#আমার_চন্দ্রাবতী,২৯
লেখিকা- সালসাবিল সারা
–“ইয়াদ ভাই হঠাৎ এমন পাগলামি করছে কেনো?জমিদার কাকার চোখের রং একেবারে আঁধার।আমার মনে কু ডাকছে।”
রামিসা হদতন্ত হয়ে দুআর কক্ষে প্রবেশ করলো।তার চোখে মুখে আতঙ্ক।এতক্ষণ যাবত সে নিচেই ছিলো,
পর্যবেক্ষণ করছিলো নিচের সকল কার্যক্রম।
দুআ বিছানায় শুয়ে।জ্বর বেড়েছে তার।দুশ্চিন্তায় শরীরটা আরো নুয়ে যাচ্ছে যেনো।রামিসার এমন কথায় মেয়েটার বদ্ধ আঁখি খুললো।দৃষ্টি তার একেবারে চঞ্চল।
রামিসাকে রুমে প্রবেশ করতে দেখে জেনি ছুটলো রান্নাঘরের পানে।দুআর জন্যে এই মুহূর্তে পুষ্টিজনিত খাবারের প্রচুর দরকার।
–“আমি জানিনা উনি হঠাৎ কেনো এমনটা করছেন।আব্বা কি বেশি রেগে?রিজোয়ান ভাই!উনিও কি রেগে?”
দুআর ভীত কণ্ঠস্বর।
–“সবাই রেগে।আমার মামার কথাও কি বা বলবো!সবার মুখশ্রী একেবারে অন্যরকম ঠেকছে।ইয়াদ ভাই বেশিই তাড়াহুড়ো করছে না?”
রামিসা ভাবনায় মশগুল।
–“উনাকে কে বুঝাবে এইসব?আমি এতো মানা করলাম,এমন কিছুই না করতে।কিন্তু,আমার কথা শুনলেই তো?”
দুআ নিচু স্বরে বললো।
রামিসা সইয়ের কাঁধে হাত রাখলো সযত্নে,
–“চিন্তা করিস না।সবাই আছে নিচে।ঠিক সামলে নিবে সকলে।”
দুআ নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।তার আব্বা রেগে যেনো ইয়াদের ব্যাপারে উল্টো পাল্টা কিছু না বলে ফেলে এটাই দোয়া করছে মেয়েটা।তার খেলোয়াড় লোকটা নিজের অপমান কিছুতেই সহ্য করবে না,এই দুআর অজানা নয়।সব যেনো ভালোই ভালোই মিটে যায়,এমনটা প্রার্থনা করে যাচ্ছে মেয়েটা অভ্যন্তরে।দুই পরিবারের মান সম্মানের উপর বিন্দু পরিমাণ আঁচ যেনো না আসে।
জেনি ইতোমধ্যে খাবার নিয়ে হাজির।মধু মেশানো গরম দুধে ভেজানো পাউরুটিতে টুকরো করে কা’টা,খেজুর,
আপেল এর অংশবিশেষও বিদ্যমান। বাটিখানা দুআর সম্মুখে রেখে জেনি অনুরোধের সুরে বললো,
–“এইডা খান মালকিন।আপনে কিছুই খাইতাছেন না কিল্লাইগা?ইয়াদ স্যার সবডা ঠিক কইরা ফেলবো।কোনো কিছু নিয়া ঘাবড়াইবেন না,আফনে।”
দুআ বাটিখানা না নিলে,রামিসা জেনির হাত থেকে সেই বাটি নিলো।চামচ কেটে পাউরুটির টুকরো তুলে ধরলো দুআর অধর বরাবর,
–“চুপচাপ খেয়ে নে।একদম কাহিনী করবি না।শুকিয়ে কিচ্ছুটির অস্তিত্ব রাখিসনি।”
ছলছল আঁখিতে দুআ সইয়ের আদেশ পালন করলো। এমনিই তার ক্ষিদে পেয়েছিল,তবে মেয়েটার মাত্রারিক্ত চিন্তায় ক্ষিদেটা পাত্তা পায়নি একবিন্দু।
–“জেনি,নিচে গিয়ে দেখে আসো না কি হচ্ছে সেখানে?”
