#আমার_একলা_আকাশ
#পর্ব_৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
বইখাতা সব গুছিয়ে খুব ধীরেসুস্থেই ড্রয়িংরুমের দিকে এগুলো প্রাপ্তি। অথচ আদনানকে দেখার আকুতি, বুকের ভেতর বয়ে চলা ঝড় সবকিছুই হচ্ছে প্রচণ্ড গতিতে। তবুও সে নিজেকে বাইরে থেকে সহজ এবং সাবলীল দেখাচ্ছে অথবা নিজেকে খুব স্বাভাবিক প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।
প্রাপ্তি দূর থেকেই দেখতে পেল আদনান আর শান্ত হেসে হেসে কথা বলছে। অচেনা কেউ দুজনকে এখন দেখলে ভেবেই বসবে যে, দুই বন্ধু গল্প করছে; যাদের বন্ধুত্বও আবার ভীষণ গাঢ়। সুমনা বেগম ট্রে হাতে নিয়ে কিচেন থেকে বের হচ্ছিলেন। প্রাপ্তিকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
‘এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
তার কণ্ঠস্বরকে উদ্দেশ্য করেই আদনান এবং শান্ত দুজনেই প্রাপ্তির দিকে ফিরে তাকায়। প্রাপ্তিও একবার সেদিকে তাকিয়ে দৃষ্টি নামিয়ে নিল।
‘এটা নিয়ে যা।’ প্রাপ্তির হাতে খাবারের ট্রে ধরিয়ে দিয়ে সুমনা বেগম ফের রান্নাঘরে চলে গেলেন।
প্রাপ্তির হাত অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছিল। এমনকি সামনে আগাতে গিয়ে খেয়াল হলো তার পা-ও কাঁপছে। অথচ এমনটা কেন হচ্ছে সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছে না। সামনে গিয়ে সে চায়ের কাপ আগে শান্তর দিকে এগিয়ে দেয়। শান্ত কাপটি হাতে নিয়ে বলল,
‘আপনার হাত কাঁপছে কেন?’
প্রাপ্তি অস্বস্তিতে একটু হাসার চেষ্টা করল। শান্ত মৃদুভাবে প্রাপ্তির হাত ধরে পাশে বসাল। ক্ষীণস্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘অসুস্থ আপনি? চোখ-মুখ এমন কেন? মনে হচ্ছে শরীর দুর্বল।’
‘না, না ঠিক আছি আমি।’ বলে অন্য চায়ের কাপটি তুলতে যাওয়ার আগেই আদনান বলল,
‘তুই বোস। আমি নিয়ে নিচ্ছি।’
প্রাপ্তি কিছুটা স্থির হয়ে বসে রইল। অনেকটা কাঠের পুতুলের মতোই বলা চলে। সে না তাকিয়েও স্পষ্ট বুঝতে পারছিল চার জোড়া তীক্ষ্ণ চোখ তাকেই জরিপ করছে।
সে অস্বস্তিকর মুহূর্ত এড়াতে দুজনের উদ্দেশ্যেই বলল,’চা তো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।’
দুজনে এবার চায়ের কাপে চুমুক দেয়। আদনান ওদেরকে স্পেস দিয়ে চায়ের কাপ নিয়েই রান্নাঘরে সুমনা বেগমের কাছে চলে যায়। শান্ত তখন বলে,
‘আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?’
‘আমি? কই না তো!’
‘তাহলে এমন লাগছে কেন? ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া’ও বোধ হয় করছেন না।’
‘না আসলে সামনে পরীক্ষা তো তাই আরকি…’
‘পরীক্ষা তো কী হয়েছে? খাওয়া-দাওয়া সব বাদ দিয়ে শুধু টেনশন করলেই হবে? প্লিজ প্রাপ্তি! নিজের যত্ন নেবেন।’
প্রাপ্তি তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল। প্রত্যুত্তরে শান্তও মৃদু হাসে। সে পাশ থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে বলে,
‘এটা আপনার জন্য।’
‘কী আছে এখানে?’ প্যাকেট হাতে নিয়ে জানতে চাইল প্রাপ্তি।
‘শাড়ি।’
‘হঠাৎ শাড়ি কেন?’
‘মনে হলো শাড়িটিতে আপনাকে অনেক মানাবে। আপনার পছন্দ না হলে পরার দরকার নেই।’
প্রাপ্তি শাড়িটা না দেখেই শান্তর মন রক্ষার্থে বলল,’অবশ্যই পছন্দ হবে। আর শাড়িটা আমি পরবও।’
শান্ত হেসে বলল,’মাই প্লেজার।’
এরপর সে হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলল,’এখন আমায় যেতে হবে। একটা কাজ আছে।’
‘খেয়ে যাবেন না?’
