আমার_একটাই_যে_তুই সিজন-২ ২৩-২৪-২৫

0
3107

আমার_একটাই_যে_তুই
সিজন-২ ২৩
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

বর্ষার শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতি সকালেই ঝড়-ঝঞ্ঝার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি। কখনো বা বৃষ্টির পরের রৌদ্রোজ্জ্বল দিন মিষ্টি করে হাসছে।এই টুকুনের মাঝেই কেউ কেউ ছুটছে নিজ গন্তব্য। পথ-ঘাটের শিশুরা রাস্তার ধারে জমে থাকা পানির উপর করছে লাফালাফি। এই দিনটিকে আরো সুন্দর করে তুলছে “হেমন্ত কুমার ” এর একটি বিখ্যাত গান,

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?

গুন গুন করে গানিটির সাথে তাল মিলিয়ে ঠোঁট নাড়ছে কুহু।ভার্সিটি যাওয়ার পথেই রেড লাইট সিগনালে ভীরের মাঝে আটকে আছে তাদের গাড়ি। গাড়ির জানালা ভেদ করে নজর পড়ছে বাহিরের পরিবেশের উপর। কিছু কিছু শিশুরা ফেরি করে বেড়াচ্ছে নানা ফুল আর খাবার। প্রতিটি গাড়ির কাঁচের মাঝে টোকা দিয়ে বলে যাচ্ছে ” আফা একটু ফুল নেন!”

কেউ নিচ্ছে তো কেউ এড়িয়ে যাচ্ছে। কুহু মায়া হলো। একটু ছোট মেয়েকে ডাক দিলো। পরনে ছেড়া বড় ফুলের ছাপের একটি জামা। উস্কো খুস্কো চুল। মুখটা মলিন। কুহুদের গাড়ির দরজার সামনে এসেই একটি হাসি দিলো। কি চমৎকার হাসি।যে কারো মন ভোলানোর মতো হাসি। কুহু বলল,,

—-” নাম কি তোমার বাবু?”

বাচ্চা মেয়েটি তার মন ভোলানো হাসি দিয়ে বলল,,

—-” আফিফা!”

—-” সুন্দর নাম। এ ফুল গুলো আমি নিবো! কত দিবে??”

মেয়েটি ভাবনায় পরে গেলো যেন।বলল,,

—-” আমি প্রতি পিস ১০ টাকা দিয়া বেছি আফ। আপনে হিসাব করে দেন?”

কুহু হিসেব করলো। যত গুলো ফুল হলো তার থেকে দুশো টাকা বেশি দিলো! মেয়েটি খুশিতে কেঁদে উঠলো। বলল,,

—-” গত সাত দিনে আফা আমি মাত্র দশটা ফুল বেচ্ছি। আপনারে ধন্যবাদ। ”

কুহু হাসলো। বাচ্চা মেয়েটির এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে বলল,,

—-” আমি প্রতিদিন তোমার থেকে ফুল নিবো!”

বাচ্চা মেয়েটি খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো। কুহু সেইদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়ির জানালা বন্ধ করতে নিলো। তার থেকে দূরে থাকা একটি দিকে তাকাতেই থম মেরে গেলো। একটি গাড়িতে আশিক আর একটি মেয়ে বসে আছে। মেয়েটিকে দূর থেকেই কেমন চেনা চেনা লাগচ্ছে তার। কুহু ভ্রু কুঁচকালো। আরেকটু উঁকি ঝুঁকি দিতেই তার মনে হলো সাথে মেয়েটি আখি। কুহু গাড়িতে থেকে মানতে নিলো। কিন্তু তার আগেই গাড়ি চলতে শুরু করে দিলো। ভীরের মাঝে হারিয়ে গেলো আশিকদের গাড়ি। কুহুর চিন্তার ছাপ পড়লো মাথা! আদো কি মেয়েটি আখি ছিলো না অন্য কেউ? কতখন মনের সাথে লড়াই করে ব্যর্থ কুহু ধরেই নিলো দেখার ভুল।কিন্তু মন? বার বার বলছে না তুই ঠিক দেখেছিস? কুহুর রাগ লাগলো। কিন্তু লাল টকটকে গোলাপ ফুল গুলো দেখেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো। ফুল গুলো হাতে নিয়ে একটি চিরকুট লিখে ফেললো সে। লজ্জায় গোলাপের মতো লাল রঙ্গা হয়ে চুমু খেলো ফুল গুলোতে। ভার্সিটিতে পৌঁছে ড্রাইবারকে দিয়ে ফুল আর একটি খাম দিয়ে পাঠিয়ে দিলো ইউসুফের অফিসে।

