আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২
Tanisha Sultana
চোখ বন্ধ করে ভাবছে রাই কি থেকে কি হয়ে গেলো। এতোদিন যাকে বোনের বফ বলে জানতো আজ সে নিজের বর। কেনো হলো এমনটা? কেনো করলো জিহাত এমন? খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে জিহাতকে কিন্তু জিহাতের চোখের দিকে তাকিয়ে এসব জিজ্ঞেস করার সাহস রাইয়ের নেই।
ফোনটা বেজে ওঠে রাইয়ের। স্কিনে বড় বড় করে ভেসে উঠেছে রুহি নামটা। রাই মুচকি হেসে রিসিভ করে
“বোন তুই ঠিক আছিস তো? ওই বেয়াদব ছেলেটা তোর ওপর কেনো জুলুম করছে না তো?
উত্তেজিত কন্ঠে বলে রুহি।
” আপি আমি ঠিক আছি।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুহি।
“রাই আই এম সরি বোন। আমার জন্য এতোকিছু হলো। আমার জন্য তোকে এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে।
কান্না করতে করতে বলে রুহি।
” আপি কাঁদিস না প্লিজ। আমি ঠিক আছি। ভালো আছি আমি। তুই আমায় একটা কথা বল তোরা তো রিলেশনশিপ এ ছিলি তো হঠাৎ জিহাত ভাইয়া আমাকে কেনো বিয়ে করলো? আর বাবাও কেনো ওনার সাথে আমাকে পাঠিয়ে দিলো?
“জিহাত বাবাকে বলেছে তুই প্রেগন্যান্ট। রিপোর্টও দেখিয়েছে।
রুহির কথা শুনে রাই ঠমকে যায়। কি বলছে এসব? রাই চোখ বন্ধ করে দম নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে
” এসব করে ওনার লাভ কি? কি পাচ্ছেন উণি?
“আমি কিচ্ছু জানি না। শোন কাল সকাল হওয়ার সাথে সাথে তুই ওখান থেকে পালাবি। ওনেক দুরে চলে যাবো আমরা। তোর জীবন শেষ হতে দেবো না আমি। ও একটা প্লে বয়। হাজারটা মেয়ের সাথে এফেয়ার আছে ওর।
” তা না হয় পালাবো কিন্তু বাবা আমাকে ভুল বুঝে নি তো
“আমি বাবাকে বলেছি সব।
” আপি আমার মনে হয় আমাকে কিডনাপ জিহাত ভাইয়াই করেছিলো। ভাইয়াটা সত্যিই ভীষণ খারাপ। তোকে আমি অনেক করে বলেছিলাম এই জিহাতের সাথে রিলেশনশিপ এ না জড়াতে। বাট তুই
তখনই জিহাত রাইয়ের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।
” ভালোই হলো তুমি কল করেছে। তুমি না করলে আমিই করতাম। আসলে আমি চাইছিলাম না ফুলসজ্জার রাতে কেউ ডিস্টার্ব না করুক। বাট তুমি করে ফেললে। অবশ্য তোমার বোন যে নেকা। ছুঁতে গেলেই তো সাগর বানিয়ে দেবে।
“জিহাত আমার বোনটা খুব ছোট। ওকে কেনো টানছো এসবের মধ্যে?
” বেইমানের রক্ত। ছোট হতে পারে বাট মারাক্তক শয়তান। ঠিক তোমার মতো। সুযোগ পেলেই কপ বসিয়ে দেবে।
“জিহাত
” তোমার হিটলার বাপের সাথে বসে ফন্দি আঁটো কি করে বোনকে বাঁচাবে। আমি ওর সাথে ঠিক সেটাই করবো যেটা তুমি আমার সাথে করেছো। হয়ত তার থেকে বেশিই করবো। আর হ্যাঁ কাল আমি এমনিতেই তোমার বোনকে তোমাদের বাড়িতে দিয়ে আসবো। পালাতে হবে। আর আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতেও পারবে না
এক নাগারে কথাগুলো বলে ফোন কেটে দেয় জিহাত। রাই জিহাতের কথার আগামাথা কিছুই বুঝে না। মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে রাইয়ের সব।
রাগে জিহাতের শরীর কাঁপছে। এসির মধ্যেও ঘামছে জিহাত। চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে গেছে।কপালের রগ ফুটে উঠেছে।
রাইয়ের জিহাদকে দেখে ভয় করছে। ভীষণ ভয়ংকর লাগছে জিহাত কে। রাই থরথর করে কাঁপছে জিহাতের এমন রুপ দেখে।
জিহাত খাটের ওপর ফোনটা বেরিয়ে যায়। এখানে থাকলে পুরো রাগটা রাইয়ের ওপর ঝাড়তে হবে।
জিহাত চলে যাওয়াতে রাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এই ছেলেদের পুরো সাইকো। রাই এবার দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোর চেষ্টা করছে।
জিহাত গেস্ট রুমে গিয়ে মদ আর সিগারেট খাচ্ছে পরম তৃপ্তি করে। খুব কষ্ট হলে ও এটা করে তা না। এটা তো রোজকার স্বভাব ছোট বেলা থেকেই।
