আমার_অবেলায়_তুমি #পর্ব_শেষপর্ব(১ম অংশ)

0
491

#আমার_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_শেষপর্ব(১ম অংশ)
#সানজিদা_বিনতে_সফি(সাথী)

রাতের খাবার শেষ করে সবাই নিজের রুমে চলে গেলেও মধু শামীরের পায়ের পাতা চেপে ধরে বসে আছে। গত আধঘন্টা যাবৎ শামীর ছাড়ানোর চেষ্টা করে ও ব্যার্থ। এক হাত ছাড়ালে আরেক হাত দিয়ে চেপে ধরে।

— কি সমস্যা তোর বড় মামী। ভাতিজার পা ধরে টানাটানি করতে লজ্জা করে না তোর? ভালোয় ভালোয় পা ছাড়।না হলে ওয়াশরুমের কাজ আমি এখানেই সারবো।আর কিছুক্ষণ চেপে রাখলে আমার কিডনি লিভার সব একসাথে নষ্ট হয়ে যাবে। এখনো আমার কতো রাত জাগা বাকি!

শামীরের ভয়ংকর ঝাড়ি কে এক আনার ও পাত্তা দিলো না মধু। পায়ের পাতা ছেড়ে গা ছাড়া ভাব নিয়েই বলল,

— চল,আমিও তোর সাথে যাবো। তুই ভিতরে যাবি আমি বাইরে দাড়িয়ে পাহারা দিবো। বলা তো যায় না, দেখা গেল বাথরুমের জানালা দিয়ে পালিয়ে গেলি!

— আমাকে কি তোর মশা মনে হয়?এতবড় দেহ ওইটুকু জানালা দিয়ে কিভাবে বেরুবে? আর তিনতলার বাথরুমের জানালা দিয়ে লাফিয়ে আমি নিজের জীবন ই বা দিবো কেন?আশ্চর্য!সমস্যা টা কোথায় বলবি আমাকে? তোর জীবন নাশক ব্যবহার আমাকে আতংকিত করছে।

শোয়েবের ভীতু ভীতু চোখ ও মধুর মন গলাতে পারলো না। আজকে রাতে রুমে যাওয়া টা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। মাহতাব নিশ্চয়ই তাকে লজ্জায় ফেলবে। তার লজ্জায় পরতে একদম ই ভালো লাগে না। লজ্জা পেলে তাকে খুবই বিশ্রী দেখায়। এটা অবশ্য তার নিজস্ব মতামত।

— কি হচ্ছে এখানে?

মাহতাবের গম্ভীর গলা শুনে মধু শামীরের শার্টের কোণা ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেতেই শামীর আর এক মুহুর্ত ও দেড়ি করলো না৷ এক ছুটে গিয়ে লিভিং রুমের পাশের বাথরুমে ঢুকল। মাহতাব অবাক চোখে তাকিয়ে নিজের ভ্রু কুচকে ফেললো৷

— আমাদের রুমে ও ওয়াশরুম আছে মধু। তুমি সেখানে তো যেতে পারতে৷ এভাবে ওর সাথে মা*রামা*রি করছিলে কেন?

মধু অসহায় মুখ করে দাড়িয়ে রইলো। মাহতাবের কথার উত্তর দিতে তার ইচ্ছে করছে না। সব সময় তাকে লজ্জায় ফেলে।
মাহতাব কিছু একটা ভেবে নিঃশব্দে হাসলো। মধুর কাছাকাছি দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,

— রুমে এসো মধু। তোমার জন্য স্পেশাল গিফট এনেছি।

মধুর উত্তরের অপেক্ষা না করেই তার হাত ধরে রুমের দিকে পা বাড়ালো।

রুমে এসেই একটা প্যাকেট মধুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

— চেঞ্জ করে এসো। আমি ওয়েট করছি।

মধু চুপচাপ চলে গেলো। মাহতাবের কথার বাইরে যেতে কখনোই মন সায় দেয় না তার। ওয়াশরুমে গিয়ে প্যাকেট খুলতেই চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মধুর। টকটকে লাল শাড়িটির দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো সে। দেড়ি না করে তারাতাড়ি তৈরি হওয়ায় মন দিলো। স্বামীর আহ্বানে সারা দেয়ার জন্য সে আজ মন ভরে সাজবে।
মাহতাব’কে শুভ্র পাঞ্জাবিতে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। মনে কিছুটা সংশয় নিয়েই সে দাঁড়িয়ে। মধু তাকে সত্যি সত্যি মন থেকে মানতে পারবে কিনা তা নিয়েও সে চিন্তিত। মধুর সাথে তার বয়সের পার্থক্য অনেক। মধু হয়তো এখন তাকে মেনে নিয়েছে। পরবর্তীতে যদি তার মন বদলে যায়? তখন, তখন কি হবে? মাহতাব মধুকে বিশ্বাস করে। কিন্তু মানুষের মনের উপর কারো জোর থাকে না। যদি কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন সে মেনে নিতে পারবে তো! মাহতাব এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চাইল। নার্ভাসনেস থেকে কি সব আবোল তাবোল ভাবছে সে! মানুষ চেনার ক্ষমতা তার হয়েছে। এসব ভাবা মানেই মধুকে ছোট করা। মধু জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে নিশ্চয়ই।
চুরির রিনঝিন শব্দে মাহতাব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। পিছু না ফিরেই ধীর গলায় বলল,