দুআ এক চামচ খেয়ে অনুরোধ করলো জেনিকে।
–“মালকিন, উনারা বইসা কথা কইতাছে।ঝামেলার কিছু দেখলাম না।”
দুআ অল্প আশার আলো দেখলো মেয়েটার কথায়।মনের অভ্যন্তরে প্রার্থনার পাল্লা ভারী করলো দুআ।কোনো অঘটন ঘটার পূর্বেই সবটা যেনো তার নিজস্ব আয়ত্বে থাকে।
বৃষ্টি এখন থেমে।সময় এখন দুপুরের শেষাংশ,অর্থাৎ বিকেল ছুঁইছুঁই।পরিবেশটা সম্পূর্ণ ঠান্ডা,একেবারে গুমোট।দুআর তনু ছমছম। জ্বরের রেশ ছাড়ছে কিছুটা।ঘাম হচ্ছে শরীরে।হাতের উল্টো পিঠে, গলায় বিদ্যমান ঘামের আস্তরণ মুছলো সে।আঁখিজোড়া কেমন ভারী তার।মুখের ভেতরের স্বাদ তিতা।পানি খেলেও গা গুলাচ্ছে।এইভাবে রুমে বসে থাকাটাও তার কাছে অস্বস্থিকর ঠেকছে।মনে মনে ফন্দি আটলো নিচে নামবে সে।রামিসা তার বাম হাত চেপে বসে আছে তারই কিনারায়।হাত কিঞ্চিৎ নাড়তেই রামিসা সরু দৃষ্টিতে তাকালো দুআর পানে,
–“কি?”
–“নিচে যাবো।”
রামিসা কিছু একটা ভাবলো আর বলে,
–“আচ্ছা।তবে কাঁদবি না ভাই।”
দুআ দু’ধারে মাথা নাড়ালো কেবল।
রামিসার হাত চেপে হাঁটছে দুআ।বুকের মাঝে এক অজানা ঝড় বয়ে যাচ্ছে।কয়েক সিঁড়ি নামতেই শুনতে পেলো তার আব্বার কণ্ঠস্বর,
–“প্রস্তাব দিয়াছিলেন,ভাইবা চিন্তায় সিদ্ধান্ত লইতাম।কিন্তু,এইভাবে হঠাৎ?আমার মাইয়্যার মর্জি নিয়াও একখান সাওয়াল উঠে!”
–“আঙ্কেল,আমি এবং দুআ একে অপরকে পছন্দ করি।এবং সময়টা অনেক দীর্ঘকাল।আমি দেশ বিদেশ ঘুরি,তবে আপনার মেয়েকে নিয়ে আমার শঙ্কা কাটে না।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আমার।এইযে ভারত থেকে এইখানে ছুটে এসেছি সরাসরি,ভেবেছিলাম বাবা কিছু করে বসেনি তো?আপনার মেয়েকে নিয়েই আমার যতো চিন্তা।ভালো লাগছেনা,আঙ্কেল।তাকে আমার করে নিলেই আমার যতো প্রশান্তি।”
ইয়াদ থামলো কথা শেষে।
উপস্থিত সকলে স্তব্ধ।মারিয়া,জিয়া মুচকি হাসলো কেবল।ভাইয়ের এমন সাহসিকতায় খুব ক’ষ্টে বাহবা দিতে পারলো না সেই দু’বোন।
রিজোয়ান কাশলো।বোনের জন্যে এমন সরাসরি প্রেম নিবেদন করার ছেলে কখনোই খুঁজে পায়নি সে।হরেক রকম ছেলে বোনের হাত চেয়েছিল,তবে কেউই সরাসরি এমন প্রেম নিবেদন করবে বোনের জন্যে; এমনটা সে ভাবেনি কখনো। কারো সাহসই হলো না রিজোয়ানের সামনে এমন দুঃসাহসিক কাজটা করার।ইয়াদের কথায় তাকে বাহবা দেওয়ার বেশ ইচ্ছে জাগলেও কাশির মাধ্যমে তা দমন করে ফেললো।যায় হোক,ইয়াদের এমন সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব মন জয় করলো রিজোয়ানের,
–“সব বুঝলাম ইয়াদ।আমি নিজেই খোঁজ নিয়ে বোনের ব্যাপারে আগানোর অনুমতি দিয়েছিলাম তোমায়।কিন্তু,এইভাবে হুট করে বিয়ে!একটা প্রস্তুতির ব্যাপার থাকে বিয়ের বিষয়ে।সময়ের ব্যাপারটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
–“দেখো বাবা,আমার ছেলে শুধু তার ভালোবাসাকে নিজের নামটা দেওয়ার জন্যেই এতো উতলা হচ্ছে।মেয়েটা পড়ুক।ইন্টার শেষ করুক,এরপর না হয় উঠিয়ে নিবো!”
