#আমার_একলা_আকাশ
#পর্ব_৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
আদনান চট্টগ্রাম চলে গেছে আজ তিনদিন। এই তিনদিনে প্রাপ্তি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আদনান চলে গেছে ঠিক এজন্য নয় বরঞ্চ রায়হানের মানসিক অত্যাচারে। বাড়ি থেকে বের হলেই ওর সঙ্গে দেখা হচ্ছে। হুটহাট কোত্থেকে চলে আসে কে জানে! প্রাপ্তির মনে হয় সর্বদাই বোধ হয় ওর ওপর নজর রাখার জন্য লোকজন ঠিক করে রেখেছে রায়হান। বিরক্ত হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে প্রাপ্তি। তখন থেকে আবার শুরু হয়েছে ফোনের ওপর জুলুম। একের পর নতুন নাম্বার থেকে ফোন দিচ্ছে আর প্রাপ্তি ব্লক করে রাখছে। বিরক্ত হয়ে সিমও খুলে ফেলল। রায়হান তাতেও সন্তুষ্ট হলো না। এবার সে হোয়াটসএপে ঐসব নাম্বার থেকে কল, ম্যাসেজ করতে থাকে, ফেসবুকে কমেন্ট করে, ম্যাসেজ করে। প্রাপ্তি আর এসব নিতে পারছিল না। সে হোয়াটসএপ আনইন্সটল করে ফেসবুক আইডিও ডিএক্টিভেট করে রাখে। কেউ ওর সাথে যোগাযোগই করতে পারবে না। ভাগ্যিস বাড়িতে ওয়াইফাই আছে। তাই বোরিংনেস কাটাতে সে ইউটিউবে গিয়ে গান, মুভি, ভিডিয়ো দেখতে থাকে। তবে কোনো কিছুতেই স্বস্তি পায় না। এভাবে কতদিনই বা সে ঘরবন্দি হয়ে থাকবে? কতদিন সে সবার সাথে যোগাযোগ অফ রাখবে?
রায়হানের এমন পাগলামি দেখে খারাপও লাগে। আবার সে এটাও বুঝতে পারে যে, এই পাগলামিগুলো ভালোবাসা নয়। রায়হানের মনের ভেতর চেপে থাকা রাগ ও জেদ। সত্যিকার অর্থে সে প্রাপ্তিকে ভালোবাসে না এটা প্রাপ্তি ওর চোখ দেখেই বুঝেছে। এছাড়া রায়হানের হাভভাব কিংবা কথাবার্তায়, আচরণে কোত্থাও ভালোবাসার আভাস অনুভব করেনি। বিষয়টা সে ওর বাবা-মাকেও জানিয়েছে। দ্বিতীয় একটা সুযোগ চাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো রকম হ্যা’রা’জ করে না বলে তারা ভেবেছিল হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুই তো ঠিক হয়নি। তাই প্রাপ্তির বাবা বলেছেন, রায়হান যদি ফের বিরক্ত করে তাহলে তারা পুলিশের কাছে যাবে। প্রাপ্তি এসব পুলিশি ঝামেলায় জড়াতে চাইছিল না। এলাকায় তাদের একটা সম্মান রয়েছে। মানুষজন কীভাবে তিল থেকে তাল বানিয়ে ফেলবে এটা সকলের ধারণারও বাইরে। প্রাপ্তির সাথে সুমনা বেগমও একমত পোষণ করেন। কিন্তু দ্বিতীয় কোনো রাস্তাও তো নেই রায়হানকে সরানোর। তাই প্রাপ্তি ভাবে এবার সে নিজে রায়হানের সাথে কথা বলবে এবং সুন্দর করে বোঝাবে।
পূণরায় ফোনে সিম তুলে রায়হানকে ফোন করে। নিজে থেকেই দেখা করতে বলে। বিকেল চারটা নাগাদ ভার্সিটির সামনে থাকা রেস্টুরেন্টে দুজনে দেখা করে। প্রাপ্তি যাওয়ার আগেই রায়হান অপেক্ষা করছিল। প্রাপ্তি নিঃশব্দে গিয়ে রায়হানের সামনের চেয়ারে বসে।
‘কেমন আছো?’ জিজ্ঞেস করে রায়হান।
‘ভালো আর থাকতে দিচ্ছ কোথায়?’
