আমার_একটাই_যে_তুই❤️ সিজন-২ ০৫

0
2598

আমার_একটাই_যে_তুই❤️
সিজন-২ ০৫
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে আসে ইউসুফ। কুহুকে রুমের মাঝে না দেখে বেলকনিতে উঁকি দিতেই দেখতে পায় কুহুকে। সে বাহিরের দিক মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।হালকা পিছন সাইড দেখা যাচ্ছে। ইউসুফ আর একটু সামনে যেতেই দেখলো কুহুর জামার চেইন পিঠ পর্যন্ত নেমে এসেছে। ভিতরের অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে। ইউসুফের চোখ কঁপালে। বাচ্চা বউটি তার এভাবেই ঘর থেকে হয়েছিলো নাকি? কুহুর দিক পা বাড়ালো। আরেকটু কাছে যেতেই ইউসুফ চোখে পড় পিঠ থেকে কিছুটা উপরে আর ঘাড় থেকে কিছুটা নিচে লাল হয়ে থাকা জম্ম দাগটি। এটি যেন ইউসুফের দুর্বলতা। এ দাগটির যতবার দেখে মুহূর্তেই তার যেন পুরো পৃথিবী উল্টে যায়। ইউসুফ তার অকপটেই কুহুর জামার চেইন লাগিয়ে দিল। জম্মদাগের স্থানটিতে গভীর ভাবে ঠোঁট বসালো।

কুহু তখন ঘোরের মাঝে ছিলো। ফোনের ওপাশ থেকে কখন থেকে বলে যাচ্ছে নাম্বার টি বন্ধ আছে। বুকে তীব্র থেকে তীব্রতর ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। আর তখনি কারো ঠান্ডা ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে উঠে। সারা শরীর লোম যেন দাঁড়িয়ে যায় তার। কুহু আবেশে চোখ বুঝে। ইউসুফ এবার গভীর ভাবে তাকে দুহাতে জড়িয়ে নেয়। ঠোঁটের স্পর্শ এবার যেন আরো গাড়ো হচ্ছে।

কুহুর হুশ ফিরতেই ছিটকে দূরে চলে আসে। ইউসুফ আহত দৃষ্টিতে তাকায় কুহুর দিক। কুহ তখন চেঁচিয়ে উঠে,,

—” আপনার সাহস কত? আপনি আমাকে স্পর্শ করছেন?”

ইউসুফ নিজের কাজে নিজেই বিস্মিত।সে বলল,,
—” রিয়্যাক্ট কেন করছি! আমি তোর হাসবেন্ড। অধিকার আছে তোর উপর আমার। ”

—“কিন্তু সেই অধিকার আমি আপনাকে দেই নি। না কখনো দিব! ”

ইউসুফ চুপ রইলো। ব্যথাতুর সুরে বলল,,

—” সরি!”

রুম থেকে বের হতে নিলো ইউসুফ তখনি তার কিছু একটা মনে পড়তেই সে পিছনে ঘুরে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে গেল তার। কুহুর হাত তার ফোন। ইউসুফ সন্ধিহান দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,,

—” আমার ফোন তোর হাতে কেন?”

কুহু এতক্ষণ বাঘিনী রূপে ছিলো। প্রশ্নটি শোনার পর ভেজা বিড়াল হয়ে গেলো সে। মুহুর্তেই রং পাল্টে গেলো মুখের। ইউসুফ এগিয়ে এসে ফোন হাতে নিতেই। কুহু আমতা আমতা করে বলল,,

—” আম্মুকে কল করছিলাম!”

—” সত্যি বলছিস? তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ইউসুফের।

কুহু মাথা নাড়ালো। ইউসুফ আবার বলল,,

—” মিথ্যা আমার সহ্য হয় না। তার জন্য কঠিন শাস্তি পেতে হয় সবাইকে। সে আমার আপনজন হোক বা কলিজা হোক কাউকে ছাড় দেই না।”

কুহু ঘামতে লাগলো। অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে লাগলো। ইউসুফ কুহুর কাছে এসে দাঁড়ালো। কঁপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দিয়ে বলল,,

—” মানুষ তখন এভাবে ঘামে যখন সে মিথ্যা বলে!”