সাজ্জাদ এর প্রস্তাব সকলের নিকট ভালো ঠেকলেও বাঁধ সাধলো ইদ্রিস জমিদার,
–“এইভাবে হুট কইরা সবকিছু,আমি মানতে পাইরতাছি না।আমার মাইয়্যা ছোডো এহনো।রিজোয়ান যেহুতু পোলার খোঁজ নিছে এতে আমার আপত্তি নাই,ছেলে ভালো আমি বুঝলাম,আপনাগো পরিবারও ভালো আমি জানি।কিন্তু, আমার মাইয়্যার মত কি এই বিষয়ে,এইডাও একটা ব্যাপার।তাছাড়া,আমার পরিজন আছে।উনাদের জানানোর একখান বিষয় তো আছেই।”
–“আঙ্কেল,একটা অনুরোধ।আপনি যখনই ওকে তুলে দিবেন আমি রাজি থাকবো সেই সময়ের জন্যে।কিন্তু,
আজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।আমার মাথা ঠিক নেই আজ।আর আজ যদি আপনি নাকচ করেন,আমি আরো বেশামাল হয়ে পড়বো।আমি আপনার মেয়েকে চাই।সেই আমাকে আমার এমন করুণ অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারবে।”
ইয়াদের কণ্ঠে মাদকতা।
ইদ্রিস জমিদার গালে হাত রাখলো।যে ছেলে তার মেয়ের হাত খুঁজতে পুরো পরিবার নিয়ে হাজির,সেই ছেলেকে কিভাবে নাকচ করবে?অভিশাপ আর বিধি বিধান বলেও কিছু আছে দুনিয়ায়।এই ছেলের মন ভাঙলে তার মেয়েটাও যে কখনো সুখী হবে না।মনের বদদোয়া বড় জিনিস।মুখে অভিশাপ না দিলেও,মনের বদদোয়া থেকে রেহায় পায় না কেউই।তাছাড়া ছেলেটা সাধারণ কোনো পরিবারের ছেলে নয়,বড় মাপের পরিবার তার।বাংলাদেশের এমনকি বিশ্বের ক্রিকেট দলের কাছে বড্ড পরিচিত এই ছেলে।এমন ছেলেকে কিভাবে নাকচ করবে?ভাইয়ের ছেলের পানে দৃষ্টি মেললো ইদ্রিস।এই ছেলের উপরেই তার যতো বিশ্বাস।বোনের জন্যে তার প্রেমিক পুরুষের খবরটা পর্যন্ত নিয়ে ফেলছে সে।ইদ্রিসের বুক চওড়া হলো।ভাইয়ের মৃত্যুর পর এই ছেলেকে নিজের ছেলের মতোই শাসন করে বড় করেছে, ভালোবেসেছে।ভাষায় প্রকাশ না করলেও ইদ্রিসের মন তো জানে,কতটা বিশ্বাস করে সে ভাতিজাকে।দৃষ্টি মিললো দুইজনের।রিজোয়ানকে কিছু ইশারা করতেই ইদ্রিস বুঝে নিল তার পরিবর্তী পদক্ষেপ।
গলা খাকারি দিয়ে সে আহেলীর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–“মাইয়্যার মত জাইনা আসো।”
আব্বার কথা কর্ণ গহ্বরে আসতেই তিন রমণী হুড়হুড় করে কক্ষের পানে ছুটলো।এতো সময়কার কথা শুনে উত্তেজিত দুআর হৃদয় যেনো এখনই ব্লাস্ট হবে।তবে কি আজ ইয়াদের কথাটা সত্যতে পরিণত হচ্ছে?
আহেলী,মাইশা, ডালিয়া,জিয়া এবং মারিয়া দুআর কক্ষের সামনে থামলো।ভেতরে প্রবেশ করতেই মেয়েটাকে দেখে আঁতকে উঠলো ডালিয়া।দ্রুত হেঁটে দুআর পাশে বসে তার চুপসে যাওয়া মুখে হাত রেখে বলে উঠলো,
–“আমার ছেলের জন্যেই কি মেয়ের এমন অবস্থা হয়েছে?”
দুআ হাসার চেষ্টা করলো বৃথা,
–“নাহ আন্টি।জ্বর ছিলো।সিজন পরিবর্তন হচ্ছে,তাই একটু সমস্যা হলো।এই আরকি।”
মিথ্যা বললো প্রেমিকা।এই ছাড়া উপায় নেই আর।ইয়াদের ব্যাপারে কেউ কটু কথা বলুক,এমনটা যেনো দুআর সহ্য হওয়া অসম্ভব।
–“ইয়াদের ব্যাপারে কি রাজি তুমি,মা?ছেলেটা দেখো কেমন পাগলামি করছে!”