———————

মিটিং শেষে নিজ রুমে আসতেই। টেবিলের উপর এক গাদা গোলাপ আর একটি খাম দেখে ভ্রু কুটি কুঞ্চিত কুচকায়। খামটি হাতে নিতেই গোটা গোটা অক্ষরে “আপনার বাবুইবউ ” লিখা দেখতেই ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠে। চেয়ারের মাঝে আরাম করে বসে খামটি খুলে। একটি গোলাপি রঙ্গের ছোট চিরকুট। লিখা,,

আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
কি যে ভাবি আনমনে ক্ষণে ক্ষণে
কি যে ভাবি আনমনে
তুমি আসবে ওগো হাসবে
কবে হবে সে মিলন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ
এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?

ইউসুফ ঠোঁটের কোনের হাসি বহাল হলো। ফুল গুলোতে কুহুর মতো সেও চুমু খেলো।গোলাপের ঘ্রাণের সাথে যেন কুহু শরীরের ঘ্রাণ পেলো ইউসুফ। বুকে মাঝে ফুল গুলো জড়িয়ে নিয়ে কবিরকে কল করলো। কবির তৎক্ষনাৎ এসে হাজির। তার বসকে এমন মুচকি মুচকি হাসতে দেখে কবিরের ভালোই লাগলো। আজ কতদিন পর সে স্যারকে হাসতে দেখছে! কবির বলল,,

—” স্যার ডেকেছেন?”

ইউসুফ মাথা নাড়লো। বাহিরে জগতটা আজ কি সুন্দর লাগচ্ছে বলার বাহিরে। ইউসুফ বাহিরে চোখ রেখে কিছু প্ল্যান করে ফেললো। বর্ষার এ ঝিরিঝিরি মৌসুমে তার বাবুইপাখিকে একান্ত চাই। শুধুই একান্ত কিছু মুহূর্ত এই ব্যস্ত শহর থেকে দূরে। ইউসুফ বলল,,

—-“শ্রীমঙ্গলের বেষ্টি রিসোর্ট বুক করো। তোমার মেডামকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি!”

কবির হেসে কাউকে কল করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আর ইউসুফ তার ভাবনায়।

————

ক্লাস শেষ হতেই কুহু বেড়িয়ে এলো। আকাশে তখন কালো মেঘ দলা পাকিয়ে সূর্যকে ঢেকে দিয়েছে। পৃথিবীর বুকে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা পগতে শুরু করেছে। কুহু দৌড়ে গেইটের কাছে যেতেই চোখ ছানাবড়া। তার নেতা সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। পড়নে আজ ব্ল্যাক জীন্স। হোয়াইট টি শার্ট তার উপর ব্ল্যাক জেকেট। সব মিলিয়ে সুপুরুষ লাগছে ইউসুফে। প্রতিদিনকার শুভ্র পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়া ইউসুফকে দেখতে দেখতে ইউসুফ যেন এসব ড্রেস পড়তেই ভুলে গেছিলো। কুহুকে এভাবে হা করে তাকিয়ে দেখতে দেখতে ইউসুফ হেসে ফেললো। কুহুর হাতটি ধরে বলল,,

—-” চলেন!”

কুহুর ভ্রুজোড়া কুচকে বললো,,

—-” কই?”

