আমার_একটাই_যে_তুই❤️ সিজন-২ ০৯

0
2618

আমার_একটাই_যে_তুই❤️
সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

০৯
বাসার সামনে আসতেই বিপাকে পড়ল ইউসুফ-কুহু। ড্রেন বানানো হচ্ছে রাস্তা থেকে বাসায় ঢুকতে তাদের শক্ত-পোক্ত চিকন কাঠ দেয়া আছে। ইউসুফের সেদিকে খেয়াল না থাকলেও কুহুর আছে। কুহু অসহায় ভাবে ইউসুফের দিক তাকিয়ে বলল,,

—” আমি এটা পার করতে পাড়বো না। ”

ইউসুফ বলল,,

—” হোয়াই?”

কুহু কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,,

—” ভয় করে!”

—” তাহলে ফিরে যাই চল?”

কুহু মুখ বাংলার পাঁচ বানিয়ে মাথা নাড়ালো। সে ফিরেও যাবে না। ইউসুফ আকাশের দিক তাকিয়ে শ্বাস ছাড়লো। কুহুর দিক তাকিয়ে বাঁকা হেসে কোলে তুলে নিলো। কুহুর তখন বিস্ফোরিত চাহনি। শরীর যেন তার থরথর করে কেঁপে উঠলো। কুহুর কাঁপান টের ইউসুফ ভালই বুঝলো। ইউসুফ চোখ টিপ দিয়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বলল,,

—” বললেই হতো তুই আমার কোলে উঠতে চাস। এত সিনেমা করার কি আছে?”

কুহু প্রতিবাদ জানালো,
—” মোটেও না। আমি বলি আপনি কোলে নেন?”

ইউসুফ বাঁকা হাসি বহাল রেখেই বলল,,

—” বুঝি বুঝি সব বুঝি!”

ইউসুফের কথায় কুহু কেন জানি লজ্জা পেলো। কেন পেলো? ঠিক বুঝে উঠতেই পারছে না কুহু।

এদিকে যখন কুহুকে কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই সেখানে কর্ম রত কর্মীরা হাত তালি দিতে লাগলো। এক বৃদ্ধ বলেই উঠলো,,

—” আমাদের নেতাজি দেশেরই না শুধু আম্মাজানরও মনের নেতাজি।”।

সবাই সাথে সাথে তাল মিলালো। কুহু লজ্জায় কাঠ। সে মুখ লুকালো ইউসুফের বুকে। ইউসুফও মুচকি হাসি উপহার দিয়ে তার বাবুইবউ টা কে নিয়ে এগিয়ে গেলো।

কুহুদের বাসায় খুশির ঢল। ইউসুফ কুহু এসেছে শুনে। সুমি এসে কুহুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। বললেন,,
—” মারে এতটা অভিমান! আমাদের ভুলেই গেছিস??”

কুহুও ফুপাচ্ছে। অভিমান এবার কান্না হয়ে বের হচ্ছে যেন। তখন কুহুর বাবা আরিফ আসে। ইউসুফের সাথে কথা বলে সোফায় বসে। কুহু খেয়াল করে তার বাবা তাকে ইগনোর করছে। কুহু তার মাকে বলে,,

—” মা বাবা এখনো রেগে আছে?”

সুমি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,,

—” মন খারাপ করিস না। জানিস তো কোঠার মানুষ তোর বাবা। ঠিক হয়ে যাবে!”

কুহু চুপ থাকে। বাবার মুখের পানে তাকিয়ে থাকে। বাবা যে তার শুকিয়ে যাচ্ছে। বাবাকে খাওয়া-দাওয়া করে না?প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে তার মনে।

