আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ৬

0
12437

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ৬
Tanisha Sultana

“আমার পারসোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করার কোনো অধিকার নেই তোমার
চোখ মুখ শক্ত করে বলে জিহাত। রাই ভয় পেয়ে যায়।
” আমি তো জাস্ট

রাইকে থামিয়ে জিহাত ধমক দিয়ে বলে
“তুমি তো কি? বাচ্চা বাচ্চাদের মতো থাকো। এটা আমার বাড়ি আমি যেটা বলবো সেটাই করবা। এই বাড়িতে বোন ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলবা না। আমার পরিবার মানে আমি তুমি আর বোন বুঝছো

রাই মাথা নিচু করে আছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। নিচের ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে কাঁদছে।
জিহাত বুঝতে পারে ও একটু বেশিই রিয়েক্ট করে ফেলেছে। চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে মাথার চুল টেনে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে জিহাত। তারপর শান্ত চোখে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে

” আই এম সরি

জিহাতের নরম গলার কথা শুনে রাই এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে। জিহাত হকচকিয়ে যায়। এই মেয়েটা কথায় কথায় কি করে কান্না করে জিহাত বুঝতে পারে না। কান্না করার তো রিজন থাকা দরকার।

“আপনি প্রমিজ করেছিলেন আমাকে বকবেন না তাও বকলেন
নাক টেনে টেনে বলে রাই। জিহাত রাইকে হালকা জড়িয়ে ধরে। রাই জিহাতের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদে।

” ভেরি সরি। আর কখনো বকবো না

রাই উওরে কিছু বলে না। কেঁদেই যাচ্ছে কেঁদেই যাচ্ছে। এমনিতে রাইয়ের কান্নায় জিহাতের বিরক্ত লাগে কিন্তু আজ বিরক্ত লাগছে না মায়া হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে এভাবে না বললেও পারতাম। জিহাত পরম যত্নে রাইকে বুকের মাঝে আগলে নেয়। রাইও জিহাতের বুকে মুখ লুকিয়ে শান্তিতে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে যায়।
জিহাত রাইয়ের কোমর জড়িয়ে বলে

“সরি বললাম তো। এখন কি আমার গার্লফ্রেন্ডদের মতো কিস করে সরি বলতে হবে।

রাই ছিটকে কিছুটা দুরে সরে যায়। হেঁচকি তুলছে কিন্তু কাঁদছে না রাই। চোখের পানি মুছে নেয়।

” পুরো শার্টটা বুড়িগঙ্গার পানিতে ভীজে গেলো
মন খারাপ করার ভান করে বলে জিহাত। রাই রেগে যায়। হেঁচকি তুলে বলে রেগে বলে

“আমকে বুড়িগঙ্গা বললেন?

” কখন?
অবাক হওয়ার ভান করে বলে জিহাত।

“এইতো বললেন। একদম কথা ঘোরাবেন না

” তুমি ভুল শুনেছো।

তখন জেসি আসে

“দাভাই ভাবি তোমরা কি খাবে না?
রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে জেসি।

রাই অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি পুরোপুরি মুছে নেয়। জিহাত বিছানায় বসতে বসতে বলে

” আমাদের খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দে

“ভাইয়া বাড়ির সবার খাওয়া শেষ। এখন আমি তুই আর ভাবি। তো চল না আমরা একসাথে বসে খাই

জিহাত আর আপত্তি করে না। রাইতো খুব খুশি। নাচতে নাচতে তিনজন খেতে যায়। তিনজন প্লেট নিয়ে বসে।

” আন্টি আপনি আমাদের খাবারটা সার্ভ করে দেবেন?

রাইয়ের কথা শুনে জিহাতের মা চমকে ওঠে। জিহাত শক্ত চোখে রাইয়ের দিকে তাকায়। রাই সেদিকে পাত্তা দেয় না। জেসি ভয়ে ঢোক গিলে।

“যদি জিহাত

” কামঅন আন্টি। জিহাত কিচ্ছু বলবে না। আমি বেরে দিন
রাই জিহাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে। জিহাত উঠতে যায় রাই হাতের ওপর হাত রাখে আর জিহাত উঠে না। জিহাতের মা খাবার বেরে দেয়। ওরা খাওয়া শুরু করে। রাই এটা ওটা বলছে আর খাচ্ছে। জেসি আর জিহাত রাইয়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। যেনো ও কোনো ইমপটেন্ট কথা বলছে। জিহাতের মা কৃতজ্ঞতার চোখে রাইকে দেখে যাচ্ছে। কতো চটপটে আর মিশুক মেয়েটা। সহজেই যে কারো মন জয় করে নিয়ে নেবে।

খাওয়া শেষে জিহাত রুমে চলে যায়। রাই থালা বাসন ধুতে যায়। জিহাতের মা বাধা দিয়ে বলে

“আমি করে নেবো

” আরে আন্টি আমি করতে পারবো। যদিও কখনো করি নি। বাড়িতে মা আর আপিই করতো। আমাকে তো শিখতে হবে বলো। একটা সময় তো আমাকে এগুলো করতে হবে। তাই না?

