আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২৬
Tanisha Sultana
“কারণটা বলো
রাইয়ের দিকে আরও একটু ঝুঁকে বলে জিহাত।
রাই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে
” দম বন্ধ হয়ে আসে। অদ্ভুত ফিলিংস হয়
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নেয়। জিহাত হাত ফেলে
“আমি ঠিক বুঝলাম না। ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে যাও
রাই হাত ছাড়ানোর জন্য মুচরামুচরি করে।
” আমারও
রাইয়ের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে জিহাত।
রাই চোখ বন্ধ করে ফেলে। জোরে শ্বাস নেয়। জিহাত হাতটা ছেড়ে দেয়।
“কাল থেকে আজানের সময় আমাকেও ডাকবা। একসাথে নামাজ পরবো
” ঠিক আছে
বলেই রাই চলে যায়
শশুড় মশাই রাইকে ডাকে। রাই শশুড় শাশুড়ীর মাঝ খানে বসে আছে গালে হাত দিয়ে। জিহাতের বাবা জুলহাস আমতাআমতা করছে। কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।
“আংকেল তাড়াতাড়ি বলুন না
কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে রাই।
” আমার বয়স হয়ে গেছে আর কতোদিনই বা বাঁচবো! তাই আমি চাইছি আমার সমস্ত সম্পত্তি জিহাতের নামে ইউল করে দিতে। কিন্তু ও তো নিতে রাজি হবে না। তাই তুলি যদি ওকে একটু বোঝাতে
“জিহাত যদি আপনার সম্পত্তি নিতে চায়ও আমি না করবো। কোনো দরকার নেই এসবের। জিহাতের মা আই মিন আমার শাশুড়ী মায়ের যেখানে জায়গা হয় নি সেই সম্পত্তি দিয়ে জিহাত কি করবে? যদি কখনো পারেন মায়ের কাছে হ্মমা চেপে নিয়েন। অনেক অন্যায় করেছেন আপনি।
জুলহাসের মুখে অনুতাপের ছাপ। জিহাতের সৎ মা চোখের পানি মুছে। উনিও বুঝতে পারে অন্যায় হয়েছে।
” কি করবো বলো। আমি আর ও ছোটবেলা থেকেই দুজন দুজনকে ভালোবাসতাম। যখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়ে করবো তখন জানতে পারলাম আমি কখনো মা হতে পারবো না। তাই ওকে বলি জুঁই (জিহাতের মা) কে বিয়ে করতে। বিয়ের এক বছরের মাথায় জিহাত আসে। আর তখন
আর বলতে পারে না জিহাতের সৎ মা। কান্নায় ভেঙে পড়ে।
“আর আপনারা সেই দুধের শিশুকে মায়ের থেকে আলাদা করে দিলেন।
সবাই দরজার দিকে তাকায়। জিহাত ভেতরে আসে।
” ভাগ্যিস দাদু বলেছিলো আমাকে নাহলে জানতেি পারতাম না। আমি এখানে পড়ে আছি কারণ আমার মা চায় আমি এখানে থাকি। নাহলে কখনোই থাকতাম না। কিন্তু আজ আর থাকবো না। অনেক দিন তো থাকলাম। এবার আমার মাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন।
চোখ লাল হয়ে গেছে জিহাতের। রাই জিহাতের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
“অনেক দিন তো চেষ্টা করলেন জিহাতের মা হয়ে উঠতে পারলেন না। এবার আমরা এখান থেকে চলে যাবে
রাইয়ের কথায় সবাই রাইয়ের দিকে তাকায়।
” আমি আর জিহাত শাশুড়ী মায়ের কাছেই থাকবো।
জিহাতের হাত ধরে রাই বেরিয়ে আসে। জিহাতের বাবা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টাও করে না। সেই মুখ ওনার নেই। আসার সময় জেসি খুন কেঁদেছিলো। জিহাত জেসির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
“তোর যখন ইচ্ছে ওখানে চলে যাবি
জিহাত আর রাইয়ের ওই ছোট বাড়িতে যায়। জুঁই রুটি বানাচ্ছিলো। দরজায় কড়া নারার শব্দে দরজা খুলে জিহাত আর রাইকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। রাই শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে। আর জিহাত ওদের দুইজনকেই।
জুইকে রাই বলে দেয় ওরা সারাজীবনের জন্য এখানে চলে এসেছে। প্রথমে জুঁই আপত্তি করলেও পরে মেনে নেয়। ওদের রুমে গুছিয়ে দেয়। জিহাতকো বাজারের থলে হাতে দিয়ে বাজার করতে পাঠায়। আর রাই ফ্রেশ হয়ে শাশুড়ীর সাথে রান্না করে।
রাতে
জিহাত আর রাই এক খাটে বসে পড়ছে। কাল রাইদের প্রবেশপত্র দেবে। কয়েকদিন পরেই পরিহ্মা
“শুনুন না
বই বন্ধ করে বলে রাই।
” বলুন
বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে বলে জিহাত।
“তিথি প্রেগন্যান্ট
” তো
“মাথা মোটা একটা
মুখ গোমড়া করে বলে রাই।
” আমাকে পড়তে দাও ডিস্টার্ব করো না
রাইয়ের ভীষণ রাগ হয়। পড়া দেখাচ্ছে।
“এই আপনি মেয়েদের সাথে ফ্ল্যাট করতেন?