কুহু সাথে সাথেই ঘাম মুছলো। চাপা হেসে ববলার ট্রাই করলো,,

—” গরম লাগছে তো তাই ঘামচ্ছি!”

ইউসুফ জহুরি নজরে তাকালো কুহুর দিক। কুহু চুপসে যাওয়া মুখটি নতজানু করে ফেলে। ইউসুফের জেরা যেন সেখানেই শেষ হলো না সে আরো প্রশ্ন করবে তার আগেই ডাক পরে মনিশার। সে চেঁচিয়ে বলে,” আসচ্ছি খালামনি!”

বলেই পাশ কেঁটে বের হয়ে যায়। রুমের বাহিরে এসে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগে সে। মাঝে মাঝে ইউসুফকে তার জমরুদ মনে হয়।

______________

—-” আমার হাতের চিকেন তন্দুরি ইউসুফের খুব প্রিয় জানিস!”মনিশা উৎসাহের সাথে বলল।

তেলের মাঝে লেগ পিস দিয়ে আবার বলল,,

—” বরাবর তার এই লেগ পিসটাই চাই। হাসলেন তিনি। আবার বললেন,,

—” ভাবচ্ছিস তোকে কেন বলছি? তাই না! ”

কুহু হাসলো শুধু। মনিশা বলল,,

—” ছেলেটি আমার খুব খাদুক প্রিয়। আমি তো থাকবো সারাজীবন তোরই দেখতে হবে আমার পাগলাটে ছেলেটাকে। তাই বলছি!”

কুহু পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। মনিশার কথায় তার কান্না কান্না পেল। সে দুঃখী গলায় বলল,,

—” এমন বলো না খালামনি। তুমি কোথাও যাবে না।”

মনিশা বুকে জড়িয়ে নিলেন কুহু বড্ড আফসোস হলো তার। এ পরিবারে সে আর বেশিদিন চেয়েও থাকতে পারবেন না। তার তো যেতেই হবে। এখন শুধু দায়িত্ব একটি তার এই বেপরোয়া ছেলেটি আর এ সংসার কুহুকে বুঝিয়ে দেয়ার। তারপর চিরো বিদায়।

___________

কুহু ভাবতে ভাবতে রুমে ঢুকলো। ইউসুফ চলে গেছে এতক্ষণে। এ ব্যক্তিটি যতক্ষণ সামনে থাকে ততখন যেন তার প্রাণ পাখি বের হয়ে যাওয়ার জন্য উথাল-পাথাল করে বেড়ায়। কিন্তু কুহুর ভাবনা শুধু ভাবনাতেই রইলো। রুমে ঢুকেই ইউসুফকে দেখে হকচকিয়ে গেল। ইউসুফ সোফার উপর পা তুলে বসে আছে। দু হাতের আঙ্গুলে তার ফোন খানা ঘুরাচ্ছে তার দিকে তাকিয়েই। তার দৃষ্টিও যেন কেমন।

—-” ভয় পেলি যে!” ইউসুফের কন্ঠে কুহু তার দিকে তাকায়। চাপা হেসে বলে,,

—” ভয় পাবো কেন? আপনি বাঘ না ভালুক!”

—-” এ মুহূর্তে তোর জন্য দুটোই।”কন্ঠ অতি মাত্রায় শীতল।

কুহুর গলা শুকিয়ে কাঠ। সে বলল,,

—” ভয় দেখাচ্ছেন?”

—” ভয় দেখানোর মতো কোনো কাজ করেছিস?”

কুহুর এবার ভয়ঙ্কর রকমের ভয় করতে লাগলো। সে কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না ইউসুফের ভাবমূর্তি। তার অবলীলায় প্রশ্নের পিষ্ঠে প্রশ্ন করা কিছুতেই হজম হচ্ছে না। কুহু এ মুহূর্তে ঠিক কি করবে ভেবে উঠতে পারছে। তবুও সাহস করে বলল,,

—” আমি তো তেমন কিছু করিনি। “কন্ঠ নালির কাঁপণ স্পষ্ট।

ইউসুফ বাঁকা হাসতে হাসতে উঠে আসতে লাগলো কুহুর দিক। বলল,,

—” তাই!”

