আমার_অবেলায়_তুমি,পর্ব-০২,০৩

0
489

#আমার_অবেলায়_তুমি,পর্ব-০২,০৩
#সানজিদা_বিনতে_সফি(সাথী)
#পর্ব_২

মারার ফলে গায়ের বিভিন্ন জায়গায় ছোপ ছোপ কালো দাগ হয়ে আছে মধুরিমার। পুরো নাম মধুরিমা দেওয়ান। বাবা গত হয়েছে ছোট থাকতেই। তার মা আবার বিয়ে করায় তার আশ্রয় হয় মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর বাড়িতে। নানার বাড়ির কেউ তাকে রাখতে চায় নি।
এই বাড়িতে কোন কিছুর অভাব নেই। অভাব শুধু একটা জিনিসের,তা হলো ভালোবাসা, যত্ন। অনেকটা কাজের মেয়ের মতোই তাকে থাকতে হয় এ বাড়ি। মায়ের ও কোন হেলদোল নেই। খাইয়ে পরিয়ে রাখছে এই ঢেড়। এখন বিদায় করতে পারলেই বাচে। তাই মাহতাবেদের প্রস্তাব পেয়ে লুফে নেয়। এতটা ও আশা করেনি তারা। বয়স্ক বুড়ো হলেও দিয়ে দিতো। সে তুলনায় মাহতাব তো টাকার কুমির। বয়স দিয়ে কি আশে যায়।

হুট করেই বিয়ে হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি মাহতাব। বড় আপা বললেও সে বিষয় টা সিরিয়াসলি নেয়নি।এভাবে হুট করে বিয়ে হয় নাকি?বললেই তো আর হলো না। কিন্তু হয়ে গেছে। মাহতাব কে আশ্চর্য হওয়ার সুযোগটাও দেয়নি ময়না বেগম। কুলসুম বেগম বিরক্ত হলেও মুখে কিছু বলেনি। মেয়ে তার পছন্দ হয়েছে। দেখতে শুনতে মাশআল্লাহ পুতুলের মতো। কিন্তু বয়স টা একটু কম।তার গম্ভীর ছেলের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে তো!

মধুরিমা কে মাহতাবদের সামনে আনতেই মাহতাব অবাক হয়ে যায়। অস্বস্তিতে ঘিরে ধরে তাকে। কয়েকমাস আগে রাস্তায় দেখেছে সে মধরিমা কে। তার সৎ বাবা অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সবার সামনে তাকে মারধর করছিল। গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কেব নিতে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল মাহতাব। ড্রাইভার গাড়ি আনতে যাওয়ায় তাকে কিছুক্ষণ সেখানেই দাড়াতে হয়। মধুরিমা কে এভাবে মা*রতে দেখে এগিয়ে যায় সে। ছাড়িয়ে নেয় পাষণ্ড লোকটা থেকে। রাগে গড়গড় করতে করতে লোকটা তার দিকেও তেড়ে আসে। অশালীন গালি দিয়ে ফেলে মা তুলে। শান্ত মাহতাব বাঘের মতো গর্জে উঠে। মুহুর্তে ঠাটিয়ে চ*ড় লাগায় তার গালে। অবস্থা অনেকটা বেগতিক দেখে মধুরিমা হাত জোর করে মাফ চায় মাহতাবের কাছে। এর জন্য তাকে অনেক ভুগতে হবে তা চোখের পানিতে বোঝাতে চায়। মাহতাব পুলিশ কে কল করতে গিয়েও থেমে যায়। অসহায় মধুর চোখের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভারের আনা গাড়িতে উঠে চলে যায় সে।

