#আমার_চন্দ্রাবতী,৩১
লেখিকা- সালসাবিল সারা
স্টেডিয়াম সজাগ।বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের খেলায় উত্তাল স্টেডিয়ামের পরিবেশ।দুই দলের জিতার সম্ভাবনা বড্ড সন্নিকটে।বাংলাদেশের প্রয়োজন এক ওভারে বারো রান।দেশের বর্তমান উইকেট আট।মাঠে টিকে আছে ইয়াদ এবং রিয়াদ।দুইজনের নিপুণ হাতের ব্যাটিংয়ে ম্যাচ বেশ চাঞ্চল্যকর। বোলার বল করার জন্যে দৌড়ে গেলে স্টেডিয়াম জুড়ে কলরব সৃষ্টি হয়।বল নিকটে এলে ইয়াদ ব্যাট ঘুরায়,বল গিয়ে পড়ে বাউন্ডারির বাহিরে।ছক্কা হাঁকানোতে সকলের জয়ধ্বনি শোনা গেলো।পুনরায় বলিং করা হলে এক রান নেয় সে।রিয়াদ ব্যাটিংয়ের জন্যে পুরো দমে প্রস্তুত।পরপর দুই বলে দুই চার হাকিয়ে বাংলাদেশ দল নিজের জয় নিশ্চিত করলো।জয়ধ্বনিতে মুখর পরিবেশ।
চট্টগ্রামে খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায়,বাংলাদেশের সাপোর্টারের সংখ্যা অগণিত।খেলা শেষে দুই দলের সকলে হাত মেলালো।আরম্ভ হলো ইন্টারভিউ পর্ব।ইন্টারভিউয়ের জন্যে নির্বাচিত কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে ইয়াদ এবং রিয়াদ দুইজনই আছে।
–“ম্যাচটা ভালো ছিলো।”
রিয়াদ মাথা চুলকিয়ে বললো।
–“হ্যাঁ,একদম।প্রথমে ভেবেছিলাম আজ আমরা শেষ।”
ইয়াদ হাসলো নির্দ্বিধায়।
–“এতো সহজ নয় হেরে যাওয়া।মনোবল আর টিমওয়ার্ক হলো আসল বিষয়।এটা স্ট্রং,তো জিতে যাওয়া কোনো ব্যাপারই না।”
রিয়াদের কথায় ইয়াদ তার কাঁধে হাত রাখলো।অধর তার বড্ড প্রসারিত।গত ম্যাচে হেরে যাওয়ায় যতটা মন খারাপ ছিলো,আজ ম্যাচ জিতে;সিরিজ জয়ের পর তার মন সহস্রগুণে তাজা হলো।
ইন্টারভিউ শেষ হলো।নিজ নিজ প্রাপ্তি বুঝে নিয়ে সকলে ফিরলো রেস্ট রুমে।ঘামে ভেজা ছিপছিপে জার্সি খুললো ইয়াদ।শীতকালেও মাঠে গরমের দিনের ন্যায় ঘাম হয়।জার্সি বিনে রাখতেই পেছন থেকে ডেকে উঠলো রিয়াদ,
–“ইয়াদ!কথা ছিলো।”
ইয়াদ ঘুরলো।রিয়াদের ইস্তোস্ত হওয়ার ব্যাপারটা তার মাথায় এলো না।সে সাবলীল ভঙ্গিতে রিয়াদকে বললো,
–“বলো?”
–“আসলে..আসলে,তোমার বোন কি এখনো জামালের জন্যে পজেসিভ?”
ইয়াদ সম্মুখে ফিরলো।নিজের কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় জবাব দিলো,
–“হাতেনাতে প্রমাণ দিয়েছি আমার বোনকে।জামাল খারাপ লোক,এই ব্যাপারে আমার বোনের কোনো সন্দেহ নেই।জিয়া আপু, মুভ অন করেছে।ইন ফ্যাক্ট আমার বউকে বাড়িতে তুলে নেওয়ার পূর্বে আপুর জন্যে ছেলে খোঁজা হচ্ছে। ভালো ছেলে পেলেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হবে।”
ইয়াদের কথায় রিয়াদের মনে সুপ্ত অনুভূতির গভীরতা হলো গাঢ়।মাথা চুলকিয়ে সে ইয়াদের উদ্দেশ্যে নিজের বক্তব্য পেশ করলো,
–“আমি জিয়াকে পছন্দ করি। পাত্র হিসেবে আমি তার জন্যে মন্দ নই।তোমার কি মতামত?”
