আমার_একটাই_যে_তুই❤️
সিজন-২ ২৬
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার বাহির থেকে আসা স্টেডিয়াম লাইটের আলো যেন এই বিদঘুটে অন্ধকার দূর করার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।দূর কোথা থেকে ভেসে আসচ্ছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। আর নাম না জানা কত পশু-পাখির ডাক। কুহু ভয়ে ঘেমে-নেয়ে একাকার।গলা শুকিয়ে আসচ্ছে বার বার। শুকনো ঢুক গিলে অন্ধকার রুমটির দরজা হাতিয়ে হাতিয়ে এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছে। প্রতি বার ব্যর্থ হয়ে হু হু করে কেঁদে উঠছে। বড় শ্বাস টেনে আবার হাতরাতে লাগলো দেয়াল। এক কোনায় গিয়ে কাঙ্খিত দরজাটা পেয়ে যেন দম ফিরে পেলো। এক নাগাড়ে করাঘাত করে বলে যাচ্ছে,,
—-” কেউ আছেন? প্লীজ দরজা খুলেন? আমাকে যেতে দিন! কেন আটকে রেখেছেন আমায়! প্লীজ ওপেন দ্যা ডোর!”
কুহুর কাঁদতে লাগলো। পাশ থেকে কেউ খেঁকিয়ে উঠলো যেন,,
—” একদম দরজা ধাক্কা দিবি না। জানে মেরে ফেলবো!”
কুহু ঘাবড়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে বিনীত সুরে বলল,,
—” ভাই প্লীজ আমাকে যেতে দিন? কেন আটকে রেখেছেন আমায়!”
ওপাশ থেকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
—” এই মাদারীরে খোলা কেন রাখছিস?”
কুহু দরজার ওপাশ থেকে শুনতে ফেলো। ভয়ে আধমরা হয়ে যাচ্ছে। একে এই অন্ধকার আর তার উপর বাহিরের বদমেজাজি লোকটি ভয়ে কাবু করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। কুহু তাও আবার ডাকলো। ঠিক তখনি তীব্র আলোর ঝলকানী দিয়ে খুলে গেলো দরজা। আলোর তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে কুহু চোখ বুঝে নেয়।কিন্তুর মাঝে ভেসে আসে সেই বদমেজাজি লোকের কন্ঠ। লোকটি হাঁক ছেঁড়ে কাউকে ডেকে বলল,,
—” বাবলু দড়ি নিয়ে আয়! মালটাকে বেঁধে দেই। মাথা খেয়ে ফেলছে শালি!”
লোকের কথা কানে যেতেই। কুহুর বুক কেঁঁপে উঠে। চট জলদি চোখ মুখে মাঝ বয়সি এক শক্ত পোক্ত লোককে সামনে দেখতে পেয়ে হাত জোড়ে করে বলে,,
—-” আমায় যেতে দিন! ”
কিন্তু কাজ হয় না লোকটি কথা গুলো শুনলোই না। তাকিয়ে রইলো অন্য দিক। এ সুযোগ দৌড় দিয়ে বের হতে নিলো। হেঁচকা টানে সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে গিয়েও পড়লো না। লোকটি টেনে এক সামনে এনে চড়-থাপড় মারতে মারতে রুমে নিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে মারলো। কুহু ব্যথায় “আহ” করে কুকিয়ে উঠলো। চিল্লাতে চিল্লাতে বলল,,
—-” কেন এমন করছেন?? আমায় যেতে দিন! কি ক্ষতি করেছি আপনাদের?”
লোকটি বিরক্ত নিয়ে চেয়ে রইলো। বাজখাই গলায় ধমকে বলল,,
—” মাইয়া মানুষের এত গলা কেন? গলার স্বর কমা চিঁড়া লামু নাইলে?”
কুহু ফুপিয়ে উঠলো। মনে মনে আল্লাহকে আর ইউসুফকে স্বরণ করতে লাগলো। এক মাঝে একটি বেটে ছেলে হাতে এক গাধা দড়ি নিয়ে ঢুকলো। লোকটির দিক বাড়িয়ে আফসোসের সুরে বলল,,
—-” ওস্তাদ! পরী লাখান মেয়ে বাইন্ধা থুইবেন? আল্লাহ নারাজ হবে না!”
