আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২১

0
6299

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২১
Tanisha Sultana

“তুহিন ভাইয়া আমার হাত ছাড়ুন
হাত মুচরামুচরি করে বলে রাই। তুহিন বাঁকা হেসে বলে
” কেনো রাই? হাত ধরলে কি হাতে ফোসকা পড়বে? বাই দ্যা ওয়ে তুমি শাড়ি পড়ছো কেনো? আগে তো কখনো পড়ো নি?

রাইয়ের ভয় করছে। রাস্তার মধ্যে একটা ছেলে হাত ধরে আছে বেপারটা খারাপ দেখায়।
জিহাত মিহির সাথে কথা শেষ করে দেখে একটা ছেলে রাইয়ের হাত ধরে আছে। মাথাটা গরম হয়ে যায় জিহাতের। ছেলেটা আবার হেসে হেসে কথাও বলছে।

“প্লিজ ভাইয়া হাত ছাড়ুন। সবাই খারাপ ভাববে
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে রাই।
” তোমার হাতটা একদম তুলতুলে ধরে রাখতেই ভালো লাগে।
এক গাল হেসে বলে তুহিন।

জিহাত এসে খপ করে তুহিনের হাত চেপে ধরে। তুহিন ব্যাথা পেয়ে রাইয়ের হাত ছেড়ে দেয়। রাগে কটমট চোখে জিহাতের দিকে তাকায়

” এটা কি ধরনের অসভ্যতামি? তুমি আমার হাত কেনো ধরলে? কে তুমি?
রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে তুহিন। জিহাত তুহিনের হাত ছেড়ে দেয়।
রাই জিহাতের পেছনে চলে গেছে ততোখনে। জিহাতের শার্ট খামচে ধরে আছে রাই৷ মজার বেপার হলো রাইয়ের চোখ দিয়ে এখনো পানি বের হয় নি।

“আপনি ওর সাথে অসভ্যতামী করছেন কেনো?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে জিহাত।

” ও আমার রিলেটিভ। যা খুশি করতে পারি। আপনার কি?

“ও আমার বউ।

জিহাতের কথা শুনে তুহিন যেনো আকাশ থেকে পড়লো।
” কি বললেন?
অবিশ্বাসের সুরে বলে তুহিন।
“মিসেস রাই খান। জিহাত খানের বউ। শুনছেন?

” রাই তোমার বিয়ে কবে হলো?

“যেদিনই হোক আপনার কি?

” আমি রাইকে জিজ্ঞেস করছি

“রাই অপরিচিত ছেলেদের সাথে কথা বলে না।

” আমি ওর পরিচিত

জিহাত এবার বেশ বিরক্ত হয়।
“আমি না করেছি তাই রাই কথা বলবে না। বুঝতে পেরেছেন?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
তুহিন রাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে রাগে গিজগিজ করতে করতে চলে যায়।

জিহাত রাইয়ের দিকে তাকায়

” এই মিরাক্কেল কি করে হলো?
মাথায় হাত দিয়ে বলে জিহাত। রাই ভরকে যায় জিহাতের এরকম হুট করে বলা কথাটায়। কি এমন মিরাক্কেল হলো?

“আমার ছিঁচকাদুনী বউটা এখনো কাঁদলো না? এটা কি করে পসিবল? চোখের পানি শুকিয়ে গেছে না কি?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে জিহাত।
রাই মুখ বাঁকায়

” আমি নিজে নিজে প্রমিজ করেছি আর কখনো কাঁদবো না।

“ও মা,কেনো? আমি যে ভাবলাম একটা কান্নার কমপিটিশনের আয়োজন করবো। সেখানে তুমি ফাস্ট হবে আর আমি ঢোল পিটিয়ে বলবো বেস্ট কাঁদুনির বর আমি। কতো ইন্টারেস্টিং হবে না বেপারটা?

রাই জিহাতের পিঠে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারে।
” একটু খানি কান্না করি বলে রোজ রোজ কথা শোনান। এখন থেকে আর কান্না করবো না। দেখে নিয়েন।

“ওকে দেখে নেবো

” বাই দ্যা ওয়ে আপনি এতোখন ওই মেয়েটার সাথে কি কথা বললেন?
ভ্রু নাচিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে রাই

“বলবো

” অবশ্যই

“বললো এখন কয় মাস চলে?