‘উঁহু! অন্য একদিন।’
শান্ত সুমনা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে আদনানকেও বলে যায় যোগাযোগ রাখার জন্য। প্রাপ্তি রুমে চলে যাওয়ার সময় আদনান পেছন থেকে ডেকে বলে,
‘এটা নিবি না?’
প্রাপ্তি পিছু ফিরে তাকায়। আদনানের হাতে শাড়ির প্যাকেট। সে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার এগিয়ে আসে। আদনান ততক্ষণে প্যাকেট খুলে শাড়িটা বের করে উচ্ছ্বাসিতকণ্ঠে বলে,’ওয়াও!’
প্রাপ্তি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আদনান ফের বলল,’শাড়িটা ভীষণ সুন্দর হয়েছে রে প্রাপ্তি। তোকে দারুণ মানাবে।’
প্রাপ্তি কোনো প্রকার বাক্য বিনিময় না করেই নিজের রুমে ফিরে আসে। আদনানও যায় যায় পিছু পিছু।
‘এভাবে চলে আসলি কেন?’ জানতে চাইল আদনান।
প্রাপ্তি কিছু না বলেই খাটের ওপর থেকে বইগুলো নিয়ে স্টাডি টেবিলে রাখছিল। উত্তর না পেয়ে প্রাপ্তিকে টেনে আয়নার সামনে দাঁড় করায় আদনান। বিরক্তিতে প্রাপ্তি সরে যেতে চাইলে আদনান পেছন থেকে শাড়িটি প্রাপ্তির মাথায় দিয়ে মুখটা আয়নার দিকে ধরে বলে,
‘দেখ-ই না একবার, সত্যিই তোকে কত সুন্দর লাগছে শাড়িটিতে।’
আয়নার দিকে তাকাতেই বিরক্তিতে কুঁচকে থাকা চোখ-মুখ স্বাভাবিক হয় তার। মাথার ওপর থাকা সোনালী পাড়ের আকাশী শাড়িটি তার নজর কাড়েনি। তার দৃষ্টি তো আটকে আছে আদনানের হাস্যোজ্জ্বল মুখটির দিকে। সে বুকের ভেতর প্রচণ্ড চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে। কোনো কিছু না ভেবেই বলে ফেলে,
‘ভালেবাসি! ভালোবাসি আদনান।’
আদনানের হাসি হাসি মুখটা নিভে যায় যেন। শাড়িটি রেখে সরে দাঁড়ায়। প্রাপ্তি মাথা নত করে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছে। পরক্ষণেই আদনান হাসতে হাসতে বলে,
‘বাপরে! শান্ত ভাইয়াকে এখনই এত ভালোবাসিস?’
প্রাপ্তি চোখ তুলে তাকায় আদনানের দিকে। কিন্তু অবাক হয় না। সে তো আদনানকে চেনে। তার এই স্বভাবও সে জানে। তাই শাড়িটি বিছানার ওপর রেখে আবারও বইগুলো হাতে নেয়। আদনান বলে,
‘তুই আমাকে এমন ইগনোর করছিস কেন?’
‘ইগনোর কেন করব?’
‘অবশ্যই ইগনোর করতেছিস।’
‘তোমার কেন মনে হচ্ছে আমি তোমায় ইগনোর করছি?’
‘তোর ব্যবহারে।’
‘ওহ আচ্ছা।’
‘কী আশ্চর্য! কথা বলার ধরণও কেমন পাল্টে গেছে তোর।’
প্রাপ্তি এবার আদনানের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,’তাই? জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটাকেই পাল্টে যখন অন্য একজনের হতে হচ্ছে, তখন কথা আর এমন কী?’
আদনান বুঝতে না পেরে বলল,’মানে? কী বললি কিছুই বুঝলাম না।’
‘কিছু বলিনি। এঙ্গেজমেন্টের অনুষ্ঠানে আসোনি কেন?’
‘ওহ তুই এজন্য রেগে আছিস? কাজের খুব প্রেশার ছিল রে।’
‘এখন হঠাৎ এলে কেন?’
‘একটা চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিতে। চাকরীটা যদি হয়ে যায় তাহলে ঢাকাতেই চলে আসব।’
‘তাহলে তোমার পড়াশোনা?’