ডালিয়া দুআর মাথায় হাত বুলালো পুনরায়।
–“হ্যাঁ,দুআ।বল আম্মা।রাজি তুই এই প্রস্তাবে?আজই তোদের বিয়ে হবে ছোট পরিসরে।”
আহেলীর কথায় চোখ পাকালো মেয়েটা।সত্যি আজ তাদের বিয়ে? অবিশ্বাস্য মনে হলো মেয়েটার।পুনরায় বার কয়েক জিজ্ঞাসা করতেই দুআ মিনমিনে সুরে বলেই ফেললো,
–“রাজি।”
আহেলীর আঁখি জলে ভাসা।খুশি মনের অগোচরে দুঃখ হানা দিলো মুহূর্তেই।একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।মায়ের মন বড় নরম।
পরিবেশ শান্ত।দুআর রাজি হওয়ার কথায় নিচে উপস্থিত সকলেই খুশি।রামিসার মায়ের সমেত বড় কাকী আলিঙ্গন করলো।তাদের সম্পর্কের নাম পুনরায় বদলাবে আজ।
ইদ্রিস জমিদার শান্ত ভঙ্গিতে রিজোয়ানকে বলে উঠলো,
–“নিকটাত্মীয় যতো জনের কথা মাথায় আসে,ফরেন কল দাও তাদের। এইহানে আসতে কও। এতো কাহিনী বলিও না। শুধু কও আমি আসতে কইছি।”
–“আচ্ছা। চাপ নিবেন না আপনি।আমি সব করছি।”
রিজোয়ান উঠে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হলো।এখন তার অনেক কাজের সাথে পাল্লা দেওয়ার সময়।
ইদ্রিস জমিদার হাঁক ছাড়লো পুরাতন কাজের লোকের।সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হলো লোকটা,
–“হুকুম করবেন সাহেব।”
–“বাবুর্চিরে ডাক।পেছনের আঙিনায় রান্নার তোড়জোড় শুরু কর। রাইতের খানার আয়োজন হইবো। কাম দ্রুত হইবার চাই।বাজারে ফোন কইরা সামান (জিনিস) পাঠাইতে ক।আর হুন,সবকিছু চুইপ্পা করবি।”
–“আচ্ছা,সাহেব।”
কাজী ডাকার এবং রেজিস্ট্রি পেপার সামলানোর কাজের দায়িত্ব নিলো রামিসার বাবা।ফোনে সবটা শুনেই উনার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।ফেরর সময় উভয় কাজের মানুষকে নিয়েই জমিদার বাড়িতে আসবেন বলে সবাইকে খবর পৌঁছিয়ে দিলেন।
____
দুপুরের খাবারের পর্ব শেষ করলো সবাই সবেমাত্র।দুআর গালে রুচি নেই।পরপর তিনবার বমি করেছে মেয়েটা।সামান্য পানিটাও তার পেটে বেহজম হচ্ছে।তার জন্যে আবার ডাক্তার আনিয়েছে ইদ্রিস।মাগরিবের নামাজ শেষে মেয়েটাকে দেখে গেলো একবার।মেয়েটা কেমন নেতিয়ে আছে।ঘুমন্ত মুখখানার মাত্রা,বেশি মায়াবী।ইদ্রিস কাদঁলো চুপি চুপি।এই কঠোর লোকটা কখনো কাঁদে না।এমনটাই সকলে জানে।তবে,বদ্ধ ঘরে মেয়ের হাত চেপে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।এমন কান্ডের একমাত্র সাক্ষী হলো স্বয়ং আহেলী।মেয়ে বিদায় দিতে এখনো ঢের দেরী।তারপরও বাবার মন এতো কথা মানতে রাজি?
এশারের আযানের ধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত।নামাজ শেষ করলো সকলে নিকটবর্তী মসজিদে।বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বেশ দ্রুতই।
শুভ্র পাঞ্জাবিতে ইয়াদের দেহখানায় ভর করছে উজ্জ্বলতা।ছেলেটার খুশির পরিমাণ আজ অগণ্য। গুণে শেষ করা অসম্ভব।পায়জামার পকেটে ডান হাত চেপে বাম হাতে দুই অধরের মাঝামাঝিতে সিগারেটের জন্যে নির্দিষ্ট জায়গা করে নিলো।শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার সাথে সাথেই সিগারেটের ধোঁয়া ভেতরে প্রবেশ করছে আবার নাক,মুখ দিয়ে বাহির হচ্ছে।মাথা উঁচু করে দুই তলার দিকে একবার দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো সে।দুআর কামরার জানালা খোলা।মাঝে মাঝে কয়েকজনের ছায়ার আস্তরণ দেখা যাচ্ছে খানিকটা।
জমিদার বাড়ির ভেতরকার কলরব বাহিরেও ভাসমান।মুহূর্তেই যেনো আত্মীয়ের ছড়াছড়ি।ইয়াদের বড় ফুফুও এসে হাজির হলেন।উনাকে সকালেই জানানো হয়েছিল,মহিলা ইচ্ছাকৃত এমন দেরী করলো।মহিলা রাগে গজগজ শব্দ করছেন।বাহিরে ইয়াদের উপর ভালোবাসা দেখালেও,ভেতরে ডালিয়াকে খোঁটা দিয়ে কথা বলতে ভুলছেন না।
ইয়াদ সিগারেট অর্ধেক ফুঁকেই পায়ের নিচে পিষ্ট করলো।দূর থেকেই জমিদারের অবয়ব আন্দাজ করতে পারলো ছেলেটা। তা দেখেই হাসলো ইয়াসির,
–“শ্বশুরের সামনে ভালো সাজা হচ্ছে?”
