আমার_একটাই_যে_তুই❤️পর্ব_১৫

0
3074

আমার_একটাই_যে_তুই❤️পর্ব_১৫
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই বিস্মিত হলাম! এতো দেখছি….লিয়া সাতচুন্নি।এরে দেখেই রাগে গা রি রি করতে লাগলো আমার। সাথে সাথে উল্টো পথে হাটা ধরলাম আমি! এখনে আর এক মুহূর্তে না! মোটেও না!তখনি দৌড়ে এসে তিথি আমাকে থামাতে থামতে বলে,,

–” ওই কই যাস তুই!”

আমি এক পলক তাদের দিক তাকিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। তারপর ছোট শ্বাস ফেলে তিথিকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

–” আমি থাকমু না এইনে! আর এক মুহূর্ত!যামু গা। ”

–” কেন তুই কেন থাকবি না এখানে! থাকবি ১০০ বার থাকবি! যার যাওয়ার সে যাবে! তুই কেন ফালতু মানুষের জন্য নিজেদের মজা কিরকিরা করবি! ডাফার!”

–” আমি…”

আমি কিছু বলার আগেই ইউসুফের ঝাঁজালো কণ্ঠ শুনা গেল। সবার দৃষ্টি এখন সেদিকেই!ইউসুফ এক ঝাটকা মেরে লিয়াকে দূরে সরিয়ে দেয়। লিয়া টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয়। তখনি লিয়ার বোন রিয়া ওকে আগলে নেয়। তখন ইউসুফ ভাই তেজের সাথে বলল,,

–” ডোন্ট টাচ মি! হাউ ডেয়ার ইউ? আমি লাইফে বহুত মাইয়ার সাথে ডেট করছি! তুমার মতো বেহায়া আর ছেচরা মাইয়া আমার লাইয়া আর একটাও দেখি না!

তখন লিয়া কাঁদ কাঁদ মুখ করে হাতটা উঁচু করে ইউসুফের গালে হাত রাতে যাবে তখন ইউসুফ আবার বলতে লাগে,,

–” বললাম না! ছুঁবে না আমায়! ডোন্ট!কথা কানে যায় না! আর এখানে কেন এসেছো? তোমাকে না বলেছি, আমার সামনে আর না আসতে? তাহলে কেন? কেন আসচ্ছো? হোয়াই?”

তখন লিয়া ন্যাকা কান্না করে বলল,,

–” আমি শুধু তোমার জন্য আসচ্ছি! খালামনিকে কল দিছিলাম! তখন বললো তুমি এনে বেড়াতে আসছো! তাই ছুটে আসলাম তোমার জন্য! তোর সাথে একা টাইম স্পেন্ড করার জন্য! আর তুমি আমাকে বকা দিচ্ছো!”

ইউসুফ ভাইয়া তখন রাগে নিজের চুল টেনে বলল,,

–” দেখ লিয়া! আমাদের মাঝে কিছু নেই! উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড। নাথিং এলস! আমি তোমাকে লাইক করি না লিয়া।তোমার সাথে টাইম স্পেন্ট করব তো দূরের কথা। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। ”

লিয়া এবার হেচকি তুলে কেঁদে দিলো। আর কান্নায় উপস্থিত সবাই একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করছে। ওকে এখানে দেকে কেউ মোটেও খুশি হয় নি। সবার ফেইস দেখেই বুঝা যাচ্ছে। লিয়া এবার কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো। আশে পাশের সবাই বার বার তাকাচ্ছে এদিকে। কেমন ওড ফিল হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে বান্দর খেলা হচ্ছে কোনো! লিয়া এবার মাটিতে বসে পড়ে কান্না করতে করতে আর বার বার বলতে লাগে,,

–” অঅআমাকে তাড়াই দিচ্ছো তততুমি! এতো কককষ্ট করে এখানে অঅাসচ্ছি। আর তুমি!

লিয়ার এহেন কাজে ভিড় জমা হতে লাগলো।পরিবেশ অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে মুহূর্তে। ইউসুফ ভাই তখন পরিবেশ স্বাভাবিক করতে লিয়াকে টেনে তুলে বলে,,

–” ওকে! ফাইন থাকো তুমি! যা ইচ্ছে করো! বাট আমার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবা। ”

লিয়া চোখের জল মুছে খুশিতে গদ গদ হয়ে বলল,,

–” আচ্ছা! তুমি কত ভাল ইসু!”

ইউসুফ ভাই তখন বিরক্তি চোখে তাকালো লিয়ার দিক! তারপর বিড়বিড় করে সামনে হাটা ধরলো।তখন পিছন থেকে লিয়ার বোন রিয়া বলল,,

–“আপি তোমার কি একটু কো লজ্জা নাই! কেমন সেইললেস তুমি! আমাকে কেউ এভাবে অপমান করলে কলাগাছের সাথে ফাঁশি লেগে মরে যেতাম! তোমার জন্য আমার নিজেকেই ছোট লাগছে এখানে!”

