আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৯

0
7356

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১৯
Tanisha Sultana

জিহাত রাইয়ের চোখে থেকে একটু কাজল নিয়ে কানের নিচে লাগিয়ে দেয়।
“এটা কি হলো?

” কেনো যেনো আমার বউয়ের দিকে নজর না দেই তাই।
রাই ভেংচি কেটে বলে
“এমন ভাব করছেন যেনো বউ আপনার একটাই আছে।
জিহাত রাইয়ের মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে বলে
” এরকম কিউট বউ আমার একাই আছে।

“ঢং দেখে বাঁচি না

” দেখো না ঢং কেয়ারিং টা দেখো

“এতো কেয়ার করতে হবে না

” কেনো?

“এখন বেশি বেশি কেয়ার করলে পরে আর করবেন না

” কইছে তোমারে

“হুমম কইছে

” পরে আরও বেশি কেয়ার করবো।

“দেখা যাবে

” দেখিয়েন পরে। এবার চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে

জিহাত এক হাত ধরে বের হয়। প্রথমেই রুহির সামনে পরে। রুহি একবার ওদের হাতের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে
” রাই কোথাও বের হচ্ছিস?

রাই হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। মুখে একটু হাসি টেনে বলে
“হুমমম

” কখন ফিরবি?

জিহাত বিরক্ত হয়ে বলে
“যখনই ফিরি তোমার কি?

” বাবা বলছিলো
চোখের পানি আটকে বলে রুহি।
“বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসবো
মিষ্টি করে একটু হেসে বলে রাই। তারপর রুহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
” কোনো ভাবে তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ভেরি সরি

“সরি বললেই সব সমাধান হয় না রাই

রাই উওরে কিছু বলে না। সত্যিই তো পাঁচ ওয়ার্ডের সরি সব কিছু ঠিক করতে পারবে না। রাইয়ের মুখটা কালো হয়ে যায়। রাইকে ছাড়িয়ে চলে যায় রুহি।

“তুমি সব সময় অপমান হওয়ার জন্য এগিয়ে যাও কেনো বলোতো?
চোখ মুখ শক্ত করে বলে জিহাত।

” ও মা কি করলাম? বোন তো
কথা শেষ করার আগেই জিহাত বলে

“সারাক্ষণ আপি আপি বলা বন্ধ করো

রাই বুঝে যায় জিহাত প্রচন্ড রেগে গেছে। তাই আর কথা বাড়িয়ে হাটা শুরু করে।
পাক্কা একঘন্টা বারো মিনিট বাইক চালিয়ে একটা রং চটে যাওয়ার পুরোনো এক তলা বাড়ির সামনে বাইক থামায় জিহাত। বাড়িটার সামনে নানা রকমের ফুল গাছ। আহামরি কোনো গেট নেই। কিন্তু টিন আর বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোটমট একা গেট। গেটের ওপর দিয়ে ঘাস ফুল গাছের বাহার।
রাই বাঁশের তৈরি দরজাটা আস্তে করে ধাক্কা দেয়। খুলে যায়। জিহাত বাইক নিয়ে ঢুকে। এক পাশে বাইক দাঁড় করায়। রাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাড়িটা দেখছে। বাড়িটার আশেপাশে আরো অনেক বাড়ি আছে। সব গুলো বাড়িই টিনের তৈরি। এই বাড়িটায় ইটের দেয়াল আর টিনের ছাউনি।

” ভেতরে চলো
জিহাতের কথায় রাই আশেপাশে তাকানো বন্ধ করে

“বলছিলাম এভাবে খালি হাতে আসলাম।

” এখানে আসলে খালি হাতেই আসতে হয়। আসলে আমি তো কিছু করি না। যদি মায়ের জন্য কিছু আনি তো বাবার টাকায় আনতে হবে। যেটা মা পছন্দ করে না। রেগে যায়।

“ওহহহ
মাথা নিচু করে বলে রাই।
” আমি যখন জব পাবো। অনেক টাকা ইনকাম করবো তখন এতো এতো জিনিস নিয়ে আসবো। তুমি দেখো
জিহাতের কথায় রাই হাসে। এটাকে তৃপ্তির হাসি বলে। জিহাত ও একটু হাসে রাইয়ের চোখে মুখে হাসি দেখে।
“চলুন এবার

কলিং বেল নেই। জিহাত দরজায় টোকা দিয়ে একবার মা বলে ডাকে। ভেতর থেকে আসছি বলে শব্দ আসে।
” শোনো মাকে সালাম দেবে। আর একদম চুপচাপ থাকবে না। কথা বলবে। ঠিক আছে। চুপচাপ থাকা মা পছন্দ করে না।

