আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২৪
Tanisha Sultana
আজ রাই আর জিহাত বাড়ি ফিরে যাবে। আরও কিছুদিন জিহাতের,এখানে থাকতে ইচ্ছে ছিলো কিন্তু তুহিনের জন্য থাকা হবে না। রাইয়ের বাবাকে জিহাতের ভালোই লাগে। ওনার কড়া কথাগুলো বেশ এনজয় করে জিহাত। বাবাদের এমনই হওয়া উচিৎ। ভুল করলে বকবে আবার ভালোও বাসবে। জিহাত আজ ভার্সিটিতে যাবে। রাই কলেজে যাবে তবে আজ জিহাতের সাথে যাবে না। এনিয়ে অনেক কথা শুনিয়েছে জিহাত। শেষমেশ রেগে বেরিয়ে গেছে কিছু না খেয়েই
রাই কলেজ ড্রেস পড়ে বাবার রুমে যায়। বাবা কোর্টে যাবে বলে তৈরি হচ্ছিলো
“বাবা আসবো?
দরজায় নক করে বলে রাই।
রাইয়ের বাবা ফাইল গোছাতে গোছাতে বলে
” এসো
রাই এসে বাবার হাত থেকে ফাইল নিয়ে বাবাকে পাশে বসায়।
“বাবা কিছু বলতে চায়?
রাইয়ের বাবা রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
“বলো
” আমি জিহাতের সাথে থাকতে চায়। ও কে ডিভোর্স দিতে চায় না। আমি জানি ও মানুষটা ভালো না তবুও বিয়ে তো হয়ে গেছে। প্লিজ বাবা
মাথা নিচু করে বলে রাই।
“ভেবে বলছো?
গম্ভীর ভাবে বলে রাইয়ের বাবা
” হাজারটা মেয়ের সাথে মেশে ও।
“বাবা ওকে আমি ভালো করবো। আলরেডি ও অনেক পাল্টপ গেছে
” দেখো রাই। তোমার কোনো হ্মতি আমি হতে দেবো না। তুমি মানো তো যে তোমার ভালো চায় আমি
“আমি জিহাতকে ছাড়া ভালো থাকবো না। কজ আই লাভ হিম। এই নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চায় না। যতদিন তুমি জিহাতকে না মানবে আমিও আর এখানে আসবো না
” রাইইইইই
“আমি তো ইচ্ছে করে বিয়ে করি নি না? তাহলে? আমি কি পুতুল না কি? তোমাদের যেভাবে ইচ্ছা আমাকে সেভাবেই নাচাবে। তোমাদের ভুলের মাশুল আমাকে দিতে হয়েছে। আর না। এবার আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো। আমি জিহাতকে ছাড়ছি না। তুমি প্লিজ আমার লাইফে ইন্টরফেয়র করো না।
” বেশশ তোমার যা ইচ্ছে
তবে কি রাই জানো আগুন নিয়ে খেলাটা কিন্তু খুব রিক্স।
“আমি বুঝে নেবো। তোমার মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও।ও আমাদের মাঝে যেনো না আসে৷ একটু শান্তি চায় আমি।
বলেই রাই বেরিয়ে যায়। রাইয়ের বাবার চোখে পানি। যে রাই চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস পেতো না আজ সে এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলো। জোর গলায় বললো ও জিহাতকে ছাড়বে না। চোখের পানিটা উনি মুছে নেয়। তারপর একটু হাসে
” আমার ছোট্ট রাই বড় হয়ে গেছে। বাবাকে কথা শুনিয়ে দিলো। ভালোই। কিন্তু তোমার কোনো হ্মতি আমি হতে দেবো না।
না খেয়েই বেরিয়ে যায় রাই। রাস্তার এক পাশ দিয়ে আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়বে। বাবার সাথে এরকম বিহেব করা একদম ঠিক হয় নি। বাবা নিশ্চয় ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।
“রাই
পেছন থেকে কারো ডাকার শব্দে রাই পেছনে তাকায়। ইশান দৌড়ে আসছে৷ রাইয়ের সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
” পায়ে কি চাকা লাগিয়ে হাটিস না কি? এতো দৌড়েও তোকে ধরতে পারলাম না।
রাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে
“ডাকতে তো পারতিস?
” সে আর বলতে? গুনে গুনে পঁয়তাল্লিশটা ডাক দিছি।
“সরি শুনতে পায় নি
” তা পাবি কেমনে? বাই দা ওয়ে রাই জিহাত আইমিন তোর জিজুর সাথে তোর এতো কিসের সম্পর্ক? তোকে ডপ করে দেয় আবার তোকে নিয়ে যায়। ঘটনা কি? তোর আপিকে তো আজ দেখলাম জিহাতের পেছনে দৌড়াচ্ছে কিন্তু জিহাত ইগনোর করলো। কেসটা কি?
কোমরে হাত দিয়ে বলে ইশান। রাই হাঁটা শুরু করে। ইশানও হাঁটে
“বল না দোস্ত
” বিয়ে করে নিয়েছি আমরা
স্বাভাবিক ভাবে বলে রাই। ইশান দাঁড়িয়ে যায়।
“কিহহহহহ
রাই সবটা বলে। ইশান মাথায় হাত দেয়
” তোরা কি শুরু করেছিস বলবি প্লিজ আমায়? তিথি বিয়ে করে নিলো জানালো না তুই বিয়ে করে নিলি জানালি না। আমার দাওয়াতটা তোরা এভাবে ক্যান্সেল করে কেনো দিস বল তো?