ইয়াদ হাসলো,
–“আমি তো ভালো’ই।”
–“শালা,কুত্তার মতো জার্নি করে এসেছি।এইভাবে হুটহাট বিয়ে করে কেউ?”
স্পন্দন পেটে হাত চেপে বললো।
–“আমি আগেই তোদের বলেছিলাম।নাটক করলে আমার কি দোষ?”
ইয়াদ পুনরায় দুআর জানালার পানে তাকালো।প্রেয়সীকে সেই যে সকালে দেখেছিল,আর একটিবার দৃষ্টির সীমানায় আসেনি মেয়েটা।বড্ড লাজুক সে।অসুস্থতা বেড়েছে শুনেও তাকে দেখতে যায়নি ছেলেটা। লাজে যদি আবারও মূর্ছা যায়?তাছাড়া ইয়াদ সিদ্ধান্ত নিলো,অসুস্থ প্রেমিকাকে সকালে দেখেছে তবে এখন দেখতে হলে তার অসুস্থ বৌকেই দেখবে।আদর সোহাগ দিয়ে ভরিয়ে দিবে মেয়েটার সর্বাঙ্গ।মলিন হাসলো ইয়াদ।মনে মনে তার অনেক পরিকল্পনা হাতছানি দিচ্ছে।
–“ভাই,তোর’ই বউ হবে।কাজী আসুক জাস্ট।এতো উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিস কেনো?”
–“ওকে দেখতে ইচ্ছা করছে অনেক।মেয়েটা যে ‘হ্যাঁ’ বলবে এতো দ্রুত আমি ভাবতে পারিনি।”
ইয়াদ বুকের উপর দুইহাত ভাঁজ করে বললো।
–“ইস,না মেনে যাবে কই?সে তো তোকে ভালই জানে।তোর রাগে মেয়েটা কতবার ভস্ম হয়েছে বল তো?”
ইয়াদ কিছু আওড়ালো না।এইভাবে তার আর দুআর ব্যাপারটা সবার সামনে উপস্থিত করাটা তার অপছন্দ।দুআর সব ব্যাপার তার নিজের মধ্যেই রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে প্রেমিক পুরুষ।
রিজোয়ান ডাকতেই চার বন্ধু ভেতরে চললো।ইয়াদের মনে উত্তেজনায় ভরপুর।আর কিছু সময়,এরপরই তো প্রেয়সী সারাজীবনের জন্যে তার হয়ে যাবে।এতো উচ্ছ্বাস জীবনে কখনো অনুভব করেনি ইয়াদ।বড় বড় ট্রফি অর্জন করতেও তার এতটা আনন্দের আভাস অনুভব হয়নি।
.
মেজেন্ডা রঙের বেনারসি,গলায় সুন্দর সোনার হার।অতটা ভারী না,তবে বেশ মার্জিত আর চকচকে।দুআর কানে,হাতে,কপালে হালকা কারুকার্য করা সোনার অলংকার অবস্থান করছে।মুখের সাজের জন্যে দায়িত্ব নিয়েছিলেন জিয়া।দক্ষ হাতে পরিপাটি সাজের অন্তিম ঘটলো। মেজেন্ডা রঙের লিপস্টিকের জন্যেই মেয়েটার সাজ অতিরিক্ত উজ্জ্বলতায় চিকচিক করছে।লম্বা চুলে খোঁপা সাজালো জেনি।কৃত্রিম ফুলের খোঁপা,সেই প্রাকৃতিক খোঁপার উপরেই সুন্দর করে বসালো মেয়েটা।এরপরই আঁচল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো মাথার অর্ধভাগ।
গোটা গোটা দৃষ্টিতে সকলেই পর্যবেক্ষণ করছে নববধূকে। ইয়াদের বড় ফুফুও চুপটি করে মেয়েটার ঝলসানো রূপটায় মত্ত হচ্ছে।শেষমেশ মহিলা বুঝলেন তার ভাইপো কেনো এতটা অস্থির হচ্ছিলো বিয়ে নিয়ে।তার প্রেমিকায় যে এমন,ভেলুয়া সুন্দরী!