রায়হান বাঁকা হাসে। চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে বসে বলে,’ব্যাক করতে বাধ্য হলে তাহলে?’
‘তোমায় কে বলল আমি ব্যাক করতে এসেছি? আমি সবকিছু মিটমাট করতে এসেছি।’
রায়হানের কপালে ভাঁজ পড়ে। হাসার চেষ্টা করে বলে,’মানে?’
‘মানে খুব সহজ। তোমার এইসব পেইন আর নেওয়া যাচ্ছে না। আমি বিরক্ত। তোমার প্রতি যেই অনুভূতি আমার ছিল সেটা আর নেই সেদিনের পর থেকে। কেন বুঝতে চাইছ না এই বিষয়টা? ভালোবাসি না আর আমি তোমাকে।’
রায়হান ক্রুর হেসে বলে,’তোমায় কে বলল ভালোবাসার জন্য আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাইছি?’
প্রাপ্তি অপ্রস্তুত হয়ে বলে,’মানে?’
‘তার আগে এটা বলো তো, আমার চোখে কি তুমি তোমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাও?’
‘না।’
‘জানি। কারণ আমি যে তোমায় ভালোবাসিই না! যদি ভালোবাসতাম তুমি বুঝতে পারতে। তখন আর আমার থেকে দূরে থাকতে পারতে না। তুমি সব বোঝো বলেই নিজেকে স্ট্রং করে রাখতে পারছ। কিন্তু আমার যে তোমাকে চাই-ই। তোমাকে পাওয়ার জন্য কী না করেছি? বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত নিয়ে গেলাম সেখানেও আদনান বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। এখন আর কোনো ঝামেলা আমি চাচ্ছি না প্রাপ্তি। তুমি যদি বলো বিয়ে করবে তাহলে আমি তাতেও রাজি। যদি বলো বিয়ে করবে না, তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু কথা একটাই তোমাকে আমার চাই; সেটা এক রাতের জন্য হলেও!’
প্রাপ্তি স্তব্ধ হয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েক সেকেণ্ড বাদে সজোরে থা’প্পড় বসায় রায়হানের গালে। রেস্টুরেন্টের উপস্থিত সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছে অপমানে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ভেবেছিলাম অল্পকিছু মনুষ্যত্ব হলেও তোমার মাঝে আছে। কিন্তু এখন তো দেখছি তুমি বিকৃতি মস্তিষ্কের মানুষ। তোমার কি ধারণা তুমি ঠান্ডা মাথায় থ্রেড দিলেই আমি ভয় পেয়ে যাব? রাজি হয়ে যাব? ভেবেছিলাম তোমায় বুঝিয়ে বললে তুমি বুঝবে। কিন্তু এখন দেখছি তুমি শোধরানোর মতো ছেলে নও। এবার সত্যিই আমি পুলিশের সাহায্য নেব।’
প্রাপ্তি বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। বাড়িতে না গিয়ে সোজা ফিরোজ ইসলামের অফিসে যায়। পথেই সে বাবাকে ফোন করে রাখে। ওখান থেকে বাবা-মেয়ে থানায় যায়। একটা মানুষকে বারবার সুযোগ দেওয়া ঠিক নয়। এটাও এক ধরণের অন্যায়।
ফিরোজ ইসলাম আর সুমনা বেগম চিন্তায় পড়ে যান। কতদিন এভাবে তারা প্রাপ্তিকে সামলে রাখবে? খারাপ মানুষেরা কতভাবেই তো ক্ষতি করতে পারে। কাছের আত্মীয়-স্বজনরা বুদ্ধি দেয় প্রাপ্তিকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য। প্রথম প্রথম একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলেও পরে তারাও এই সিদ্ধান্তে অটল হয়। ভালো একটা ছেলে খুঁজতে থাকে সবাই প্রাপ্তির অজান্তেই।
থানায় যাওয়ার পর থেকে রায়হান আর ফোন দেয়নি। বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় দেখাও হয়নি। প্রাপ্তির মাঝে মাঝেই ইচ্ছে হয় আদনানের সাথে একটু কথা বলার। কিন্তু আদনান তো আদনানই। ভীষণ ব্যস্ত মানুষ সে। ও চলে যাওয়ার পর যে এতকিছু হয়ে গেল তবুও একটাবার ফোন দিয়ে প্রাপ্তির সাথে কোনো কথা বলেনি। সুমনা বেগম আর ফিরোজ ইসলামের সাথেই ফোনে যা আলাপ করার করেছে। প্রাপ্তিকে একটু ফোন দিলে কী-ই বা এমন হয়?