রাই মাথা নারায়।
একটু পরেই জিহাতের মা দরজা খুলে দেয়। জিহাতের পাশে রাইকে দেখে ভ্রু কুচকায়।
“রাই তুমি এখানে?
রাই কি বলবে বুঝতে পারছে না। হাত কচলাচ্ছে

” মা ভেতরে এসে বলি

“হুমম

গম্ভীর ভাবেই দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায় জিহাতের মা। জিহাত গটগট করে ঢুকে পরে। রাই এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

” রাই ভেতরে এসো
জিহাতের মায়ের কথায় রাইও ভেতরে ঢুকে।

“মা আমি ওকে বিয়ে করেছি
চেয়ার টেনে বসে বলে জিহাত। এখানে সোফা নেই। জিহাতের মা,কিছু না বলে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

” তুমি এই বাঁদরটাকে বিয়ে করেছো? নিশ্চয় ফোর্স করেছে? আর এখন নিশ্চয় ধমক দেয়?

“না মা প্রচন্ড আদরে রাখি জিজ্ঞেস করো?
টিভি অন করে বলে জিহাত।

” তুমি কি ভয় পাচ্ছো? আরে আমি বকবো না। চিনি তো আমার ছেলেকে। কেমন বদমাইশ। তবে তোমার কিন্তু অনেক দায়িত্ব। এই বদমাশটাকে মানুষ করতে হবে। তোমারা ভালো থাকলেই আমি ভালো।
রাইয়ের থুতনিতে হাত দিয়ে বলে।

“আরে বাহহ জিহাত বউকে দেখি আমার দেওয়া সামান্য উপহার পাড়িয়ে দিয়েছিস
মুচকি হেসে বলে জিহাতের মা।

” মা আপনার উপহারটা সামান্য না। এটা আমার কাছে অসামান্য। এটার কোনো মূল্য হয় না।

রাইয়ের কথা শুনে জিহাতের হাত থেকে রিমোট পড়ে যায়। জিহাতের মা জিহাতের দিকে তাকায়। রাইও তাকায় তবে ভয়ে ভয়ে কোনো ভুল কিছু বললো না কি?

“ও মাই গড মায়ের ছোঁয়া পেতে না পেতেই আমার বউয়ের মুখে বুলি ফুটেছে। আগে জানলে আরও আগেই নিয়ে আসতাম।

রাই কাচুমাচু হয়। সাথে লজ্জাও পায়।

” তোর বউ বুঝি কথা বলে না?

“বলে খুব কম।

” এরকম বউই তোর জন্য পারফেক্ট। কতো মিষ্টি মেয়ে। তোর গার্লফ্রেন্ড রুহির মতো হলে তোর কপাল পুরতো। ঠিক আমার মতো। এতো ভালো একটা মেয়েকে লাইফ পাটনার হিসেবে পেয়েছিস শুকরিয়া আদায় কর।
তোরা বস আমি আসছি
রাইয়ের কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়। রাই মুচকি হাসে।
জিহাতের মা চলে যেতেই জিহাত রাইকে হাত ধরে টান দিয়ে কোলে বসায়। রাই চমকে যায় সাথে ভরকে যায়।

“ককি করছেন
কাচুমাচু হয়ে বলে

” তুমি কি করছো? জাস্ট কয়েক মিনিটেই মাকে হাত করে নিলে। সাথে একটা চুমুও পেলে।

“আপনার মা কতো ভালো

” আমি ভালো না

“মোটেও না
ঠোঁট উল্টে বলে রাই।

” কেনো?

“আপনি বিশ্ব ত্যারা। কেমন জ্বালান আমায়। বাচ্চা একটা মেয়ে আমি।

” আচ্ছা। এবার দেখাই ত্যারামি কাকে বলে? আর ছোট তুমি? ঠিক আছে ফিটার খাওয়াবো তোমায়।
শয়তানির হাসি দিয়ে বলে জিহাত। রাইয়ের চোখ আপনাআপনি বড়বড় হয়ে যায়।

“আআপনার মা আমাকে ডাকছেন
চোখ গোলগোল করে মিথ্যা কথাটা বলে দেয় রাই।

” আচ্ছা মা ডাকছে তাই তো?
ভ্রু কুচকে বলে জিহাত। জিহাতের চাহনিতে রাইয়ের গলা শুকিয়ে যায়।

“মা ফিটারে দুধ ভরে নিয়ে আসো। তোমার বাচ্চা বউমাকে খাওয়াবো
জোরে মাকে ডেকে বলে জিহাত।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here