আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ৩
Tanisha Sultana
রাই খাটের ওপর গোল হয়ে বসে আছে। আসলে ও ভাবছে কি করা যায়? এখান থেকে এক পা নরলে যদি বকা দেই তাই এক ভাবেই বসে আছে। এদিক খিদায় পেট চো চো করছে। রাই আবার খিদে সয্য করতে পারে না।
টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে জিহাত বের হয়। একবার আড় চোখে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
“এই ফকিন্নি সাজ পাল্টে একটা ভালো কিছু পড়ো
বিরক্তি নিয়ে বলে জিহাত। রাই হা করে তাকিয়ে আছে। আসলে ও বোঝার চেষ্টা করছে জিহাত কি বললো। জিহাত রাইয়ের কোনো সারা না পেয়ে আয়নার মধ্যেই রাইয়ের দিকে তাকালো
” কানে শুনতে পাও না?
কর্কশ গলায় বললো জিহাত। রাই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামে।
“না মানে বুঝতে পারি নি
” বলছি চেঞ্জ করে নাও
রাই মাথা নারিয়ে লাগেজ থেকে গোলাপি রঙের একটা থ্রি পিছ নেয় পড়ার জন্য।
“তুমি এখনো ছোট বাচ্চা তো ছোট বাচ্চাদের মতো ড্রেস পড়ো। এরকম বড়দের মতো ড্রেস পড়বে না।
জিহাত রাইয়ের হাত থেকে ড্রেসটা নিয়ে লাগেজ থেকে অনেক খুঁজে একটা জিন্স আর টপ নেয়। তারপর সেটা রাইকে এগিয়ে দেয়। রাই ওটা নিয়ে চেঞ্জ করতে যায়।
” এই মেয়েটা একটু বেশিই ভীতু। একদম ঠিক জনকেই আমি টার্গেট করেছি। একে বেবহার করেই আমি আমার লহ্মে পৌছাবো।
বাঁকা হেসে মনে মনে বলে জিহাত।
রাই ড্রেস পড়ে বেরিয়ে দেখে জিহাত রুমে নেই। বেলকনিতে উঁকি দিয়ে দেখে জিহাত ফোনে কথা বলছে।
“এই ছেলেটা যে কতো নিরিহ মেয়ের মন নিয়ে খেলছে আল্লাহ জানে।
মনে মনে বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে রাই। চুল গুলো ঝুটি বেঁধে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বেলকনিতে যায়। বেলকনির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে
” আমার হয়ে গেছে।
বলে আবার রুমে ফেরত আসে। জিহাত কথা শেষ করে রুমে আসে। রাইকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে।
“বিবাহিত মহিলাদের নাকে নাক ফুল আর হাতে চুরি পড়ে থাকতে হয়। জানো তুমি?
রাই বসে ছিলো জিহাত কথা বলা শুরু করতেই উঠে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে মাথা নারায়। মানে জানে।
” তাহলে কেনো পারো নি এসব?
শান্ত গলায় বলে জিহাত।
“আসলে আমার কাছে তো নাকফুল না চুরি নেই।
কাচুমাচু হয়ে বলে রাই।
” ওহহহ
জিহাত একটু ভেবে বলে।
তারপর আলমারি থেকে একটা বাক্স বের করে আনে। সেখানে সাদা পাথরের ছোট একটা নাকফুল ছিলো। জিহাত রাইয়ের হাতে দেয়। রাই নাকফুলটা নিয়ে পড়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।
“খাওয়া ছাড়া কিছু পারো তুমি?
রাই চমকে চেষ্টা করা বাদ দেয়। জিহাত রাইয়ের সামনে এসে ওর কাছ থেকে নাকফুল নিয়ে পড়িয়ে দিতে যায়। রাই চোখ মুখ খিঁচে একটু দুরে সরে যায়।
” নেকামি করলে আলুভর্তা বানামু তোমারে
রাগী কন্ঠে বলে রাই।
রাই চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে থাকে। জিহাত রাইয়ের খুব কাছে এসে নাক ফুল পড়িয়ে দিতে থাকে। জিহাতের নিশ্বাস রাইয়ের মুখে পড়ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে রাইয়ের।
নাকফুল পড়ানো শেষে জিহাত সরে আসতে যায় তখন রাইয়ের মুখের অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে রাইয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে। রাই চমকে চোখ খোলে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে রাই।
“কককি করছেন? থেমে থেমে বলে রাই। ভয়ে গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।
” কেনো গো? ভাল্লাগছে না
মুখে ফু দিয়ে বলে জিহাত।
“প্লিজ ছেড়ে দিন
রাইয়ের চোখে পানি টলমল করছে। যে কোনো সময় টুপ করে গড়িয়ে পড়বে। নাকটাও লাল হয়ে গেছে।
জিহাত রাইকে ছেড়ে দেয়। রাই জোরে শ্বাস নিয়ে চোখের পানি মুছে। জিহাত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাবছে
” এ মেয়ে না কি?