এখানে এসে মধুরিমার মুখ দেখে কিছু বুঝতে বাকি নেই মাহতাবের। মধুরিমার সৎ বাবা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ময়না বেগম সহ বাকি সবাই বেশ অবাক হয়েছে মধুরিমার অবস্থা দেখে। লামিয়া গিয়ে একপাশ থেকে জরিয়ে ধরেছে তাকে। ময়না বেগম কারোর সাথে পরামর্শ না করেই বিয়ের জন্য তাড়া দিলেন ঘটক কে৷ মেয়ের পরিবার গাইগুই করলেও পরে রাজি হয়ে গেলো। মাহতাব ইশারায় কিছু বলতে চাইলেও শুনলেন না ময়না বেগম।সে কোন ভাবেই মধুকে রেখে যাবেনা। মাহতাব একবার বলেই ফেললো,

— আগে ওনার ট্রিটমেন্ট হওয়া জরুরি আপা।

ময়না বেগম গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো,
— আমাদের বাড়ির বউ হয়ে গেলে সব হবে। আগে অধিকার আদায় করে নেই।

মাহতাব আর কিছু বললো না। দশ মিনিটে কাজি চলে এলো। তারপর ঘোরের মাঝেই বিয়েটা হয়ে গেলো। মাহতাব অবশ্য একবার আলাদা কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু ময়না বেগম পাত্তা দেয়নি। ভাইয়ের উপর তার এক আনাও বিশ্বাস নেই।

বিয়ে হতেই সোজা হয়ে দাড়ালো মাহিতাব। লামিয়া এখনো মধুকে ধরে বসে আছে। মেয়েটা এখনো কাপছে । মেহরাব কাজি কে এগিয়ে দিতে গিয়েছে৷

মেহরাব সোজা মধুর সামনে গিয়ে দাড়ালো। মধুর গুটিয়ে রাখা হাত টা নিজের হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো কিছুক্ষণ। একটা নখ উঠে গেছে। কয়েক জায়গায় সিগারেট দিয়ে পুড়ি*য়ে দিয়েছে। মুধু নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে। মেহরাব হাত ধরতেই হালকা কেপে উঠলো সে। মেহরাব হাত ছেড়ে মধুর বরাবর বসলো। ময়না বেগম বারবার তাড়া দিচ্ছে বাসায় যাওয়ার। ভাইয়ের মতিগতি তার ভালো ঠেকছে না।

মাহতাব ময়না বেগম কে সম্পুর্ন উপেক্ষা করে মধুর মা আলেয়া বেগমের দিকে তাকালো। সে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে মেহরাবের দিকে।বার বার বুয়া কে তাগাদা দিচ্ছে তাদের সামনে নতুন নতুন আইটেম আনার জন্য। তার স্বামী জয়নাল বেপারী বিরস মুখে বসে আছে। তার ছেলেরা তার পিছনে দাঁড়িয়ে। ছেলে গুলো কে ভালো করেই চেনে মাহতাব। বড় ছেলেটা ভালো হলেও বাকি দুইটা বদের হাড্ডি।

মাহতাব গম্ভীর গলায় মধুকে জিজ্ঞেস করলো,

— তোমার গায়ে কে হাত তুলেছে মধু?

মধুরিমা চমকে তাকালো মাহতাবের দিকে। অনেক গুলো বছর কেউ তাকে এতো সুন্দর করে ডাকেনা। এতটা আবেগ নিয়ে কেন জানতে চাইলো লোকটা? কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো সে। মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। ময়না বেগম তড়িঘড়ি করে এসে জরিয়ে ধরলো তাকে। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো সে। যেভাবে ধরে ছিল ঠিক সেভাবেই ছেড়ে দিলো ময়না বেগম। ব্যথায় নীল হয়ে গেছে মধুর ফর্সা আদূরে মুখখানা।

কুলসুম বেগম চুপ করে বসে আছে। ছোট ছেলে তাকে আগলে ধরে রেখেছে। তার বিশ্বাস মাহতাব কোন ভুল কাজ করবেনা। তার ছেলে যথেষ্ট বিবেকবান। অন্যায়ের সাথে আপোষ করা তার ধাতে নেই।