মহিলা আত্মীয় দুআর রুমে এসে ভিড় করলো।
ইয়াদ প্রশংসায় পঞ্চমুখ কমবেশি সকলের ধারে।
দুআর ভেতরকার অনুভূতি আন্দাজ করতে পারছে না স্বয়ং দুআ। খাটের মাঝামাঝি চুপিসারে বসে আছে সে।খানিক বাদেই তার বাবা,রিজোয়ান আর হুজুর মাপের লোক রুমে আসতে নিলেই মহিলাদের ভিড় কমতে থাকে।
সকল রীতি শেষ করেই রিজোয়ান দুআর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,
–“এই বিয়েতে রাজি থাকলে ‘ কবুল ‘ বল,বোন।”
দুআ সময় নিলো।ঝাপসা চোখে সবকিছু অস্পষ্ট।ভেতরটা চুরমাচুর হচ্ছে মেয়েটার।বাবার পানে চেয়ে মেয়েটা ভরসা পেলো যেনো।অবশেষে বিয়েটার জন্যে সকল রীতি পালন করে মেয়েটা ইয়াদের অর্ধাঙ্গিনী হলো।দেশসেরা খেলোয়াড়ের একমাত্র অর্ধাঙ্গিনী হয়ে বদলে নিলো তার আর খেলোয়াড়ের মধ্যকারের সকল সম্পর্ক।পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো দুআ ফারাবী এবং ইয়াদ বিন তেহরান।নিজের নামের স্বাক্ষরের পাশাপাশি লোকটার স্বাক্ষর একদম স্পষ্ট।
বিয়ে পড়ানো শেষ।মহিলারা একবার একবার এসে কক্ষ খালি করলো।খাবারের জন্যে সকলের তাড়া।
মাহি এবং সঞ্জয় এলো সকলের শেষে।দুআর কাছে এসে মাথায় হাত রাখলো সে,
–“বিয়েটাও মিস করলাম আমি?আমার মতো অভাগী আর নেই কেউ।সঞ্জয়,এখন আমার কি হবে আজব?”
–“চুপ থাক মা।রাস্তায় মাথা খেয়েছিস।এখন চুপ কর।আমাদের দুআকে দেখ।কি সুন্দর লাগছে!হঠাৎ এইভাবে বিয়ে খাবো ভাবতেই পারিনি।”
সঞ্জয়ের কথায় মারিয়া হেসে বললো,
–“বিয়ে খাওয়া যায় নাকি?বিয়ের ভাতই তো খাওয়া যায়।”
–“ঐ একই।”
সঞ্জয় মাথায় হাত রেখে জবাব দিলো।
–“দেখি,দেখি,আমার ভাইয়ার একমাত্র বউয়ের একটা ছবি দরকার।”
জিয়া এসে সকলকে সরালো খাট থেকে।মোবাইলে কয়েকখানা ছবি তুলতেই শান্ত হলো মেয়েটা,
–“ভাইকে এতো ডাকছি। সে আসছেই না।বন্ধুদের নিয়ে মগ্ন আমার ভাই।”
সঞ্জয় এই মেয়েদের ঝামেলা দেখে বেরিয়ে পড়লো কক্ষ হতে।সে ছেলে,তাই আপাতত ছেলের দলের সেখানেই যোগ দিবে বলে ভাবলো।
–“ইয়াদ ভাইকে চিনো না জিয়া আপু।দুআর এমন ধংসাত্মক রূপ দেখে ও সামলাতে পারবে না নিজেকে।আগেই ওর অবস্থা খারাপ হতো,এখন তো বউ।না জানি আমাদের সমানেই…”
রামিসার কথায় লাজে নুইয়ে পড়লো দুআ। গালে রক্তিম আভা তার।জিয়া কেশে উঠলো সন্তর্পণে,
–“আস্তে আস্তে,বাচ্চা মেয়ে আছে এই রুমে।”
মারিয়ার হেলদুল নেই। সে আদুরে নজরে ভাইয়ের বউকে পর্যবেক্ষণ করছে।
‘
বর্ষণের নাম নেই সেই এশার সময় হতে।আকাশ এখন পরিষ্কার।স্বচ্ছ চন্দ্র তার আলো ছড়াতে ব্যস্ত।পবনের ঝাপ্টা কাঁপিয়ে তুলছে সর্বাঙ্গ। ফ্যান বন্ধ তাও কতো ঠান্ডা!সকলে যার যার রুমে স্থায়ী।মাইশার পরিবার এবং ইয়াদের পরিবার ছাড়া আর কোনো আত্মীয় নেই এই মুহূর্তে।তিমিরের গভীরতায় ইদ্রিস জমিদারের আদেশে কেউ আর এই বাড়ি ছাড়েননি।বিশাল জমিদার বাড়িতে সকলের স্থান নির্ধারিত হয়েছে।