জিহাতের মা রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
“খুব সুখি হবে তুমি

” শুকরিয়া আন্টি।

সব কাজ শেষ করে রাত নয়টায় রাই রুমে আসে। জিহাত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। রাই চুপিচুপি জিহাতের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। জিহাত কি কথা বলবে সেটা শুনবে

“রুহি সাটআপ। তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি ঠিক আছে বাট আমার লাইফে তোমাকে ফিরিয়ে আনা পসিবল না

এটুকু শুনেই রাই বুঝতে পারলো ওর বোন আবার জিহাতের জীবনে ফিরতে চায়। রাই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে চলে যায়। কেনো জানি আপনাআপনি মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বই সামনে নেয়। মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। বাবা বলে জীবনে সাফল্য লাভের হাতিয়ার হলো বই।

কিছুখন কথা বলে জিহাত রুমে আসে। দেখে রাই মন দিয়ে বই পড়ছে তাই আর রাইকে ডিস্টার্ব করে না। রুহি ফোন দিছিলো পরে বলবে রাইকে।

রাই পড়ছে তো পড়ছেই। জিহাতের দিকে একবার তাকাচ্ছেও না। জিহাত ধপ করে রাইয়ের বই বন্ধ করে দিয়ে রাইয়ের মুখের কাছে শুয়ে পড়ে। রাই চোখ বড়বড় করে তাকায় জিহাতের দিকে।
” কি হলো?

জিহাত রাইয়ের নাক টেনে বলে
“এতো পড়তে হয় না। পড়ে কি হবে? সেই তো সংসার করতে হবে।

রাই জিহাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে বলে

” আপনার গালে টোল পড়ে?

রাইয়ের এরকম কথায় জিহাত অবাক হয়।

“কেনো আগে দেখো নাই?

” দেখছি বাট খেয়াল করি নি। বাই দা ওয়ে টোল পড়ায় আপনাকে খুব কিউট লাগে।
মুচকি হেসে বলে রাই।

“আর তুমি হাসলে তোমাকে খুব কিউট লাগে। জানো মাঝে মাঝে যখন তোমার বোনকে বলতাম রাইকে হাসলে খুব কিউট লাগে ও বলতো তাহলে রাইকেই বিয়ে করে নাও। আমার কোনো কিছুতেই ওর কিছু যায় আসতো না। কারণ ওর তো এতোগুলো ছিলো
হাসতেহাসতে বলে জিহাত। রাইও একটু হাসে।

” একটা কথা বলবো?

“বলো

” আপনি নারী পাচারকারীদের লিডার তাই না?

রাইয়ের মুখে এই কথা শুনে জিহাত লাফ দিয়ে উঠে বসে। ঘামতে শুরু করে দেয়। থেমে থেমে বলে

“রাই ততুমি এসব

রাই হো হো করে হেসে ওঠে। জিহাত আরও ঘাবড়ে যায়।
” মজা করছিলাম। এতোটা ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
জিহাত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। একটু হাসার চেষ্টা করে। রাই তো হেসেই যাচ্ছে। হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। বিদ্যুৎ চমৎকানোর শব্দে রাইয়ের হাসি থামে।
“তুমি এমন কেনো? কারণ ছাড়াই কাঁদো আবার কারণ ছাড়াই হাসো

” আমি এমনই। জীবনে যে কোনো পরিস্থিতিতে হাসতে বা কাঁদতে হয় তবেই মন আর মাথা দুটোই ঠান্ডা থাকে। বুঝলেন

“হুমমম বুঝলাম। এবার ঘুমিয়ে পড়ো। সকাল সকাল উঠতে হবে তো

” হুমম গুড নাইট

জিহাত রাইয়ের খাটের উল্টো দিকে আর একটা এনেছে নিজে শোয়ার জন্য। সেখানে শুয়ে পড়ে। রাই জিহাতের দিকে মুখ করে শয়।

সকালবেলা নয়টাই জিহাতের ঘুম ভাঙে। উঠে দেখে রাই কাঁথা মুড়ি দিয়ে কাচুমাচু হয়ে ঘুমিয়ে আছে। জিহাত রাইয়ের বিছানার সামনে এসে রাইকে ডাকে কোনো সারাশব্দ নেই।
কাঁথা সরিয়ে রাইয়ের গালে হাত দিয়ে শিউরে ওঠে জিহাত। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।

“এই মেয়েটার দেখি কারণ ছাড়াই শরীরও খারাপ হয়। আল্লাহ এরে তুমি কি দিয়ে বানাইছো

জিহাত রাইয়ের বাবাকে ফোন দেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here