মাহতাব মেহরাবের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— পুলিশ আর এম্বুল্যান্স দুটোতেই কল করো। আজ এই বেপারি বাড়ির সবাইকে আমি চৌদ্দ শিকের পিছনে দেখতে চাই।

আলেয়া বেগম মুখ কুচকে ফেললো। স্বামীর দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল,

— এসব কি হচ্ছে জয়নাল? এই মুখপুড়ি আবার কি নাটক শুরু করেছে। হাড়মাস জ্বা*লিয়ে খেলো। বাপের সাথে ম*রলে বেচে যেতাম।আপদ বিদেয় হতো।

মাহতাবের আগে ময়না বেগম গর্জে উঠলো। চোখ বড় বড় করে শাসিয়ে বলল,

— ইব্রাহীম বাড়ির বউ নিয়ে আরেকটা বাজে কথা বললে জিব টেনে ছি*ড়ে ফেলবো। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! কাদের সামনে দাড়িয়ে কথা বলছো জানো? এই ঘটক,ভালো করে বুঝিয়ে বলিস নি ওদের বাড়িতে কারা আসছে?

ঘটক ভেবাচেকা খেয়ে বসে আছে। ভয়ার্ত চোখে মাহতাব আর ময়না বেগমের দিকে তাকাচ্ছে। মেহরাব তার নিজের হসপিটালে কল করে এম্বুল্যান্স পাঠাতে বলে দিয়েছে। ডিআইজির সাথেও কথা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে হাজির হবে। নিজের কাজ শেষ করে মাহতাবের কাছে গিয়ে নিচু গলায় বলল,

— আমি ভাবিকে একটু চেকআপ করি ভাইয়া? অবস্থা ভালো ঠেকছে না। ভাবির মনে হয় নিশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।

জয়নাল বেপারী কুলকুল করে ঘেমে যাচ্ছে। তার ছোট দুই ছেলে রাগে ফুসছে। বাইরের একটা লোক এসে তাদের হুমকি দিচ্ছে! তাও তাদের বাড়িতে থাকা আশ্রতা মেয়ের জন্য। কালকেও যাকে লাথি মেরে খাওয়া থেকে তুলে দিয়েছে তার জন্য তাদের জেলে যেতে হবে! ভাবতেই রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। তার বাবার জন্য কিছু বলতে পারছে না। নাহলে সব কয়টা কে পুতে দিতো।

— বেড রুমটা দেখিয়ে দিন। ভাবিকে এভাবে বসিয়ে রাখা যাবে না। কষ্ট হচ্ছে ওনার।

মেহরাবের কথায় মুখ বাকালো আলেয়া। কাজের লোককে ইশারা করে তার রুমে নিয়ে যেতে বললো।

মধুকে দাড় করাতেই সে গা ছেড়ে দিলো। মেহরাব আর লামিয়া ধরে ফেললো তাকে৷ মেহরাব কোলে তুলে অচেতন মধুকে নিয়ে শুয়িয়ে দিলো তার রুমে। একটা জীর্নশির্নি রুমে মলিন বিছানা৷ হয়তো কাজের লোকেদের রুম। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল মাহতাব। রাগ হচ্ছে তার। মানুষ এতটা নির্দয় কিভাবে হতে পারে! আজ এদের রক্তের গরম কমিয়ে বরফ করেই দম নিবে সে।

ময়না বেগম কুলসুম বেগমের গা ঘেঁষে বসলো। গলার স্বর নিচে নামিয়ে ফিসফিস করে বললো,,

— দেখলে মা!কাল অব্দি বিয়ে করতে চাইছিল না।আর,আজ বউ পেতেই কেমন টেংরা মাছের মতো লাফাচ্ছে! কলি যুগ কলি যুগ! (আফসোস করে)

