আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে-১২,১৩

0
497

#আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে-১২,১৩

#১২তম_পর্ব

“আমি হলফ করে বলতে পারি, ওই মেয়ের সাথে বিয়ে হলে আমার দাদার প্রেমের এই ভু’ত উড়ে শ্যাওড়াগাছে চলে যাবে। কি বলো, ঠিকানা নিবো?”

অন্নার কথা মন দিয়ে শুনলেন অবন্তীকা দেবী। তারপর কিছুসময় ভেবে ধীর কন্ঠে বললেন,
“কৃষ্ণাকে আমার যে অপছন্দ না নয়, মেয়েটি শিক্ষা, ব্যাবহার খুবই চমৎকার। দেখতেও একেবারে প্রতীমার মতো। কিন্তু সব কথার শেষ কথা, তোমার দাদা কি রাজি হবে। তার তো অনশন চলে, এখন আমি নিজের পছন্দ জাহির করলে যদি হিতে বিপরীত হয়?”
“সে আমার উপর ছেড়ে দাও। রাজী না না হলে তোমার কাছে মুখ্যম অ’স্ত্র আছে, “মা অস্ত্র”। যতই হোক দাদা সেই অ’স্ত্রে কুপোকাত হবেই। তুমি রাজী কি না বলো। সময় নষ্ট করা বোকামি হবে। দাদার মতিগতি বলা যায় না, দাদা যদি সত্যি সত্যি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলে তখন কিন্তু আম ও যাবে ছালাও যাবে। তুমি বললে আমি অর্জুনদার থেকে ঠিকানা নিবো, এখন বলো নিবো?”

এবার খানিকক্ষণ ভাবলেন অবন্তীকা দেবী। অন্না চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে রয়েছে। বুকটা টিপ টিপ করছে, গলা শুকিয়ে এসেছে। অন্নার “চো’রের উপর বাটপারি” করার স্বভাব থাকলেও অবন্তীকা দেবীর সাথে কোনো কালে করে নি। তাই ভয়টা প্রবল। অর্জুনদার বুদ্ধি মতো কথা তো পাড়লো, কাজে কতটুকু দিবে কে জানে! মিনিট পাচেক বাদে অবন্তীকা দেবী ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। শ্যাম মুখখানা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। যেনো বিশাল চিন্তার পাহাড় নেমে গেছে। হাসি অক্ষত রেখে অন্নার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
“তুই আসলেই আমার সোনা মেয়ে। ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস। আমি সত্যি ভেবে দেখি নি। ও যদি চাকরি পেয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেলে, তবে এই জিদের তো কোনো মানেই নেই। তুই অর্জুনের থেকে ঠিকানা নে। আমি আজ বিকেলেই তোর জ্যেঠু আর মাকে নিয়ে কৃষ্ণাকে দেখতে যাবো”
“এই না হলে আমার বড়মা। আমি জানতাম তুমি বুদ্ধিমতী। আমি ঠিকানা নিয়ে আসছি”

বলেই অবন্তীকা দেবীকে জড়িয়ে ধরলো অন্না। অবন্তীকা দেবী তার কপালে চুমু এঁকে বললেন,
“পা’গ’লী মেয়ে”

*******

বিকেলের শেষ প্রহর, সূর্যের তেজ এখন ক্ষীণ। তেজহীন রোদ আছড়ে পড়ছে দেবব্রতের বিরস মুখশ্রীতে। মুখখানা শুকিয়ে গেছে, ঠোঁটজোড়া শুষ্ক। মোবাইলের কর্কশ শব্দে মোবাইলের দিকে তাকালো সে। কৃষ্ণার ম্যাসেজ এসেছে। উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। কি বলবে! মেয়েটিকে মিথ্যে বলতে পারে না সে। কষ্ট হয়, অপরাধী লাগে নিজেকে। মেয়েটির প্রাণবন্ত মুখখানা দেখলে ভেতরটা চিনচিনে ব্যাথায় ছেয়ে যায়। এতো বছরের প্রণয় ফুলটি কি এভাবেই ঝড়ে যাবে! মার কঠিন হৃদয় যে গলবার নয়। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো তার। ঠিক সেই সময়ে দরজায় টোকা পড়লো। নিস্প্রভ কন্ঠে শুধালো,
“কে?”
“দাদা আমি, তোর প্রেমদূত”

অন্নার কন্ঠ শুনতেই ক্লান্ত শরীর খানা মনের বিরুদ্ধে দরজা অবধি নিয়ে গেলো। দরজা খুলতেই অন্না ঘরে প্রবেশ করলো। বিছানায় না বসে খাটের নিচে তার চোখ গেলো প্রথমে। অর্জুন দা ঠিক বলেছে, দেবব্রতের খাটের তলে চিপস, বিস্কুটের স্তুপ। কয়েকটা প্যাকেট বের করে চোখ-মুখ খিঁচিয়ে বললো,
“এই তোর অনশন?”
“কি জন্য এসেছিস তাই বল”