লিয়া তখন ঠোঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল,,

–” ইউসুফের জন্য আমি সব করতে পাড়ি! সব বলতে সব! নিজে মরতেও পাড়ি কাউকে মারতেও পাড়ি!”

কথা গুলো লিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে!আমি তো ওর দু রকম চেহারায় ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। একটা মেয়ে এতটক বেহায়াপনা কেমনে করতে পারে! আল্লাহ্! এদের মতো মেয়েদের হেদায়াত দিক।

ইউসুফ ভাই কিছু দূর হেটে গিয়ে পিছনে ফিরলেন! আমি এখনো সেখানে দাড়িয়ে! তিনি আমার দিক তাকালেন! আমি সাথে সাথে মুখ ভেংচিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।মাঝে একবার আড় চোখে তাকাতেই তিনি বাঁকা হাসলেন।তারপর আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।অামি এখনো অন্য দিকে তাকিয়ে! তখনি তিনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,,

–” পোড়া পোড়া গন্ধ করছে! মনে হচ্ছে কেউ জ্বলছে?”

আমি তার দিক কটমট করে তাকালাম। তিনি হাসচ্ছেন! তার এই হাসিতে হাজার বার মরতে রাজি আমি! নিজেকে সামলে দাঁত কেলিয়ে বললাম,,

–” হে জ্বলছে তো! ওই যে আপনার পিছনের বান্দরনী! ”

ইউসুফ ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালেন। আমি তাকালাম। লিয়া তাকিয়ে আমাদের দিক তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। এই বুঝি গিলা ফেলবে টুপ করে আমায় পানি ছাড়া। ইউসুফ ভাইয়া তা দেখে আমার দিক তাকিয়ে হেসে দিলেন। সেই হাসি বহাল রেখে গান ধরলেন। আর সবাইকে ইশরা করলেন সামনে এগুতে।

–“পরাণ যায় জ্বলিয়া রে
পরাণ যায় জ্বলিয়া রে ”

________________________

সবাই হোটেলে এসে যে যার যার রুমে চলে গেল। দুপুর ১২ টা ছুঁই ছুঁই। তাই ঠিক হলো আজ কোথাও ঘুড়তে বের হবে না। যেহেতু লং জার্নি করে এসেছো তাই ঘুমুবে সবাই ঘুম। এখানে সব সোলারে চলে। যার জন্য একটু কষ্ট করতে হচ্ছে! তিথি আর আমি এক রুমে। ও এখন ফ্রেস হচ্ছে। তাই বারান্দায় চলে আসলাম। রুমের বারান্দা থেকে বাহিরের দৃশ্যটি খুব সুন্দর লাগচ্ছে। পাহারের এতো উঁচুতে থাকাতে নিজের সব দিক ছোট ছোট লাগচ্ছে। এ সুন্দর সৌন্দর্য দেখে চোখে জল চিকচিক করতে লাগলো আমার। এখানে এসে সব থেকে বেশী ইন্টারেস্টিং লাগেছে যে বিষয় টা তা হচ্ছে! এখানে যতো হোটেল আছে সব গুলোর নাম মেঘের নামের সাথে রাখা। তাদের ভাষ্যমতে এটা মেঘের রাজ্য তাই, হোটেল গুলো মেঘের নামের সাথে রাখা হয়েছে মিলিয়ে।খুব ইচ্ছে করছিল আশপাশটা ঘুরে দেখতে। বাট চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু আমি। তাই তিথি বের হতেই ফ্রেস হয়ে এসে ধুম করে বেডে শুয়ে পড়লাম।

যখন চোখ খুললাম তখন বাহিরে গোধূলি লগন। জালানে জানালার পর্দাগুলো উঠছে বাহির থেকে আসা মৃদু বাতাসে! চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসতেই পাশে তিথিকে পেলাম না। সাথে সাথে হাত মুখ ধুয়ে ওরনাটা নিয়ে বের হয়ে আসতেই দেখি বাহিরে সবাই চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দিচ্ছে! তাদের থেকে কিছুটা দূরে জায়েদ আর তিথি হেসে হেসে কথা বলছে আর হাটচ্ছে।আমি ভাল করে চোখে বুলাতেই পিছন থেকে কেউ “ভু” করে ভয়ে পেয়ে যাই। নাথে সাথে বুকে থুতু দিতে দিতে পিছনে ফিরে দেখি ইউসুফ ভাই দাঁত কেলিয়ে আছে! আমি তার দিক ভ্রু কুঁচকাতেই তিনি আমার দু পাশের বর্ডারে হাত রাখলেন। যার ফলে কিছুটা পিছনে ঝুঁকে আসলাম আমি।তার নিশ্বাস পড়চ্ছে ঠিক আমার মুখের উপর। যাতে বিমোহিত হচ্ছি আমি। তিনি তখন হেনে হেসে বললেন,,

–” আমাকে খুঁজচ্ছিস তাই না!”