কুলসুম বেগম চুপ করে বসে রইলো। মেয়ে তার পাক্কা অভিনেত্রী। মাহতাব রেগে গেছে।আজকে বেপারীদের ঘোল খায়িয়ে ছাড়বে। ছেলেগুলো একদম বাপের মতো হয়েছে। বউ পাগলা।

চলবে,,,

#আমার_অবেলায়_তুমি
#সানজিদা_বিনতে_সফি(সাথী)
#পর্ব_৩

আধঘন্টার মধ্যেই বেপারী বাড়ি পুলিশে ঘিরে ধরেছে। এসপি এসে মাহতাবকে সালাম দিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলো। মাহতাব গম্ভীর মুখে জয়নাল বেপারীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,

— এ বাড়ির উপস্থিত প্রত্যেক টা মানুষ কে আমি থানায় দেখতে চাই এসপি সাহেব। এরা আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে। তাকে শারীরিক মানুষিক ভাবে নির্যা*তন করেছে। একজনকেও ছাড়বেন না।

এসপি সাহেব জয়নাল বেপারীর দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল,

— আপনার কিছু বলার আছে? স্যারের ওয়াইফের গায়ে কে হাত তুলেছে?

জয়নাল বেপারী ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেলো। ছেলেদের দিকে তাকিয়ে আলেয়া বেগমের দিকে নজর দিলো। সবাই ভয়ার্ত চোখে তার দিকেই তাকিয়ে। কেচো খুড়তে না আবার কেউটে বেরিয়ে আসে!

জয়নাল বেপারী সমস্ত দোষ স্বিকার করলেন। আড় চোখে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,

— আমিই মেরেছি স্যার। আমাদের বাসায় কাজ করতো। কাল আমার স্ত্রীর স্বর্নের কানের দুল চুরি করেছিল।তাই রাগের বসে গায়ে হাত তুলে ফেলেছি।

— আপনি সিগারেট খান?

মাহতাবের কথায় থতমত খেয়ে গেল জয়নাল বেপারী। আমতা আমতা করে বলল,

— না মানে,আমি খাই না।

— আমি যতদূর জানি মধুরিমা আলেয়া বেগমের নিজের মেয়ে। আর আপনার সৎ মেয়ে। সে আপনার বাড়ির কাজের মেয়ে হয় কি করে? আর যদি কানের দুল চুরি হয়েও থাকে তবুও আইন হাতে তুলে নেয়ার কোন রাইট নেই আপনার। এসপি সাহেব,আমি এদের সবার নামে এটেম টু মার্ডা*রের মামলা করবো। বাকিটা আমার স্ত্রী সুস্থ হলে জবানবন্দি দিবে। আশা করি আপনি সামলে নিবেন।

— অবশ্যই অবশ্যই স্যার। চিন্তা করবেন না।সব কয়টা কে থার্ড ডিগ্রি দিলেই সত্যি টা বেড়িয়ে আসবে।

মাহতাব মধুর রুমে গিয়ে ময়না বেগম আর কুলসুম বেগম কে বাড়ি চলে যেতে বললো। লামিয়া,মেহরাব আর সে মধুকে নিয়ে হসপিটাল যাবে। এম্বুল্যান্স চলে এসেছে। তাই এখনই তাদের বেড়িয়ে পরতে বলে অচেতন মধুকে কোলে নিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে গেল।

ময়না বেগম আহাজারি করে বলল,

— দেখলে মা দেখলে! তোমার ছেলে গিরগিটির মতো রঙ পালটে ফেললো! মেয়েটাকে এভাবে নিয়ে গেল কেন? আমরা তো বাসায় গিয়ে স্বস্তিতে থাকতে পারবো না। এই হারাম*জাদা তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমাদের ও নিয়ে চল। আমি কিন্তু বাসায় যাবো না বলে দিলাম।