ইউসুফকে ঘিরে বসে আছে তার চাচাতো বোনেরা। কুহু সেদিকে তাকায়। তার বোনেদের মাঝে চিপকুস হচ্ছ লিলি। তাকে ইউসুফ পাশ ঘেঁষে বসতে দেখেই গা জ্বলে উঠে কুহুর। কেন বসেছে সে মেয়েটি? লিলিকে এ মুহূর্তে কুহুর নখ দিয়ে খামচে চামড়া তুলে দিতে ইচ্ছে করছে। পরমুহূর্তেই প্রশ্ন কেন করছে এমন ইচ্ছে? সে যার সাথেই বসুক তার কি? আতো আদিখ্যেতা তার ভালোই লাগচ্ছে না। কুহু চোখ ফিরিয়ে নিলো। সুমি তখন কুহুকে তার ঘরে নিয়ে এলো। খাটে বসিয়ে মেয়ের সে নিজেও বসে গেল। বলল,,

—” মারে? ইউসুফ তোকে সুখে রাখে তো?”

কুহুর মুখে লাজ্জুক হাসি ফুঁটে উঠলো। কুহু মাথা নত করে করে লাজুক হাসে। সুমি খুশিতে আত্মা হারা। কিন্তু কুহু অবাক! কেন এমন হচ্ছে?

প্রচন্ড ঝড়ের তান্ডব শেষে যখন আকাশ পরিস্কার হয়ে উঠে তখন দূর আকাশ থেকে মিষ্টি রোদের ঝিলিক দিয়ে ঝড়ের প্রকোভ ভেস্তে চারিদিকে প্রাণ ছড়িয়ে খিলখিল করে প্রাণ খোলা হাসির মতো হেসে উঠে জানান দেয় ঠিক তেমনি কুহুর বুকে মাঝে ইউসুফ নামক ব্যক্তির অনুভূতি গুলো উঁকি দিচ্ছে। কুহু ভেবেই পাচ্ছে না এর কারণ কি? পরক্ষণেই মনে পরে তারা স্বামী-স্ত্রী। পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ। এটাতো হবারি ছিলো। কুহু হাসলো ঠোঁটের কোনে হাসি রোদের মতো ঝিলমিল করেছে। তার হাসির সাথে তাল মিলিয়ে মেঘও যেন গুড়ুম গুড়ুম ডেকে উঠছে। ছাদের কার্নিষে ঘেঁসে দেখে যাচ্ছে বিশাল আকাশ। কেমন করে সেজেছে বৃষ্টি হয়ে নামার জন্য। ভিজিয়ে দেয়ার জন্য পুরো দুনিয়া। কিন্তু কুহু ভেবে পায় না। সে কেন এমন মিয়ে যাচ্ছে ইউসুফ প্রতি। মনে হচ্ছে আশিক নামক প্রেমিকটি তার কোথাও নেই। কেন নেই? কোথায় হারিয়ে গেছে? তার জন্য মনের অনুভূতি যেন দিন দিন ভোতা। আশিকের কথা যেন তার ভাবতেই ইচ্ছে করে না। কেন? সে ধোকা দিয়েছে তাই বলে?

কুহু দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। আশিকের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো। আবার ইউসুফের মুখখানা ভাসিয়ে তুললো চোখের পাতায়। তখনি মনে পড়লো খাবার টেবিলে করা দুষ্টমি ইউসুফের।

খাবার টেবিলে আজ হরেক রকমের খাবারে টাইটুম্বুর। কুহু অবাক হয়ে বলল,,

—” আম্মু এত খাবার?”

সুমি হেসে বলল,,
—” ইউসুফের জন্য করা!”

কুহু গাল ফুলিয়ে বলল,,
—” তোমার ইউসুফ বুঝি আজ নতুন এসেছে? ”

—” জামাই হিসেবে তো নতুনই।”

কুহু মন খারাপ করে বলল,,
—” আমার জন্য কিছু করলেই না সব ইউসুফে পছন্দ হুহ? আমাকে পর সত্যি করে দিলে?”

সুমি হো হো করে হেসে দিলো। তখন মিমি বলল,,
—” বইন তুই কবে হিংসুইটা হইলি রে?”

কুহু কটমট করে বললো,,
—” আমি মোটেও হিংসুইটা না! বুঝলি?”

