আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৮
Tanisha Sultana
রুমে এসেই ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় জিহাত। বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়।
“আল্লাহ বাঁচাইছে। আলহামদুলিল্লাহ
রাই খাটে বসে বলে
” বাবা তো ঠিকি বলছে
“ওহহহ তাহলে তুমিও চাও আমি তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দেই?
” সেটা বলি নি
“যেটাই বলো বলবা না।
” ঠিক আছে
রাই মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরে। জিহাত সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
______________
“রাই তোমাকে যে শাড়িটা গিফট করলাম ওইটা পড়ে নাও
কোলবালিশে মুখ গুঁজে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে জিহাত।
রাই ঘুম থেকে উঠে গোছল করে আয়নার সামনে বসে চুল মুছছিলো। কলেজে যাবে তাই সকাল সকাল গোছল করা। জিহাতের কথা শুনে জিহাতের দিকে ঘুরে বলে
” কেনো?
“তোমাকে তোমার শাশুড়ী মায়ের কাছে নিয়ে যাবো।
” আমি তো শাশুড়ী মায়ের সামনেই থাকি।
“এতো কথা বলো কেনো? পড়ো না।
” ঠিক আছে আপিকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে বলে
আপি শব্দটা শুনে জিহাত বিরক্তি নিয়ে বসে।
“একা পারো না কিছু তুমি?
” শাড়ি পড়তে পারি না
“খাওয়া আর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদা ছাড়া আর কিছু পারো না কি?
রাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জিহাতকে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু দুজন এক সাথে কথা বললে সেটা ঝগড়া হয়ে যাবে। সবাই খারাপ বলবে। তাই রাই চুপ করে আছে।
” শাড়ি পড়তে আমি হেল্প করবো। তোমার ওই বাঘিনী আপির প্রয়োজন নেই।
“আপনি
চোখ বড়বড় করে বলে রাই
” হ্যাঁ আমি। এবার যাও বাকি সব কিছু পড়ে আসো
“না মানে বলছিলাম কি
“কিচ্ছু বললে বাকি সব কিছুও আমি পড়িয়ে দেবো
রাই আলমারি থেকে ফটাফট শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে ঢুকতে যায়। জিহাত ডাকে
” তুমি রুমে চেঞ্জ করো আমি ওয়াশরুমে যাবো।
“যদি আপনি দরজা খুলে দেন
” ইচ্ছে হলে দেবো। তোমার কি?
“আমার কি মানে? আমারই তো সব
” যেমন
রাই ভরকে যায়। কও বলবে বুঝতে পারছে না। মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাচ্ছে। জিহাতের খুব রাগ লাগছে
“ভয় পেয়ে গেছো? যে কোনো সময় চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়বে। তারপর গলা ফাটিয়ে কাঁদবে। দের দুই ঘন্টার মধ্যে আর কান্না শেষ হবে না।
বিরক্তি নিয়ে বলে জিহাত। রাইয়ের এতোখন কান্না না পেলেও এবার,কান্না পাচ্ছে। কিন্তু রাই নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। যাই হয়ে যাক কাঁদবে না। কেনো কাঁদবে ওকে তো কেউ মারে নি।
” লিসেন রাঔপারছি না, পারবো না, হচ্ছে না, হবে না, মানে এই শব্দ গুলো বাদ দিয়ে আমার সাথে কথা বলবে কেমন? জানো এই শব্দ গুলো কারা ইউস করে? যারা ভীতু দুর্বল তারা। আর আমি চায় না আমার বউ দুর্বলদের দলে পড়ুক। সো সব সময় চিল মুডে থাকবা।
রাইয়ের পেছনে থাকা ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে টাওয়াল নিয়ে জিহাত ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। রাই চমকে ওঠে।
এখন রাইয়ের ভীষণ খুশি লাগছে। কারণ ও কান্না কটকাতে পেরেছে। নিজেকে নিজে প্রমিজ করে আর কখনো কাঁদবো না।
