আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২০
Tanisha Sultana
জিহাতের মা কাপড় দিয়ে হাত মুছতে মুছতে আসে। রাইকে জিহাতের কোলে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। রাই লাফ দিয়ে নামে। ভিষণ লজ্জা পায়। জিহাতের তেমন ভাবান্তর নেই।
“কি যেনো বললি ঠিক শুনতে পায় নি?
প্রশ্ন করে জিহাতের মা।
রাই ঢোক গিলে যদি এখন জিহাত বলে দেয়।
” ওই তো কিছু বলছিলো না
আমতাআমতা করে বলে রাই।
“বলছিলাম তো। তুমি শোনো নি না? আচ্ছা আবার বলছি ফিট
রাই গিয়ে জিহাতের মুখ চেপে ধরে।
” মা কিছু না
জিহাতের মা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। এরা কি বলছে উনি বুঝতে পারছে না।
“কিছু না তো ওর মুখ কেনো চেপে ধরে আছো?
হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বলে উনি।
রাই হাত সরিয়ে নেয়। জিহাত হাফ ছেড়ে বাঁচে।
” এভাবে মুখ কেনো চেপে ধরলে?
জিহাতও একই প্রশ্ন করছে। রাই হতাশ হয়ে চোখ বন্ধ করে। এখনই জিহাত ওর মাকে বলে দেবে সে ফিটার আনতে বলেছে।
“বুঝতে পারছি তোদের কোনো কথা নেই। তো আমি যায়
মুচকি হেসে চলে যায় জিহাতের মা। রাই বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয়। জিহাত রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
” এটা কি হলো?
রাই রাগী লুকে জিহাতের দিকে তাকায়।
“আপনি মাকে এসব বলতে যাচ্ছিলেন?
” হ্যাঁ তো?
“যা তা আপনি
বিরক্তি নিয়ে বলে রাই।
” আমি বুঝতে পারি না তোমার এতো লজ্জা থাকে কোথায়? কিছু বললে লজ্জা পাও। আবার লজ্জা পেয়ে কেঁদেও দাও। মায়ের সামনে জাস্ট একটা কথা বলেছি তাতেও তোমার লজ্জা। ইন ফিউচার যখন তোমায় ছুঁতে যাবো তখনও তুমি হয় কেঁদে ফেলবে নয়ত লজ্জায় আমাকেও ঘোমটা পাড়িয়ে দেবে।
টিভির দিকে তাকিয়ে এক নাগারে কথা গুলো বলে জিহাত।
“এমন ভাবে বললেন যেনো আপনি কখনোই আমাকে টাচ করেন নি
ঠোঁট উল্টে বলে রাই।
জিহাত টিভি বন্ধ করে চেয়ারে গোল হয়ে বসে থুতনিতে হাত দিয়ে বলে
” তোমায় টাচ করেছি? কবে? কখন?
রাই অবাক হয়ে তাকায় জিহাতের দিকে
“আপনি আমাকে টাচ করেন নি?
পাল্টা প্রশ্ন করে রাই।
” মনে তো হয় না
স্বাভাবিক ভাবে বলে দেয় জিহাত।
রাই আকাশ থেকে পড়লো। বলে কি লোকটা
রাই এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে। জিহাত জানতো এমনটাই হবে। তাই হেসে ফেলে
“আপনি পনেরো দিন আমাকে কতোবার টাচ করেছেন গুনে শেষ করা যাবে না। আবার কাল তো কিছও করেছেন। আর এখন অস্বীকার করছেন।
নাক টেনে কাঁদতে কাঁদতে বলে রাই। জিহাত রাইয়ের কাছে আসে
” প্লিজ কান্না অফ করো। মা দেখলে আমাকে বকবে।
রাইয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে। তবুও রাই কান্না থামায় না।
“আমি কাঁদলে আপনার বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে না। শুধু মাএ মা বকবে বলে কান্না থামাতে বলছেন
হেঁচকি তুলে অভিযোগের সুরে বলে রাই। জিহাত বোঝার চেষ্টা করছে রাই কি বললো। রাই কাঁদলে জিহাতের বুকের ভেতর ধক করে উঠবে কেনো?
” একটু পরে কাঁদো আগে আমাকে এই বেপারটা ক্লিয়ার করো। তুমি কাঁদলে আমার বুকের ভেতর ধক করে উঠবে কেনো?
গালে হাত দিয়ে বোকার মতো প্রশ্ন করে জিহাত।
সত্যিই তো আমি কাঁদলে ওনার বুকের ভেতর ধক করে উঠবে কেনো? কে হয় আমি?