লোকটি চোখ গরম করে তাকালো বেটে ছেলেটির দিক। বলল,,
—-” এত দরদ দেখাইতে হবে না। কাজে ফাকি টাকি দিলেও কিন্তু আল্লাহ পাপ দিবে! বড্ড পাপ!”
কুহুর কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। এ লোকেরা অন্য করছে আর বলছে কাজ ফাকি টাকি দিলে আল্লাহ পাপ দিবে? লাইক সিরিয়াসলি? কুহু এবার একটু সাহস যুগালো। ভয়ে ভয়ে বলল,,
—” আমাকে এভাবে আটকে রেখে বুঝি পাপ করছেন না?”
লোকটি আর ছেলেটি কুহুর দিক তাকালো। বেটে ছেলেটির কঁপালে চিন্তার ছাপ পড়লো। গলার আওয়াজ খাদে নামিয়ে বলল,,
—-” ওস্তাদ! পরীর লাগান মাইয়া কথা কিন্তু ঠিক কইতাছে! চলেন ছাইড়া দেই!”
ওস্তাদ অতি দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলল,,
—-” আল্লাহ কোন কু সময় এ পাগল মাতারিরে আমার চেলা বানাইলা?”
তারপর লোকটি বেটে ছেলের মাথায় চাটি মেরে বলল,,
—-” ওই এরে ছাইড়া দিলে বস আমাগো কাম কাইড়া নিবো পরে খাবি কি? আর তার উপর দুনিয়া ছাড়ুন লাগবো আলগা ফ্রী।”
কুহু এদের কথা যেন আরো একটু সাহস পেলো। যতটুকু খারাপ ভেবে ছিলো হয়তো তারা তত খারাপ না। কুহু মুখ খুললো,,
—-” আমায় ছেড়ে দেন! আমি আপনাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিবো!”
লোকটি এক ধমক দিলো কুহুকে। অন্তর আত্মা যেন ভেগে যাবে৷ বেটে ছেলেটির হাত থেকে দড়ি নিয়ে হাত পা বেঁধে দিলো। মুখের মাঝে টেপ মেরে দিয়ে যেতে যেতে বলল,,
—-” আমরা বড্ড খারাপ লোক হইতে পাড়ি। কিন্তু কামের সাথে নো চিটিংবাজি!”
লোক দুটি ঘর ছাড়লো। কুহুর জল উপচেছে পড়তে লাগলো। অন্ধকার রুমটিতে শুধু কুহুর মৃদু কান্নার আওয়াজ প্রসারিত হতে লাগলো। কুহুর মনে পড়লো কিছু ঘন্টা আগের কথা।
ভার্সিটিতে ক্লাসের মাঝেই কুহু ওয়াশরুমের দিক আসে। তখন মোটামুটি ক্লাস চলছে প্রতিটি ক্লাসে। কুহু যখন ওয়াশরুম থেকে ফিরে যাচ্ছিলো! তখনি পিছন থেকে কেউ মুখ চেপে ধরে কুহুর। তারপর আর কিছু মনে নেই কুহুর।
————————-
আজ সাতদিন পর নিজ দেশে পা রেখে প্রাণ ভড়ে শ্বাস টানলো ইউসুফ। আরো কয়েকদিন থাকার কথা ছিলো ইউসুফের কিন্তু বিগত তিনদিন যাবত কুহুর ফোনের বন্ধ। বাসার কাউকে ফোন দিলে তারা কিছুই জানাচ্ছে না কুহুকে। ইউসুফ কুহুকে আবার ফোন করলো। বন্ধ। ইউসুফ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো কবিরকে বলে উঠলো,,
—-” বাসায় চলো!”
কবির তাই করলো। ঘন্টা খানিক পর বাসায় পৌঁছে সোজা কুহুকে ডাকলো। কোনো রা শব্দ না পেয়ে চেচিয়ে উঠলো। ইউসুফের মা তখন থমথমে কন্ঠে বলল,,
—-“তিন যাবত কুহুকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খুঁজে না পেয়ে থানায় জিডি করেছি!”
ইউসুফ চটে গেলো। চোখ-মুখ রক্তিম ধারণ করেছে তার। খুব শীতল কন্ঠে বলল,,
—-” আমাকে আগে কেনো বলো নি?”