মহা বিরক্তি ঝরছে দেবব্রতের কন্ঠে। একেই মনটা ভালো নেই, উপরন্তু অন্না এখন মাথা খা’বার পরিকল্পনায় আছে। অন্না প্যাকেটগুলো খাটের উপর রেখে আয়েশ করে বসলো। তারপর উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলল,
“বড়মা, মা, জ্যেঠু বাড়ি নেই। তোর জন্য পাত্রী দেখতে গিয়েছে”

পাত্রীর কথাটা শুনতেই দেবব্রত নড়েচড়ে উঠলো। বিস্ময়, রাগ, অভিমান, বিরহে অন্ধপ্রায় দেবব্রত চেঁচিয়ে উঠলো,
“কিসের পাত্রী? এসব কি ফাজলামো হচ্ছে? আমি কৃষ্ণা ব্যাতীত অন্য কাউকে বিয়ে করবো না। অসম্ভব সেটা”
“হ্যা, তারা কৃষ্ণাদিকেই দেখতে গিয়েছে”

বেশ শান্ত গলায় অন্না বললো। অন্নার কথাগুলো মস্তিষ্কে ঢুকছে না। কেমন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। অধৈর্য্য হয়ে দেবব্রত বললো,
“গাঁ’জা খেয়েছিস? কি বলছিস উল্টা পালটা?”
“আমি ছাইপাস খাই না, যা বলছি ভেবেই বলছি। আমাকে তো পাত্তা দিস না। সেই আমিই তোর প্রেমের রাস্তা পরিষ্কার করে দিলাম। কত কাঠখড় পু’ড়িয়েছি জানিস! অবশেষে মায়ের কৃপা হলো, আমার বড় মা কৃষ্ণাদিকে এই বাড়ির বউ করতে রাজি হলেন”

দেবব্রত এখনো বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রয়েছে। তার মস্তিষ্ক কাজ করছে না। সব যেনো স্বপ্নের মতো ঠেকছে। আনন্দ, বিস্ময়, অবিশ্বাস সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তার হতবিহ্বল চাহনী বুঝতে পেরে অন্না তাকে বুঝিয়ে বললো আসল কাহিনী। কাহিনী শুনতেই দেব বললো,
“মাকে ঠকিয়ে এভাবে বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে?”
“অর্জুনদাকে ও আমি বলেছিলাম, মিথ্যা বলছি পাপ হবে না তো! অর্জুন দা কি বললো জানো? বললো, এটাকে সত্য গোপন করা বলে, মিথ্যে বলা নয়। হ্যা একটু ছল করছি বটে, কিন্তু বড় মা তো কৃষ্ণাদিকে পছন্দ করে। তার আপত্তি প্রেমের বিয়েতে। শুধু এই সামান্য ব্যাপারে দুটো হৃদয়কে পৃথক করা আরোও বড় পাপ। আর কারোর ভাল করতে যদি একটু মিথ্যে বলাও লাগে সেটা ততটা পাপ হয় না। এই মিথ্যে তে কারোর ক্ষতি হচ্ছে না, বরং একজোড়া হৃদয়ের কষ্ট নিবারণ হচ্ছে।”
“মা যদি পড়ে জানতে পারে? কষ্ট পাবে না তো”
“কে বলবে? তুই? আমি নাকি কৃষ্ণা দি? দেখ, তোর আর কৃষ্ণাদির বিচ্ছেদ হলে তুই আর কৃষ্ণাদি কষ্ট পাবি না? আর কৃষ্ণাদিকে দেওয়া কথা রাখতে গেলে বড়মা আরোও কষ্ট পাবে। এর চেয়ে যা হচ্ছে ভালোয় ভালোয় হয়ে যাক। পরেরটা নাহয় পরে ভাববো। আর যদি বড়মা জেনেও যায় আমার দোষ দিস। আমি মাথা পেতে নিবো। কারণ এই সবকিছু রচয়ীতা তো আমি। না না, আমি একা নই, অর্জুনদাও সমান ভাবে দোষী। না হয় আমরা দুজন ই শাস্তি ভোগ করে নিবো”

অন্নার কথায় হেসে ফেললো দেবব্রত। গালটিপে বললো,
“তোকে কিভাবে ধন্যবাদ দেই বল তো?”
“ধন্যবাদ আমি নিবো না। আমাকে শুধু একটা প্রতীজ্ঞা কর, যখন আমি তোর কাছে কিছু চাইবো তুই সেটা পূরণ করবি। সেটা যদি খুব বাজে কিছুও হয় তুই কথা রাখবি”
“এই ব্যাপার, যা কথা দিলাম। তুই আমরণ যা চাইবি আমি তোর কথা রাখবো”