নিজে নিজে প্রশ্ন করে চোখের পানি মুছে রাই। শুধু শুধু কান্না করার মানেই হয় না। কিন্তু রাই কি করবে? ও তো অনেক চেষ্টা করে চোখের পানি মোছার কিন্তু পারে না। মন থেকে কাঁদার আগেই চোখ দিয়ে পানি গড়াতে থাকে।
“হেলো মিসেস এন্সার প্লিজ
রাইয়ের সামনে হাত নারিয়ে বলে জিহাত। রাই শাড়ির আচল দিয়ে ভালো করে চোখ মুখ মুছে বলে
” কিছু না
“ওহহহ আচ্ছা
জিহাত পকেট থেকে টিস্যু বের করে রাইয়ের চোখে লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছিয়ে দেয়।
” তুমি কাঁদলে আমার বুকের ভেতর ধক করে ওঠে না। কেনো জানো? কারণ তুমি কাঁদুনি বুড়ি।
রাই মাথা নিচু করে বলে
“সেই আমি কে হই আপনার যে আমি কাঁদলে আপনার বুকের ভেতর ধক করে উঠবে? জাস্ট ফ্রেন্ড আপনার।
বলেই রাই ঝড়ের গতিতে ওখান থেকে চলে যায়। জিহাত ফিক করে হেসে ফেলে
” পাগলি একটা। সব সময় উল্টোটা বুঝবে।
জিহাতের মা নানারকমের রান্না করে কাঠের টেবিলের ওপর সাজাচ্ছে। রাই পাশে একটা চেয়ার টেনে মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
“রাই যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো
” হাত মুখ ধুতে হবে না এভাবেই খাবো
“সব সময় খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হয়। যাও
ইচ্ছে না থাকা স্বতেও রাই হাত ধুতে যায়। জিহাত এক মনে টিভি দেখে যাচ্ছে। কে জানে টিভিতে কি হচ্ছে? রাই পা টিপে টিপে জিহাতের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। জিহাত একটা হিন্দি মুভি দেখছে। যেখানে হিরো হিরোইনকে জোর করে লিপ কিস করছে। রাই চোখ বড়বড় করে তাকায়। দুপা পিছিয়ে ধাপ করে পড়ে যায়। আসলে রাই ভেবেছিলো পেছনে চেয়ার আছে তাই বসতে যায়। কিন্তু চেয়ার না থাকায় একদম ফ্লোরে হাতপা ছড়িয়ে পড়ে যায়।
কিছু একটা পড়ার শব্দে জিহাত পেছনে তাকিয়ে রাইকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে যায়। জিহাতের আর বুঝতে বাকি নেই রাই মুভি দেখেই পরে গেছে।
” একি তুমি পড়লে কিভাবে?
জিহাত রাইয়ের কাছে গিয়ে হাঁটু মুরে বসপ বলে। রাই হাতের কনুই ঘসতে ঘসতে বলে
“মুভিটা আমি আবার দেখবো
রাইয়ের কথা শুনে জিহাত গোলগোল চোখ করে তাকায় রাইয়ের দিকে। রাই পড়ে যাওয়ার পরেই জিহাত টিভি বন্ধ করে দিছে।
” কি হলো মুভির নাম বলুন আমি দেখবো।
“এটা বড়দের মুভি। ছোটদের দেখতে নেই।
” মুভির ওপরে বড়বড় হেডলাইন দিয়ে তো লেখা নেই এটা বড়দের মুভি ছোটদের দেখতে নেই। তাই না? ভীষণ ভাল্লাগছে মুভিটা। দেখবো আমি
“কমনসেন্স। লেখা থাকবে কেনো?
” আপনার কমনসেন্স আপনার কাছেই রাখুন। আর এখন আমাকে মুভির নাম বলুন? সেই জন্যই তো বলি আপি আমাকে হিন্দি মুভি দেখতে দেয় না কেন? বলুন না? আমি ইউটিউব দেখে দেখে নেবো
“জানি না
” ঠিক আছে আমি দেখে নিচ্ছি রিমোট দেন।
জিহাত এবার ভালোই বিপদে পড়েছে। এই মেয়েকে দেখে মনে হয় ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারে না। সে কি না এখন রিমোট চাইছে মুভি দেখবে বলে। ভাবা যায়
“এই যে মিস্টার রিমোট
” হ্যাঁ মা আসছি
ওই দেখো মা ডাকছে
জিহাত হাত বাড়িয়ে আলমারির ওপরে রাখে রিমোট যাতে রাই ধরতে না পারে। তারপর রাইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে নিয়ে যায় মায়ের কাছে। জিহাত গিয়ে খাবার টেবিলে বসে পরে। রাইও বসতে যাবে তখন জিহাতের মা বলে
“রাই হাত ধুয়েছো?
রাই দাঁত কেলিয়ে বলে মনে নাই। তারপর গিয়ে হাত ধুয়ে আসে। তিনজন মিলে একসাথে খাবার খায়।
জিহাত রাই এসেছে বলে আশেপাশের অনেক মানুষ আসে। জিহাতের মা সবার সাথে রাইয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর আরও কিছুখন গল্প করে দুপুরের দিকে জিহাত রাইকে নিয়ে বেরিয়ে পরে।
রাস্তায় মিহির সাথে দেখা হয়। জিহাত মিহির সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। রাই বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে। একা একা ভাল্লাগছে না। কিন্তু জিহাতের আসার নামই নাই।
কি এমন আজাইরা কথা বলছে কে জানে।
” ওয়াও রাই
এমন বিউটি কুইন সেজে নিশ্চয় আমার জন্য ওয়েট করছো
পরিচিত কোনো কন্ঠ পেয়ে রাই চমকে তাকায়। হাত পা কাঁপছে রাইয়ের। জিহাতকে ডাকার শক্তিটাও পাচ্ছে না।
“বেবি এতো ভয় পাও কেনো? আমি তো তোমাকে বকি না জাস্ট একটু
বলতে বলতে রাইয়ের হাত ধরে
চলবে