তার এভাবে কাছে আসাতে দম আটকে আসচ্ছে আমার। মনের মাঝে আলাদা শিহরন। শরীর যেন কাপচ্ছে আমার। তাই কম্পনজনিত কন্ঠে বলে উঠি আমি,,

–” কককই নননা তো! অঅঅআর দূরে দাঁড়ান! মারবার প্লেন নাকি! উফ্ দূরে দাঁড়ান প্লীজ।

উনি হাসলেন। আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। কিন্তু তার হাসি ঠোঁটের কোনে থামচ্ছেই না আজ। আমি তার দিকে ভ্রু উঁচু করে জিগ্যেস করলাম,,

–” হঠাৎ এত খুশি কেন? কাহিনী কি? হুম!”

ইউসুফ মুচকি হেসে বলল,,

–” কাছের মানুষ গুলো যখন খুব খাছে থাকে! তখন কি খুশি না হয়ে পাড়া যায়..!”

তার কাছের মানুষটা আবার কে? লিয়া? লিয়া আসার পর থেকেই তো হাসচ্ছেন তিনি! কষ্ট কষ্ট অনুভব হচ্ছে আমার। তলে তলে টম্পু চালছে! বাহ্ কি সুন্দর? আবার আমার সাথে ভাব দেখায়। লাগবে না তোর এই আদিখ্যেতা দেখা।তাই আমি গাল ফুলিয়ে চলে আসতে নিতেই উনি হাত ধরে বলে উঠেন,,

–” ওই দিকে কই যাস? তোর ওখানে কোনো কাজ নেই! আমার সাথে চল।”

আমি তার কথায় কিছু বললাম না। না নিজ যায় গা থেকে নড়লাম চুল পরিমাণ! যাবো না তার সাথে আমি? কখনো না! কি হই আমি তার যে যাবো? বা তার কথা শুনবো না! মোটেও না। একদম না। আমি পণ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু ওই যে বলে না খাটাশ,ঘাড়তেড়া মানুষ! আমাকে টেনে হিছড়ে নিয়ে যেতে লাগলো। লাষ্ট পর্যন্ত না পেরে কোলে তুলে নিলো। নিচ থেকে সকলেই হাত তালি, শিশ বাজাতে লাগলো!আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম আমি। কিন্তু লিয়া শাঁকচুন্নি অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলো!আমি তো লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে ফেললাম সাথে সাথে। লোকটা আমাকে লজ্জা ফেলার চুল পরিমাণ সুযোগ ছাড়ে না।

কিছু দূর এসে তিনি নামিয়ে দিলেন আমায়। আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি। তখন তিনি আমার মাথায় টোকে দিয়ে বললেন তাকাতে। আমি তখন ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকাতেই। তিনি হেসে দু কাঁধ ধরে পিছনে ঘুড়াতেই আমি শক্ড।
তিনি আমাকে সাজেকের বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দাঁড় করিয়েছেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প ।তারপর তার হাতের মাঝে আমার হাত পুরে নিয়ে হাটা ধরলেন সামনে এখানে হেলিপ্যাড আছে । সেখানেই নিয়ে আসলেন আমায়। এখানে দাড়িয়ে আমি বিস্মিত, অবাক। কি সুন্দর মেঘ গুলো পাহরে জমা হচ্ছে। একে একে সব পাহাড় ঢেকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল মেঘের সাগর। তখন ইউসুফ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ডান পাশে তাকাতে বললেন। সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে।চারিদিকে লাল আভা ফুঁটে উঠেছে। ধীরে ধীরে পাহাড়ের পিছনে লুকিয়ে সন্ধ্যা নামিয়ে আনলো মুহূর্তেই। এমন এক দৃশ্য আমি দেখতে পাড়বে কখনো ভাবিনি। এসব দেখে আমি এতটা উত্তেজিত হয়েছি যে ইউসুফ ভাইকে জড়িয়ে ধরে ফেলছি আমি। তিনিও তার বাহুডোরে আকঁড়ে ধরলেন আদরের সহিত। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর যখন বুঝতে পাড়ি আমি কি করে ফেলেছি! সাথে সাথে ছিটকে সরে আসি। আর দুহাতে ওড়নার কোনা ঘুড়াতে ঘুড়াতে অপরাধীর সুরে বলি,,

–” সরি!”

কিন্তু উনি কিছু বলেন না। তাই আড় চোখে তাকাতেই দেখলাম তিনি হাসচ্ছেন। তার এই হাসিতে আটকে গেলো আমার চোখ। আমার মন। বেহায়ার মতোন চেয়ে রইলাম আমি।

চলবে,

{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন! আপনার কি বোরিং হচ্ছেন ??? জানাবেন প্লীজ!}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here