তখনই তিথি এন্টি। রাই কান মলে ধরে বলে
“বিয়ে করে নিলি জানালি না
তিথিও রাইয়ের কান ধরে
” সেম টু ইউ
রাই কান ছেড়ে দেয়। তিথিও ছেড়ে দেয়।
“ইশান তুই যা আমি আর রাই কথা বলবো
ঠেলে ঠুলে তিথি ইশানকে পাঠিয়ে দেয়। এবার তিথি আর রাই হাঁটছে।
” তোর বর তোকে ফুলসজ্জায় কি গিফট দিয়েছেরে?
রাই মুখটা ফ্যাকাশে করে ফেলে। তা দেখে তিথি বলে
“তোদের ফুলসজ্জা হয় নি?
রাই না বলে৷
” মানে বিয়ের প্রায় একমাস হয়ে গেলো এখনও তোদের….. যাক বাদ দে। শোন না দেখ আমার বর এই আংটিটা দিয়েছে আমায় ফুলসজ্জার দিন। কতো রোমান্টিক জানিস। একটা রোমান্টিক মুভিও দেখিয়েছে।
খুশিতে আটখানা হয়ে বলে তিথি।
“মুভিটা আমাকে দিবি?
” কেনো?
“আমি দেখবো
” ঠিক আছে ক্লাসে বসে দেবো। শোন একদিন তোকে আর তোর বরকে ইনভাইট করবো আমার শশুড় বাড়িতে তোরা কিন্তু যাবি।
“কিন্তু
” আমি বলবো জিহাত ভাইয়াকে।
“ঠিক আছে
তারপর তিথি বরের কথা শুনতে শুনতে ওরা কলেজে যায়। রাইয়ের মন খারাপ হয়ে যায়। আমার বর এটা করে ওটা করে। রাইয়েরও বলতে ইচ্ছে করছে আমার বর কথায় কথায় ধমক দেয়। কিন্তু বললে পেসটিস থাকবে না তাই চেপে যায়।
কলেজ ছুটির পরে রাই কলেজের গেটের সামনে অনেকখন দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু জিহাতের কোনো খবর নেই। তাই রাই রিকশা নিয়ে চলে যায় বাড়িতে। কলিং বেল চাপতেই জেসি দরজা খুলে দেয়। রাইকে দেখে খুশিতে আটখানা হয়ে জড়িয়ে ধরে। জেসির কাছ থেকে জানতে পারে জিহাত একটু আগেই এসেছে। রাই বুঝতে পারে বেচারা এখনও রেগে আছে।
রুমে গিয়ে দেখে জিহাত পড়াশোনা করছে। সারা খাট জুড়ে বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জিহাত উপুড় হয়ে শুয়ে মুখে কলম গুঁজে পড়ছে৷ চটপট কয়েকটা পিক তুলে নেয় জিহাতের।
” এবার দেখো বেবি এই পিক আমি কি করি
সয়তানির হাসি দিয়ে বলে রাই।
তারপর শব্দ করে পা ফেলে রুমে ঢুকে। পড়ার টেবিলে বইয়ের ব্যাগ রেখে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। সকাল থেকে কিচ্ছু না খাওয়ায় পেটের ভেতর ইদুর দৌড়াচ্ছে। তারাতাড়ি করে সাওয়ার নিয়ে বের হয় রাই। জিহাত এখনো পড়ছে। বেলকনিতে ভেজা জামাকাপড় মেলে দিয়ে এসে কিচেনে চলে যায়।
দেখে জিহাতের সৎ মা রান্না করছে।
” আন্টি প্রচন্ড খিদে পেয়েছে কিছু খাবার আছে।
তারকারি নামাতে নামাতে বলে এইতো হয়ে গেছে।
রাই দুই প্লেট ভাত নিয়ে রুমে চলে যায়। জিহাতের পাশে খাবার রেখে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। আগে আগে জিহাতের সাথে কথা বলতে গিয়ে ধমক খাওয়ার ইচ্ছে রাইয়ের নেই।
রাইয়ের খাওয়া শেষে জিহাত খাওয়া শুরু করে। রাই খাওয়া শেষ করে বই নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। এতে জিহাত আরও রেগে যায়। এসে একটা কথাও বললো না। রাগে ফুসতে ফুসতে খাওয়া শেষ করে। জেসিকে ডেকে এটো খালা দিয়ে বসে পড়ে।
বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে জিহাত। রাইকে কাঁচা গিলে খেতে ইচ্ছে করছে। এতে এটিটিউট কিসের?
রাত আটটার দিকে রাই রুমে আসে দেখে জিহাত রুমে নেই। যাক এইতো সময় এবার রাই মুভিটা দেখবে। ল্যাপটপে মেমোরিটা ভরে মুভি অপেন করে। তারপর খুশিতে রাই লাফিয়ে উঠে এই তো সেই মুভিটা যেটা জিহাত দেখছিলো।
রাই গালে হাত দিয়ে মুভি দেখছে। জিহাত রুমে এসে দেখে রাই ল্যাপটপে কিছু দেখছে। রাইয়ের পাশে গিয়ে ধপ করে বসে। ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে জিহাতের কাশি উঠে যায়। রাই একবার জিহাতের দিকে তাকায় আর একবার ল্যাপটপে তাকায়। একটা ঢোক গিলে রাই। জিহাত এখন না পারছে ওখানে বসতে আর না পারছে উঠতে।
“এই মুভি দেখছিলেন আপনি?
রাই কপালের ঘাম মুছে বলে। জিহাত ঠাস করে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়। রাই তাকায় জিহাতের দিকে কেমন করে। রাইয়ের চোখ মুখ দেখে জিহাত মনে মনে বলে
” আজ তুই শেষ জিহাত।
চলবে