আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২২

0
7300

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২২
Tanisha Sultana

পড়ন্ত বিকেলে বেলকনিতে টুল টেনে বসে আছে রাই। হালকা বাতাসে রাইয়ের খোলা চুল গুলো উড়ছে। গ্রিলের ওপর হাত দিয়ে হাতের ওপর থুতনি ঠেকিয়ে দুরে কাঁঠাল গাছে বসে থাকা দুটো পাখি দেখছে। একটা ছেলে পাখি আর একটা মেয়ে পাখি দুটো বাচ্চা পাখিকে সামলাচ্ছে। দেখতে খুব ভালো লাগছে। রাইয়ের মনেও ইচ্ছে জাগে একদিন ওর ও এমন একটা পরিবার । জিহাত অফিস থেকে ফিরে অফিস ব্যাগ রাখে ক্লান্ত শরীর নিয়ে চেয়ারে বসে পড়বে। রাইকে ডেকে বলবে “রাই বাবুটাকে আমার কাছে নিয়ে এসো” রাই ছোট বাচ্চাটাকে জিহাতের কাছে নিয়ে যাবে। জিহাত বাবুটাকে কোলে নিয়ে আদর করবে। রাই পানি এগিয়ে দেবে জিহাতকে। পানি খেয়ে বাবুটাকে রাইয়ের কোলে দিয়ে ব্যাগ থেকে বেলিফুলের মালাটা রাইয়ের খোঁপায় পড়িয়ে দিয়ে বলবে “ভালোবাসি”
মুচকি হাসে রাই। এরকম একটা পরিবার কবে হবে?
রুমে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে জিহাত এখনও ঘুমচ্ছে। কদিন আগেও এই মানুষটাকে বোনের বফ বলে জানতো আর এখন নিজের ভাবনায় বিচরণ করে। পৃথিবীর সব কিছু ই অদ্ভুত। কখন কে আপন হয়ে যায় কে পর হয়ে যায় বোঝায় যায় না।

রুমে গিয়ে জিহাতের ভাঙা ফোনটা তুলে নেয়। সিমটা ভালো আছে আর সব কিছুই ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। রাই সিমটা যত্নে রেখে বাকি সব ফেলে দেয়। জিহাতের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর টর আসলো না কি আবার? নাহহ জ্বর নেই। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রাই।
আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে পরে। রাইয়ের মা রান্না করছে। রুহি আর তুহিন গল্প করছে। বাবা বাসায় নেই। রাই মায়ের কাছে যায়।

“মা হেল্প করবো তোমায়?

রাইয়ের মা রুটি বেলার বেলুন রাইয়ের হাতে দিয়ে বলে
” হুমম রুটি বেলে দে

“মা তুমি জানো আমি রুটি বেলতে পারি না।
বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে বলে রাই।

” শিখতে হবে তো। বরকে রান্না করে খাওয়াতে হবে।
মায়ের কথা শুনে রাই মুচকি হাসে। রুটি বেলা শুধু করে। একটা রুটিও গোল হয় না। তবুও রাই হাল ছাড়ে না রুটি গোল করেই ছাড়বে। রাইয়ের মা গরুর মাংস রান্না করছে। রুটি আর গরুর মাংস জিহাতের ভীষণ পছন্দের। জিহাতের মায়ের থেকে শুনেছে রাই।

রুম থেকে জিহাত ডাকে রাইকে।
“জিহাত ডাকছে তারাতাড়ি যা

রাই হাতটা ধুয়ে রুমে যেতে নেয় তখন তুহিন বলে
” রাই শোনো

রাই না এগিয়ে বলে
“জিহাত ডাকছে আগে ওর থেকে শুনে আসি

কিছুটা অপমান বোধ করে তুহিন। রাই রুমে গিয়ে দেখে জিহাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। পরনে ছাই রঙের শার্ট আর কালো জিন্স।

” ডাকছিলেন

“হুমমম

” বলুন

“তোমার ফোনটা আমাকে দাও

” কেনো?

“আমার ফোন তো ভেঙে গেছে। এখন ফোন ছাড়া থাকবো কি করে? কাছে ফোন কেনার মতো টাকাও নাই। মায়ের থেকে চাইতে হবে।

” ফোনটা ভাঙলেন কেন?
কিছুটা রেগে বলে কথাটা রাই।
“রাগ কমানোর জন্য।
দায়ছাড়া ভাবে উওর দেয় জিহাত।
” ভালো
“তোমার তো দুইটা ফোন একটা দিলে কি হয়?

রাই রাগ প্লাস বিরক্তি নিয়ে ফোন দেয় জিহাতকে। জিহাত ফোনটা হাতে নিয়ে মুখ ফ্যাকাশে করে বল” কমদামি ফোনটা আমাকে দিলা আর দামী ফোনটা তোমার
“আপনাকে ফোনই দেওয়া উচিৎ না তাও দিলাম।

জিহাত কিছু বলে না একটু হাসে। রাই মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে নেয় জিহাত হাত ধরে
” কিহহহ
রাই চোখ পাকিয়ে বলে
জিহাত পেছন থেকে রাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখে পেটের ওপর জিহাতের হাত।
“বেরোচ্ছি। ফিরতে রাত হবে
এতোখন চোখ বন্ধ করে ছিলো জিহাতের কথায় চোখ খুলে।
” কোথায় যাবেন?