মেহরাব আড় চোখে লামিয়ার দিকে তাকালো। লামিয়া ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। ময়না বেগম কথা শেষ করেই ছুটেছে মাহতাবের পিছনে। মেহরাব মায়ের হাত ধরে সাবধানে তাকে নিয়ে বের হলো। লামিয়া শ্বাশুড়ির পিছনে পিছনে আসছে।

— আপনি বাসায় চলে যান আম্মা। হাসপাতালে গিয়ে আপনার ভালো লাগবে না। অসুস্থ হয়ে পরবেন। আমরা ভাবিকে নিয়ে তারাতাড়ি ফিরে আসবো।

কুলসুম বেগম মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। তাকে মাহতাবের গাড়িতে তুলে দিয়ে ড্রাইভারকে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলে মেহরাব এম্বুল্যান্সে উঠে গেল। লামিয়া আর ময়না বেগম মেহরাবের গাড়িতে করে আসছে।

জয়নাল বেপারী আলেয়া সহ তার দুই ছেলে জয় আর সামির কে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷

মাহতাবদের হাসপাতালে পৌঁছাতে প্রায় একঘন্টা লেগে গেল। মধুর একবার জ্ঞান ফিরলেও বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয়নি। মেহরাব একটু পর পর চেক করে যাচ্ছে। হসপিটালে পৌছেই মধুর ট্রিটমেন্ট শুরু হয়ে গেলো। সিনিয়র ডাক্তার ড.কানিজ ফাতেমা মধুর ট্রিটমেন্ট করছে।

চেকআপ শেষে কেবিন থেকে বেরিয়ে মাহতাবের কাছে এসে আফসোসের গলায় বলল,

— মেয়েটাকে প্রচুর মা*রধর করেছে স্যার। সারা গায়ে কালসিটে দাগ পরে গেছে। কিছু নতুন আর কিছু পুরনো৷ পেসেন্ট প্রচন্ড অপুষ্টিতে ভুগছে। ঠিকভাবে খেতে দিতো না হয়তো। এভাবে কোন সমস্যা নেই। তবে আমার যতদূর মনে হচ্ছে মেয়েটা ট্রমাটাইজ হয়ে গেছে। তাকে খুব যত্নে রাখতে হবে।

— বুঝতে পেরেছি। ধন্যবাদ ডক্টর।

— আসছি স্যার।

— হুম।

মধুকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে।দুই দিন এখানেই থাকতে হবে।

লামিয়া আর ময়না বেগম পৌছালো আরো বিশ মিনিট পরে। জ্যামে আটকা পরে তাদের দেড়ি হয়ে গেছে। মধুকে দেখেই ময়না বেগম আফসোস করে বলল,

— আহারে!কি পাষাণ মানুষ এরা! আজ আমরা যদি না যেতাম তাহলে মেয়েটাকে এভাবেই ফেলে রাখতো। আল্লাহ সহায়।

মাহতাব চুপ করে বসে আছে। রাত আটটা বাজতে চললো। মেহরাব কে ময়ানা বেগম আর লামিয়া কে নিয়ে বাসায় চলে যেতে বলল মাহতাব। হসপিটালে ভীড় করে লাভ নেই। আর কুলসুম বেগম ও বাড়িতে একা আছে।

ময়না বেগম গাট হয়ে বসে রইলেন। সুনা*মি এলেও সে এখান থেকে নড়বে না। মেহরাব হাজার বুঝিয়ে ও তাকে টলাতে পারলো না। মাহতাব শান্ত গলায় বলল,

— অসুস্থ হয়ে যাবে আপা। বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নাও। সকালে এসো।

মাহতাবের বলতে দেড়ি হলো ময়না বেগমের সুয়ে পরতে দেড়ি হলো না। কেবিনের এক্সট্রা বেডে টানটান হয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে কাত হয়ে সুয়ে পরলেন। মেহরাব দুই দিকে মাথা নাড়াতে নাড়াতে লামিয়াকে নিয়ে চলে গেলো। মাহতাব থানায় কথা বলে আবার চুপ করে বসে রইলো। রিসিপশনে কল করে খোজ নিলো আর কোন কেবিন খালি আছে কিনা। ময়না বেগম এসির পাওয়ার কম হলে ঘুমাতে পারে না।