মিনিট খানেক পূর্বেই রুম থেকে সকল মানবী দুআকে একা করে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো।জ্বর পুনরায় বাড়ছে মেয়েটার।রাতের খাবার খেয়ে ওষুধ খেলেও,বমিতে সব ভস্ম হলো।ফলস্বরূপ গা কাঁপছে তার।
খট্ করে দরজার শব্দ হলো।ঝলমলে আলোতে
বিছানার হেড সাইডে হেলান দিয়ে বসে থাকা রমণীকে দেখে ইয়াদের পা থমকালো মুহূর্তেই। শাড়ির আঁচলে মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে।ব্যালকনির দরজা খোলা,বড় আয়তনের জানলাটাও উম্মুক্ত।তারই দরুণ পবনের ছোঁয়ায় মেয়েটা এমন কাঁপছে।ইয়াদ শব্দ করে জানালা বন্ধ করলো।ব্যালকনির দরজার পানে এগুতে নিলেই দুআ ভাঙ্গা স্বরে বলে,
–“খেয়েছেন?”
ঘাড় বাঁকিয়ে বামে তাকালো ছেলেটা। আধ বোজা নয়নে মেয়েটা তার পানে চেয়ে।এমন ধংসাত্মক রূপের অধিকারী মেয়েটা তার বউ!ইয়াদের কানে উষ্ণতার আভাস বাড়লো,গতি ঘুরিয়ে মেয়েটার পাশে বসলো।হাতের উল্টো পিঠ গলায় ছুঁয়ে প্রশ্ন করলো সযত্নে,
–“আবার জ্বর এসেছে?”
–“চলে যাবে।”
দুআর মলিন কণ্ঠ।
তার কম্পণরত অধর জোড়া দৃষ্টিতে এলে ইয়াদ সেথায় আঙ্গুল স্পর্শ করালো বিনা দ্বিধায়,
–“যেতে তো হবেই।খানিক বাদে কিছু খাবে,এরপর আবারও ওষুধ খেয়ে নিবে।জ্বর পালাবে।”
দুআ হাসলো ইয়াদের কথায়।ইয়াদের সর্বাঙ্গে শীতল পবন দুলে গেলো।মেয়েটা কেনো এতো মোহনীয়?
মাথার উপর ঘোমটা সরাতেই ইয়াদকে দুআ প্রশ্ন করলো,
–“কাল চলে যাবেন?”
ইয়াদ ব্যস্ত নিজের কাজে,
–“জানিনা।”
–“ওহ।”
–“ঘুমাবেন?”
হাত থামলো ইয়াদের। বাঁকা নয়নে মেয়েটার পানে একজনর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।কতো সাবলীলভাবে মেয়েটা তাকে প্রশ্ন করে ফেললো!
মেয়েটা কি ভুলে যায়,ইয়াদ তার প্রতি এতটাও সহজ নয়?
–“দেখা যাবে।”
ইয়াদের খাপ ছাড়া কথায় দুআ খাট থেকে নামলো।ইয়াদ সন্দেহের দৃষ্টিতে সেথায় তাকিয়েই বললো,
–“কই যাও?”
–“রুম থেকে যায়?আপনার হয়তো আমার উপস্থিতি ভালো লাগছে না?”
কথা শেষে দুআ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো।গলার উপর অবস্থানরত সোনার গহনা খুলে রাখলো বাক্সে।গলায় তার চিকন চেইন বিদ্যমান।এটাও ডালিয়ার দেওয়া।ড্রয়ারের শেষ অংশে গয়নার বাক্স রেখে দাঁড়াতেই পেছনে ইয়াদের অস্তিত্ব টের পেলো দুআ।পেছনে ফিরতেই ইয়াদের অবয়ব দেখে মুচকি হাসলো,
–“রাগ করেছেন খেলোয়াড় সাহেব?”
–“আজ বেশি হাসছো মনে হয়?”
এক ভ্রু উঁচু করলো ইয়াদ।
–“বিয়েতে আপনি অখুশি?”
–“আমি?”
ইয়াদ নিজের দিকে আঙুল দেখালো।
দুআ হেসে মাথা নাড়ালো উপর নিচ।
–“হাউ ফানি,চন্দ্র! ইউ নো হুয়াট?তোমার জোকটা একদম বাজে ছিলো।”
কথা শেষ করতেই ইয়াদ একটানে নিজের পাঞ্জাবি খুললো,
–“এইসব পড়ে কে ঘুমায় বলো?”