‘পরীক্ষার সময় গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসব। ফ্রেন্ডের বাসায়ও থাকতে পারব ঐ কয়েকটা দিন। ওটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’
‘ভালো।’
.
.
আদনান চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিয়ে পরের দিনই আবার চট্টগ্রাম ফিরে গিয়েছে। তার পাঁচদিন পর-ই শান্ত কানাডায় ব্যাক করেছে। সেদিন এয়ারপোর্টে যাওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার জন্য প্রাপ্তি যেতে পারেনি। শান্ত অবশ্য কানাডায় পৌঁছিয়ে প্রাপ্তিকে ইনফর্ম করেছে। দেশে থাকাকালীন সময়ে শান্ত যতটা ফ্রি ছিল, কানাডায় যাওয়ার পর তার ব্যস্ততা দ্বিগুণ বেড়েছে। যেহেতু বিয়ের জন্য দু’মাস পর আবার তাকে বাংলাদেশে আসতে হবে তাই এখন কাজের প্রেশারও বেশি। তিনবেলা নিয়ম করে কথা বলার সুযোগ না হলেও প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে নিয়ম মেনেই প্রাপ্তিকে কল করে সে। নিয়মের ব্যাঘাত ঘটে প্রাপ্তির বেলাতে এসে। মাঝে মাঝে সে এড়িয়ে যায়। কথা বলতে ইচ্ছে করে না। প্রচণ্ড অনিহা নিয়ে কথাও চালিয়ে যাওয়া যায় না। অথচ কিছুদিন পর থেকে এই মানুষটার সাথেই তাকে সারাজীবনের জন্য থাকতে হবে। তাই প্রাপ্তিও চেষ্টা করছে শত কষ্টের পরও মানিয়ে নিতে।
আদনানের ঐ চাকরীটা হয়নি। তবে এর মাঝেও এসে সে আরো কয়েকটা চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিয়ে গেছে। বন্ধুদের অন্যান্য চাকরীর জন্য খোঁজ-খবরও রাখতে বলে গেছে। প্রাপ্তি নিজেও পড়াশোনা নিয়ে নিজেকে বিজি রাখার চেষ্টা করছে। একটু দম নিতে, ফ্রেশ মুডে থাকার জন্য তৃধা, অঙ্কিতা আর সে মিলে গ্রুপ স্টাডি করছে। কখনো নিজের বাসায় আবার কখনো দুই বান্ধবীর বাসায়। আজ তৃধার বাসায় গিয়েছিল গ্রুপ স্টাডি করার জন্য। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে বাড়িতে ফিরে আসে।
বাড়ি ফিরে ফিরোজ ইসলামকে বাসায় দেখে একটু অবাক-ই হয়। কেননা তার বাবা ভীষণ ব্যস্ত মানুষ এবং পরিশ্রমী। ছোটোবেলা থেকেই পরিশ্রম করে আসছে লোকটি। এখনো ক্ষান্ত হয়নি। চাকরীর পাশাপাশি একটা ব্যবসাও করে সে। তার অদম্য পরিশ্রমের ফলেই প্রাপ্তি এবং সবাই আরাম-আয়েশে জীবন-যাপন করতে পারছে। সুমনা বেগম শিক্ষিত মেয়ে। প্রাপ্তি হওয়ার আগ অব্দি একটা স্কুলে চাকরী করলেও, প্রাপ্তি পেটে আসার পর ফিরোজ ইসলাম আর তাকে কাজ করতে দেননি। সুমনা বেগমের হাত ধরে অনুরোধ করে নরমস্বরে বলেছিলেন,
‘সুমনা, তোমার শখ ও স্বপ্নকে আমি সম্মান করি। সবসময়ই আমি তোমার পাশে ছিলাম। এখনো আছি আর ভবিষ্যতেও থাকব। কিন্তু তোমার কাছে আমার একান্তই অনুরোধ, তুমি এখন আর বাইরে কোনো কাজ কোরো না। আমাদের সন্তানকে সময় দাও। ফ্রি সময় কাটাও প্লিজ!’
সুমনা বেগম রাজি হয়েছিলেন। প্রাপ্তি হওয়ার পরও ফিরোজ ইসলাম তাকে কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ তিনি চাননি তার সন্তান বাবা-মা উভয়েরই অনুপস্থিতিতে বড়ো হোক। যেহেতু ফিরোজ ইসলাম কাজের জন্য সবসময় বাইরেই থাকেন, সেহেতু প্রাপ্তিকে সার্বক্ষণিক সময় দেওয়ার জন্য সুমনার প্রাপ্তির কাছে থাকা উচিত। সুমনা বেগমও কোনো প্রকার জেদ করেনি। তিনি মন প্রাণ সবকিছু স্বামী-সংসার আর সন্তানের জন্যই উজাড় করে দিয়েছেন। এসব কথা প্রাপ্তি তার মায়ের থেকেই শুনেছিল। আগে প্রায়-ই পুরনো কথা উঠলে সুমনা বেগম তার সুখকর অতীতের ঘটনাগুলো মেয়েকে শোনাতেন।
প্রাপ্তি তার বাবার পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,’আব্বু? কী হয়েছে?’