অবিশ্বাসের সুরে বলে রাই
” সন্দেহ
“১০০% পারসেন্ট। যে বউয়ের সাথে মিষ্টি করে কথা বলতে পারে না। সে কি করে? অবশ্য আপি হলে
রাইয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই জিহাত বিছানার সাথে চেপে ধরে রাইকে।
” কারো সাথে নিজের তুলনা করবা না
দাঁতে দাঁত চেপে বলে জিহাত।
“কেনো করবো না। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি তাহলে আপনি কেনো….
রাই হতাশার নিশ্বাস ফেলে। এরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। বলেও লাভ নেই। ভেবেছিলো রেগে গিয়ে কিছু একটা করে ফেলবে।
জিহাত রাইয়ের মনের কথা বুঝতে পারে। রাইয়ের ঠোঁট ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। পাক্কা দুই মিনিট পরে সরে আসে। রাই এখনো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। জিহাত এটা করলো বুঝতেই পারছে না। ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে
“আপনি কিস করলেন?
অবিশ্বাসের সুরে বলে রাই।
জিহাত আবার রাইয়ের কাছে এসে বলে
” আবার করে বোঝাবো
রাই মিষ্টি হেসে জিহাতের গলা জড়িয়ে ধরে বলে
“আমি রেডি
জিহাত শুকনো ঢোক গিলে। সরে আসতে চায় রাই শক্ত করে ধরে।
” আজ ছাড়াছাড়ি নেই।
রাইয়ের কথায় জিহাতও হেসে ফেলে।
তুহিনের সাথে রুহির বিয়ে ঠিক হয়। রাই যাবে না মানে যাবে না। রাইয়ের বাবাও রাইকে নিতে আসে না। আবিরকে জিহাত মেরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে।
কেটে যায় তিন বছর
জিহাত বাংলাদেশ ব্যাংক জব করে। বেশ মোটা টাকা স্যালারি পায়। তুহিন বেকার। রাইয়ের বাবার টাকায় খায়। এই নিয়ে রুহি প্রচুর অশান্তিতে ভুগে। এই তিন বছরে রাই বাবার বাড়ি যায় নি। কারণ বাবা নিতে আসে নি। মাঝেমধ্যে জেসি আসে। জিহাতের বাবা আসে। কিন্তু ওরা ভালো ব্যবহার করে না। জিহাত দুইতালা একটা বাড়ি কিনেছে। সেখানে মা আর রাইকে নিয়ে থাকে। রাই এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে জিহাত সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে। জিহাতের মা রান্না করছে। রাই বই পড়ছিলো জিহাত রাইকে ডাকে
“রাই পানি দাও
শাড়ির আচলটা কোমরে গুঁজে রাই পানি নিয়ে দেয় জিহাতকে। এক ঢোকে পুরো পানিটা শেষ করে জিহাত রাইয়ের দিকে তাকায়। শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সাজুগুজু করেছে।
” শাড়িটা দারুণ
“আর আমি
রেগে বলে রাই
” মোটামুটি
মজা করে বলে জিহাত।
রাই জিহাতের কলার ধরে
“আমাকে এখন আর ভাল্লাগছে না তাই না!
” মনের কথা বুঝলে কি করে?
দাঁত কেলিয়ে বলে জিহাত।
“অফিসে নতুন নতুন মেয়ে দেখেন কতো হট তারা
” ঠিক বলেছো। মিনিস্কার্ট পড়ে যখন আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় না খালি দেখতেই ইচ্ছে করে। যাি সারাদিন আমার সামনে বসে থাকতো
রাই জিহাতের বুকে কয়েকটা কিল ঘুসি মারে
“মিনিস্কার্ট না
বলেই
রুমে চলে যায়।
জিহাত হেসে ফেলে। বিয়ের তিন বছর পার হয়ে গেলো এখনও বাচ্চামি কমলো না।
একটু রেস্ট নিয়ে জিহাত রুমে যায়। রুমের লাইট অফ ছিলো জ্বালিয়ে দেয়। লাইট জ্বালিয়ে পেছনে তাকিয়ে জিহাত হা হয়ে যায়। এ কি দেখছে এসব?
“কেমন লাগছে আমায় বেবি
কেমন একটা নেশাতুল কন্ঠে বলে রাই।
জিহাত দুপা পিছিয়ে যায়। পড়ে যেতে নেয় রাই ধরে ফেলে।
” মা বাঁচাও
জোরে চিল্লানি দিয়ে বলে জিহাত
চলবে