কুহুর কি হলো সে দরজার কাছে চলে এলো। কিন্তু হায় দরজা বন্ধ। কিছুতেই খুলতে পাড়ছে না। লক হয়ে গেছে।

—” ওটার সাথে লড়াই করে লাভ নেই। খুলবে না। লক আমি করে দিয়েছি!”

কুহু ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালো,,
—” কেন করেছেন?”

ইউসুফ কুহুর দু পাশে দু হাত রেখে তাকে বাহু ডোড়ে বন্ধ করে নেয়। ফিসফিস করে বলে,,

—” আমাদের প্রাইভিসির জন্য!”

কুহু পিলে চমকে গেলো। ইউসুফ কি করতে চাইছে?

—” যা ভাবছিস তাই!”

ইউসুফের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো। লোকটি মনের কথা কেমনে বুঝলো। কুহুর যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে হাপনি রোগীর মতো ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। কন্ঠ নালিতে কথা গুলো আঁটকে যাচ্ছে। তবুও সর্বস্র শক্তি প্রয়োগ করে বলল,,

—-” দূরে স্বরে দাঁড়ান। আমাকে কাছে আসবেনা।!”

ইউসুফের এতক্ষণ দমিয়ে রাখা রাগ এবার ফুটলো যেন। দুহাতে কুহুর বাহু চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,,

—” আমি তোর বর হয়ে তোকে ছুঁতে পারবো না কাছে আসতে পারবো না! কিন্তু তুই পরপুরুষের সাথে পরক্রিয়ায় লিপ্ত হবি? তা সহ্য করবো? ”

কুহু ইউসুফের কথায় বিস্ময় ব্যথার কথা ভুলেই গেলো।

—” আমি কারো সাথে পরক্রিয়া করছি না।”
—” তাই? বিয়ের পরও অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে তোর বিবেকে বাজলো না? ভুলে গেছিস? তুই আমার স্ত্রী।”
—” এ বিয়ে আমি মানি না!জোড় করে করেছেন আপনি। তাই আমার যা ইচ্ছে আমি করবো।” কুহুর ডর-ভয় উগে, কন্ঠে তেজ প্রকাশ পেলো!”

ইউসুফ কুহুর চিবুকে চেপে ধরে বলল,,
—” আবার বল!”

কুহু আবার বলতেই ইউসুফ কুহুর গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসিয়ে দিলো। কুহু ফুপিয়ে উঠলো। ঠোঁট কেঁটে রক্ত বেড়িয়ে এলো। কুহু এবার চেচিয়ে বলল,,

—” আমি আশিককে ভালবাসি! বুঝলেন? আপনি মারুন কাটুন যা ইচ্ছে করুন। আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধু ওর নামই লিখা আছে!”

কথাটি কর্ণপাত হতেই ইউসুফ হিংস্র হয়ে উঠলো। কুহুকে টেনে তুলে বলল,,

—” আজ থেকে এ শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার দেয়া দাগ পাবি শুধু। বলেছিলাম মিথ্যা বলিস না শুনলি না তো? ”

ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো কুহুকে। কুহু হতবুদ্ধি কি হতে চলেছে তার সাথে। সে উঠতে নিতেই ইউসুফ তার উপর চড়ে বসে। কুহু গলায়, ঘাড়ে সহ বিরতিহীন ভাবে কামড়াতে শুরু করে। কুহুর চিৎকার শুধু ইউসুফের ঘরের চারদেয়ালে গুঞ্জন হতে থাকে। কুহুর কাছে ইউসুফকে হিংস্র পশু মনে হচ্ছে। সে যেন তার ইউসুফ ভাইকে এ ইউসুফের সাথে মেলাতেই পাড়চ্ছে না। ভয় হচ্ছে খুব। মনে হচ্ছে এটি যদি স্বপ্ন হয়! ভেঙ্গে যাক দেখতে চাই না দুঃস্বপ্ন। নিতে পারছে না আর কুহু। ইউসুফের প্রতিটা কামুরে মরণ যন্ত্রণা অনুভব করছে সে। ধীর ধীরে চোখ বুঝে ফেলল কুহু। হাড়িয়ে গেল গহীন অন্ধকারে।

চলবে,,

(রেসপন্স পাচ্ছি না কেন আপনাদের? আগ্রহ কি হারিয়ে ফেলেছেন???)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here