আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ৮

0
8130

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ৮
Tanisha Sultana

রাই গভীর ভাবে ভাবছে। কি করে জানলো? আর রুহি ভাবছে আমার কোন বফ রাইয়ের সাথে কথা বললো।
জিহাত দুই বোনের ভাবনা দেখে মুচকি হাসলো।।তারপর রাইকে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে
“এতো চিন্তা করলে তো আমার বউটা পাগল হয়ে যাবে

জিহাতের শিতল গলায় রাইয়ের শরীরে একটা শীতল হাওয়া বয়। রুহির খুব খারাপ লাগছে জিহাতের বুকে রাইকে দেখে। রাইও কেমন নিলজ্জের মতো জিহাতের বুকে লেপ্টে আছে বড় বোনের সামনে। রাই সরে আসতে নেয় জিহাত শক্ত করে ধরে। তাই চুপচাপ ওভাবেই থাকে। আগের মতো হলে জিহাত রুহির দিকে তাকিয়ে দেখতো রুহি জেলাস হচ্ছে কি না। কিন্তু এখন জিহাত চোখ বন্ধ করে আছে। মুহুর্তটাকে ফিল করছে। রুহি এক দৃষ্টিতে জিহাতের দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি বোঝার চেষ্টা করছে এটা কি সেই জিহাত যে সারাদিন রুহির পেছনে পড়ে থাকতো?

” কি করছেন? আপি কি ভাববে?
ফিসফিস করে বলে রাই। জিহাত রাইয়ের কথা শুনে মুচকি হাসে। কথাগুলো জিহাতের বুকের সাথে বাড়ি খায়। জিহাতের কোনো ভাবান্তর নেই দেখে রাইয়ের রাগ হয়। জিহাতের বুকে চিমটি দেয়। জিহাত ব্যথা পায় কিন্তু কোনো রিয়াক্ট করে না। জিহাত চোখ বন্ধ করে নেয়। রুহির এমন দৃশ্য সয্য হলো না তাই বেলকনিতে চলে যায়। রাই এবার সবটুকু শক্তি দিয়ে জিহাতকে ধাক্কা মারে। জিহাত কিছুটা দুরে সরে যায়। রাই জোরে জোরে শ্বাস নেয়

“এতো শক্ত করে কেউ ধরে? আর একটু হলেই দম বেরিয়ে যেতো
বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিতে নিতে বলে রাই। জিহাত গোল হয়ে বসে।

” কি হলো কথা বলছেন না কেনো? হা করে তাকিয়ে আছেন।
জিহাতের সামনে হাত নারিয়ে বলে রাই।

“তুমি বলছো আমি শুনছি।

” আপি কি ভাবলো?

“আই ডোন্ট কেয়ার। তাছাড়া ওর বোঝা উচিৎ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে থার্ড পারসনের থাকতে নেই।

” তাই বলে

” বাদ দাও। বুকের দিকে তাকাও

রাই নক বিধিয়ে দিয়েছিলো সেই জায়গা রক্ত বের হচ্ছে। রাই ভেংচি কেটে বলে

” আপনি ছাড়ছিলেন না তাই

“ওহহ তাহলে ইন ফিউচার যদি তোমাকে ভালোবাসতে যায় তাহলে কি হাত পা ভেঙে দেবে

” দিতেও পারি

“কেমন গুন্ডী মেয়ে বিয়ে করলাম রে

” এমনই। এটাকে গুন্ডী বলে না কিউট বলে

“হুমম কিউট বউ আমার।

” দশ দিনের বউ
জিহাতের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়।

জিহাত রাইয়ের দুই কাঁধে হাত দিয়ে নিজের দিকে ঘোরায়।

“কি হলো?

” আমার চোখের দিকে তাকাও

রাই জিহাতের চোখে দিকে তাকায়। অদ্ভুত কিছু দেখতে পায়। জিহাতের প্রতি টান অনুভব করে। কিন্তু এটা ঠিক না। আপির বফ উনি। রাই চোখ নামিয়ে নেয়। হার্ট বিট প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

“কিছু ফিল করলে।

রাই চোখ বন্ধ করে মাথা ঝাকায় মানে হ্যাঁ। জিহাত দ্রুত জিজ্ঞেস করে
” কি ফিল করলে?