এতক্ষণ চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে ছিলেন তিনি। প্রাপ্তির উপস্থিতি টের পেয়ে বললেন,’কিছু না তো! কখন এলি মা?’
‘মাত্র-ই। বলো কী হয়েছে? তোমাকে এত চিন্তিত লাগছে কেন?’
‘তেমন কিছু না। শরীরটা একটু খারাপ লাগছে।’
‘লাগবে-ই তো। নিজের শরীরের তো কখনো একটু যত্ন নাও না।’
সুমনা বেগম শরবতের গ্লাস এনে ফিরোজ ইসলামের হাতে তুলে দেন। অভিযোগেরসুরে মেয়ের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘তুই-ই বল কিছু। আমার কথা তো তিনি কখনো দামও দেন না।’
‘আহা! মেয়ের সামনে কী ছেলেমানুষি শুরু করলে?’ গ্লাসের শরবতটুকু এক চুমুকে শেষ করে বললেন ফিরোজ ইসলাম।
এরপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,’তোর পরীক্ষা কবে থেকে রে মা?’
‘সামনের সপ্তাহ্ থেকে।’
‘মন দিয়ে পড়। ভালো করে পরীক্ষা দিবি কেমন। যা গিয়ে এখন একটু রেস্ট কর।’
প্রাপ্তি আর কথা বাড়াল না। চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়। একটুখানি রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যার নাস্তা করে আবার পড়তে বসে। পরেরদিন থেকে-ই তার মনে হতে থাকে বাড়ির হাওয়া একটু যেন কেমন পাল্টিয়েছে। বাবার সঙ্গে সঙ্গে মাকেও কেমন চিন্তিত দেখাচ্ছে। সে মাকে বারংবার জিজ্ঞেস করে, খুঁচিয়েও কোনো কথা পেট থেকে বের করতে পারেনি। সতর্কতার সাথে সুমনা বেগম প্রাপ্তির প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গিয়ে বলতেন,
‘তুই অযথা চিন্তা করছিস। কিছু-ই হয়নি। তুই গিয়ে পড়তে বোস।’
প্রাপ্তির বুঝতে কষ্ট হতো না যে, বাবা-মা তার থেকে কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু কী লুকাচ্ছে সে এটা-ই বুঝতে পারছে না। উপায়ন্তরহীন হয়ে সে মামা-মামির কাছে যায়। তবে তাদের থেকেও সে আশাজনক কিছু জানতে পারেনি। এদিকে তার পরীক্ষাও শুরু হয়ে যায়। আপাতত সে বহিরাগত সব চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে পরীক্ষায় ফোকাস করার চেষ্টা করে। কয়েকটা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর-ই সে হাওয়া বদলের আভাস একটু একটু করে পেতে শুরু করে। প্রায়-ই বাড়িতে লোকজন আসছে। সে রুম থেকে ফিসফিসানি কথা শুনতে পায়। এদের মধ্যে সে কাউকে কাউকে চেনে। আবার কেউ কেউ অচেনা। ঘন ঘন এই লোকগুলো কেন আসছে বাড়িতে সে কিছুতে-ই বুঝতে পারছে না।
আজ বাড়িতে যে-ই মধ্য বয়স্ক লোকটা এসেছে তাকে প্রাপ্তি চেনে। বেশ চেঁচামেচির শব্দ শুনে-ই সে পড়ার টেবিল ছেড়ে দৌঁড়ে ড্রয়িংরুমে যায়। এই লোকটার সাথে তার বাবার খুব সদ্ভাব ছিল। প্রাপ্তি তাকে মামা বলে ডাকে। এই লোক এমন উঁচু গলায় বাবার সাথে কেন কথা বলছে তাহলে? প্রাপ্তিকে দেখা মাত্র-ই সুমনা বেগম কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভেতরে যেতে বলেন। প্রাপ্তি তবুও সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। বাধ্য হয়ে সুমনা বেগন প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে রুমে এনে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়। সম্পূর্ণ ঘটনা প্রাপ্তির কাছে ভীষণ অদ্ভূত মনে হচ্ছে। সবাই মিলে তার থেকে কী লুকানোর চেষ্টা করছে? বাবার সাথে করা খারাপ আচরণগুলো বারবার মনে হতে থাকে তার। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। সে কিছুতে-ই পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না। এখনো তার দুটো পরীক্ষা বাকি আছে।