.
সন্ধ্যায় রুমে বসে ড্রয়িং করছিল প্রাপ্তি। তার আর্ট করার হাত বেশ ভালো। তাই মাঝে মাঝেই সে রং, তুলি, পেপার, পেনসিল এসব নিয়ে বসে। মন খারাপ হলেও আর্ট করতে বসে। এতে সুবিধা এইযে, যতক্ষণ আর্ট করে ততক্ষণ মন আর অন্য কোথাও যায় না।
সুমনা বেগম মেরুন রঙের একটা শাড়ি এনে বললেন,’কী করছিস? আর্ট করছিস? পরে করিস। উঠে আয় এখন।’
প্রাপ্তি সোজা হয়ে বলল,’কেন? শাড়ি এনেছ কেন? কোথাও যাবে নাকি?’
‘আরে না! কিছু মেহমান আসবে।’
‘তো শাড়ি কেন?’
‘তোকে দেখতে আসবে।’
প্রাপ্তি চোখ দুটো কপালে তুলে বলে,’এসবের মানে কী? তোমরা সত্যি সত্যি আমাকে বিয়ে দিতে চাইছ?’
‘অসুবিধা কী? আর কেন চাচ্ছি তুই নিজেও সেটা ভালো করে জানিস।’
‘রায়হান তো এখন আর আমাকে বিরক্ত করে না, মা।’
‘এখন করে না মানে যে পরেও করবে না তার গ্যারান্টি কী? বিপদ কখনো বলে-কয়ে আসে না প্রাপ্তি।’
‘মা প্লিজ! তাই বলে বিয়েই একমাত্র সমাধান নয় নিশ্চয়ই?’
‘তোর কথা পরে শুনব। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। তোর বাবা উনাদের এগিয়ে আনতে গেছে।’
এখন তর্ক করলে যে ঝামেলা বাড়বে প্রাপ্তি সেটা ভালো করেই জানে। তবে যা-ই হয়ে যাক না কেন, সে বিয়ে করতে চায় না এখন-ই। তার ইনটেনশন অন্যকিছু। জীবনে ভালো কিছু করার পাশাপাশি একটা অনাকাঙ্ক্ষিত সত্যি হচ্ছে সে আদনানকে ভালোবাসে। এতদিন এটা সে বুঝত আর আজ সেটা আরো বেশি উপলব্ধি করতে পারছে। যতবার সে কল্পনা করছে অন্য কারো সাথে তার বিয়ে হয়ে যাবে, ততবার তার বুক কেঁপে ওঠে। অসহ্য যন্ত্রণা হয়। সে আদনানকে ছাড়া অন্য কাউকে কী করে বিয়ে করবে?
প্রাপ্তিকে সাজিয়ে-গুজিয়ে ছেলেপক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কয়েকজন-ই এসেছে। শুধু ছেলে বাদে। সবাই বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করে প্রাপ্তিকে। ভদ্রতা হোক বা সৌজন্যের খাতিরে হোক; প্রাপ্তি সব প্রশ্নের উত্তর দেয় ঠিকঠাক। সবার-ই প্রাপ্তিকে পছন্দ হয়। যাওয়ার আগে তারা স্পষ্টভাবে-ই বলে যায়, প্রাপ্তিকে তাদের পছন্দ হয়েছে এবং তারা ওদেরকেও বাড়িতে দাওয়াত করে ছেলে দেখার জন্য।
.