কুহু এক চোখ টিপ দিয়ে কুহুকে তার বাহু ধারা ধাক্কা দিয়ে গুন গুন করে উঠলো,,

আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব
হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে
সেই অঙ্গীকারের রাখী পরিয়ে দিতে
কিছু সময় রেখো তোমার হাতে।

কিছু স্বপ্নে দেখা, কিছু গল্পে শোনা
ছিলো কল্পনা জাল এই প্রাণে বোনা।
তার অনুরাগের রাঙা তুলির ছোঁয়া
নাও বুলিয়ে নয়ন পাতে।

আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব
হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে।

চলবে,

সামনে একটি বড় ঝড়-ঝাপটা আসচ্ছে! কে কে আন্দাজ করতে পাড়ছেন? হুম হুম? আর সেটি কি হতে পারে??

বিঃদ্রঃ গল্প আগেই পোষ্ট করতাম। কিন্তু ইদুর মামা চরি করে নিয়ে গেলো গল্প। সরি ফোর দ্যাট। বাট কেমন হচ্ছে জানাবেন।৷ অনেক কষ্টে ইদুরের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছি। হু হু হুমমম।

#আমার_একটাই_যে_তুই
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

২৪
শন শন বাতাসে চারিদিকে বয়ে চলেছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট ঘর বাড়ি। যেন কোনো চিত্রশিল্প নিপুণভাবে একে রেখেছে। চারিদিকের মনোরম পরিবেশে মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠছে। এই রিসোর্টের নামটি যেন সুক্ষভাবে মিলে যাচ্ছে। কুহু রিসোর্টের নামটি আবার উচ্চারণ করল “শান্তিবাড়ি”।
কটেজের রুমটিও যেন প্রকৃতির সাথে মিলে গেছে। কাঠের রুমটিতে বারান্দার বদলে সচ্ছল কাঁচের দেয়াল আর খোলা জানালা।প্রকৃতির কাছাকাছি শহুরে জঞ্জাল থেকে দূরে সম্পূর্ণ গ্রাম্য পরিবেশ। কটেজের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে চা বাগানের চোখ ধাধানো সৌন্দর্য। কুহু ঠোঁট দুটি নাড়িয়েই অস্পষ্ট ভাবে বলল,,

—-” অপুর্ব! ”

—-” তাই!”

পিছন থেকে কামড় জড়িয়ে কুহুর ঘাড়ে নাক ডুবালো ইউসুফ। কুহু থরথর করে কেঁপে উঠলো। আবেশে চোখ বুঝে নিলো কুহু। ইউসুফের দিকে ফিরে গলা জড়িয়ে ধরলো। এক হাতে ইউসুফের নাক টেনে দিয়ে বলল,,

—-” এত সুন্দর একটা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ নেতা সাহেব! ”

ইউসুফ হতাশ গলায় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,,

—-” শুধুই ধন্যবাদের যোগ্য আমি?”

কুহু হাসলো। আরেকটু কাছে গিয়ে ঘেঁষে দাঁড়ালো। ফিসফিস করে বলল,,

—-” আর কি চাই!”

ইউসুফের ঠোঁটের কোনের হাসি বহাল রইলো। কুহুকে তার দু হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,,

—-” আমার বাবুইপাখিকে!”

কুহু লজ্জা লাল রঙ্গা হয়ে গেলো। ইউসুফ টুপ করে কুহুর গালে চুমু খেয়ে ফেললো। কুহুর এবার লজ্জায় মনে যেতে মন চাইছে। ইউসুফ কুহুর দিক এক অদ্ভুত মহনীয় দৃষ্টিতে কুহুর শরীর ঝিম ঝিম করতে লাগলো। কুহু ইউসুফের দৃষ্টি এড়াতে মুখ লুকালো ইউসুফের বুকে। ঠিক সেই মুহূর্তেই ঝড় তুলে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বাহিরের মতো কুহুর বুকের ভিতরেও যেন ঝড় উঠেছে। ইউসুফ জনিত রোগে আক্রান্ত হতে চাইছে। হারিয়ে যেতে চাইছে এ বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটায়।

—————

সকালের মিষ্টি মিষ্টি রোদ সাদা চাদরের আবরণে লেপ্টে থাকা মানব-মানবীর উপর পড়চ্ছে। কুহু পিটপিট করে যখন চোখ মেললেই থমকে গেলো। কিহুর দিক সেই মাদক চাহনি নিক্ষেপ করে হেসে যাচ্ছে। কুহুর তাৎক্ষণিক মনে পড়ে গেলো কাল রাতের কাটানো সেই বিশেষ মুহূর্তটি৷ কুহু লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো। বলল,,

—-” আপনার নজর মারাত্মক খারাপ নেতা সাহেব?”