সুমনা বেগম সন্ধ্যায় যখন প্রাপ্তিকে নাস্তা দিতে আসেন, তখন প্রাপ্তি দেখতে পায় তার চোখ-মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। প্রাপ্তি মায়ের হাত চেপে ধরে। প্রচণ্ড জেদ ধরে সত্যিটা জানার জন্য। বরাবরের মতো এবারও সুমনা বেগম প্রাপ্তিকে এড়িয়ে যায়। এসব ট্রমা আর প্রাপ্তি নিতে পারছিল না। চিন্তায় চিন্তায় ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। কোনো রকমভাবে নেক্সট পরীক্ষাটা দেয়। তবে এই পরীক্ষাটি তার গত হওয়া পরীক্ষাগুলো থেকে অনেক খারাপ হয়েছে।
একবার মনে হয়েছে আদনান কিংবা শান্তর কাছে জানতে চাইবে, ওরা কিছু জানে কিনা। পরক্ষণে-ই মনে হলো কী হয়েছে অথবা কী হচ্ছে এসব বাড়িতে থেকেও প্রাপ্তি জানতে পারছে না। আর ওরা এতদূর থেকে কী করে জানবে? রুমানা বেগমের থেকেও প্রাপ্তি কিছু-ই জানতে পারেনি। ভালোবাসার ডিপ্রেশন পেরিয়ে এবার যেন পারিবারিক ডিপ্রেশন তাকে পেয়ে বসল। বাবা-মায়ের লুকিয়ে কান্না করা, কষ্ট পাওয়া এগুলো প্রাপ্তি সহ্য করতে পারে না। তারও যে ভীষণ কষ্ট হয়। এমন কী হয়ে গেছে হঠাৎ করে? কেন বাবা-মা তাকে কিছু-ই বলছে না? লাস্ট পরীক্ষা দিয়ে নানান রকম চিন্তা-ভাবনা করতে করতে সে তৃধা আর অঙ্কিতার সাথে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির সামনে বাজারে রিকশা থেকে নেমে বেশ জটলা দেখতে পায়। দূর থেকে সে ফিরোজ ইসলামকেও দেখতে পায়। একজন লোক অকথ্য ভাষায় কথা শোনাচ্ছে ফিরোজ ইসলামকে। আর তিনি মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। প্রাপ্তি দৌঁড়ে গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ-ই সে কান্না করে ফেলে। ভিড়ের মধ্যে এখানে মেয়েকে দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন ফিরোজ ইসলাম। তৃধা আর অঙ্কিতাকেও সেখানে দেখে তিনি ওদেরকে বলেন প্রাপ্তিকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। কিন্তু প্রাপ্তি তো কিছুতে-ই এখান থেকে যাবে না তার বাবাকে রেখে। উপস্থিত কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে অকথ্য ভাষায় কথা বলা লোকটির উদ্দেশ্যে বলেন,
‘আচ্ছা এখন যাও। এইসব বিষয়ে পরে কথা বইলো। মাইয়াটা কাঁদতেছে।’
লোকটি থামল তো ঠিক-ই কিন্তু যাওয়ার আগে ফিরোজ ইসলামকে টাকার জন্য শাসিয়েও গেল। প্রাপ্তি তখনো কাঁদছিল। এত মানুষের সামনে অপমানিত হয়ে ফিরোজ ইসলামের চোখেও পানি টলমল করছিল। যারা আগে তাকে সালাম দিয়ে কথা বলত, তারা-ই এখন তার দুঃসময়ে যা তা বলে যাচ্ছে। সময় কত কিছু-ই না বদলে দেয়।
প্রাপ্তির বাবার শো-রুমে টিভি, ফ্রিজ এসবের বিজনেস ছিল। এতদিন সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও হঠাৎ করে-ই সে লসের মুখে পড়তে থাকে। ধার-দেনা করা শুরু করে তখন। এতে লাভ হওয়ার বদলে লস হয়ে যায় দ্বিগুণ। শো-রুমের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। চারদিকে শুধু ঋণ। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ঋণ রয়েছে মানুষজনের কাছে। নির্দিষ্ট একটা সময়ও সে চেয়ে নিয়েছিল। তবে এতগুলো টাকা সে জমাতে পারেনি আর শোধও করতে পারেনি। ব্যাংকে ছয় লক্ষ টাকা আছে; যেগুলো সে প্রাপ্তির বিয়ের জন্য তুলে রেখেছে। এদিকে প্রাপ্তির পরীক্ষা বলে কেউ-ই প্রাপ্তিকে এসব ঘটনা জানতে দেয়নি। এদিকে পাওনাদাররা টাকা না পেয়ে ফিরোজ ইসলামের ওপর চওড়া হয়ে উঠেছে। প্রত্যহ তারা বাড়িতে, রাস্তাঘাটে ফিরোজ ইসলামকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। ঋণ শোধ করার জন্য এতগুলো টাকা কে-ই বা তাকে দেবে? সবশেষে জানা গেল এই ঘটনা প্রাপ্তি আর পাত্রপক্ষ ব্যতীত সবাই জানত। আসাদ রহমান কিংবা আদনানের কাছেও এত টাকা নেই যে তারা কেউ সাহায্য করবে। ব্যক্তিগতভাবে আসাদ রহমান এমনিতে-ই প্রাপ্তির পরিবারকে পছন্দ করে না। তাই যতটুকু সাহায্য করা যায় ততটুকুও করতে নারাজ সে। গোপনে রুমানা বেগম তার কাছে জমানো পঞ্চাশ হাজারের মতো টাকা সুমনা বেগমের হাতে তুলে দিয়েছেন। আদনানও নিজের জমানো নব্বই হাজারের মতো টাকা পাঠিয়েছে। তবে এসব টাকা ঋণের তুলনায় কিছু-ই না। কথা তো আর লুকিয়ে থাকে না। ছেলের পরিবারের কানেও কথাগুলো চলে যায়। শান্ত সব জেনে দেড় লক্ষর মতো টাকা পাঠাতে চায়। তবে ফিরোজ রহমান শান্তর টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানান। বিষয়টা খুবই খারাপ দেখায়। শান্ত আশ্বস্ত করে বলে, পরবর্তীতে সব ঠিকঠাক হলে টাকাগুলো তাকে ফিরিয়ে দিলে-ই হবে। এভাবে সে কিছু টাকা জমাতে সক্ষম হলেও এখনো অনেক টাকা বাকি। কী করবে না করবে কিছু-ই বুঝতে পারছিলেন না। সেই সময়ে প্রাপ্তি এবং সুমনা বেগম বাড়িটা বিক্রি করে দিতে বলেন। হাতে যেই টাকাগুলো আছে আর বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করা হয়ে যাবে। একবার ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার কথা ভাবলেও মা-মেয়ে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। যেহেতু মাথার ওপর একটা ছাদ এখনো রয়েছে তাই অন্যত্র নতুন করে ঋণী হওয়ার দরকার নেই। ফিরোজ ইসলাম প্রথমদিকে বাড়ি বিক্রি করতে নারাজ হলেও এক পর্যায়ে পরিস্থিতি, প্রাপ্তি ও সুমনার কথায় রাজি হয়ে যায়।
বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করলেও এদিকে তাদের জন্য নতুন কিছু যে অপেক্ষা করছিল সেটা এই পরিবার আন্দাজও করতে পারেনি। প্রাপ্তিরা এখন একটা ভাড়া বাসায় থাকে। সকলের থেকে অনেকটা-ই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে তারা। একদিন ছেলের বাড়ি থেকে ফোন আসে। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, এই বিয়ে হবে না। নিজেদের একটা বাসস্থান নেই এমন ভাসমান পরিবারের মেয়েকে তারা ছেলের বউ করতে পারবে না। কেননা শান্তদের স্ট্যাটাস আর প্রাপ্তিদের স্ট্যাটাস এখন আর এক নয়। এই কথা শুনে ফিরোজ ইসলাম আর সুমনা বেগমের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তারা শান্তর বাড়িতে গিয়ে ওর বাবা-মায়ের কাছে অনেক অনুরোধ করে বিয়েটা যাতে তারা না ভেঙে দেয়। কিন্তু তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল। তারা অন্যত্র মেয়ে দেখছে এবং সেখানে-ই শান্তর বিয়ের কথাবার্তা চলছে। এই প্রস্তাবে শান্তরও কোনো দ্বিমত নেই। অসহায় হয়ে শূন্য হাতে বাড়িতে ফেরে ফিরোজ ইসলাম আর সুমনা বেগম। মেয়ের বিয়ে ভাঙার কারণ হিসেবে বারবার নিজেকে দোষী বলতে থাকেন ফিরোজ ইসলাম। সে কোনোভাবে-ই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলেন না। এলাকায় এবার আরো একটা বদনাম রটে গেল। মেয়ের বদনাম যে বাবা হয়ে সহ্য করা যায় না! প্রাপ্তি চুপচাপ ছিল এতদিন। সে এবার বাবা-মায়ের রুমে যায়। বাবার হাত ধরে শান্তকণ্ঠে বলে,
‘কাঁদো কেন তুমি?’