ইয়াদ বাগপ্যাক হাত থেকে নিচে রাখলো।তার পূর্ব হতেই ধারণা ছিলো রিয়াদ তার বোনকে পছন্দ করে।ইয়াদ হাসলো পুনরায়,
–“ফ্যামিলি নিয়ে বাসায় এসো।সিনিয়র হিসেবে তুমি সবসময় আমাকে সাপোর্ট করেছো। আই থিঙ্ক, তুমি আমার আপুর জন্যে বেটার পার্সন।ঢাকায় ফিরলে তোমাকে ফোন দিবো আমি।পারলে,জিয়া আপুর সাথে কনট্যাক্ট করে টুকটাক কথা বলো।আপু তোমার ব্যাপারে একটু সহজ হতে পারবে।”
–“আজ ফিরছো না ঢাকায়?”
রিয়াদ চমকালো খানিকটা।
–“নাহ।চট্টগ্রামেই আছি।আমার মিসেস রাগ করে আছে।বিয়ের পর শুধু তিনবারই গিয়েছিলাম।এই একমাসে একবারও যাওয়া হয়নি।”
ইয়াদ নিজের ব্যাগপ্যাক হতে নতুন জার্সি এবং তার উপরেই কালো লেদারের জ্যাকেটে আবৃত করলো নিজেকে।
–“বাড়িতে তুলে নিলেই পারো।এইভাবে দূরত্বে থাকলে দুইজনেরই কষ্ট।”
রিয়াদের চিন্তিত কণ্ঠ।
–“উম,আপুর বিয়েটা হোক।এছাড়াও আর কয়েকমাস বাকি আছে ওর ফাইনাল এক্সামের।তার আব্বার করুণ নির্দেশ,ইন্টার শেষেই মেয়ে বিদায় দিবেন উনি।এর পূর্বে না।”
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ইয়াদ একেবারে প্রস্তুত।
–“এই কয়েক মাসেই জিয়ার বিয়ের কাজ সারতে হবে তোমার?”
–“হ্যাঁ।”
ইয়াদের জবাব শুনে ঘাবড়িয়ে গেলো রিয়াদ।
তার অভিব্যক্তি লক্ষ্য করে ইয়াদ মুখ খুললো পুনরায়,
–“নাম্বার টেক্সট করছি তোমাকে।পটাতে পারলে একদিনেই পটানো সম্ভব।তোমার ব্যক্তিত্ব আপুর পছন্দ হবে মাস্ট।ট্রাই করে দেখো,আর না পটলে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আপুকে আপন করতে হবে তোমার। অল দ্যা বেস্ট,রিয়াদ।”
ছেলেটার মনোভাবে রিয়াদের মনে আশার সঞ্চার হলো,
–“তোমার বোন শুধু আমারই হবে।”
–“ইন শাহ্ আল্লাহ্।ট্রাই করতে থাকো।সফলতা আসবেই।”
কথাটা বলেই ইয়াদ হাত মেলালো রিয়াদের সমেত।
পরপরই ইয়াদ বেরিয়ে পড়লো রেস্ট রুম হতে।
টিমের বাসে না উঠে মাইক্রোতে উঠলো ইয়াদ। কর্তৃপক্ষের সাথে পূর্ব হতেই তার আলাপ করা ছিলো এই বিষয়ে।মোবাইল চালু করতেই বউয়ের কোনো ফোনকল না দেখে মলিন হাসলো সে।মেয়েটা আবারও রাগ করেছে। বিয়ের পরপর মেয়েটা আরো বেশি অভিমানী হলো যেনো।ইয়াদের মন তাজা হয়।মেয়েটা তাকে অতিরিক্ত ভালোবাসে বলেই মেয়েটার অভিমানের পাল্লা এমন ভারী।যে যতো ভালোবাসে তার অভিমানের মাত্রা ততো বেশি।
গ্যালারিতে তাদের বেশ ক্লোজ অবস্থার কয়েকটা ছবিতে নজর বোলাচ্ছে ছেলেটা।শেষ যখন দেখা হয়েছিল তাদের,দুআ জর্জেটের একখান সাদা শাড়ি পড়েছিল।সেই রাতে ইয়াদ এতোটাই ডুবে গিয়েছিল মেয়েটাতে,তার ভালোবাসার তৃপ্ত জখমে মেয়েটা অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিল বেশ।পরর্বতীতে ইয়াদের বক্ষদেশেই
তন্দ্রায় ডুবেছিল মেয়েটা।ভালোবাসার জখম কষ্টের মাঝেও বড্ড প্রশান্তি দেয়।সকালে মেয়েটাকে “সরি” বলতে নিলে মেয়েটার তার অধরে হাত স্পর্শ করে বলেছিলো,
–“আপনার যেমন ভাবে ইচ্ছে, তেমনই আমাকে ভালোবাসেন।আমি যেমন আপনার প্রিয়,আপনিও আমার বড্ড প্রিয় খেলোয়াড় সাহেব।এইসব ‘সরি,টরি’ বললে কিন্তু,আমার দেখা আর পাবেন না।”