ইউসুফ ভ্রু কুটি কুচকে দাম্ভিক মুখখানায় গম্ভীরতা ফুটিয়ে তুলতে চাইলো। বলল,,

—-” বউয়ের কাছে বড় চরিত্রহীন ও হতে পারে।”

কুহু অবাক হয়ে। হা করে তাকালো। কিছু বলবে তার আগেই কুহুর কানের কাছে মুখ গুঁজে বলল,,

—-“যেদিন থেকে তোর প্রেমে পড়েছি আমার নজর খারাপ হয়ে গেছে। চরিত্রহীন হয়ে গেছি। তোর অগোচরে তোর ঠোঁটে কত যে নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়েছি!”

কুহু আকাশ থেকে পড়লো যেন। তড়িঘড়ি করে উঠতেই নিজের দিক তাকালো।তড়িৎ গতিতে আবার ঢুকে গেলো সাদা চাদরের ভিতরে। ইউসুফ তখন হু হা করে হরসে উঠলো। কুহু মুখখানি এতটুকু করে। কাঁদো কাঁদো করে বলল,,

—-” আপনি বহুত খারাপ নেতা সাহেব। বহুত খারাপ! ”

ইউসুফ হাসতেই থাকলো। হাসতে হাসতেই বলল,,

—-” খারাপ হই আর ভালো। আমি ছাড়া তোর গতি নেই বাবুইবউ। এ আমিটাকেই আকড়ে ধরে বাঁচতে হবে তোর।”

কুহু ইউসুফের কথা হাসলো। ইউসুফের বুকে বাচ্চাদের মতো মাথা রেখে ফিসফিস করে বলল,,

—-” এ আপনি টাকেই আমি ভালবাসি!”

——————

বিকেলের দিক ইউসুফ কুহু ঘুরতে বের হয়েছে। দুজনে আজ ম্যাচিং ড্রেস পড়েছে। ইউসুফ কালো পাঞ্জাবি আর কুহু কালো শাড়ি। কালো পাঞ্জাবিতে ইউসুফের সুন্দর গায়ের রঙ যেন আরো ফুটে উঠেছে। কুহু মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে এ মানুষটির দিক। কত চাওয়া-পাওয়া চিলো এ মানুষটির কাছে আজ থেকে যেন সব পরিপূর্ণ লাগচ্ছে। কুহু ইউসুফ হাতের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিলো। ইউসুফ-ও আকড়ে ধরলো। যে এই রূপসী তন্বী এখনই হারিয়ে যাবে।

ইউসুফরা চলে এলো নুরজাহান টি গার্ডেন। আর তখনি আবার শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি থেকে বাঁচার আশ্রয় নেয় একটি মাচার নিচে। সবুজ, সবুজ পরিবেশে তখন আলাদাই যেন এক অপরূপ ঢল। কুহু দু হাত দিয়ে গায়ে মেখে নিচ্ছে সে ঢলের ছিটেফোঁটা। আর ইউসুফ তার বিলাই চোখে মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার বাবুইপাখিটিকে। বৃষ্টি কমতেই দুজনে হাতে হাত ধরে ঘুরতে লাগলো চারপাশটা।

সেদিন রাতেই ইউসুফ কুহু বাসায় ফিে আসে তারা। কিন্তু বাসায় যে তাদের জন্য এত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো জানা ছিলো না তাদের!