অন্না খিলখিল করে হেসে উঠলো। নিঁখাদ, প্রাণবন্ত হাসি। মেয়েটি বড় হয়ে গেছে। সেই দুঝুটি পড়া, গোলগাল বকা অন্নাটি সে আর নেই। দেবব্রত বোনকে অপলক দৃষ্টিতে দেখলো। চিরকৃতজ্ঞ সে অন্নার কাছে।

******

দেবব্রতের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সবাই আদা জল খেয়ে লেগেছে। এই শুক্রবার ই বিয়ে। এই লগ্নের পর আগামী লগ্ন সামনের বছর। তাই সবার মতেই বিয়েটা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই শুক্রবার। প্রথমে দেবব্রত খানিকটা মেকি অভিমান দেখিয়েছে, কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ না। এই মেকি অভিমানের নাটকটি ও অন্নার বুদ্ধিতেই করা।

পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে আড্ডা বসেছে। যুবসমাজের এখন কেন্দ্রবিন্দু দেবব্রত। অর্জুনের প্রেমকাহিনী চায়ের উড়ন্ত ধোঁয়ার সাথে কোথাও যেনো মিলিয়ে গেছে। এখন গরম গরম খবর দেবব্রতের বিয়ে তাও কৃষ্ণার সাথে। প্রতীক তো কথার ছলে বলেই দিলো,
“তোকে মানতে হবে দেব, কি গুগলি টা ফেললি! আমরা টের ও পেলাম না অথচ দেশে ফেরার সপ্তাহ খানেকের মাঝে তোর বিয়ে”
“আরে তাড়াহুড়ো কি আমি করছি। সে তো একবছরের আগে কোনো লগ্ন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিয়ে যখন করবোই দেরি করে কি লাভ”

দেবব্রতের কথায় সবাই হেসে উঠলো। কিন্তু রবিন ভাই এর মুখে হাসি নেই। চিরচেনা হাস্যজ্জ্বল রবিনভাই আজ খিজ খেয়ে আছেন। তার মুখখানা শক্ত, মুখে কোনো কথা নেই। এতো হাসিঠাট্টার মাঝেও সে চুপ। তাই অর্জুন বলে উঠলো,
“কি গো রবিন ভাই? তোমার মুখ বেজার কেনো?”

এতোসময় পর নড়ে চড়ে উঠলো রবিন ভাই। খানিকটা অপ্রস্তুত কন্ঠে বললো,
“কই না তো”
“আলবত, তুমি কথা বলছো না, আমার পেছনে লাগছো না। হাসছো না। কি হয়েছে ঝেড়ে কাশো তো বাপু!”

কিছুসময় চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রবিন ভাই। নিস্পৃহ স্বরে বললো,
“আমার প্রেমটা বুঝি আর ঠিকবে না”
“কেনো কেনো?”
“তানিকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। তাও যে সে আলু পটল নয়। বিশাল পরিবার থেকে। শহরের বেশ ধনী মানুষ তারা। তাদের কাছে আমি মাইনর ক্যারেক্টর। কি করবো বুঝছি না”
“তানি আপু কি বললো?”
“আমাকে শাসালো, বললো, আমার সিদ্ধান্ত জানাতে। বুঝছি না কি করবো!”

রবিন ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এতো সময়ের হাসি ঠাট্টাগুলো সব ছাই চাপা পড়লো। সকলের মুখে উৎকন্ঠা। রবিন ভাই কি সিদ্ধান্ত দিবে কে জানে!

*****

বিয়ে উপলক্ষে অর্জুনদের বাড়ি নববধুর ন্যায় সেজেছে। সাজসজ্জার সকল দায়িত্ব অন্নার নিজ কাধে। একমাত্র দাদার বিয়ে। কোনো ছাড় হবে না। অর্জুন শুধু কিশোরীর উচ্ছ্বাসিত মুখ দেখছে। হাতজোড়া বুকে বেঁধে অপলক নয়নে দেখছে অন্নাকে। তারপর একটু এগিয়ে যেয়ে তার চুলে টান দিয়ে বললো,
“আমার বুদ্ধি তো বেশ নিজের নামে চালালি! এখন দাদার কাছে তো তুই তার প্রেমদেবী”

চুলে টান খেতেই “আহ” করলো অন্না। তারপর মাথা ঘষতে ঘষতে বললো,
“আমি কি তোমার মতো অকৃতজ্ঞ? মোটেই অন্যের করা কাজ আমি নিজের নামে চালাই না। আমি তোমাকেও তার ভাগ দিয়েছি”
“আমি অকৃতজ্ঞ?”
“র’ক্ত দিয়েছিলাম, ধন্যবাদ দিয়েছো?”
“দেবো না, আমার ইচ্ছে”