ইউসুফের মা চুপ করে গেলো। পিছন থেকে মহসিন বলে উঠলো,,
—-” আমি না করেছি! যে হারে কুহু কুহু বলে পাগল হয়ে যাচ্ছো তুমি! মনে হচ্ছে বউ তোমার একাই আছে? আর কারো নেই? দুনিয়ায় ভেসে যাক বউ আগে? এভাবে তুমি রাজনীতিতে টিকে থাকবে বেশি দিন মনে হচ্ছে না?”
ইউসুফ সামনের সোফায় এবার লাথি মারলো। শান্ত কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
—-” রাজনীতি আমি এ মুহূর্তেই ছেড়ে দিচ্ছি ভেস্তে যাক সব। আই ডোন্ট কেয়ার। আই নিড কুহু।আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনিথিং এলস! ”
ইউসুফ বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। তার বাবুইপাখি কই আছে? সে কই খুঁজেবে? বুকটা খা খা করছে কেন? উত্তপ্ত রোদে চৌচির মাঠ যেন।ইউসুফ কি তার বাবুইপাখি টারে হারিয়ে ফেললো? কি করবে এখন ইউসুফ??
————-
চোখে মুখে পানি ঝাপটা পড়তেই কুহু চোখ মেলে তাকায়। সামনের ব্যক্তিটি দেখে বুক কেঁপে উঠে তার। ভয়ে চোখ-মুখ শুকিয়া যাচ্ছে। শরীরে কাঁপন ধরাচ্ছে। কম্পিত কন্ঠে বলল,,
—-“তুমি”
চলবে,
বিঃদ্রঃ রহস্য সব শেষ করে দিবো নেক্সট পর্বে। আর গল্পটাও আর টেনেটুনে লম্বা করবো না। রোজার দিন সব কাজ করে গল্প লিখা খুব কষ্টের।
#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#শেষ পর্ব
ইউসুফ মাথায় হাত চেপে বসে আছে। কুহুর খবর কোথাও পাচ্ছেই না। ইউসুফ চুল টেন ধরলো নিজের। ঠিক সেই মুহূর্তে ফোনের মেসেজ টিউন বেঁজে উঠলো। কুহু না চাইতে-ও ফোনটি হাতে নিলো। স্ত্রল করতেই মেসেজটি ভেসে উঠলো,,
—” আখিকে ছেড়ে দা-ও। কুহুকে পেয়ে যাবে।”
ইউসুফের ভ্রুকুটি কিঞ্চিৎ কুচকে ফেললো। মাথার উপর ফ্যানটির তেজ না থাকায় ঘামতে লাগলো। চট জলদি নাম্বারটিতে কল লাগলো। কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। উল্টো মেসেজ চলে এলো,,
—” এক ঘন্টা সময় দিচ্ছি তোমাকে। হয় আখিকে ছাড়ো! নয়তো কুহুর জীবনের মায়া ছাড়ো!”
ইউসুফ যে স্তম্ভিত হলো। কিছুক্ষণ সেভাবেই বসে পুলিশ কমিশনারকে কল করলো। এবং নাম্বারটি সেন্ড করে পাঠিয়ে দিলো খোঁজ করার জন্য। কিন্তু কমিশনার জানালো সঠিক লোকেশন ধরতে পাড়চ্ছেনা তারা। ইউসুফের মাথায় আগুন ধরে গেলো। সামনেে চেয়ারে লাথি মেরে রুম থেকে বর হয়ে অন্য রুমে ঢুকলো। অন্ধকার রুমটিতে আলো জালাতেই ভেসে উঠলো আখির ক্লান্ত শ্রান্ত মুখ খানি। ইউসুফকে দেখে ম্লান হাসলো। বলল,,
—-” তোমাকে কেমন উদ্ভট লাগচ্ছে ইউসুফ! কাছের জিনিস হারিয়ে গেছে বুঝি?”
ইউসুফ আখি দিকে ঝুঁকে বলল,,
—-” যে জঘন্যতম খেলায় নেমেছো না তোমরা? তা কখনো সফল হবে না!”
আখির পেট ফুলেছে। সে পেটে স্পর্শ করে বলল,,
—-” বাবু দেখ তোর বাবা পরনারীতে কত মগ্ন তোকেও ভুলে গেছে আমার আমাকেও! ”
ইউসুফ এমনিতেই রেগে ছিল। আখির প্রলপ শুনে ঠাটিয়ে চড় বসালো। আখি হতভম্ব। ইউসুফ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,
—-“নষ্ট মেয়েরা নষ্টই হয়। একটা নিষ্পাপ শিশু যে এখনো চোখ ফুঁটে পৃথিবীর আলোই দেখেনি তাকে নিয়েও ছলচাতুরী? কেমন মা তুমি ছিঃ?”