— কাছে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো তো মধু। কুইক।

মধু আবার লজ্জা পেলো। কিন্তু এবার আর ভয় পেল না। এতো সুন্দর করে সাজার পরে নিশ্চয়ই তাকে বিশ্রী লাগছে না। ধীর পায়ে গিয়ে পিছন থেকেই মাহতাব কে জড়িয়ে ধরলো সে। মাহতাব নিরবে হাসলো। চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে তুলে মন্থর গলায় বলল,

— হয়নি।আমি তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে বলেছিলাম মধু। সামনে এসো,আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

মধু সামনে গেলো না। মাহতাবের বুকের কাছের পাঞ্জাবি শক্ত করে মুষ্ঠিবদ্ধ করে তার পিঠে মুখ লুকালো।
মাহতাব এবার শব্দ করে হেসে ফেললো। হেচকা টানে সামনে এনে কপালে সময় নিয়ে চুমু খেলো।

— অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ঠিক আমার বউয়ের মতো।

মধু এবার লজ্জায় সিটিয়ে গেলো। চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে মাহতাবের বুকে মুখ লুকালো।
মধুর শরীরের তীব্র কম্পন মাহতাবকে কিছুটা দিশেহারা করে দিলো। শারীরিক উত্তাপ বেড়ে কপালে ঘামের রেখা দেখা দিল। পৌরুষ মনের আনাচে-কানাচে অনুভুতির আনাগোনা বেড়ে গেলো হাজার গুণ। মধুকে বুকে জড়িয়েই হালকা উঁচু করে রুমে নিয়ে এলো সে। খেই হারিয়ে ফেলা মধু বুঝতেই পারলো না সে মাটি থেকে তিন ইঞ্চি উপরে তার বরের বুকে লেপ্টে আছে। সারা শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই যেন খুব বেড়ে গিয়েছে। গাল থেকে যেন গরম ভাপ বেরুচ্ছে। অনুভূতির দুনিয়া থেকে বাস্তবে ফিরে এলো নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। মাহতাবের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভড়কে ও গেল সে। মানুষ টাকে এমন উন্মাদের মতো লাগছে কেন! এই কেনর উত্তর সে জানে। মাহতাবের রক্তিম চোখে তাকিয়ে থাকতে পারলো না সে। লজ্জায় মুখ ঘুড়িয়ে নিল। মাহতাব এক টানে গায়ের পাঞ্জাবি টা খুলে কিছুটা আটকে আটকে বলল,

— আমি কিন্তু খুব রোমান্টিক। দেখতে চাও?

মধু আগের চেয়েও বেশি কুকড়ে গেল। লোকটা মোটেই সুবিধার নয়। এভাবে কেন বলতে হবে? দেখালে কি সে মানা করবে নাকি!

প্রচন্ড উন্মাদনায় ও মাহতাব মুখ টিপে হাসলো। স্ত্রীর লাজুক ভড়কে যাওয়া মুখ দেখতে তার অসম্ভব ভালো লাগে।মধুর রাতটি কাটলো অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক সুখে। এই গম্ভীর স্বল্পভাষী মানুষটার পাগলাটে ভালোবাসার আদরে সে নিজের কষ্ট টুকু প্রকাশ করতে কুন্ঠা বোধ করলো। মাঝে মাঝে তার কান্নার শব্দে মাহতাবের তাকে আগলে নেয়ার সুখ টুকু সমস্ত যন্ত্রণা এক নিমিষেই ভুলিয়ে দিলো।

সকাল টা সবার কাছে প্রতিদিনকার মতো হলেও মাহতাবের কাছে সম্পুর্ন অন্যরকম একটি সকাল মনে হলো। তার বুকে লেপ্টে এক স্নিগ্ধ মেয়ে ঘুমিয়ে। ঘড়ির কাটা আটটায় গেলেও আজ তার বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। মাথা হালকা ব্যাথা করছে। কম করে হলেও তার চার থেকে পাচ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। মধু ঘুমিয়েছে ফজরের পরে। চাইলে সেও ঘুমাতে পারতো। কিন্তু তার ঘুমন্ত মধুকে দেখতেই বেশি ভালো লাগছে। মনের মধ্যে হাজার জল্পনা কল্পনা আসলেও সে পাত্তা দিচ্ছে না।
রহিমা এসে ডেকে গেছে ব্রেকফাস্টের জন্য। এখন না উঠলে ময়না বেগমে এসে হানা দিবে। মাহতাব সেই রিস্ক নিতে চাইল না। না চাইতেও মধুকে ছেড়ে উঠতে হলো তার। মধুর এতো সুন্দর ঘুমটা সে নষ্ট করতে চাইছে না।

লামিয়ার সামনে একগাদা খাবার সাজিয়ে বসে আছে ময়না বেগম৷ তার হিসেব মতো লামিয়ার এখন একমাত্র কাজ সারাদিন খাওয়ার উপরে থাকা আর রাতভর এটা সেটা খাওয়ার বায়না করে তার ভাইকে জাগিয়ে রাখা। একটি রোমান্টিক প্রেগ্ন্যাসি আওয়ার কাটাতে হলে এসব করা বাধ্যতামূলক। লামিয়ার মুখটা শুকিয়ে গেছে। এতো খাবার সে সারাদিনে খেয়ে শেষ করতে পারবে কিনা সন্দেহ। মেহরাব নিজেও কিছুটা অসহায় বোধ করলো। সকাল সকাল কিছু বলে বোন কে রাগিয়ে দেয়ার কোন ইচ্ছেই নেই তার। বউ কে দেখেও মায়া হচ্ছে। একটাই তো মাত্র বউ তার।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here