ফিরোজ ইসলামের কান্না বাড়ে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। ক্রন্দনরতস্বরে বলেন,
‘মা রে, আমি যদি একবারও জানতাম বাড়ি বিক্রির জন্য তোর বিয়েটা ভেঙে যাবে তাহলে জীবন থাকতে বাড়িটা বিক্রি করতাম না।’
প্রাপ্তি শক্ত করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,’তুমি কেঁদো না বাবা। যা হয় ভালোর জন্য-ই হয়।’
প্রাপ্তি, মামা-মামি সবাই তাদেরকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করে। পরের দিন-ই প্রাপ্তি ব্যাংক থেকে দেড় লাখ টাকা তুলে শান্তকে পাঠিয়ে দেয়। সাথে ফোনে একটা টেক্সট করে,
‘দুঃসময়ে সাহায্য করার জন্য, পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ। আপনার টাকাগুলো পাঠিয়ে দিয়েছি। চেক করে দেখবেন।’
এর থেকে একটা বেশিও কথা সে লিখেনি। এমনকি বিয়ের প্রসঙ্গেও সে কোনো কথা বলেনি। কিছু জিজ্ঞেসও করেনি।
এলাকার অনেকের অনেক ধরণের কথা শুনেও প্রাপ্তি কোনো কিছুতে কান দেয় না। শহরে অবশ্য বিয়ে ভাঙা নিয়ে তেমন মুখরোচক গল্প হয় না। প্রাপ্তির দাদা-দাদি জীবিত নেই। তাদের আর্থিক অবস্থাও স্বচ্ছল ছিল না। যেটুকু সম্পত্তি ছিল দাদা-দাদির মৃত্যুর পর তিন ভাইয়েরা মিলে ভাগ করে নিয়েছে। ফিরোজ ইসলাম নিজের ভাগের জমিটুকু বিক্রি করে টাকা নিয়ে এসেছিল। এরপর একটু একটু করে টাকা জমিয়ে-ই সে এই বাড়িটা করেছিল। কত স্মৃতি আর কত হাড়-ভাঙা পরিশ্রমের ফল ছিল ঐ বাড়িটা তা ফিরোজ ইসলামের চেয়ে ভালো অন্য কেউ জানে না। চাচারা বিয়ে ভাঙার খবরটি শুনেছেন। তবে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য, ঐ দুঃসময়ে তারা একটা কানাকড়ি দিয়েও সাহায্য করেনি। এমনও নয় যে, তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বরং ফিরোজ ইসলামের চেয়ে তার বাকি দুই ভাইয়ের আর্থিক অবস্থা অনেক বেশি-ই ভালো। চাইলে-ই হয়তো তারা সাহায্য করতে পারত। কিন্তু করেনি। এসব ভাবলে-ই বুকচিরে একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
প্রাপ্তি নিজের খরচ চালানোর জন্য বাবার অগোচরে কয়েকটা টিউশনি করাচ্ছে। বাবা জানলে কখনো-ই করতে দেবে না। টিউশনিগুলো বাড়িতে গিয়ে পড়াতে হয়। একেকটা বাড়িও অন্য বাড়ি থেকে দূরে। রিকশা করে না গিয়ে বেশির ভাগ সময় সে পায়ে হেঁটে-ই যায়। মেয়ের এমন কষ্টের কথা জানতে পারলে ফিরোজ ইসলাম সহ্য করতে পারবেন না। প্রাপ্তি তার বাবা-মাকে বোঝায়, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তাদের সুসময় আবারও ফিরে আসবে।
__________
মাসের শেষের দিকে আদনান একেবারে ঢাকায় চলে আসে। এখন থেকে সে এখানে-ই চাকরী করবে। প্রাপ্তির বিয়ে ভাঙার খবর, বাড়ি বিক্রির খবর সব-ই সে শুনেছিল। সব জেনেও সে আসতে পারেনি। ইচ্ছে করে-ই আসেনি। এমন খারাপ সময়ে যে সে ওদের জন্য কিছু-ই করতে পারবে না। সামনে থেকে ঐ অসহায় মুখগুলোও সে দেখতে পারত না। বাড়িতে ফিরে প্রাপ্তিদের বাড়ির দিকে তাকাতে-ই বুকটায় কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। বাড়ির রং পাল্টানো হয়েছে। এছাড়া বাকি সব কিছু-ই আগের মতো রয়েছে। সব ঠিক আছে, শুধু প্রাপ্তিরা আর নেই।
দুপুরের দিকে রুমানা বেগমের থেকে প্রাপ্তিদের ভাড়া বাড়ির ঠিকানা নিয়ে বের হয়। বড্ড খারাপ লাগছিল তার। কোন মুখে সে প্রাপ্তির সামনে দাঁড়াবে? প্রাপ্তি কি তাকে ঘৃণা করে? করার-ই কথা! খারাপ সময়ে যারা পাশে থাকে না, তারা আবার কীসের বন্ধু!