ইউসুফ কখন থেকে তাদের কান্ড দেখে মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে। কুহুর ঝগড়া করার সময় কিভাবে কথা বলছে, কিভাবে মুখ বাঁকাচ্ছে সুক্ষ ভাবে নজর দিচ্ছে ইউসুফ। কুহুর কথার মাঝে ইউসুফের দিকে তাকাতেই সে চুপ হয়ে গেলো। তার শরীর কেমন ঝিম ধরে গেলো। কেমন করে ইউসুফ তাকে দেখছে আর হাসচ্ছে। কি আছে তার সেই চোখে? বিলাই চোখে? কুহু নজর ফিরিয়ে নিলো। ইউসুফে পাশে বসে খাবার প্লেট তুলে নিবে তখনি ইউসুফ কুহুর শাড়ির আঁচল ভেদ করে পেটের মাঝে এক চিমটি কাঁটলো। কুহু হকচকিয়ে গেলো। ইউসুফের দিক রাগ নিয়ে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। সেই চাহনী কি যেন আছে তার চাহনীতে যেন কিছু বলছে। কুহু অস্তিত্বে পড়ে গেলো। ইউসুফ কুহুর হাতে হাত রেখে তখন সবার অগোচরে ফিসফিস করে কানের কাছে,,

—” তুই আমাকে হিংসে করিস বাবুইবউ আজ জানলাম। কিন্তু আমি নিজেই তো তোর হিংসে করার কি আছে বল? একটু ভালই বাস না বরং?”

কুহু হতবুদ্ধি। খাবার রেখে অবাকতা চেহারায় ফুটিয়ে চেয়ে আছে ইউসুফের দিক। ইউসুফ তখন এক বিস্মিত কান্ড ঘঠিয়ে বসে। কুহু গুলু মুলু কাল জোড়ায় কুটুস করে চুমু খেয়ে বসে। কুহু তখন হতভম্ব। টেবিলে সবাই তখন উপস্থিত। কুহু সেই মুহূর্তে কি করবে কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। সে আড় চোখে সবার দিক তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে ইশারা করে,,

—“একা পাই খবর আছে!”

কিন্তু ইউসুফ তো ইউসুফ সবার সামনেই কুহুর মুখে খাবার পুরে দিতেই বিষম খেয়ে উঠে। ইউসুফ সেই মুহুর্তে পানি মুখের সামনে ধরে কেয়ার করতে থাকে। উপস্থিত সবাই হাসতে থাকে। তার সম বয়সি বোন রা রিতীমত ” ওহো ওহো” শব্দ করতে লাগলো কুহু লজ্জায় অবস্থা এমন ছেড়ে দে বাপ কাইন্দা বাঁচি।

ঝুমঝুমেয় বৃষ্টি নেমে কুহুর ভাবনার বেঘাত ঘটে কুহু। ইউসুফ এখন বাসায় নেই। জরুরী কাজে বের হয়েছে। সন্ধ্যায় এসে নিয়ে যাবে কুহুকে। অথচ ইউসুফ অনুপস্থিতে রেখেই গেছে ইউসুফকে ঘেরা এক ঝাঁক অনুভূতি। কুহু বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো দু হাত তুলে বিড়বিড় করে বলল,,

—” আমায় পাগল করে দিচ্ছেন যে নেতা সাহেব!”

কুহুর ঠোঁটে তখন মিষ্টি হাসি। আকাশের দিকে চোখ বুঝে বৃষ্টি উপভোগ করছে সে। তখনি এক শক্ত-পোক্ত হাত কুহুর কোমড় জড়িয়ে ধরে ঘারে মুখ গুঁজে। কুহুর পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠে চোখে বুঝে মৃদু স্বরে বলে,,

—” নেতা সাহেব?”

কিন্তু পিছনের আগন্তুকের মুখে রা নেই। অথচ তার স্পর্শ গভীর হচ্ছে। কুহুর মনে কেমন করে উঠলো সে সচকিতে পিছনে তাকাতেই মুহূর্তে তার রং উড়ে গেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ।ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কম্পিত কন্ঠে বলল….!

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here