সকালবেলা ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রাইয়ের। খাটে তাকিয়ে দেখে জিহাত নেই। হয়ত আর রাতে রুমে আসে নি। রাই উঠে ফুল ঝেড়ে পুরো রুমটা সুন্দর করে গোছায়। আলমারিতে হাত দেওয়ার সাহস পায় না তাই আর আলমারি গোছানো হয় না। তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে জিহাতের সব ময়লা কাপড় ধোয়। সিগারেটের খোলা গুলো বেলকানি দিয়ে ফেলে দেয়।
এসব করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। রাই ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পাল্টে একটা সুতি থ্রি পিছ পড়ে নেয়। ছড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। নয়টা বেজে গেছে। কোথা দিয়ে সময় চলে গেলো।
রাই ওড়নাটা ঠিক করে চুল আঁচড়িয়ে রুমের বাইরে যায়। বাইরে মানুষ গিজগিজ করছে। এতোএতো মানুষের ভীরে রাই বুঝতেই পারছে না জিহাতের মা বাবা কারা। জিহাকেও দেখতে পাচ্ছে না। রাই একপা একপা করে এগোচ্ছে। মাথার ঘোমটাটা একটু টেনে নেয়।
“এই মেয়ে শোনো
কেউ ডাকায় রাই দাঁড়িয়ে যায়। ওকেই ডাকছে কি না ও শিওর না তবুও মনে হচ্ছে ওকেই ডাকছে। পেছন ঘুরে একজন মদ্র বয়স্ক মহিলাকে দেখে। জিহাতের সাথে মুখের কোনো মিল নেই৷ মিল থাকলে হয়ত ভাবতো এটাই জিহাতের মা।
রাই ঢোক গিলে একটু এগিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বলে
” জ্বী বলুন
মহিলাটি ভালো করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে রাইকে।
“দেখতে শুনতে তো ভালোই। কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?
” ইন্টার ফাস্ট ইয়ার
“এতো ছোট মেয়েকে বিয়ে করলো জিহাত। যাক গে ওর যা ইচ্ছে করবে৷ চলো তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
বলেই মহিলাটি রাইয়ের হাত ধরে বসার ঘরে নিয়ে যায়। ওখানে অনেক মহিলারা কাজ করছিলো। কেউ মশলা বাটছিলো কেউ তরকারি মাংস এসব করছে। বৌভাতে আয়োজনের জন্য।
” দেখো কে এসেছে। আমাদের নবাবপুএের বউ।
সবাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রাইকে দেখছে। সবার মুখে এক কথা এতো ছোট মেয়ে।
একেক জন একেক রকমের প্রশ্ন করে যাচ্ছে। রাই কোনটা থেকে কোনটার উওর দেবে ভেবে পাচ্ছে না।
“আমি বিয়ে করে এনেছি আমার সাথে থাকার জন্য। তোমার প্রশ্নের উওর দেওয়ার জন্য না
কর্কশ গলায় বলে জিহাত। জিহাতকে দেখে সবাই থেমে যায়। রাইয়েরও ভয় করছে।
মহিলাটি একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
” না মানে সবাই নতুন বউকে
জিহাত মহিলাটিকে বলতে না দিয়ে বলে
“আমার বউকে আমি দেখবো। নেক্সট টাইম যেনো ওকে কেউ প্রশ্ন না করে। আর হ্যাঁ ওর সাথে জিহা ছাড়া আর কেউ কোনো কথা বলবে না। আপনারা চলে গেলে খুশি হবো। আমার বাড়িতে এতো লোজজন পছন্দ না
সবাই মাথা নিচু করে ফেলে জিহাতের কথা শুনে। রাইয়েরও খারাপ লাগছে। এভাবে না বললেও পারতো।
জিহাত রাইয়ের হাত ধরে নিয়ে যায়। রাই মাথা নিচু করে হাঁটছে। খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে
” আপনি ওনাদের সাথে এমন বিহেব কেনো করলেন? এভাবে কাউকে বলতে নেই। ওনারা তো কষ্ট পেলো।
কিন্তু কথা গুলো মুখ দিয়ে বের হয় না। গলার কাছে এসেই থেমে যায়।
রুমে এসেই রাইয়ের হাত ছেড়ে দেয়। জিহাতের শরীর দিয়ে মদ আর সিগারেটের গন্ধ আসছে। সিগারেটের গন্ধটা একদম সয্য করতে পারে না রাই।
“তোমাকে কে বাইরে যেতে বলেছে?
চোখ মুখ শক্ত করে বলে জিহাত।
” আসলে রুমে
“আমার পারমিশন ছাড়া রুম থেকে বের হবা না। দু’ঘন্টা বাদেই তোমাকে তোমাদের বাড়িতে দিয়ে আসবো।
” একেবারে?
“নাহহহহ। প্রতিদিন সকালে দিয়ে আসবো আর রাতে নিয়ে আসবো।
” এরকম কেনো?
“আমার মুখের ওপর কেউ কথা বলে না। ভুলেও এই সাহসটা দ্বিতীয় বার দেখাবা না।
টিশার্ট খুলতে খুলতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় জিহাত। রাই হা করে তাকিয়ে আছে।
” এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম এর কথার আগামাথা কিছুই তো বুঝি না। জীবনটা পুরো রহস্যের মায়াজাল হয়ে গেছে।
চলবে