বাড়িতে গিয়ে শুধু সুমনা বেগমকে পাওয়া গেল। বাসাটা মোটামুটি ধরণের বলা যায়। আদনানকে দেখে সুমনা বেগম ভীষণ খুশি হয়। ও’কে বসতে দিয়ে তিনি চা-বিস্কুট নিয়ে আসেন। কথায় কথায় সেই অতীতের প্রসঙ্গ আসে। সন্তর্পণে চোখের পানি মোছেন তিনি। ঋণ শোধ করেও প্রাপ্তির বিয়ের জন্য কিছু টাকা ব্যাংকে রেখে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে কাছের যারা টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল তাদের টাকা শোধ করে দিয়েছে। এমনকি আদনানের দেওয়া নব্বই হাজার টাকাও প্রাপ্তি রুমানা বেগমের হাতে দিয়ে এসেছে। এখন অল্প কিছু টাকা বেঁচে আছে। বেশি খরচা সংসারে করা হচ্ছে না। টাকা জমাতে হবে। অনেক টাকার প্রয়োজন। ফের বাড়ি করতে হবে। এতক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে আদনান সুমনা বেগমের কথা শুনছিল। তার মনটা উশখুশ করছিল প্রাপ্তিকে দেখার জন্য। না পেরে সে বলে-ই বসল,
‘প্রাপ্তি কোথায় আন্টি?’
তিনি আরও একবার শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছে বললেন,’টিউশনি করাতে গেছে।’
‘ও টিউশনি করায়?’
‘হ্যাঁ। এই অবস্থা দেখে এখন কয়েকটা টিউশনি নিয়েছে। ভীষণ কষ্ট হয়ে যায় মেয়েটার। তবুও করছে যাতে নিজের খরচটা অন্তত চালাতে পারে। তোর আঙ্কেল এসব জানে না।’
‘কখন আসবে প্রাপ্তি?’
‘ওর আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে। তোর কি তাড়া আছে আজ? না থাকলে থেকে যা। আমি রান্নাবান্না করি। রাতে একদম খেয়ে তারপর যাস।’
‘আচ্ছা।’
‘দুপুরে খেয়েছিলি?’
‘হ্যাঁ। তোমার ভাই-ভাবি তারা কোথায় থাকে এখন?’
‘ওরা পাশের বাড়িতে থাকে। তুই টিভি দেখ।’
কিছুক্ষণ টিভি দেখে, কিছুক্ষণ ফোন চেপে সময় পার করে আদনান। সন্ধ্যার আযানের সময় প্রাপ্তি আসে। দরজায় নক করার শব্দ শুনে আদনান নিজে গিয়ে-ই দরজা খুলে দেয়। সে অবাক হয় প্রাপ্তির রোদে পোড়া ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মুখটা দেখে। আদনানকে এখানে দেখে প্রাপ্তিও চমকে যায়। বিস্মিতকণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি! কখন এলে?’
আদনান কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল। সে তৎক্ষণাৎ কিছু-ই বলতে পারছিল না। ক্লান্ত প্রাপ্তির ফ্রেশ হওয়াটা জরুরী ছিল। গোসল না করলে এখন একদম স্বস্তি পাবে না। ঘামে শরীর চিটচিট করছিল। সে আদনানকে বলল,
‘তুমি একটু বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।’
আদনান তখনও কিছু বলল না। তার মনে হচ্ছে, হঠাৎ করে-ই প্রাপ্তি যেন অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে। পরিস্থিতি মানুষকে এভাবেও বদলে দেয়?
চলবে…