বলেই হনহনিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো অর্জুন। অন্না অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শ্যাম যুবকটির দিকে। পুরোদস্তর খ’চ্চ’র মানব

*******

আজ দেবব্রত এবং কৃষ্ণার বিয়ে। লাল বেনারসী, কপালে চন্দন, চোখে গাঢ় কাজল, খোঁপায় বেলীর মালা, সারা গায়ে স্বর্ণের গহনা; কৃষ্ণাকে আজ স্বর্গের অপ্সরার মতো লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখলো কৃষ্ণা। দেবব্রত তার কথা রেখেছে। এই সিঁথিটুকু শুধুই তার। এতোকালের প্রণয় আজ পরিণয়ে পরিণত হবে ভাবতেই গালজোড়া রক্তিম হয়ে উঠলো। আজ কিছু সময় তারপর দেবব্রতের সাথে সম্পূর্ণভাবেই জড়িয়ে যাবে সে। এর মাঝেই শুনতে পেলো বরপক্ষ চলে এসেছে। ফলে ছুটে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ালো কৃষ্ণা। সাদা টোপরখানা পড়ে সত্যি ই দেবব্রত এসেছে। তার মা তাকে বরণ করছে। কিছুসময় বাদে অন্নার আগমণ ঘটলো। কৃষ্ণাকে দেখেই বললো,
“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে জানো?”
“তাই বুঝি? ধন্যবাদ”
“কেনো?”
“আমার প্রেমনাঙ্গর পাড়ে ফেরাবার জন্য। কথা দিচ্ছি, আমিও তোমার প্রেমনাঙ্গর পাড় করিয়ে দিবো”

কৃষ্ণার কথায় জমে গেলো অন্না। গালে রক্ত জমলো। শ্যাম গালজোড়া রক্তিম হলো। কৃষ্ণা বললো,
“লজ্জা পেয়ে লাভ নেই, আমি কিন্তু অর্জুনদার ব্যাপারখানা জানি”

অন্না লজ্জায় শিটিয়ে গেলো। কৃষ্ণা হাসলো। ছোট্ট মেয়েটিকে দেখে নিজের পাঁচ বছর আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। একদিন এমন লজ্জা সেও পেতো দেবব্রতের নাম শুনলে।

*****

দেবব্রত এবং কৃষ্ণার বিয়ে সম্পন্ন হলো। শুভদৃষ্টিতে দেবব্রতের চোখ সরছিলো না। বিদ্যুৎ এবং প্রতীকের ধাক্কায় হুশ ফিরলো তার। বিয়ের পর পর বাসরের জন্য দেবব্রত এবং যুবসমাজের কিছু অংশ সেখানেই থেকে গেলো। অন্না থাকলো না। কারণ তার মানুষটি আসে নি। ভেবেছিলো পড়ে আসবে কিন্তু সে আসে নি। বাহানা দিয়ে অন্না চলে এলো বাড়ি। অবন্তীকা দেবী আজ খুব খুশি, ছেলের মাথা থেকে প্রেমের ভুত নামিয়েছে। এদিকে অন্না বাড়ি ফিরতেই রীতা খাবার দিয়ে বললো,
“কাকীমাকে দিয়ে আয় তো”
“কাকীমা আর অর্জুনদারা যায় নি কেনো?”
“অর্জুনের শরীরটা ভালো নেই। প্রচুর জ্বর। তাই দীপংকর দাদা শুধু গিয়েছিলেন”

অর্জুনের জ্বর শুনতেই হাত পায়ে হীম ধরলো অন্নার। বক্ষস্থলে অসহনীয় যন্ত্রণাবোধ করলো। তাই সময় নষ্ট না করেই খাবার নিয়ে ছুটলো উপরতলা। কাকলী দেবী দরজা খুলতেই মলিন হাসি হেসে বললেন,
“এসবের কি দরকার ছিলো রে?”
“অর্জুনদা কেমন আছে?”
“জ্বর নামছে না রে, বিকেল থেকে জ্বর। ছেলেটা বন্ধুর বিয়ের জন্য কতো উৎসাহী ছিলো! সন্ধ্যায় জোর করছিলো। কিন্তু এই ক্লান্ত শরীরে বিয়ে খাওয়া যায় বল”

কাকলীর দ্ববীর চিন্তিত কন্ঠে মনটা আরোও মিইয়ে গেলো অন্নার। ধীর স্বরে বললো,
“আমি একটু দেখে আসি?”
“যা, দেখে আয়। আমি তোর জন্য নাড়ু আনছি”