.
রুমে এসে শাড়ি-চুড়ি সব খুলে নরমাল ড্রেস পরে শুয়ে ছিল প্রাপ্তি। সুমনা বেগম খুশি খুশি মনে রুমে আসেন। তার হাতে কয়েকটা ছবি। প্রাপ্তি শোয়া থেকে উঠে বসে। সুমনা বেগম প্রাপ্তির চিবুক ছুঁয়ে চুমু খেয়ে বলেন,
‘আমার সোনার টুকরা মেয়ে! সবার পছন্দ হয়েছে তোকে।’
প্রাপ্তি মলিন মুখে দৃষ্টি নত করে বসে আছে। তিনি ছবিগুলো প্রাপ্তির হাতে দিয়ে বললেন,’ছেলের ছবি। দেখ, সুন্দর আছে।’
তিনি চলে যাওয়ার পর অনিচ্ছায় ছবিটিতে একবার চোখ বুলাল প্রাপ্তি। হ্যাঁ, ছেলেটি আসলে-ই সুন্দর। কিন্তু সৌন্দর্যে কী আসে যায়? সে তো ভালোবাসে আদনানকে। আচ্ছা আদনান কি জানে প্রাপ্তির যে বিয়ের কথাবার্তা চলছে? সে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে আদনানকে কল করে। কিন্তু নাম্বার বন্ধ। সারা রাতেও আদনানের নাম্বার আর খোলা পাওয়া যায়নি। পরেরদিন সকালে নাম্বার তো খোলা পাওয়া গেছে, কিন্তু কথা হয়নি। প্রাপ্তির কথা শোনার আগেই আদনান বলেছে,
‘অফিসে আছি প্রাপ্তি। ভীষণ ব্যস্ত এখন। একটা প্রজেক্ট নিয়ে খুব সমস্যায়ও আছি। চাকরীটা নাও থাকতে পারে বুঝলি! একটু দোয়া করিস প্লিজ।’
প্রাপ্তির উলটো মন খারাপ হয়ে গেল আদনানের কথা শুনে। নিজের মন খারাপের কথাটি আর বলা হয়ে উঠল না। শুধু ছোটো করে বলল,’আচ্ছা।’
ভার্সিটিতে গিয়ে তৃধা আর অঙ্কিতাকেও বিয়ের কথা শেয়ার করল প্রাপ্তি। সব শুনে ওরা দুজনও বলে,
‘বিয়েটা করে ফেললেই তো ভালো হয় প্রাপ্তি। যা শুনলাম ছেলের অবস্থা তো ভালোই। বিয়ের পরও পড়াশোনা করা যায়। তাহলে আর সমস্যা কী বল?’
প্রাপ্তি করুণ দৃষ্টিতে তাকায় বান্ধবীদের দিকে। সবাই ওর ভালোটাই দেখছে। কিন্তু কেউ মনের খবরটা জানতে চাইছে না, বুঝতে চাইছে না। সে মুখ ফুটে এই কথাটি বলতেও পারছে না কাউকে। সে না হয় আদনানকে ভালোবাসে। কিন্তু আদনান! আদনানও কি প্রাপ্তিকে ভালোবাসে?
.
প্রাপ্তির সাথে আদনানের কথা হলো রাতে। অনেক ভয়ে ভয়ে আদনানকে ফোন করেছে। ভেবেছে রাগ-টাগ দেখাবে। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। উলটো আদনান বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে-ই জিজ্ঞেস করেছে,
‘কী ব্যাপার? কেমন আছিস?’
প্রাপ্তি ছোটো করে বলল,’ভালো। তুমি?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্।’
‘খেয়েছ?’