ঠাস করে কোমর থেকে হাত সরিয়ে নেয় রাই। জিহাতের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে বলে
” বাড়ি যাবো

“আরও শুনবা না?

” নাহহহ
“আরও বললো তো
” শুনবো না

“গুড গার্ল
গাল টেনে বলে জিহাত। রাই মনে মনে জিহাতকে বকে বাইকে গিয়ে ওঠে।

বাসায় ফিরে দেখে তুহিন রাইয়ের বাবা মা রুহি গল্প করছে। রুহির খুশি উপচে উপচে পড়ছে।
” তোমার বোন নিশ্চয় শুনেছে এই ছেলে সরকারি চাকরি করে তাই একে পেটানোর ধান্দা করছে
রাইয়ের কানে ফিসফিস করে বলে জিহাত। রাই চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে
“মোটেও না। আপি ওরকম না

” দেখা যাক
বলেই জিহাত রাইকে পিছনে ফেলে যায়।

“শশুড় মশাই চলে এসেছি
তুহিনের পাশে বসতে বসতে দাঁত কেলিয়ে বলে জিহাত। জিহাতকে দেখে রুহি তুহিন আর রাইয়ের বাবার মুখে বিরক্তি ভাব ফুটে ওঠে।

” আসতে বলছে কে?
বিরক্ত হয়ে বলে রাইয়ের বাবা।

“আমার শশুড় বাড়ি আর আমি আসবো না। তা হয় না কি?

” মামা এই ছেলেটা না কি রাইকে বিয়ে করেছে?
তুহিন জিজ্ঞেস করে।
“হ্যাঁ করেছি তো। তাই না শশুড় মশাই

দাঁত কটমট করে তাকায় রাইয়ের বাবা জিহাতের দিকে।

” আমি কি তোমার সাথে কথা বলছি?
রেগে কটমট করে বলে তুহিন।

“আমার বউকে নিয়ে তো কথা বললেন। আমাদের বিয়ে নিয়ে কেউ ডাউট করলে আমার সয্য হয় না। কিছু দিন পরে নানা হবেন।

তুহিন উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
” মামা আমার এই ছেলেটাকে জাস্ট সয্য হয় না।

“আমারও ইডিয়েট একটা।

” একে আপনি বাড়িতে এলাও কেনো করেছেন? বের করে দিন।

জিহাত তুহিনের হাত ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়। তুহিনের শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে
“এতো হায়পার হচ্ছেন কেনো? আমাকে আমার বউ ছাড়া কেউ সয্য করতে পারে না। এটা আমি বুঝি। কিন্তু কি করবো বলেন বউ যেখানে আমিও সেখানে।

তুহিন ঝাড়া মেরে তুহিনের হাত সরিয়ে দেয়।
রাইয়ের মা বলে
” আমার কিন্তু তোমাকে দারুণ লাগে।

“এই না হলো আমার শাশুড়ী।

” রাই ওকে রুমে যেতে বলো। আমরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।

রাই এতোখন দুরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। বাবার কথায় এগিয়ে আসে।
“চলো বেবি আমরা রুমে যায়। ওনারা তোমার ইনোসেন্ট বরটাকে সয্য করতে পারছে না
ইনোসেন্ট ফেস করে রাইয়ের হাত ধরে বলে।

” রাই এখানে থাকবে
শশুড় মশাই গম্ভীর গলায় বলে। জিহাত আবার ধাপ করে তুহিনের পাশে বসে মিষ্টি করে হেসে বলে
“তাহলে আমিও থাকবো

রাইয়ের মা এসব দেখে মিটমিট করে হাসছে।
” রাই তোমারও থাকতে হবে না এখানে
তুহিন বলে
জিহাত তুহিনের গাল টেনে দিয়ে বলে
“আমার কিউট শালাবাবু
বলে রাইয়ের হাত ধরে রুমে চলে যায়।