রিসিপশন থেকে জানালো কেবিন এবেইলেবল আছে।

— ঠিক আছে। কোন ইমারজেন্সি রোগী আসলে জানাবেন।কেবিন লাগলে আমরা সাথে সাথেই ছেড়ে দিবো।

— ওকে স্যার।

ময়না বেগমের চোখে পানি চলে এলো। তার ভাই এখনো তাদের সব দিকে নজর রাখে। তাদের একটু কষ্টও মাহতাব সহ্য করতে পারেনা। তার ভাইটাকে আল্লাহ এবার সুখি করুক।

— আপা,,ঘুমিয়ে গিয়েছো? কষ্ট করে একটু উঠে পাশের কেবিনে চলো। এখানে তুমি ঘুমাতে পারবে না।

মাহতাবের শান্ত গলা শুনে আস্তে করে উঠে বসলো ময়না বেগম। ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তার হাত ধরে ধীর পায়ে পাশের কেবিনে চলে গেলো।

— দরকার হলে ডাকবি কিন্তু।

— আচ্ছা ঘুমাও।

মাহতাব ময়না বেগম কে রেখে মধুর কেবিনে চলে এলো। মেয়েটা শান্ত ভাবে ঘুমিয়ে আছে। স্নিগ্ধ মুখটায় কয়েক জায়গা নীল হয়ে আছে। মাহতাব চোখ সরিয়ে নিলো। শার্টের হাতা গুটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। শরীর ক্লান্তিতে আর চলতে চাইছে না।

বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙ্গলো মধুরিমার। পাশেই মাহতাব পেপার পড়ছে।

— শরীর ঠিক আছে?

মাহতাবের গম্ভীর গলায় ভরকে গেলো মধু।মিনমিনে গলায় বলল,

— জি।

— ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে মেডেসিন নিও। নার্স এসে সাহায্য করবে। আমার একটা জরুরি মিটিং আছে। হুট করে বিয়ে হওয়ায় সময় বের করতে পারিনি। আমি অফিসে যাচ্ছি। বড় আপা পাশের কেবিনে আছে৷ ঘুমাচ্ছে হয়তো। লুবানা আর মেহরাব ও চলে আসবে কিছুক্ষণ পর। কোন অসুবিধা হলে তাদের বলবে। ঠিক আছে?

মধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। মাহতাব এখনো শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। সোফা থেকে উঠে মধুর সামনে গিয়ে দাড়ালো। মাথায় হাত রেখে আস্তে করে বলল,

— একা ভয় করবে?

মধুরিমা চমকে তাকালো মাহতাবের দিকে। তাকে কেউ কখনো এই প্রশ্নটা করেনি। লোকটা এতো আদুরে স্বরে কথা বললে সে তো কেদেই ফেলবে।

— আমি বড় আপা কে ডেকে দিচ্ছি। নার্স ও থাকবে সারাক্ষণ। একদম ভয় পাবেনা। আমি কাজ শেষ করেই চলে আসবো। কাল বাসায় যেতে পারবে। হুম?

মধু মাথা নিচু করে ফেলল। তার মন হালকা লাগছে। ধীর গলায় বলল,

— আপা কে ডাকতে হবে না। আমি ভয় পাবো না। আপনি নিশ্চিন্তে কাজ সেরে আসুন।

মাহতাব হাসলো। কেবিনে নার্স কে ডেকে দ্রুত বেরিয়ে গেল। সকালে ময়না বেগম কে দেখে এসেছে। কালকের দৌড়ঝাপে ক্লান্ত ছিল তাই একটু বেশি ঘুমাচ্ছে। অলরেডি দেড়ি হয়ে গেছে। জ্যামে না পরলেই হয়।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here