আমার_একটাই_যে_তুই❤️ সিজন_২ ০৩

0
2900

আমার_একটাই_যে_তুই❤️
সিজন_২ ০৩
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

দু হাত পুড়ে চামড়ায় ঠোসা পড়ে গেছে কুহুর। বার বার দু হাতে ফু দিচ্ছে আর বাচ্চাদের মতো ফুপাচ্ছে। ইউসুফ হাতে মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছে আলতো হাতে। তার ভাবখানা এমন হাতটা যেনও তারই পুড়েছে। ব্যথাতুর কন্ঠে বলল,,

—” কাঁদিস না বাুইপাখি এখনি জ্বলা কমে যাবে! ”

কুহু চুপ হলো না। কাঁদতেই লাগলো। পাশেই আঁচলে মুখ চেঁপে কাঁদচ্ছে মনিশা। এক মাত্র ভাগনী তার। কতই আদরের ছোট থেকেই বুকে রেখে মানুষ করেছে তার বোন। কখনো চোট পেতে দেয়নি কুহুকে। যদি কখনো পেয়েও যেতো তার বোন সুমি কেঁদে কেঁটে পুরো বাড়ি শুদ্ধ মাথায় করে নিতো। আর আজ তার ছোট পরিটির হাত পুড়ে গেছে একদম।

—” মা এসব কিভাবে হলো?”

ভাবনায় ফোড়ন পড়লো মনিশার। চোখের জলটুকু মুছে বলল,,

—” আমি ঘরে ছিলাম তখন। রান্না ঘর থেকে কুহুর চিৎকার ভেসে আসতেই দৌড়ে আসি।”

ইউসুফ ভ্রু কুচকে বলল,,

—” কুহু রান্না ঘরে কেন গেছিলো? কাজের মানুষদের অভাব পড়েছে নাকি?”

কন্ঠে রাগ-ও প্রকাশ পেলো খুব। তারপর কুহুর দিক তাকিয়ে ধমকের শুরেই প্রশ্ন করলো,,

—” রান্না ঘরে কেন গেছিলি? কথা বলছিস না কেন?”

কুহু ভয়ে আরো কাঁদতে লাগলো। ইউসুফের রাগের সাথে আগাগোড়া পরিচিত সে। কুহুর ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসতে দেড়ি হতে দেড়ি ইউসুফের চড়-থাপড় খেতে দেড়ি না। কুহু ঢুক গিললো শুকনো। বলল,,

—” আমি বুঝতে পারিনি পাতিল এতো গরম ছিলো। চুলায় অাগুনও ছিলো না তখন!”

ইউসুফের চোয়াল শক্ত করে দাম্ভিকের সুরে বলল,,

–পাতিল কেন ধরেছিলি?”

কুহু নতজানু। মুখ দিয়ে কিছু বলতেই চাইছে না সে৷ তাতে যেন রাগ মাথায় চড়তে এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় হলো না। দু আঙ্গুলে মুখ ঠেসে ধরলো কুহুর। কুহু বিস্ময়ে হতভম্ব। মনিশা হা হা করে উঠলেন,,

—” কি করছিস, কি করছিস এসব বাবা ছাড় ওকে? ব্যথা পাচ্ছে মেয়েটা। এমনিতেও কত চোট হয়েছে হাতে?”

ইউসুফ মনিশার কথা তোয়াক্কা করলো না। অন্য হাতে খাটের পাশের ড্রয়ার খুলে গ্যাস লাইট বের করে নিলো। কুহু হকচকিয়ে গেলো। মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেল,,

—” এটা দিয়ে কি করবেন? ”

ইউসুফ বাঁকা হাসলো। হিমশীতল হয়ে গেলো কুহুর দেহ খানি। বলল,,

,—” যা ভেবেছিস তাই!”

কুহু এবার ইউসুফের হাত থেকে দূরে যেতে চাইলো। না চাইতেও ফোস্কা পড়া হাত ব্যবহার করতেই কটা ফোস্কা গলে রক্ত বের হয়ে গেল। ইউসুফ তা লক্ষ করলেও এ মুহুর্তে সত্যি জানতে চায়। কুহু কাঁপা কন্ঠে বলল,,

—” আমি বলছি! আমার হাত জ্বালাবেন না আর। ”

বলে সব টুকু বলতে লাগলো কুহু।

তখন ইউসুফ কুহুকে খাইয়ে অফিসের জন্য বের হয়ে যাওয়ার পর ইউসুফের দাদু কুহুকে ডেকে বলল,,

—” রূপই আছে না কিছু গুনও আছে? কাম কাজ কিছু জানো? ”