সরাসরি ইয়াদের উদোম শরীর দুআর দৃষ্টিতে এলে মেয়েটার তনু এক ঝংকার দিয়ে উঠলো।লোকটার শরীর কি স্বচ্ছ!দুআ পেছনে ঘুরলো।কেমন অনুভূতি হচ্ছে দুআর এখন?জানেনা সে।তবে,এই অনুভূতি ভালো খারাপ দুইটার সংমিশ্রনে ভরপুর।
মেয়েটা নিজের উদরে ইয়াদের হাতের বেষ্টনী লক্ষ্য করলো।খামচে ধরলো সদ্য বিবাহিত প্রেমিকের হাত। কাঁধে লোকটার অধরের স্পর্শ পেয়ে সংকুচিত হলো মেয়েটার দেহ। সেই অনুভূতি অনুভব করার পূর্বেই লোকটা তাকে নিজের কোলে তুলে নিলো।এইভাবে লোকটার উদোম শরীরের সংস্পর্শে এসে দুআর জান যায় যায় অবস্থা।দৃষ্টি তোলার ভুল করছে না মেয়েটা।
–“লাইট বন্ধ করো,চন্দ্র।”
সুইচ বোর্ডের দিকে না তাকিয়েই মেয়েটা আন্দাজে সুইচ টিপলো দুইটা।তিন নাম্বার সুইচ টিপতেই লাইটের আলো নিভলো,নিকষ আঁধারের মাঝে চন্দ্র তার আলোতে রাঙিয়ে রাখলো রুম।ব্যালকনির দরজায় সটান হয়ে আলোর ঝলকানি প্রবেশ করছে।
ব্যালকনিতে পানি।ইয়াদ ব্যালকনির দুয়ার বরাবরই বসে পড়লো।গুটিশুটি মেরে দুআ ইয়াদের কোলেই বসে আছে নির্বিঘ্নে।ফ্লোরে পা রাখতে নিলেই ইয়াদের কড়া সুর ভেসে আসে,
–“আমার পায়ের উপর পা রাখো।ফ্লোর যথেষ্ট ঠান্ডা।”
ইয়াদের কথা অনুযায়ী দুআ তাই করলো।ছেলেটার হাত মেয়েটার আঁচল ভেদ করছে, নাক স্পর্শ করলো মেয়েটার কাঁধ বরাবর,
–“আজ কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে,তাইনা?”
–“হু..ম।”
অস্থিরতায় মাখা দুআর কণ্ঠ।
–“এই চন্দ্রৌজ্জ্বল রাতে কথা দিয়েছিলাম,তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে।আর দেখো!আজ এই চন্দ্রৌজ্জ্বল রাতে তুমি আমার হলে,সম্পূর্ণ আমার।কিছু প্রেমিক কথার খেলাফ করে না।কেউ কেউ কথা রাখে।”
দুআ ইয়াদের পানে ফিরলো। চাঁদের আলোয় লোকটার মুখশ্রী আলোকিত।আঁখি জোড়ায় মাদকতা। কি অদ্ভুত সেই চাহনী!দুআ মাথা ঠেকালো ইয়াদের চোয়ালে,
–“সব মনে আছে,ইয়াদ।”
উদরে চাপ প্রয়োগ করে মেয়েটাকে আরো কাছে টানলো ইয়াদ।তনুর উন্মুক্ত অংশে ছেলেটার হাতের বেশামাল স্পর্শে মেয়েটা কম্পিত।অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,
–“ইয়াদ!”
–“হুম,বলো না।”
মাদকতায় ভরপুর ইয়াদের কণ্ঠস্বর।
দুআ কিছু বলতে পারলো না।গলা তার ভারী।নিঃশ্বাস নেওয়া বড় দায়।
ইয়াদ হাসলো।মন মাতানো তার হাসি।দুআ কেবল চেয়েই রইলো।
–“নখ দেবে যাচ্ছে তো,চন্দ্র।”
স্পর্শ কিঞ্চিৎ গাঢ় করলো ছেলেটা।নুইয়ে পড়লো দুআ।সেই আবেদ’নময়ী রূপে ভস্ম হলো ইয়াদের সত্তা।
ঘন নিঃশ্বাসের অধিকারী ইয়াদ,হালাল প্রেমিকার মাতাল অধরে ছুঁয়ে দিলো নিজের অধর।এই নিষিদ্ধ স্থান ছুঁতে আজ কোনো বাঁ’ধা নেই তার।
চলবে…..