অর্জুনের ঘর পর্দা দিয়ে ঢাকা। একটা কম ভোল্টেজের বেগুনী আলো জ্বলছে কেবল। সেই আলোয় বিছানায় শায়িত ক্লান্ত অর্জুনকে দু চোখ ভরে দেখলো অন্না। চোখের নিচে ঘামের বিন্দু, ঠোঁট জোড়া শুষ্ক। ঘুমিয়ে আছে সে। কপালে হাত দিয়েই তাপ অনুভূত হলো। অন্নার ভেতরটা পুড়ছে, এমন নিস্তেজ অর্জুনদা যে তার মোটেই পছন্দ নয়। কিশোরীর আবেগ বাড়লো। কিছু নিষিদ্ধ ইচ্ছে ডানা মেললো সেই আবেগের আবরণে। অজান্তেই কোমল ওষ্ঠ জোড়া চলে গেলো তপ্ত কপালে। উষ্ণ ছোঁয়ার পরশ দিলো নিজের রমেশকে। অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখের কোন থেকে। ধীর স্বরে বললো,
“ভালো হয়ে যাও অর্জুনদা”

মুখখানা তুলতেই দেখলো অর্জুন চোখ মেলে তাকিয়েছে। ক্লান্ত চোখে তার প্রতিবিম্ব। অন্না সরতে যেয়েও পারলো না। উষ্ণ, রুক্ষ হাতটা চলে গেলো কোমল গালে। বাহিরে তখন ঝড়ো বৃষ্টি। বৃষ্টির শব্দ কর্ণকুহরে আসছে। অর্জুনের ক্লান্ত ঘোরলাগা চোখ দেখছে অন্নাকে। অন্নার চোখজোড়া অর্জুনে আবদ্ধ। এরপর কি যেনো হলো! অর্জুনদা মাথা খানা সামান্য তুললো। অন্নার বোঝার পূর্বেই তার শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ছুয়ে দিলো অন্নার কোমল ওষ্ঠ…….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

#আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে
#১৩তম_পর্ব

ধীর স্বরে বললো,
“ভালো হয়ে যাও অর্জুনদা”

মুখখানা তুলতেই দেখলো অর্জুন চোখ মেলে তাকিয়েছে। ক্লান্ত চোখে তার প্রতিবিম্ব। অন্না সরতে যেয়েও পারলো না। অর্জুনের উষ্ণ, রুক্ষ হাতটা চলে গেলো অন্নার কোমল গালে। বাহিরে তখন ঝড়ো বৃষ্টি। বৃষ্টির শব্দ কর্ণকুহরে আসছে। অর্জুনের ক্লান্ত ঘোরলাগা চোখ দেখছে অন্নাকে। অন্নার চোখজোড়া অর্জুনে আবদ্ধ। এরপর কি যেনো হলো! অর্জুনদা মাথা খানা সামান্য তুললো। অন্নার বোঝার পূর্বেই তার শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ছুয়ে দিলো অন্নার কোমল ওষ্ঠ। আকস্মিক ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেলো অন্না। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো উষ্ণ রক্তের ধারা। রক্তিম হয়ে উঠলো কোমল গালজোড়া। আগুনের তাপে বিগলিত মোমের ন্যায় গলতে লাগলো সে অর্জুনের তপ্ত স্পর্শে। উত্তপ্ত নিঃশ্বাসের শব্দ চাপা পড়ে যাচ্ছে বাহিরের মেঘগর্জনে। আবেশে চোখ বুজে এসেছে অন্নার। হৃদস্পন্দন বেসামাল হয়ে গিয়েছে। সবকিছু যেনো তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বিস্ময়, আনন্দ, লজ্জা, বিষাদ সব অনুভূতি গুলো যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। অন্নার মনে হলো সময়টা যেনো থেমে গেছে। ক্ষণিকের জন্য কিশোরীর হৃদয়ে উথাল-পাতাল ঢেউ উঠেছে। অর্জুন আবার মাথা এলিয়ে দিলো বালিশে। তার দৃষ্টিতে মাদকতা। অন্না চোখ তুলছে না, কিশোরীর সারা শরীরে লজ্জা দেবী ভর করেছে। তখনই ঘোরলাগা কন্ঠ কানে এলো,
“ভালোবাসি”

অন্না চমকে উঠলো, শব্দটি তার কর্ণকুহরে ঝংকার তুলেছে। অর্জুন হাসছে, স্নিগ্ধ, স্বচ্ছ হাসি। অন্নার মনে হলো তার পৃথিবীটা থমকে গিয়েছে। মস্তিষ্কের নিউরণের রেষারেষি বাড়লো। কিংকর্তব্যবিমুঢ় অন্নার অনুভূতির ঢেউ প্রবল হলো। বসে থাকতে পারলো না। তড়িৎ গতিতে অর্জুনের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সে। একটি বারও পিছনে ফিরার ইচ্ছে পোষণ করলো না। করলে হয়তো অর্জুনের প্রগাঢ় নয়নের সাক্ষী হতো, যে নয়নে শুধু প্রণয়ের বর্ষণ হচ্ছে।