আখি ফুপিয়ে উঠলো। পেটে হাত বুলিয়ে বলল,,
—” এছাড়া আমার আর কোনো রাস্তা নেই!”
ইউসুফ আবার হলো। নরম কন্ঠে বলল,,
—-” আমাকে সব সত্যি বলে দাও আখি! আমি তোমায় ছেড়ে দিবো!”
আখি ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,,
—-” তুমি আমায় মুক্তি দিলেও তারা দিবে না। হয়তো এখন থেকে ছাড়া পেয়েই মৃতুর দোরগোড়ায় পৌছাবো!”
ইউসুফের মায়া হলো। বলল,,
—” আমাকে বিশ্বাস করো! আমি তোমাকে আর তোমার বাচ্চাকে আল্লাহ রহমতে কিছু হতে দিবো না!”
আখি মলিন মুখটি তুলে বলল,,
—-” আমার কাছে বেশি সময় নেই ইউসুফ। আমি বলবো আজ সব বলবো!”
ইউসুফ আখির মুখেমুখি বসলো। আখি বলতে শুরু করলো প্রথম থেকেই।
———-
—-” হে আখি আমরা মোহরা। এক মাত্র তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য এত খেল খেলেছি কুহু!”
আশিক পিছনে থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো। কুহু কম্পিত কন্ঠে বলল,,
—-” তুমি একটা ধোঁকাবাজ ছিলা জানতাম এতটা নিজ আজ দেখলাম!”
আশিক হাসলো কুহুর কাছ ঘেষে বসলো। ডান হাত আলতো করে স্লাইড করলো কুহু। কুহু ঘৃণা মুখ ফিরিয়ে নিলো। আশিক এবার দু হাতে কুহুর মুখ ধরলো। কুহু ছটফট করতে লাগলো। হাত-পা বাঁধা বলে কিছু করতে পারছেনা। কুহু এ মুহূর্তে ছুটে পালাতে ইচ্ছে করছে! আশিক তা বিঝতে পেরে যেন মজা পাচ্ছে।কুহু এবার কান্না করে দিলো বলল,,
—-” আমার জীবনটা নিয়ে কেনো খেলছো?”
আশিক হেসে দিলো। ঘর কাঁপানো হাসি৷ বলল,,
—-” খেলাটা তো তোমার বর শুরু করেছিলো! আমার লাইফে যখন থেকে এসেছো!”
—” মানে?”
—-” মানে সিম্পল! আমার আর ইউসুফের কাছে শুধু তুমি একটি ট্রফি ছিলে। ”
কুহুর চমকে তাকালো। আশিক আবার বলল,,
—-” ইউসুফ আর আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম৷ তুমি যদিন ভার্সিটিতে পা রাখো। সেতিন তোমায় দেখেই আমি প্রেমে পড়ে যাই। ইউসুফকে জানালাম একদিন সে রেগে নাক বারাবর ঘুশি মেরে দিলো। পুরো হলের সামনে চেচিয়ে বলল, তোমার দিকে নজর না দেই! তুমি এক মাত্র তার!পুরো ভার্সিটিতে সেদিন আমার ইমেজ ধসে পড়লো। ইউসুফের সাথে এক হাত দু হাত হলো। লাষ্ট ডিসিশন নিলাম আমরা যে কুহুর মন জয় করবে আগে সে তার! ইউসুফ-ও সম্মতি দিলো। কিন্তু ইউসুফ ধোকা দিলো। তোমার সাথে রিলেশন থাকাকালীন তোমার বাসায় বিয়ে প্রস্তাব পাঠালো। তোমার বাবা-মা তাই চাইতেন। হলো-ও তাই। সেদিন যখন পালিয়ে এসেছিলে! আমি সেখানে যেতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু ইউসুফের লোকেরা আমায় যেতে দেয়নি। নয়তো আজ আমার ঘরের ধরনী হতে তুমি!”
এক টানে কথা গুলো বলে দম নিলো আশিক। কুহুর দিক তাকাতেই বুকে ধক করে উঠলো তার। যে কুহুর চোখ জোড়ায় কিছুক্ষণ আগে ভয় দেখে ছিলো? সে চোখে এখন ঘৃণা।কিন্তু ঠোঁটে হাসি!