জিহাত বেরোনোর আগে কোনোরকমে শাড়ি পেচিয়ে ফেলতে হবে। রাই বাকি সব কিছু পড়ে শাড়ি পড়ার ট্রাই করে। সবাই পারে ও পারবে না কেনো? কোনোদিন পড়া হয় নি তাই এখন হিমসিম খাচ্ছে। বিয়ের দিন লেহেঙ্গা পড়েছিলো।
শাড়িটা অতিরিক্ত পাতলা কিন্তু বেশ সুন্দর। জর্জেট হওয়াতে রাই সামলাতে পারছে না। কুচি করতো গেলে আচল পড়ে যাচ্ছে আবার আচল ঠিক করতে গেলে কুচি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বিরক্তির একটা নিশ্বাস ফেলে রাই। কুচিটা ছেড়েই দেয়।
” শাড়ি পড়া এতো কষ্ট? তাই তো বলি মা সালোয়ার কামিজ কেনো পড়ে।
মনে মনে বলে রাই। মনে মনে খুব রুহিকে ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু জিহাত বকবে বলে ডাকছে না।
এতোখন জিহাত দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রাইয়ের তামাশা দেখছিলো। ভালোই মজা লাগছে। কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে যদি রাই দেখে ফেলে তাহলে কান্নাও করে দিতে পারে ভেবে বেরিয়ে আসে। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে
“রেডি
রাই চমকে জিহাতের দিকে তাকায়। অসহায় ফেস করে বলে
” এটা আমার দ্বারা সম্ভব না।
“দেখি এদিকে ঘোরো
রাই জিহাতের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। জিহাত রাইকে আচল শক্ত করে ধরে রাখতে বলে। খুব সুন্দর করে শাড়ির কুচি করে দেয় জিহাত।
” এবার এটা গুঁজে নাও
রাই বলদের মতো তাকিয়ে বলে
“এ্যাঁ
জিহাত ঠাস করে শাড়িটা গুঁজে দেয়। রাই ছাট করে দুই হাত পিছিয়ে যায়। শরীর কাঁপছে রাইয়ের। মনে হয় ইলেকট্রকের শক খেয়েছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। জিহাতও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেছে।
” সরি আসলে তুমি বুঝতে পারছিলে না তাই৷ প্লিজ কেঁদো না। তাহলে শশুড় মশাই আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে জিহাত।
জিহাতের কথা শুনে রাই বড়বড় চোখ করে জিহাতের দিকে তাকায়। এতোখন যে খারাপ লাগাটা ছিলো এখন আর সেটা নেই। এই ছেলে কি ম্যাজিক জানে না কি?
“এই কান ধরছি
জিহাত কান ধরে বলে।
রাই ফিক করে হেসে ফেলে। রাইয়ের হাসি দেখে জিহাত বুকে হাত দিয়ে বলে
” যাক বাবা এবারের মতো কান্নার হাত থেকে বেঁচে গেলাম।
রাই আবার চোখ গরম করে তাকায়। জিহাত একটা ঢোক গিলে। রাই হেসে ফেলে। জিহাত শাড়ির আচল ঠিক করে দেয়।
“ছিপটিপিন আছে
” নাহহহ। আপির কাছে আছে
“ওহহহহ গড আবার আপি
বিরক্তি নিয়ে বলে জিহাত।
” সরি
মাথা নিচু করে বলে
“ইটস ওকে। ক্লিপ আছে
” হুমমম
” দাও
রাই ক্লিপ দেয় জিহাত রাইয়ের আচলে ক্লিপ লাগিয়ে দেয়। তারপর জিহাত নিজের ব্যাগ থেকে কিছু বের করে। তারপর রাইয়ের গলায় চিকন একটা স্বর্নের চেইন আর কানে ছোটমট এক জোড়া দুল পড়িয়ে দেয়।
“এগুলো
” আমার মায়ের দেয়া। মা যখন বাড়ি থেকে চলে গেছিলো তখন দিয়েছিলো তার ছেলের বউকে দেওয়ার জন্য। তাই আজ দিয়ে দিলাম।
রাই ঠোঁট মেলে একটু হাসে। আয়নার দিকে তাকায়। ভালোই লাগছে। ঠোঁটে হালকা একটু লিপস্টিক আর চোখে কাজল দিলে পারফেক্ট লাগবে। কিন্তু জিহাতের জন্য সাহস পাচ্ছে না।
“এখন চট করে ঠোঁটে হালকা করে একটু লিপস্টিক আর চোখে কাজল দাও
রাই জিহাতের দিকে তাকায়।
” আজ কিছু বলবো না। কারণ আজ আমি তোমার সাথে থাকবো।
রাই খুশি হয়ে হালকা একটু সেজে নেয়। জিহাত রাইয়ের সাথে মেচিং করে শার্ট পড়ে সাথে কালো জিন্স। চুল গুলো হাত দিয়ে পরিপাটি করে নেয়।
“চলো
” হুমমম চলুন
“এক মিনিট
জিহাত রাইয়ের দিকে তাকায়
” কি হলো
“দেখতে দাও
রাইয়ের দিকে একটু ঝুঁকে বলে
” রাই দু পা পিছিয়ে যায়। এর আবার কি হলো?
চলবে