রুম থেকে বের হতেই কাকলী দেবীর মুখোমুখি হলো অন্না। হঠাৎ তার মুখোমুখি হতেই চমকে উঠলো অন্না। তার বিভ্রান্ত দৃষ্টি এবং রক্তিম মুখখানা দেখে কাকলী দেবী অবাক কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“ভয় পেলি নাকি? চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন?”
“ক….কই নাতো! আসলে ক্লান্ত লাগছে”

কোনোমতে উত্তর দিলো অন্না। কাকলী দেবী আবার প্রশ্ন করলেন,
“অর্জুনকে দেখেছিস? কি করছে?”
“অর্জুনদা ঘুমাচ্ছে, আমি আসছি আজ কাকীমা”

বলেই সদরের দিকে ছুট দিলো অন্না। তার হৃদয় কাঁপছে, হাতপা ঠান্ডা হয়ে আসছে। এদিকে পিছু ডাকলেন কাকলী দেবী, বিস্মিত কন্ঠে বললেন,
“আরে নাড়ু খেয়ে যা, ছুটছিস কেনো?”

অন্না দাঁড়ালো না। এক দৌড়ে নিচে চলে গেলো। অন্নার এমন কার্যে বেশ হতবাক হলেন কাকলী দেবী। আনমনে বিড়বিড় করে বললেন,
“অন্নার কি হলো? অর্জুন কি আবার ওকে বকাঝকা করলো?”

তারপর ছেলের ঘরে উঁকি দিলেন। ক্লান্ত অর্জুন তখন বেঘোরে ঘুম। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কাকলী দেবী।

*****

অন্নার মাথায় চিনচিনে ব্যাথা, সকাল থেকেই শরীরটা ভালো লাগছে না। ম্যাজম্যাজ করে শুধু, সাথে মাথা ব্যাথা তো রয়েছেই। গা টা হালকা গরমও। এর কারণ ও রয়েছে। গত দুরাত ঘুম নামক পদার্থটি তার চোখের ধারে কাছেও আসে নি। চোখের পাতা এক করে মিনিট দুয়েক বাদেই খুলে ফেলতো সে। চেয়ে রইতো সিলিং এর দিকে। আবার মাঝে মাঝে বড় জানালা থেকে গলা গলিয়ে তাকিয়ে রইলো নিগূঢ় রাতের কৃষ্ণ আকাশটির দিকে। সময়টা অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি, শীত আসবে আসবে ভাব। আবহাওয়া শীতল। গত পরশুর বর্ষার পর থেকেই প্রকৃতির ভ্যাপসা গরমটা আর অনুভব হচ্ছে না। ফলে অন্নার ঘরের ফ্যান বন্ধ। ফ্যান ছাড়লেই শীত লাগে। ঠান্ডায় কুকড়ে উঠে সে। রুমের দক্ষিণ ওয়ালের চলতে খসে পড়ছে। কাকীমাকে জানানো উচিত। কিন্তু ওমুখো আর হচ্ছে না অন্না। সেদিনের রাতের পর থেকে অর্জুনদার মুখ দেখে না সে। এখনো স্মৃতিগুলো জীবন্ত। দৃশ্যটি চোখে ভাসতেই আপনাআপনি হাত চলে গেলো অধরজোড়ায়। গাল হয়ে উঠলো রক্তিম। অনুভূতিগুলোর টানাপোড়েনে ঝলসে যাচ্ছে কিশোরীর হৃদয়৷ অর্জুনদার সেই কথাগুলো কি কেবল ই ঘোরের উৎপাদন ছিলো নাকি ছিলো তার কঠিন আবরণের ভেতরে লুকায়িত কোমল হৃদয়ের আহ্বান। চিন্তার ঘোরে মাথা ব্যাথা করছে অন্নার। বিরক্তিও লাগছে বটে। এতোকালের একপাক্ষীক হৃদয়ের সুপ্ত আকাঙ্খাগুলো এখন ডানা ঝাপটাচ্ছে। চাইছে নীলাম্বরে উড়তে মুক্ত বিহঙ্গীর মতো। কিন্তু সেই সাথে সুক্ষ্ণ ভয় কাজ করছে। যদি সবকিছু মিথ্যে হয়। সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়! তখন কি করে সামলাবে এই হৃদয়কে! অন্না দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের চাপ আর নিতে পারছে না অন্না। ঠিক এমন সময় দরজায় কড়া পড়লো। ভাঙ্গা কন্ঠে অন্না বললো,
“কে?”

দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলেন রীতাদেবী। হিনহিনে স্বরে বললেন,
“কি রে নবাবনন্দিনী! দাদার বউভাত আর বোন লাট হয়ে শুয়ে আছে। দেখায় কেমন? উঠ, পিসিরা, মাসিরা আসছে। একটু যেয়ে দেখ কার কি লাগে। কৃষ্ণাকে একটু সাজিয়েও তো দিতে হবে”
“মা, শরীরটা ভালো নেই”
“কেনো কি হয়েছে?”

অন্না উত্তর দিলো না। রীতাদেবী তার কপালে হাত ঠেকালেন। তারপর বললেন,
“কামচো’র, উঠ। সব ঠিক আছে”

অন্না বলতে পারলো না সমস্যাটি কোথায়। সে অনিচ্ছা স্বত্তেও উঠে বসলো। ওড়নাটা জড়িয়ে ঘর থেকে বের হলো। বসার ঘরের দিকে যেতেই হাত পা জমে গেলো। জং ধরা হৃদয়টা কাঁপছে, কারণ অর্জুন দেবব্রতের সাথে দাঁড়িয়েছে। দেবব্রত চটে আছে খুব। প্রিয় বন্ধু বিয়েতে অনুপস্থিত ছিলো, মানা যায়! অভিমানী স্বরে বললো,
“তুই এসেছিস কেন? আমি কে হই! বিয়েতে আমার বন্ধুই আসে না। এই বন্ধু থেকে কি করবো আমি?”
“ক্ষমা করে দে, জ্বর কাবু করে দিলো রে”

দেবব্রত তার রাগ বজায় রেখেই বললো,
“জ্বর আমার বিয়েতেই বাধলো?”
“বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম যে”
“তা এখন কি হাল?”
“কাশিটা যায় নি, হালকা শ্বাসকষ্ট আছে। তবে এখন জ্বরটা নেই। তাই তো ছুটে এলাম”
“আমায় ধন্য করেছো”
“মেয়ে মানুষের মতো রাগ করিস না তো! ভুলে যাস না, বিয়েটার হর্তাকর্তা কিন্তু আমি। তোর বোকা বোনের কৃতিত্ব অনেক বটে কিন্তু আমারও কিছু অবদান আছে”

বলতেই হেসে উঠলো দেবব্রত। অন্না বোকা চাহনীতে দেখছে অর্জুনকে। লোকটা কাবু হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে, বেশ রোগাও লাগছে। এবারের জ্বরে ধকল যে গেছে তা বোঝা যাচ্ছে। এর মাঝে দেব বললো,
“কি রে বুড়ি ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

দেবের কন্ঠে স্বম্বিত ফিরলো অন্নার। অর্জুন ও তাকালো তার দিকে। দুজনের চোখাচোখি হলো। অন্নার বুকের ধুকপুকানি বাড়লো। কেনো যেনো প্রচন্ড অস্বস্তি তাকে ঘিরে ধরলো। দাঁড়াতে পারলো না সে। ছুটে চলে গেলো ভেতরে। তার এমন ছুট দেওয়া অবাক করলো দেবকে। অবাক স্বরে বললো,
“ওর কি হয়েছে?”

অর্জুন তখন তাকিয়ে আছে অন্নার যাবার পানে। বিড়বিড়িয়ে বললো,
“হয়তো কিছু মনে পড়েছে”

কথাটা শুনতে পেলো না দেবব্রত। অর্জুনের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। দুর্বোধ্য সেই হাসি, যার রহস্যভেদ শুধু সেই করতে পারে।

*******

দেবব্রতের বৌভাতের অনুষ্ঠান শুরু হলো সন্ধ্যে বাদে। অর্জুনদের বাগানেই স্টেজ করা হয়েছে। স্টেজের উপর বসে রয়েছে কৃষ্ণা। পরণে হালকা গোলাপী রঙ্গের কাতান শাড়ি। শ্বাশুড়ি মায়ের বিবাহের গহনা তার গায়ে। হাতে শাখা পলা, সিঁথি ভর্তি সিঁদুর। যে দেখছে সেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অবন্তীকা দেবী খুবই আনন্দিত। তার কারণ দুটো, এক ছেলের ঘাড়ের প্রেমের ভু’ত নেমেছে আর দুই মনেএ মতো বউ পেয়েছেন। মেয়েটি এতোটা মিষ্টি যে দেড় দিনেই শ্বাশুড়ি মায়ের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এর কৃতিত্ব তিনি অন্নাকেই দেন। ও না বললে সত্যি লটারি মিস হয়ে যেতো।