—-” উনি যা করছেন ভালোই করছেন। উনি বুঝতে পেরেছেন যে আপনি একটি হায়েনা তাই আপনার হাত থেকে রক্ষা করতেই উনি এসব করেছেন!”
কুহুর কথায় রাগ উঠে গেলো আশিকের। কানের মাঝে বার বার হায়েনা নাম টি বাজতে লাগলো। রাগ সামলাতে না পেরে চেপে ধরলো কুহুর মুখ। হিসহিসিয়ে বলল,,
—-” আমি হায়েনা নই। যদি হতাম তাহলে তুমি আমার বিছানায় থাকতে!”
কুহু তাচ্ছিল্যের হাসি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,
—-” অন্যের বউকে আটকে রেখে বিয়ে করতে চাইছেন! আবার নিজেকে মহান মনে করছেন? ছিঃ।
আশিক বাঁকা হাসলো। কুহুর দিক ঝুকে বলল,,
—-” বিয়ে তো আমি করবোই এখনি করবো। একদিকে ডিভোর্স পেপারে তোমার টিপসই বাসাবো আর একদিকে কাবিননামায়!”
কুহুর এবার হাত-পা কাপ্তে লাগলো। বলল,,
—-” আমি মরতে পছন্দ করবো এর থেকে!”
আশিক হো হো করে হেসে দিলো৷ বললো,,
—-” সেই অপশন ডিলিট করে দিয়েছি!”
কুহু এবার চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আশিক হাসতে হাসতেই বের হয়ে গেলো।
—————
কুহু কাজির সামনে বসে আছে। যেন কোনো পুতুল। আশিক তার পাশে বসে কাজিকে বলল,,
—-“বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। ”
কাজি শুরু করলো। আশিক কুহুর হাতের ভাজে হাত ভাজ করে রেখেছে। কবুল বলার সময় হতেই আশিক কুহুর কানে ফিসফিস করে বলল,,
—-“তোমার আব্বুর মাথায় এখন লাল বাতির সিগনাল দেয়া কুহু। বেচার কত খাটচ্ছে দোকানে বসে!”
কুহু কেঁপে উঠলো। ভয়ে ভয়ে আশিকের দিক তাকালো। টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। ইউসুফ কথা মনে করলো। ইউসুফ কি তাকে মাফ করবে কখনো??
কুহু কবুল বলতে উদ্দিত হতেই আশিকের ফোনে রিংটোন বাজে। ফোন কানে তুলতেই এক চিৎকার দিয়ে বলল,,
—-” আমার বাবাকে কিছু করবে না ইউসুফ। আমি কুহুকে ছেড়ে দিচ্ছি!”
ওপাশ থেকে ইউসুফ হেসে বলল,,
—-” যাষ্ট ওয়ান মিনিট।”
আশিক কুকুরের মতো দৌড়ে বেড়িয়ে এলো কুহু হাতটি ধরে। বাসার সামনে এসে আশিক তার বাবা হুইলচেয়ার বসে থাকতে দেখে দৌড়ে কাছে গেলো। ইউসুফ ততক্ষণে কুহুর কাছে চলে এসেছে। আশিকের বাবা আশিককে দেখে ঘৃণা চোখে তাকালো। শক্ত গলায় বলল,,
—-“রাজনীতি পর্যন্ত ঠিক ছিলো আশিক। কারো গৃহবধূকে নিয়ে টানা হেছড়া করা উচিত হয়নি তোমার। যেখানে তোমার নিজ সন্তান আর বউ ছিলো। ভাবতেও অবাক হচ্ছি এত নিচে কিভাবে নামলে তুমি? নিজে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে-ও ছাড়লে না!”
আশিক মাথা নত করে সব শুনছিলো। পাশে আখিকে দেখে তার কেমন জানি লাগলো ১ মাস পর দেখছে আখিকে। মেয়েটি গুলুমুলু হয়েছে। পেট ভালো ফুলেছে। আশিকের বাবা আবার বললেন,,
—-“নিজ সন্তানের কথাও ভাবলে না কেমন বাবা তুমি? হয়তো দোষটা আমার। আমি ব্যর্থ তোমায় মানুষ করতে পারলাম না!”
