ঠিক আছে
“চলো খেয়ে আসি
জিহাত মনে মনে একটা শ্বাস নেয়।
” যাক রাই কিছু বুঝতে পারে নি।

রাই মনে মনে ভাবে
“জিহাত এভাবে এড়িয়ে গেলো কেনো? কোনো গন্ডগোল আছে

খাবার টেবিলে রাই আর জিহাত পাশাপাশি বসেছে। রুহি আর বাবা আরেক পাশে। রাইয়ের মা খাবার সার্ভ করছে। জিহাত একদম রাইয়ের বাবার মুখোমুখি।
ভাত মাখাতে মাখাতে রাইয়ের বাবা বলে

” তো দশ দিন তো শেষ। তোমার লোকেরাও ছাড়া পেয়ে গেছে।

“আহহ শশুড় মশাই আপনি জানেন না খাবার সময় কথা বলতে নেই। কোনো মেনার্স ই তো দেখি শিখেন নি।
খেতে খেতে বলে জিহাত। রাইয়ের বাবা হাত মুঠো করে ফেলে। এই ছেলেটার সাথে উনি কিছুতেই পেরে উঠছে না। কিছুটা চিৎকার দিয়ে বলে

“তুমি বলেছিলে দশ দিন পরে তুমি রাইকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। কোথায় তোমার ডিভোর্স পেপার? কথা রাখবে না তুমি?

ডিভোর্সের কথা শুনে রাইয়ের হৃদয়ে ধপ করে ওঠে। মনে হচ্ছে কেউ ছুড়ি দিয়ে হৃদয়ে বারবার আঘাত করছে। রুহির মুখে তৃপ্তির হাসি৷ জিহাত মুখে মাংস পুরে আয়েশ,করে চিবোতে থাকে। রাইয়ের বাবার কথায় জিহাতের কোনো হেলদোল নেই। রাইয়ের দৃষ্টি জিহাতের দিকে।

” শাশুড়ী মা মাংস টা কিন্তু দারুণ হয়েছে। আমি যখই রাইকে নিয়ে এখানে আসবো আপনি মাংস রান্না করে খাওয়াবেন কেমন
মুচকি হেসে বলে জিহাত।
জিহাতের এমন কথায় রাইয়ের বাবা আরও রেগে যায়।

” আমি কিছু বলেছি তোমায়।

জিহাত মুচকি হাসে
“শশুড় মশাই আমি আপনাকে তো কখনো বলি নি দশ দিন পরে রাইকে ডিভোর্স দেবো৷ জাস্ট বলছিলাম ছেড়ে দেবো। এখন আপনি ভালো করে তাকালেই দেখতে পাবেন আমি রাইকে ধরে নেই। ছেড়ে দিয়েছি
জিহাতের কথা শুনে রাই খুব খুশি হয়।
রাইয়ের বাবা থমথমে খেয়ে যায়। কি বলে এই ছেলে? নিজেকে সামলে বলে

” ফাজলামো পেয়েছো।

“আমি রাইকে ডিভোর্স দেবো না। ইটস ফাইনাল। আর আপনি তো জানেনই জিহাতের এক কথা বাকি সবার একশো কথার সমান। কেমন বাবা বলুন তো আপনি? এতো ভালো কিউট স্মার্ট ইনোসেন্ট একটা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সুখে সংসার,করছে। আর আপনি সংসারটা ভাংতে চাইছেন। ইটস নট ফেয়ার শশুড় মশাই।
বলেই হাত ধয়।
রাইয়ের বাবা দাঁত কিড়মিড় করে বলে
” ইনোসেন্ট বলেই তো বিশজন আর কিলার হলে যে কতো জন থাকতো কে জানে?

“আপনি বসে বসে হিসাব করুন
মুচকি হেসে বলে জিহাত।

” তোমার খাওয়া শেষ?
রাইকে জিজ্ঞেস করে।
রাই মাথা নারায় মানে হ্যাঁ।

“তো চলো

জিহাত রাইয়ের হাত ধরে রুমে চলে যায়।
“আমি আমার মেয়ের জীবনটা কিছুতেই নষ্ট হতে দেবো না।

” জিহাত তো ভালো ছেলেই
রাইয়ের মা বলে

“পাঁ বছর ধরে চিনি আমি ওকে। ও ভালো ছেলে? ওর মতো খারাপ আর দুটো নেই। যেমন বাপ তার তেমন ছেলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here