‘হ্যাঁ।’
কথা আগাচ্ছিল না। আদনান বোধ হয় এখনো কিছু নিয়ে ব্যস্ত। প্রাপ্তি একটুখানি সময় চুপ করে থেকে বলল,
‘গতকাল পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল আমায়। রায়হানের জন্য সবাই চাচ্ছে আমায় বিয়ে দিয়ে দিতে।’
আদনান ভাবলেশহীনভাবে বলল,’জানি।’
অবাক হয় প্রাপ্তি। জেনেও এত স্বাভাবিক রিয়াকশন। সে বিস্মিতকণ্ঠে-ই জানতে চাইল,’তুমি জানো?’
‘সব-ই জানো। ছেলে এবং ছেলের পরিবার তোকে অনেক পছন্দ করেছে। তোর বাড়ির লোকজনেরও ছেলেকে এবং ওর পরিবারকে ভালো লেগেছে। আজকে ছেলে দেখতে গেছিল তোর বাবা জানিস? কাল-পরশু বিয়ের জন্য ফাইনাল ডেটও ফিক্সড করে ফেলবে। আর তোর জন্য একটা সুখবরও আছে। বিয়ের পর বরের সাথে পার্মানেন্ট কানাডায় থাকবি। আরামে, সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাবি। কী কপাল রে তোর প্রাপ্তি!’
প্রাপ্তি স্তব্ধ ও বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। আদনানের কথা বলার ভঙ্গিতে-ই বোঝা যাচ্ছে, প্রাপ্তির বিয়ে হবে শুনে সেও খুশি। আদনান একটু আনমনা স্বরে বলল,
‘ভাবতেই কেমন অবাক লাগে তাই না? সেই ছোট্ট প্রাপ্তি নাকি এত বড়ো হয়ে গেছে যে, তার এখন বিয়েও হবে।’
প্রাপ্তি ফোনের লাইন কেটে দিলো। আর কিছু বলার নেই তার। আদনান দু’বার কল ব্যাক করা সত্ত্বেও প্রাপ্তি আর ফোন রিসিভ করেনি। দু’চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। বুক ভেঙে কান্না পাচ্ছে তার। কেন এত কষ্ট হচ্ছে কে জানে! আদনান না ভালোবাসুক তাতে তো সমস্যা নেই। কিন্তু আদনান ব্যতীত অন্য কাউকে সে বিয়ে করবে এটা তো ভাবতেই পারছে না। কল্পনা করাও দুষ্কর।
_____________
ঘুমানোর আগে সুমনা বেগম প্রাপ্তির রুমে একবার আসেন। মন খারাপ করে শুয়ে ছিল প্রাপ্তি। সুমনা বেগম পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
‘ছেলেকে দেখে এসেছে আজ তোর বাবা। ছেলে ভদ্র, সুন্দর। পরিবারও অনেক ভালো। দুই পরিবারের-ই সম্মতি আছে। ছেলেও তোকে খুব পছন্দ করেছে। রায়হানের সাথে তোর এখন আর সম্পর্ক নেই জানি। কিন্তু তবুও জানতে চাচ্ছি, তুই কি রায়হানকে এখনো ভালোবাসিস কিংবা অন্য কাউকে?’
প্রাপ্তির চোখের কোণা বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। চোখের দৃশ্যপটে আদনানের মুখটি ভেসে ওঠে। গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’না।’
‘যাক, আলহামদুলিল্লাহ্। বিয়েতে অমত আছে?’
‘না।’
‘আলহামদুলিল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ্।’ বলে তিনি প্রাপ্তির মাথায় চুমু খেয়ে বললেন,
‘ছেলে তোকে ফোন দিবে আজ। কথা বলিস। আর তোরা কাল সময়-সুযোগ বুঝে দেখা করে নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিস।’
প্রাপ্তি আর কিছুই বলল না। সুমনা বেগম যাওয়ার আগে রুমের লাইট নিভিয়ে দিয়ে যায়। অন্ধকার রুমে হুহু করে কেঁদে ওঠে প্রাপ্তি।
চলবে…