আশিকের বাবা আখিকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। আশিক সেখানেই ধপ করে বসে পড়লো। কবে এতটা জঘন্য হয়ে গেছে! বুঝতেই পারেনি। ইউসুফের সাথে হিংসা করতে করতে নিজ সত্তা থেকেই ছিটকে গেছে আশিক।এ জন্যই হয়তো বলে,,”হিংসা মানুষকে পশু বানিয়ে দেয়। ধংস করে দেয়।”
ইউসুফ কুহুর কাছে আসতেই হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো কুহু। ইউসুফ কুহুকে আকড়ে ধরে নিজেও জল ছেড়ে দিলো চোখের জল। কুহু মুখটি তো চুমু খেলো বার বার ইউসুফ। এ যে হারিয়ে যাওয়া ধন তার। কুহু বলল,,
—-” আর একটু দেড়ি করলে আমার লাশ বের হতো!”
ইউসুফ কুহুকে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে শক্ত করে বলল,,
—-” এসব বলো না বাবুইপাখি। বলো না। তুমি ছাড়া আমি শূন্য। এখানে আর আমরা থাকবো না কুহু চলে যাবো এ দেশ ছেড়ে!”
কুহু অবাক হয়ে বলল,,
—-” কি বলছেন? মা-বাবা?”
ইউসুফ হেসে বলল,,
—-” মা যাবে আমাদের সাথে। আর বাবা? সে থাকুক তার সমাজের সাথে! যার কাছে সন্তান থেকে সমাজ বড়? সে মানুষ কখনো বুঝবে না তার সন্তানকে!”
কুহুর কষ্ট হলো। মহসিনের এসবের মাঝে হাত আছে তা চেপে গেলো কুহু। থাক না কিছু কথা মনে ভিতর! বাবার জন্য ছেলের মনে আর ঘৃণা না তৈরি হোক।
যেভাবে চলছে চলুক। ইউসুফ তো শেষ পর্যন্ত তার কাছেই আছে? তার হাতটি ধরেই আছে! ইউসুফের বুকের সাথে মিশেই আছে। তাহলে??
ইউসুফ কুহুকে নিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে গেলো। যেখানে ইউসুফের মা অপেক্ষা করছিলো তাদের। ইউসুফ কুহু যেতেই কুহুর মা বলল,,
—” সময় হয়ে গেছে এবার এগো-ও।”
কুহু অবাক হয়ে বলল,,
—-” খালামনি তুমি যাবে না? ”
ইউসুফের মা মলিন হাসলো। কুহুর হাত ইউসুফের হাত দিয়ে বলল,,
—–” তোরা নতুন জীবন শুরু কর। বুড়ো মানুটিকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি! সে হয়তো এ জনম আমায় ভালো না বাসলো। আমি তো বাসি! চোখের সামনে তো আছে? ”
ইউসুফ আবার হলো। মায়ের কষ্ট কখনো তাকে উপলব্ধি করতে দেয়নি। আর এ মানুষটি নিশ্চুপ অপেক্ষা করে গেছে তার বাবা কবে তার নীড়ে ফিরবে! সত্য ভালোবাসার তুলনা হয় না। কেও পেয়ে হাত ছাড়া করে দেয়। আর কেউ সারা জীবন তরপে যায় একটু ভালবাসার জন্য। এটি হয়তো জীবন।
ইউসুফ কুহু বিদায় নিয়ে চলে গেলো। ইউসুফের মা দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেললো। ইউসুফ কুহু হারিয়ে যেতেই সেও ফিরলেন ফাকা বাড়ি! যেখানে শুধু প্রাণহীন মানুষটির বাস। যাকে আকড়ে সে বাঁচতে চায় মরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।
সমাপ্ত
বিঃদ্রঃ জানি না গল্পটি কার কেমন লেগেছে। হয়তো আপনাদের মন মতো হয়নি। আবার অনেক দেড়ি করে দিয়েছি বলে অনেকেই নারাজ আমার উপর তাদের সবার কাছে হাত জোড় করে সরি বলছি! ক্ষমা করে দিয়েন আমায়। আর এ জুটি টিকে ভালবাসার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিঃদ্রঃ-২) আমার পরিবারের নানান ঝামেলার জন্য গল্পটি নিয়ে আর ভাবতে পারছিলাম না। তাই শেষ করে দিলাম। শেষটা কিন্তু আমি ওদের মিল দিয়েছি। আশা করি রাগ করে থাকবেন না।