কুহু মাথা নত করে রাখলো। বাবা-মার এক মাত্র সন্তান হলো কুহু। তাদের হাল অবস্থা এক সময় ইউসুফদের মতোই ছিলো। হুট করে কুহুর বাবা আরিফের ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথম স্টেজ বলে চিকিৎসা করে সাড়ানো যাবে বলে আশ্বাস দেয় ডাক্তার। উনার পিছনেই অঢেল টাকা ব্যয় করতে হয়েছে অনেক। লাষ্ট শুধু রয়ে গেছিলো। তিন তলা বাড়িটি। এর মাঝে আরিফের চাকরিও চলে যায়। বছর তিনেক যেতেই সুস্থ হয়ে উঠলোও আগের চাকরি আর পান নি চেষ্টা করেও। আরো চাকরির জন্য চেষ্টা করে যখন হতাশ হন। তখনি বাড়ির নিচের এক সাইডে সুপার শপ দিয়ে দেন। তাতেই যেন ভাল চলছে তাদের। তিন তলা ভবনটি এখন পাঁচ তলা করেছেন আরিফ। আর তাই আত্মিয়ারা বাবাকে বলেন মুদির দোকানদার। মুদির দোকানদার হলেও তিনি তার মেয়ে আর বউতে কখনো কষ্ট করে রান্না ঘরের আগুনের তাপে পুড়তে দেন নি। সব কাজের জন্য রেখে ছিলেন কাজের লোক। কুহু ছোট শ্বাস ছাড়লো। বলল,,

—” আপনার কিছু লাগবে দাদু?”

রোকেয়া বানুর পান খাওয়া ঠোঁটে হাসি চওড়া হলো। তিনি বললেন,,

—“তেমন কিছু কড়াইতাম না। শুধু তোমরা না কি না কউ? লুডুস না কিতা? একটু রাইন্দা আনো। ”

কুহু খুশিই হলো। এটি বা হাতের কাজ। নাচতে নাচতে রান্না ঘরে চলে এলো। চুলোর উপরের পাতিল সরিয়ে গরম পানি বসাতে নিতেই কুহুর চিৎকার ভোসে এলো। মাইশা দৌড়ে রান্না ঘর থেকে এসে দেখে কুহু দু হাতে ফোস্কা ওল রেডি পড়ে গেছে।মাইশা তখন এ হাল দেখে নিজেই কেঁদে দিলেন।

—” আম্মু এ পাতিলা তো অনেক গরম।”

নিচে পড়ে থাকা পাতিল হালকা ধরে বলল মিশু। মাত্রই কলেজ থেকে বাসায় ফিরেছে সে। হল রুমে দাদু আর ছোট চাচির চাঁপা কন্ঠ আর হাসি মুখ দেখে সন্দেহ হয় ক্ষীণ। সে এমনিতেই এ মহিলাকে দু চোখে দেখতে পারে না। ছোট থেকেই ইউসুফের কান পড়া দিয়ে বিসিয়ে তুলেছে তাদের ভাই বোনের সম্পর্ক। সে আর না দাঁড়িয়ে উপর উঠতে লাগলো। তখনি কুহু চিৎকারের রান্না ঘরে এলো।

মনিশা অবাক হয়ে বললেন,,

—” তাই তো এতো অনেক গরম পাতিল! এমন কে করলো? ”

চিন্তা পড়ে গেলো মনিশা। পরক্ষণেই কেঁদে কুটে বলতে লাগলেন,,

—আমার ফুটফুটে বাচ্চাটা কি এমন দোস করলো? কে এমন করলো?”

বলতে বলতে ইউসুফতে জানালেন তিনি। ইউসুফ কিছু মুহূর্তে চলে এলেন। মিশু তখন বলে উঠে,,

—” মা এসব দাদু করিয়েছে। আমি ভাইকে সব বলে দিবো!”

মনিশা বাঁধা দিলেন। সংসরারে অশান্তি তিনি চান না। মিশুকে বুঝিয়ে সুজিয় ঘরে পাঠিয়ে দেন তিনি। মিশু তাতে হতাশ হয়। মাকে বলে,,

—” আমি না বললেও ভাইয়া তা জেনেই ছাড়বে!”

সব শুনে ইউসুফের রেগে আগুন। ধপাধপ পায়ে নিচে নেমে আসে। চিৎকার করে ডাকতে লাগে,,

—” দাদু? দাদু কই তুমি নিচে আসো!”

রোকসানা তার ঘরে বসে ফল খাচ্ছিলেন খুশিতে। তার পাশে রাহি বসে ফল কেঁটে দিচ্ছে তার দাদুকে। দু জনেই তখনের ঘটনা আওড়ে হেসে যাচ্ছেন। ইউসুফ চেচামেচি শুনতে পেয়েই গলা আঁটকে গেল ফল। খুক খুক করে কেশে উঠলেন তিনি। রাহির ও ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে। ইউসুফ যদি জানতে পারে এর পিছনে তার হাত ও আছে! এর পর এ বাড়ির টিকিট তারোও কেঁটে যাবে।

ইউসুফ গলার স্বর বৃদ্ধি হতেই হন্তদন্ত হয়ে বের হয় রোকেয়া বানু। যেতেই ইউসুফ এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো। উপস্থিত সকল হা হয়ে গেল।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here