“এটাই ফিল করছি যে
থেমে থেমে বলে রাই।

” কিহহহ বলো

“গরম

রাইয়ের এরকম উওরে জিহাত হতাশ হয়ে রাইয়ের কাঁধ ছেড়ে দেয়।

” আমি আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি কি না এটাই জানতে চান আপনি। আমি দুর্বল হলে তো আপনার নিজেকে অপরাধী মনে হবে। আমি খুব স্টং৷ খুব সহজে কার প্রতি দুর্বল হয় না

মনে মনে বলে রাই। জিহাত কানে হেডফোন দিয়ে চুপচাপ রাইয়ের পাশে শুয়ে আছে।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রুহি। জিহাতের এরকম পরিবর্তন মানতে পারছে না। এটা কি হয়ে গেলো। রুহি আগে ভাবতো শুধু ভাবতো না বিশ্বাসও করতো। গোটা দুনিয়া যদি রুহিকে ছেড়ে চলে যায় জিহাত কখনো ছাড়বে না। আগলে রাখবে। সেই জিহাত এখন রুহিকে রিফিউজ করছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে রুহির। রাই যদি রুহির নিজের বোন না হতো তাহলে রাইকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতো রুহি। ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে রুহি। রাই আর জিহাতের বিয়ের জন্য বাবা মা রুহিকে দায়ী করছে। ভালো করে কথা বলে না রুহির সাথে। সাইফ নামের একটা ছেলের সাথে রুহি রিলেশনশিপ এ ছিলো সেও বিয়ে করে নিয়েছে। সব কিছু শুন্য শূন্য লাগছে রুহির। এভাবে বাঁচা যায় না কি?

দুপুরের খাবারটা সবাই মিলে এক সাথে খাবে বলে জিহাতের বাবা আজ খুব খুশি জিহাতদের বাড়িতে কখনোই একসাথে বসে খাওয়া হয় না। যে যার মতো করে খায়। জিহাতের মায়ের চিন্তা হচ্ছে। যদি জিহাত সবার সাথে বসে না খায় তাহলে রাইয়ের পরিবার কি ভাববে?

রাইয়ের মা রাইকে নিয়ে এসেছে। মায়ের পাশে বসেছে রাই। রাইয়ের বাবা জিহাতের বাবা কাকা জেসি রুহি সবাই খেতে বসে গেছে।
জিহাত শার্টে বুতাম লাগাতে লাগাতে বের হয়

“রাই আমি বেরোচ্ছি। ফিরতে রাত হবে

বলেই জিহাত যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। রাই কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাইয়ের বাবা বলে ওঠে

“না খেয়ে এক পা নড়বা না

শশুড় মশাইয়ের কথা শুনে জিহাত দাঁড়িয়ে যায়।
” আরে শশুড় মশাই আপনি বললেন?

“এখানে বসো

নিজের পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে বলে। জিহাত রাইয়ের দিকে তাকায়। রাই চোখের ইশারায় বসতে বলে৷ জিহাত মুচকি হেসে বসে পড়ে। সবাই খুশি হয়।
জিহাতের মা সবাইকে খাবার বেরে দেয়। রুহি জিহাতের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু জিহাত এক বারও তাকাচ্ছে না। রাইকে রাইয়ের মা খাইয়ে দিচ্ছে। জিহাতের বাবা মনে মনে রাইয়ের বাবা ধন্যবাদ দিচ্ছে। বিশ বছর পরে ছেলের সাথে বসে খাচ্ছেন তিনি। খুশিতে চোখে পানি চলে আসে। সবার আড়ালে সেটা মুছে নেয়।

খাওয়া শেষে রাইয়ের বাবা মা চলে যাবে। অনেক করে রাইকে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু জিহাত যেতে দেবে না। রুহি খালি সুযোগের অপেক্ষায় আছে কখন সে জিহাতকে একা পাবে। যে করেই হোক জিহাতকে দুর্বল করতে হবে।

রাই মন খারাপ করে বসে আছে। জিহাতের এবার বাইরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ফোনের ওপর ফোন আসছে। এজ একটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিট করার আছে জিহাতের।

” শুনুন
জিহাত রুম থেকে বেরোতে নেয় রাই পেছন থেকে বলে। জিহাত পেছন ঘুরে বলে

“হুমমম বলো

” এখানে এসে বসেন

নিজের পাশে ইশারা করে বলে রাই। জিহাত ভদ্র ছেলের মতো রাইয়ের পাশে বসে।

“আমি অসুস্থ এটা দেখে ইশান কখনোই যেতো না।

” আমার খুব ইমপটেন্ট কাজ আছে।

“খুব ইমপটেন্ট

” হুমম

“আমি আইসক্রিম খাবো

” আমি বোনকে এনে দিতে বলছি।

“নাহহহ আপনি এনে দেন

জিহাত কিছুটা বিরক্ত হয়ে চলে যায়। ফোনটা রেখে যায়। রাই ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে কোনো লক নেই। রাইয়ের খুশি আর দেখে কে? রাইয়ের যা কাজ করার করে ফোনটা জায়গা মতো রেখে দেয়। জিহাতে আইসক্রিম এনে দেয় রাইকে।

” ধন্যবাদ

“হুমম আসছি

জিহাত বেরিয়ে যায়

” যাও সোনা যাও। এবার মজা বুঝবে। ইসসস তোমার নাকানিচুবানি খাওয়াটা যদি নিজের চোখে দেখতে পারতাম। পারতাম কি পারবো। আজ তুমি নদীর মতো সোজা হয়ে যাবে আমার দশ দিনের জামাই

রাই তারাতাড়ি করে বোরকা পড়ে বেরিয়ে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here