আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২৮
Tanisha Sultana
জিহাত দাঁত কেলিয়ে বলে
“শশুড় বাড়ি মিস করছিলাম।
রাই ভ্রু কুচকে বলে
” শুধু বাড়িটা
“হুমম। কতোদিন দেখি না
” আমাকে মিস করেন নাই
“এক ফুঁটাও না
” তা করবেন কেনো? আছে তো আরও
“একদম মনের কথা বলছো।
” সরেন
“তুমি সরো। ভেতরে ঢুকতে দাও। আহ কতোখন পরে বাড়িটা দেখলাম। এখন শান্তি লাগতেছে।
রাই মুখ গোমড়া করে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। জিহাত রাইয়ের হাতে ফলের প্যাকেট দিয়ে ভেতরে যায়। শাশুড়ী মা জিহাতকে দেখে খুশিতে অত্তহারা হয়ে যায়। জিহাত গিয়ে শশুড়ের পাশে বসে জিহাত। রুহির দিকে তাকিয়ে জিহাতের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। কেমন হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। চোহারাটাও ভচকে গেছে। রুহি জিহাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
” তুমি না বললে তোমার কাজ আছে?
রাইয়ের বাবা বলে
“আসলে হয়েছে কি কাজ তো আছেই। কিন্তু কথা বলো বউকে ছাড়া আমি দুই মিনিট থাকতে পারি না
রাইয়ের বাবার দিকে একটু ঘেসে বসে বলে জিহাত। রাইয়ের বাবা গম্ভীর মুখেই থাকে।
রাই জিহাতের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। জিহাতের কথা শুনে লজ্জা পায়। বাবার সামনে এভাবে কেউ বলে। অসভ্য একটা।
রাত দশটার দিকে সবাই খেয়েদেয়ে যার যার রুমে চলে যায়। পুরো সময়টাই তুহিনকে কোথায় দেখা যায় নি।
রাই বিছানা ঠিক করছে জিহাত এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে
” বউ
“বলুন
” ভালোবাসি
রাই এক গাল হাসে। জিহাতের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনলে রাইয়ের সব মন খারাপ ঠিক হয়ে যায়।
“আমিও ভালোবাসি
” কাকে
“জিহাত নামের কাউকে
” কিন্তু আমি তো ফারিয়া নামের কাউকে ভালোবাসি
রাই ধাক্কা মেরে জিহাতকে সরিয়ে দেয়। কোমরে হাত দিয়ে বলে
“ফারিয়া কে?
” আমার মন প্রাণ ধ্যান ঙ্গান সব
রাই রাগে ফুসতে থাকে। বালিশ একটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে জিহাত হাত টেনে ধরে।
“আরে কোথায় যাচ্ছো?
” ফুল আনতে। আপনার আর ফারিয়ার ফুলসজ্জার খাট সাজাবো
দাঁতে দাঁত চেপে বলে রাই।
“এই না হলো আমার বউ
দাঁত কেলিয়ে বলে জিহাত।
রাই রেগে বালিশটা জিহাতকে ছুড়ে মারে। জিহাত ক্যাচ ধরে ফেলে। রাই এবার কান্না করে দেবে এমন অবস্থা।
” আরে আমি মজা করছিলাম
রাই বালিশ ফেলে রেখে জিহাতের বুকে কয়েকটা কিল মেরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিহাতকে। জিহাত রাইয়ের মাথায় হাত রাখে। রুহি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওদের দুষ্টুমিষ্টি ভালোবাসা দেখে রুহির মুখে হাসি চোখে জল। এই প্রথমবার রাইকে ভীষণ হিংসা হচ্ছে রুহির। এই জিহাত তো রুহির ছিলো। কতো ভালোবাসতো রুহিকে। রুহির একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য দিন রাত কতো কষ্ট করতো। রুহি মূল্য দিতো না। সোনা চিনতে ভুল করেছিলো। রুহি ভাবতো জিবনে পারফেক্ট কাউকে প্রয়োজন। জিহাতকে ওর পারফেক্ট মনে হতো না। কিন্তু ও তখন বুঝতে পারে নি এক সাথে বারোজনের হাত না ছুঁয়ে জিহাতের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলে আজ ওর জীবনটা অন্য রকম হতো। ও ভালো থাকতে পারতো। সুখী হতো। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছতে গিয়েও মুছে না রুহি। কান্না করলে না কি কষ্ট কমে। তাই আজ রুহি কাঁদবে। আগে রাই কথায় কথায় কাঁদতো বলে রুহির বিরক্ত লাগতো। কিন্তু এখন কথায় কথায় রুহির চোখ দিয়ে পানি গড়ায়। জীবনটা অদ্ভুত। কখন কার ভাগ্য বদলে যায় কেউ বলতে পারে না।