চলবে,,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

বিঃদ্রঃ যারা ইউসুফ-কুহু জুটিতে সুন্দর মুহূর্ত। ভালোবাসাময় সময় দেখতে চেয়ে ছিলেন এটি তাদের জন্য উৎসর্গ করলাম। তাদের কাছে অবশ্যই আশা করবো দুটি লাইন শোনার।

#আমার_একটাই_যে_তুই
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
২৫

বাসায় ফিরতে ইউসুফ-কুহুর রাত –৮.৩০ বেজে যায়। সদর দরজা ক্রস করতেই দু জনেরই চোখে পড়ে। একটি মেয়ে খাবার টেবিলে বসে আছে। আর ইউসুফের মা খাবার টেবিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছে৷ মেয়েটিকে দেখে ইউসুফ পরিচিত মনে হলো। মেয়েটির কাছে যেতেই দু জনেরই চোখ কঁপালে।ইউসুফ তেড়ে এসে বলল,,

—-” তুমি এখানে কি করছো আখি?”

আখি যেন শুনতেই পায়নি। খাবার খেয়ে যাচ্ছে আয়েশে। ইউসুফের রাগ যেন সারা শরীরে কিড়মিড় করছে। সে এগিয়ে যেতেই ইউসুফের মা এসে হাতে ধরে আটকায় বলে,,

—-” আজ দু দিন যাবত ও এখানেই। তোর বাবা নিয়ে এসেছে! খাবারের সময় হাঙ্গামা করিস না!”

ইউসুফ অবাক হয়ে বলল,,
—-” মা তুমি আমাকে আগে কেন বলো নি?”

—-” তোরে ঘুড়তে গিয়েছিস তাই বিরক্ত করিনি!”

—-” কিন্তু ও এখানে কেন আসচ্ছে?”

ইউসুফ আবার তেড়ে গেলো। আখির বাহু টেনে ধরে উঠালো। দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,,

—-” এখানে কেন এসেছো?হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?”

আখি হাসলো। ইউসুফের গালে বাম হাতে স্পর্শ করে বলল,,

—” ইউ!”

এক ঝাটকা মেরে সরিয়ে দিলো আখিকে ইউসুফ! আখি পড়তে গিয়েও পড়লো না। এদিকে কুহু ঠাই দাঁড়িয়ে বুঝাই যাচ্ছে না এ মুহূর্তে তার ভাবান্তর! ইউসুফ এবার আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলল,,

—“গেট আউট অফ মাই হাউস নাও! ”

আখি গেলো না। সোফায় আরাম করে বসে ইউসুফকে বলল,,

—-” আমার বাচ্চার বাবা যেখানে! আমিতো সেখানেই থাকবো?”

ইউসুফ স্তব্ধ হয়ে গেলো। বলল,,

—-” তোমার মতো নারী আমি আজ পর্যন্ত আর একটিও দেখিনি। এত নিচ তুমি। ছিঃ!”

আখির যেন কিছু যায় আসে না তেমন ভাব করে নীচের একটি ঘরে গিয়ে মিনিটের মাঝেই ফিরে এলো। হাতে একটি কাগজ নিয়ে সোজা কুহুর দিকে গেলো। ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলল,,

—-” তুমি আমার কাছে প্রুভ চাইছিলে না? এই নাও তার প্রুভ। ”

কুহু কাগজটি খুললো। এক মুহূর্তের জন্য শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেলো যেন। এক পলক আখির দিক আর এক পলক ইউসুফের দিকে তাকালো। ইউসুফের চোখে তখন কুহুর দিকে হাজার প্রশ্ন যেন মেলে ধরেছে। যেন বলছে,,

—-” বাবুইবউ? তোর কি সত্যি এমনটি মনে হয় আমি কিছু করেছি? এই যে দুনিয়া শুদ্ধ তোর জন্য লড়াই করি সেই আমিটা কি তোকে ঠকাতে পাড়ি?”

কুহু চোখ নামিয়ে নিলো। ব্রেনের নার্ভ গুলো যেন অচল।শরীর কাঁপছে। গলা-ও যেন শুকিয়ে কাঠ। কুহু শুকনো ঢুক গিললো। কাঁপা কন্ঠে বলল,,

—-” এমন হাজারটা কাগজ বানানো যায় মিস আখি! ”

আখি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,,

—-” মেয়ে তুমি বড্ড বেকুব। বরটাকে এত বিশ্বাস করো? আর তোমার বর তোমাকে এভাবে ঠকিয়ে দিলো?”