” মামা এই পাগলের সাথে রাই থাকবে সিরিয়াসলি

“ডিভোর্স দিয়ে দেবে।

তুহিন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
” তুমি এতো রাইকে নিয়ে ভাবছো কেনো?
রুহি প্রশ্ন করে।
“ওটা তুমি বুঝবে না

রুমে এসে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে জিহাত। জুতোটাও খোলে না। রাই অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিহাতের দিকে। জিহাত এক পলক রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে।
” আমার ওপর রাগ করে লাভ নেই। আমি বাবু জান সোনা বলে রাগ ভাঙাবো না।

রাইয়ের রাগ বেড়ে যায়।
“আমি বলছি না আমার রাগ ভাঙাতে। আপনি বাবা আর তুহিন ভাইয়ার সাথে এমন বিহেব করলেন কেনো?

” ওনারা তো খুব ভালো বিহেব করছে তাই না? কতো সুন্দর করে কথা বললো আমার সাথে। আমার সত্যিই এমন বিহেব করা ঠিক হয় নি।

এর সাথে কথা বলাই বেকার। সব সময় উল্টো করে উওর দেবে। যা খুশি করুক। রাই কাবাড থেকে প্লাজু আর টপস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে শাড়ি পাল্টে প্লাজু আর টপস পরে নেয়। এক হাতে ভেজা কাপড়ের বালতি আরেক হাত দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়।
ফ্লোরে জিহাতের ফোনটা ভেঙে গুড়িয়ে পরে আছে। সাথে জিহাতের হাতের ঘড়িটাও। রাই বিরক্তি নিয়ে জিহাতের দিকে তাকায়। মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

“পবলেম কি আপনার ফোন ভাঙছেন কেনো?

জিহাত কোনো উওর দেয় না।
” আমি না আপনাকে ঠিক বুঝতে পারি না। এই ভালো তো এই খারাপ।
তবুও জিহাত কোনো কথা বলে না। আসলে জিহাত কথা বললেই ধমকে কথা বলবে। তাই জিহাত চুপ করে আছে। অন্যের রাগ রাইয়ের ওপর ঢালতে চায় না।

রাই ভেজা কাপড়ের বালতি হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে।
“আমার মাথা ব্যাথা করছে চুল গুলো একটু টেনে দাও তে বউ
জিহাতের ঘুম ঘুম কন্ঠের কথা শুনে রাইয়ের রাগ গলে পানি হয়ে যায়। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জামাকাপড় রোদে মেলে দিয়ে এসে চুল গুলে টাওয়াল দিয়ে পেচিয়ে বিছানায় গোল হয়ে বসে পড়ে।
” মাথাটা তুলুন

জিহাত রাইয়ের কোলে মাথা রাখে। রাই ভাবছিলো বালিশে রাখবে কিন্তু জিহাত যে সোজা কোলে মাথা রাখবে ভাবে নি। রাইয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে। রাই চমকে ওঠে। জিহাতের কপালে হাত দিয়ে দেখে কপালের রগটা লাফাচ্ছে। হয়ত প্রচন্ড ব্যাথা করছে। আস্তে আস্তে কপালে হাত বুলাতে থাকে। এই ছেলেটাকে ইদানীং রাইয়ের প্রচন্ড ভালো লাগে। এই প্রথমবার বোনের ওপর আফসোস হচ্ছে এতো ভালো একটা ছেলেকে রিজেক্ট করার জন্য।
“আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে দিতে চাইলেও আমি আপনার হাত ছাড়বো না। আপির মতো ভুলটা আমি করবো না।

এভাবে কিছু খন থাকার পরে রাই অনুভব করে জিহাত ঘুমিয়ে গেছে। নিশ্বাস টাও ভারি হয়ে গেছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিহাতের ঘুমন্ত মুখের ওপর। অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে। যদি এখানেই সময়টা ধমকে যেতো। ইদানীং জিহাত আশেপাশে না থাকলে রাইয়ের খালি খালি লাগে। এটাই কি তাহলে ভালোবাসা? না কি ভালো লাগা?

হঠাৎ করে রাইয়ের মনে অদ্ভুত এক ইচ্ছে জাগ্রত হয়। জিহাতের কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে টাকে দমিয়ে না রেখে রাই গম্ভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায় জিহাতের কপালে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here