“চলো
জিহাত আগে আগে হাঁটছে আর রাই পিছু পিছু। বাড়িতে অনেক মেহমান কমে গেছে। জিহাতের কথা শুনে প্রায় অভিমান করে চলে গেছে। ওই মহিলাটি আর ওনার পাশে আরো একটা মহিলা দুরে দাঁড়িয়ে আছে। জেসি রুম থেকে তারাহুরো করে বেরিয়ে আসে।
” দাভাই ভাবিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
জিহাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
“ওর বাড়িতে রেখে আসতে যাচ্ছি।
“কিন্তু দাভাই
” বোন ওকে একেবারে দিয়ে আসতে যাচ্ছি না। জাস্ট কয়েকঘন্টার জন্য। আবার নিয়ে আসবো
মুচকি হেসে বলে জিহাত। জেসিও মুচকি হেসে জিহাতকে জড়িয়ে ধরে বলে
“লাভ ইউ দাভাই
” লাভ ইউ টু
“সাবধানে যাস
রাই হাত দিয়ে ইশারায় ওই মহিলা দুটিকে হাসি মুখে বাই বলে জিহাতের পিছু পিছু যায়।
বাইকে উঠে হেলমেট পড়ে নেয় জিহাত। রাই বুঝতে পারছে না ওকে নেবে কি না? বা ওকে পেছনে বসতে দেবে কি না? তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে।
” বাইকে ওঠার জন্য কি আমন্ত্রণ পএ পাঠাতে হবে
জিহাতের কথা শুনে লাফ দিয়ে বাইকে ওঠি রাই। জিহাতের পিঠে আলতো করে হাত রাখে।
“শক্ত করে ধরে।
রাই হাত মুঠ করে শক্ত করে ধরে। জিহাত বাইকে চালানো শুরু করে।
রাই প্রথম বার বাইকে উঠেছে অন্য রকম একটা ফিলিং হচ্ছে। খুব ভালোও লাগছে।
রাস্তায় একটা মেয়েকে দেখে জিহাত বাইক থামায়। রাইকে রেখেই ওই মেয়েটার কাছে চলে যায়। মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে। হেসে হেসে কথা বলছে। রাই বাইকের ওপর বসে এসব দেখছে আর মনে মনে জিহাতের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে।
মেয়েটার সাথে কিছুখন কথা বলার পরে এসে বাইকে বসে। রাই আর জিহাতের কাঁধে হাত দেয় না। জিহাত হেলমেট পড়তে পড়তে বসে
” ধরে বসতে কি পবলেম হয়?
“ঠিক আছি
” তোমাকে জিজ্ঞেস করছি আমি তুমি ঠিক আছো কি না?
রাই মাথা নারায় মানে না।
“কথা বের হয় না মুখ দিয়ে?
” হুমমমম
“কোন কথার বিপরীতে হুমমম বললা।
” কিছু না
জিহাত এবার বাইক থেকে নামে। রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
“কি আবোলতাবোল বলছো?
” সরি ভুল হয়ে গেছে। এবার চলুন
জিহাত আবার বাইকে ওঠে। রাই বুকের ওপর হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে। জিহাতের শরীর কেঁপে ওঠে।
“কতো মেয়েই তো বাইকে বসে এভাবে ধরে কই আমার তো এরকম ফিলিং হয় না৷ তাহলে এর ছোঁয়াতে
জিহাত চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
রাই পেছনের ছিট ধরে। জিহাত একবার পেছনে তাকিয়ে বাইক চালানো শুরু করে।
রাইদের বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজার সাথে সাথে রুহি দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। জিহাত বাঁকা হেসে রাইয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রুহির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। জিহাত রুহিকে পাশ কাটিয়ে রাইয়ের হাত ধরে সোজা রাইয়ের রুমে নিয়ে যায়। ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুহি কেঁপে ওঠে।
চলবে