আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২৩

0
7313

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২৩
Tanisha Sultana

“ছোটমট একটা শাস্তি দিয়েন
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে রাই।
জিহাত টেডি স্মাইল দিয়ে বলে
” তা তো অবশ্যই
এখন তোমার শাস্তি হলো তুমি আমাকে ইমপ্রেস করবা।

“কি করে?

” সেটা তুমি ভাবো। কি করে আমায় ইমপ্রেস করবে। দায়ছারা ভাবে বলে জিহাত। রাই ভাবছে কি করে জিহাতকে ইমপ্রেস করবে। কি করা যায়
জিহাত হাই তুলছে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।

“তাড়াতাড়ি করো বেবি। ঘুম পাচ্ছে।

” আমি যদি আপনাকে কিস করি তাহলে আপনি ইমপ্রেস হবেন?
জিহাত ঘুম ঘুম ভাব কেটে যায়। চোখ বড়বড় করে তাকায় রাইয়ের দিকে। রাই কোনোদিক না তাকিয়ে জিহাতের গালে টুপ করে একটা পাপ্পি দিয়ে দেয়। জিহাত চোখ বড়বড় করে ফেলে। রাইয়ের স্পর্শে সারাশরীরে কারেন্টের মতো শক খায় জিহাত। রাই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মুখ ঢেকে ফেলে। জিহাত ঘোর থেকে বেরিয়ে একটু নরেচরে বসে বলে
“প্লিজ লজ্জা পেয়ো না৷ খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে

জিহাতের কথায় রাই দুই হাত দুরে সরে যায়। জিহাত বাঁকা হাসে।

” ভালোবাসেন আমায়?

রাইয়ের এরকম প্রশ্নে জিহাত সোজা হয়ে বসে।
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?
” বলুন না
“যদি বলি ভালোবাসি না তাহলে কি কেঁদে ফেলবে?
জিহাতের এরকম কথায় রাইয়ের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। জিহাত কি ওকে ভালোবাসে না? শুরু মাএ রুহিকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এরকমটা করেছে?
নিজেকে সামলে নিয়ে রাই বলে

” না কাঁদবো না। বলুন?

“ভালোবাসি না তোমায়। কিন্তু তোমার সাথে সারাজীবন থাকতে চায়। আমি তোমাকে আমার মনটা দিতে পারবো না। কজ মন তো একটাই। কিন্তু আমি তোমাকে আমার হৃদয়টা দিয়ে দেবো। তুমি আমার জীবনটা পাল্টে দিয়েছো। তুমি আমাকে ছেড়ে দিলেও আমি তোমাকে ছাড়ছি না বুঝলে।

রাইয়ের দুই কাঁধে হাত দিয়ে মুখটা রাইয়ের মুখের কাছে নিয়ে বলে জিহাত। জিহাতের কথার মানে রাই বোঝে না। অভিমান হয়। জিহাতের হাত ছাড়িয়ে দেয়। মুখ ঘোরায়

” ভালো না বাসলে ডিভোর্স দিয়ে দেন। বিরবির করে বলে রাই।

“রাই ভালোবাসা শব্দটাকে আমি ঘৃণা করি। এই শব্দটায় আমার এলার্জি আছে। বাবা মাকে ভাললবাসি বলতো তারা আলাদা হয়ে গেছে। রুহি আমাকে ভালোবাসি বলতো সেও চলে গেছে। এখন তোমাকে ভালোবাসি বলে আমি হারাতে চায় না।

তবুও রাই কিছু বলে না। জিহাত পেছন থেকে রাইকে জড়িয়ে ধরে
” আমি খারাপ জিবন থেকে বেরিয়ে এসে মন দিয়ে লেখাপড়া করে মাস্টার্সটা কম্পিলিট করবো। তারপর ভালো একটা চাকরি করবো। তুমিও তখন বড় হয়ে যাবে। তখন ধুমধাম করে আমারা বিয়ে করবো। মা আমি আর তুমি আমাদের ছোট্ট একটা সুন্দর সংসার হবে। খুব সুখী হবো আমরা দেখো। আমাদের ছোট ছোট বেবি হবে। এতোদিন অপেক্ষা করতে হবে তোমায়। কিন্তু তুমি যদি চাও তাহলে এখনই বেবি….