অন্না বউভাতে লুকিয়ে লুকিয়ে আছে। সে ভুলক্রমেও অর্জুনদার মুখোমুখি হচ্ছে না। ওর সামনে গেলেই তার বুক কাঁপতে থাকে। সে বুঝে গেছে বিশ্রী এক রোগে সে আক্রান্ত। এই রোগের নাম কি দেওয়া যায় সে জানে না। তবে এটুকু জানে এই রোগের কোনো নিরাময় নেই। একটাই প্রতিষেধক রয়েছে সেটা কেবল ই অর্জুনদা। অর্জুনদার শিউলি গাছের পাতাটা টানতে টানতে যখন সে চিন্তায় বিভোর ছিলো তখন ই কারোর কন্ঠ কানে এলো। উঁকি দিয়ে দেখলো, ঝোঁপের পাশে রবিন ভাই এবং তানি আপু দাঁড়িয়ে আছে। তানি আপুর মুখ শক্ত৷ সে তাকিয়ে আছে রবিন ভাই এর দিকে। আর রবিন ভাই ঘাসে পা ঘষছেন। গাল ফুলিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো তানি আপু, তারপর বললো,
“কি সিদ্ধান্ত নিলে?”
“আমার সিদ্ধান্তে কি কিছু যায় আসবে?”
“মানে?”
“মানে তুমি চাইলেও কি তাদের ফেরাতে পারবে? এতো বড় পরিবার, বিশাল তাদের রঙ ঢং”
“ফ্যাক্টর তো তারা নয়। কথা হচ্ছে তুমি কি চাও?”
“আমার চাওয়ায় কি হবে? কথা হচ্ছে তাদের তুমি মানা করতে পারবে না। এখানে আংকেলের ব্যাবসা জড়িত”
“আমি তো এতোকিছু শুনতে চাচ্ছি না। আমি তোমার সিদ্ধান্ত শুনতে চাচ্ছি। আমি বাসায় জানাবো কি না সেটা শুনতে চাচ্ছি”

রবিন ভাই এবার তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লেন। তানি আপুর কড়া স্বরের সামনে অসহায় কন্ঠে বললেন,
“তানি আমি এখন চাকরিতে কিছু করে পারি নি, বেতন আমার খুব একটা না। বাসায় বিয়ের কথা বলার মতো অবস্থাটা এখনো হয় নি। আবেগে যাবার মতো ছেলেমানুষ আমি নই। ওদের সামনে আমি কেবল ই একজন মাইনর ক্যারেক্টর। আর সত্যি কথা বলতে তুমি তাদের নিষেধ করতে পারবে না। তুমি ছেলেকে দেখো, এমন ও হতে পারে ছেলেকে তোমার পছন্দ হয় নি।”

এবার কিঞ্চিত কপালে ভাঁজ পড়লো তানির। কন্ঠে দৃঢ়তা নিয়ে বললো,
“এই শোনো, তুমি যদি আমাকে বলো পৃথিবী উল্টে গেলেও আমি তোমাকেই বিয়ে করবো তাহলে বিল গেটস এর ছেলেকেও আমি মানা করে দিবো। কিন্তু তুমি যদি কনফিউজড থাকো তাহলে বলে দাও। আমি রাস্তা মাপি”

তানির অগ্নিবাক্য শুনে হেসে উঠলো রবিন ভাই। এগিয়ে এসে কপালে উষ্ণ ঠোঁট জোড়া ঠেকিয়ে বললো,
“আমি মোটেই কনফিউজড নই। ভালোবেসেছিলাম যখন তখন ও কনফিউজড ছিলাম না। শুধু একটু সময় লাগবে। সব বলবো। একটু সময় দাও। দুনিয়া উল্টালেও আমি তোমাকেই বিয়ে করবো, কথা দিচ্ছি”
“তাহলে সাহস করছো না কেনো?”
“এই যে করলাম”

রবিনের তপ্ত স্পর্শে কেঁপে উঠলো তানি। হৃদয়ে জমা রাগটা একটু হলেও দমলো। এদিকে অন্নার কান রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। সর্বদা মানুষের সুপ্ত মূহুর্তেই কেনো সে সেখানে উপস্থিত থাকে! তবে রবিন ভাই এর সাহসিকতায় সে খুব অনুপ্রাণিত। একটু সাহস কি তার ও করা উচিত। কথাটা ভাবতেই পা বাড়লো সামনের দিকে। এদিকে কলার খোসার ন্যায় শাড়ির তলটা আবারো পায়ের নিচে বাধলো। অমনি হুমড়ি খেয়ে পড়তে গেলো অন্না। কিন্তু এবার আর মাটির সাথে মোলাকাত হলো না। কারণ তার পূর্বেই এক জোড়া হাত তার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
“চোখ জোড়া খুলে আঁচলে বেধে রাখ”………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here