কুহু এবার মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল,,

—-” সামান্য কাগজের টুকরো আমার বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারবে না মিস আখি!”

কুহু আর দাঁড়ালো না। রুমে চলে গেলো। ইউসুফ টলমল চোখে তাকিয়ে রইলো কুহুর যাওয়ার দিক। তার বাবুইপাখির মনের কষ্ট সে ঠিক ধরতেই পেরেছে। মুখো যতই না বলুক। ইউসুফ জানে,”প্রতিটি মেয়ে তার বরটার সাথে পরনারী সহ্য করতে পারে না! ”

——————-

ঝড় উঠেছে। রাতের আকাশে বাজ পড়ে আন্ধারকে মৃদু আলোয় ভড়িয়ে দিচ্ছে। কুহু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। যেন তার মনের মাঝেও এমন বাজ পড়ছে। কুহুর পাশে এসে দাঁড়ালো নিঃশব্দে ইউসুফ। কুহু শূন্য দৃষ্টিতে চোখ মেলে বলল,,

—-” এমনটা কেন হয় নেতা সাহেব? আমি যখনি আপনার কাছে যাই! নতুন ঝড় আসে! ”

ইউসুফ কিছু বলতে পাড়লো না। শুধু কুহুকে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলো। কুহু আবার বলল,,

—-” আমি আপনাকে ছাড়া অচল নেতা সাহেব!”

—-” কাঁদিস না বাবুইপাখি! আল্লাহ চাইলে সব ঠিক করে দিবেন। ”

কুহু কাঁদতে লাগলো। ইউসুফ আবেশে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

———–

—-” বাবা! তুমি কি করতে চাইছো?”

পেপারের মাঝে মুখ গুঁজে বসে ছিল মহসিন। রাতে বেলায় ইউসুফকে তার রুমে দেখে কঁপাল কুঁচকালো। ইউসুফের করা প্রশ্নটি কান পর্যান্ত পৌছাতেই বলল,,

—-” আমি কি করতে চাইবো?”

—-” আখিকে এ বাসায় কেন এনেছো?”

—-” সে আমার ছেলের বাচ্চার মা হতে চলেছে তাই!”

ইউসুফ থমথমে গলায় বলল,,

—-“যা করছো! ভালো করছো না! আর হে! আমি খুব জলদি পদত্যাগ করছি। ”

মহসিন যেন এ ভয়েই ছিলেন।

———

হাসপাতালের তীব্র ফিনাইল এর উটকো গন্ধ পিট পিট করে চোখ খুলে আখি! চোখের সামনে চেনা পরিচিত মুখটি দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলেও। মস্তিষ্ক যখন প্রশ্ন করে উঠে,”আমি কোথায়?” ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আখি। নিজেকে হাসপাতালে দেখে অজানা ভয় ঝেঁকে বসে।

—-” ইউর গেইম ইজ ওভার!”

ইউসুফের কথাটুকু কানে যেতেই আখি ভয়ে থর থর করে কেঁপে উঠে। তোতলাতে তোতলাতে বলল,,

—-” ক–কিসের গ…গে..ইম?”

ইউসুফ বাঁকা হাসলো। কেবিনের মাঝে রাখা সোফায় পা তুলে বসলো। গলা উঁচু করে বলল,,

—” কামিং!”

আখি সাথে সাথে দরজায় তাকাতেই এক চিৎকার দিলো,,

—-” তুমি এমনটি করতে পারো না ইউসুফ! ”

ইউসুফ নির্বিকার ভাবে বলল,,

—-“ইউ নো হোয়াট? আই ওয়ান্ট মাই কিংডম টু ডু এভরিথিং আই ক্যান! ”

আখি অসহায় ভাবে চেয়ে রইলো। ইউসুফকে এতো হালকা ভাবে নেয়া উচিত হয়নি!এখন কি করবে?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here