নিঃশব্দে রুহি ওখান থেকে সরে যায়। রুমে গিয়ে দেখে তুহিন উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। সারা রুমে সিগারেটের ধোঁয়া ছাই। রুহি বিছানার পাশে বসে।এসব রোজ দেখতে হয় রুহির।
আজ আকাশে থালার মতো বড় চাঁদ উঠেছে। অন্য দিনের তুলনায় আজ চাঁদটাকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। বেলকনিতে জিহাতের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখছে রাই। জিহাত রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“জিহাত
” বলো
“আমার মনে হয় আমার বড় কোনো অসুখ হয়েছে।
জিহাতের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। রাইয়ের দিকে তাকায়। উত্তেজিত কন্ঠে বলে
” এসব কি বলছো তুমি? আগে কেনো বলো নি? কোথায় কষ্ট হয় তোমায়? কেমন লাগে বলো আমায়? এখুনি তোমার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। কিচ্ছু হবে না তোমার।
রাই জিহাতের দুই গালে হাত দিয়ে বলে
“হেই জিহাত রিলাক্স। এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো?
” তুমি অসুস্থ আর আমি রিলাক্স থাকবো?
“শুনবা তো কি হয়েছে
মুচকি হেসে বলে রাই। জিহাত শান্ত হয়।
” বলো
“মাথা ঘোরে, এবাড়িতে এসে দুইবার বমি হয়েছে। পেটেও হালকা ব্যাথা করে।
হালকা লজ্জা পেয়ে বলে রাই। জিহাত রাইয়ের মুখের ওপর পরে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়। তারপর দুই গালে হাত দিয়ে বলে
” অতিথী আসছে
রাই জিহাতের বুকে মাথা রাখে। একটু হাসে।
“আগে শিওর হয়ে নি
” কালকেই ডাক্তারের কাছে যাবো।
“হুমমম
” রাই অনেক কষ্ট হবে কিন্তু তোমার। তুমি যদি না চাও তবে
রাই জিহাতের মুখে হাত রাখে।
“আমি জানি কষ্ট হবে। মা ডাক শোনা এতো সহজ না। আমি সব সয্য করে নেবো। আপনি প্লিজ আজেবাজে কথা বলবেন না। অনুভব করুন। আমাদের ছোট একটা পরি আসবে। ছোট ছোট হাত পা গুলুমুলু মুখ। তাকে আমি কোলে করে রাখবো। খাওয়াবো
জিহাত মুচকি হাসে। রাইয়ের মাথা ঘুরে আসে। বমি আসে। উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। জিহাতও যায়। বমি করে অস্থির হয়ে যায় রাই জিহাত ধরে বিছানায় এনে বসায়।
” খুব কষ্ট হচ্ছে রাই।
“না না ঠিক আছি
” ডাক্তারকে কল করবো
“একদম না। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিন আমি ঘুমবো
রাই জিহাতের কোলে মাথা রেখে শয়। জিহাত রাইয়ের মাথায় হাত বুলায়। সেদিনের পিচ্চি মেয়ে যাকে একটা ধমক দিলেই জ্বর চলে আসতো। সে এখন মা হবে। খুব তারাতাড়ি বড় হয়ে গেলো। জিহাতের মনের মধ্যে অনেক আশারা বাসা বাধছে। জিহাত রাইয়ের কপালে একটা চুমু দেয়। ” আমার ভালোবাসা” মনে মনে বলে জিহাত। রাই আবার উঠে। বমি পাচ্ছে। জিহাত বুঝতে পেরে দৌড়ে গিয়ে একটা বালতি আনে। রাই তাতে বমি করে আবার শুয়ে পড়ে। জিহাত বমি পরিষ্কার করে রাইয়ের পাশে ধপ করে শুয়ে পড়ে।
চলবে