রাই প্রথম কথা গুলো খুব মন দিয়ে শুনছিলো। শেষের কথাটা কানে যেতেই কনুই দিয়ে জিহাতের পেটে গুতা,মারে। জিহাত হেসে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

“রাই একটা সত্যি কথা বলি

” হুমম

জিহাত রাইকে ছেড়ে দিয়ে রাইয়ের মুখোমুখি বসে।
“সাগর খান আমিই
মাথা নিচু করে বলে জিহাত। রাই এতে একটুও অবাক হয় না।

“মারামারি করি একটা ছোটমট গ্যাং আছে আমার। সেখানে কতোগুলো ছেলে আছে যারা আমার কথায় উঠে বসে। বড়বড় ব্যবসায়িদের থেকে চাদা তুলে। ওদের সংসার চলে। কোথাও কোনো গন্ডগোল করতে মেয়ে তুলতে, হুমকি এগুলো করে থাকি আমরা।

রাই চোখ ছোটছোট করে তাকায় জিহাতের দিকে। রাইয়ের চাহনি দেখে জিহাত বুঝে উঠতে পারছে না রাই ঠিক কিরকম রিয়াক্ট করবে।

” আই এম সরি বাট

“আমি আগে থেকেই জানতাম

রাইয়ের কথা শুনে জিহাত চোখ বড়বড় করে রাইয়ের দিকে তাকায়।

“কি করে?

” সিক্রেট

“বলো না

” বলবো না

“??

” এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। বলবো না
“কোনো বলবা না?
” এতোদিন আপনি কেনো বলেন নাই?
“আমি তো ভেবেছিলাম বলবোই না। কিন্তু তবুও বলে ফেললাম।
” আমি বলবোই না

রাই যেতে নেয়,জিহাত হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। রাইয়ের পেটের ওপর বালিশ দিয়ে তাতে ভর দিয়ে একটু ঝুঁকে বলে

“না বললে এভাবেই থাকতে হবে।

” এমন করে না লহ্মীটি। করুন সুরে বলে রাই।
“বলো সোনা। বললেই ছেড়ে দেবো।
” বলবো না

জিহাতরাইয়ের দিকে আরো ঝুঁকে। জিহাতের নিশ্বাস রাইয়ের মুখে আঁচড়ে পড়ছে। রাইয়ের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
“লাস্ট বার বলছি বলো

রাই জিহাতের মুখে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে
” আপনার গ্যাংয়ের রনি নামের একটা ছেলে বলেছে সব টা।

জিহাত রাইয়ের হাত ধরে
“ওর সাথে তোমার কি সম্পর্ক?

” আমি আপনাকে ফলো করতে করতে একদিন গেছিলাম তখন পুলিশের ভয় দেখিয়ে সবটা শুনছিলাম

জিহাত রাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এইরকম একটা বোকা মেয়ে এমন একটা কাজ করেছে।

“এখন সরুন প্লিজ

জিহাত সরে যায়। রাই উঠে বসে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
চলুন খাবেন
রাই বিছানা থেকে নেমে ওড়না ঠিক করে বলে

” খাবো না

” খাইয়েন না। মা গরুর মাংস আর রুটি বানিয়েছে যা টেস্ট হইছে না
রাই বলতে বলতে যেতে নেয়
“শুনো

রাই দাঁড়িয়ে যায়
” কিছু বলবেন

“খাবো

রাই এক গাল হাসে। তারপর দুইজন বের হয়।
খাবার টেবিলে রাইয়ের বাবা রুহি তুহিন এক পাশে বসেছে। রাই আর জিহাত অন্য পাশে। জিহাত তো খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছে।

” আংকেল রাইয়ের ডিভোর্স পেপারটা আপনিই বানিয়ে ফেলেন। জিহাত তো মনে হয় টাকা পয়সা খরচ করে বানাবে না।
তুহিন মুখে রুটি দিতে দিতে বলে।
রাই মুখে খাবার নিতে গেছিলো তুহিনের কথা শুনে হাত থেকে রুটি পরে যায়। জিহাত ভ্রু কুচকে তাকায় তিহিনের দিকে।

“তা আর বলতে। আমি বানিয়ে ফেলেছি।
রাইয়ের বাবা বলে।

” শশুড় মশাই আর শালাবাবু তোমাদের দুইজনকে ডেডিকেট করে একটা কথা বলছি আমি রাইকে ছাড়বো না। ডিভোর্স দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে হ্যাঁ আপনি যদি আমার শাশুড়ী মাকে ডিভোর্স দিতে পারেন তবে আমিও রাইকে ডিভোর্স দেবো।

রাইয়ের বাবা বেষম খায়। রাইয়ের মা পানি এগিয়ে দেয়।
“বেয়াদব একটা
রেগে বলে রাইয়ের বাবা।

” আগে থেকেই
স্বাভাবিক ভাবে বলে জিহাত।
রাইয়ের বাবা আর কিছু বলে না। চুপচাপ খেতে থাকে। সেটা দেখে রাই মুচকি হাসে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here