জিহাত কোনো উওর দেয় না। ওভাবেই থাকে কিছুখন। তারপর রাইকে ছেড়ে দেয়। হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে
“এসে যদি দেখি না ওই তুহিন না কি যেনো ওর সাথে হেসেহেসে গল্প করছো তো খেয়ে ফেলবো তোমায়।

রাই উওরে কিছু বলে না। ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। জিহাত পার্স পকেটে ঢুকিয়ে রাইয়ের সামনে এসে বলে
” তোমার শশুড় মশাই তার অফিসের একটা কাজে যেতে বলেছে। বিশ্বাস না হলে ফোন করে জিজ্ঞেস করো।

এতোখনে রাইয়ের মুখে হাসি ফুটে। রাইয়ের গালে হাত দিয়ে বলে
“বাই হ্যাঁ আবারও বললাম একদম রুম থেকে বের হবা না। ওই ছেলের সাথে কথা বলবা না
রাই মাথা নারায়। জিহাত মুচকি হেসে চলে যায়।

জিহাত যেতেই রাই বিছানা ঠিক করে ফ্রেশ হয়ে বই নিয়ে বসে পড়ে। কয়েকদিন কলেজ যাওয়া হয় না। সামনেই এক্সাম।

রাত আটটা বাজে। রাই পড়া শেষ করে বাইরে বের হয়। রুহি আর তুহিন সেখানে বসেই গল্প করছে। রাই ওদের সামনে যায়। রুহি কিছুটা বিরক্ত হয়।

” তুহিন ভাইয়া তখন ডেকেছিলেন।

তুহিন রাইয়ের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে
“বসো না

রাই তুহিনের পাশে কিছুটা জায়গা বাদ রেখে বসে।
” তখন ডেকেছিলাম আর এখন আসলে?

“আসলে পড়তে বসেছিলাম।

” গুড। জিহাত কোথায় গেলো?

“কাজে গেছে।

” দেখ কোন রাজকার্য করতে গেছে।
রুহি বলে ওঠে। রাই রুহির কথায় পাত্তা দেয় না।

ওরা তিনজন এটা সেটা নিয়ে গল্প করতে শুরু করে। আগেও তুহিন রাইদের বাড়িতে আসলে ওরা গল্প করতো। তুহিন ওর গার্লফ্রেন্ডদের কথা শোনায়। খুব ফানি গল্প তাই রাই আর রুহি খিলখিল করে হাসে।

কতোখন ওরা বসে ছিলো জানা নেই। জিহাত এসে দেখে রাই হাসাহাসি করে কথা বলছে তুহিনের সাথে। ধাপ করে মাথাটা গরম হয়ে যায়।

কোনো কথা না বলে ওদের পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসে জিহাত। জিহাতের পেছন পেছন রাইয়ের বাবাও আসে। জিহাত চুপচাপ চলে যাওয়াটা বুঝতে পেরে রাইও জিহাতের পিছু পিছু রুমে যায়। জিহাত শার্ট খুলছে। রাই কোনো কথা না বলে জিহাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতকচলাচ্ছে রাই। কিছু বলতে চাইছে কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।

“বলছিলাম কি

জিহাত ঠাস করে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। রাইয়ের এবার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেনো ওদের সাথে গল্প করতে গেলাম?

ওয়াশরুমের দরজার বাইরে রাই পায়চারি করছে। কখন জিহাত বের হবে? রাইয়ের মা খেতে ডেকে গেছে।
একটু পরে জিহাত বের হয়। টাওজার আর টিশার্ট পড়ে। বিছানায় গিয়ে বসে।

” মা খেতে ডাকছে

“তো যাও না আমায় কেনো বিরক্ত করছো?
কপাল কুচকে বলে জিহাত। রাইয়ের এবার কান্না পাচ্ছে। এইরকম বিহেব করলো?
মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকাচ্ছে রাই।

” সসরি আর হবে না।
ভাঙা গলায় বলে রাই।

“কিসের সরি?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে জিহাত।

” যার জন্য আপনি রেগে আছেন।

জিহাতের মাথায় এবার সয়তানি বুদ্ধি আসে।
“এভাবে সরি বললে হবে না

” তাহলে?

“ভুল যখন করেছো তখন শাস্তি তো পেতেই হবে। আগে শাস্তি পাবে তারপর সরি একসেপ্ট করবো।
বাঁকা হেসে বলে জিহাত।

” শাস্তি পেলে আমি আবার সরি বলবো কেনো?

“তাও ঠিক। সরি বলতে হবে শাস্তি পাও

” বলুন কি শাস্তি

“ভাবতে দাও

জিহাত গালে হাত দিয়ে ভাবছে। রাই জিহাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে বোঝার চেষ্টা করছে কি শাস্তি দিতে পারে।

” তুমি তো আমার একমাত্র বউ। তোমাকে তো আর ছোটখাটো শাস্তি দিতে পারি না বলো।

জিহাতের কথা শুনে রাইয়ের গলা শুকিয়ে আসছে। জিহাতের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে অদ্ভুত শাস্তি দেবে। জিহাতের হাসি মাখা মুখটাই বলে দিচ্ছে রাই তুই আজ শেষ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here