সেদিন দুআর জবাবে ইয়াদ খুঁজে পেয়েছিল তার ভালোবাসার সার্থকতা।মেয়েটা তার কষ্টের মাঝেও ইয়াদকে একবিন্দু মন খারাপ করার সুযোগ দেয়নি।
অতীতের কথা ভাবতেই ইয়াদের মনে দুআকে স্মরণ করার তীব্রতা হুরহুর করে বাড়লো।তার বুকটা এই মুহূর্তেই দুআকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরতে ব্যাকুল।
ঘড়িতে সময় দেখলো সে।এখনো তিনঘন্টার পথ বাকি। সিটে পিঠ এলিয়ে দিতেই খানিক ব্যাথা অনুভব করলো ইয়াদ।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ব্যথাযুক্ত পিঠে ভর দেওয়া অবস্থায় আঁখি বুজলো সে।
_______
রাত আটটা।ইদ্রিস জমিদার সবেমাত্র ফিরলো বাসায়।উনি ফিরতেই হট্টগোল পাকলো সেথায়।আহেলী এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে উনাকে।ভেজা হাত মুখ মুছতেই ইদ্রিস জমিদার আহেলীর উদ্দেশ্যে বললো,
–“জামাই আইবো।আমারে ফোন দিসিলো।”
–“ছেলেটা বেশ কঠোর পরিশ্রম করে।আমি মেয়েকে জানিয়ে আসি।”
আহেলী যেতে নিলেই থামালো ইদ্রিস,
–“আহ্,বেশি আগে আগে চলো।জামাই কইতে মানা করছে।খাবার রাইন্ধা রাখো খালি।জামাই আসার সময় হইসে।”
আহেলী লজ্জা পেলেও প্রকাশ করলো না।মাথা নাড়িয়ে রান্নাঘরের নিকট ছুটলো।
আধ ঘণ্টা বাদেই ইয়াদ প্রবেশ করলো জমিদার বাড়িতে।জমিদার পূর্বের ন্যায় সোফায় বসে।ইয়াদ সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় শেষে উপরে উঠছে সিঁড়ি বেয়ে।পেছনে ইয়াদের ব্যাগ নিয়ে তাকে অনুসরণ করছে এখানকার এক খাঁজ লোক।
রুমের সামনে আসতেই লোকটা ব্যাগ রেখে বিনা শব্দে স্থান ত্যাগ করলো।
ইয়াদ দরজার নব ঘুরাতেই সফল হলো দরজা খুলতে। দুআকে নজরে এলো না তার।ব্যাগ নির্দিষ্ট স্থানে রেখে ভেতরের দিকে যেতেই দুআর কান্নাভেজা কন্ঠ তার কানে প্রবেশ করলো,
–“আমি খাবোনা বলেছি তো,আম্মা।বারবার জোর করছো কেনো?”
দুআ কাদঁছে!ইয়াদের ভ্রু কুঁচকে এলো।ব্যালকনির দরজায় দাঁড়াতেই মেয়েটার অবয়ব দৃশ্যমান হলো তার নজরে।চাদরে মুড়ানো দুআর শরীর।থেমে থেমে কেঁপে উঠছে তার তনু। নাক টানার শব্দটাও স্পষ্ট।
–“কাদঁছো কেনো?”
ইয়াদের স্বরে কেঁপে উঠলো মেয়েটা।সে ইয়াদকে এতটাই স্মরণ করছে, যার দরুণ তার বলার কথা মেয়েটার কর্ণপাশে ঘুরঘুর করছে?
দুআর নড়চড় না দেখে,ইয়াদ ধীর পায়ে দুআর সত্তাকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। এতে মেয়েটা বুঝলো,এটা কোনো স্বপ্ন না বরং বাস্তব।আঁখিতে বর্ষণ চলছে,
মেয়েটা তার পেট হতে ইয়াদের হাত সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে।ইয়াদ নিজের নাক ঘষলো দুআর গলায়,
–“সরি,চন্দ্র।”
–“আমি রেগে নেই।”
দুআর ভাঙ্গা স্বর।
–“তাহলে এই কান্না কেনো?”
–“আমি ভেবেছি আপনি,আপনি আমার কাছে না এসে ঢাকায় চলে যাবেন।তাই মন খারাপ ছিলো।”
দুআর কান্নার বেগ বাড়লো।
নিজ পানে ফেরালো ইয়াদ অভিমানী দুআকে।
বক্ষদেশে বন্ধী করলো মেয়েটাকে।মেয়েটা খিঁচে ধরলো ইয়াদের পিঠ।দুআর মাথার তালুদেশে অধর স্পর্শ করে ইয়াদ দুআর নিকট ব্যক্ত করলো,
–“পাগল মেয়ে।আমি আমার বউয়ের কাছে আসার সুযোগ খুঁজি মাত্র।সময় হয়না,তাই আসতে পারিনি।আর মাত্র কয়েকটা মাস,এরপর আমার কাছে নিয়ে যাবো।”
নাক টানলো দুআ।ইয়াদ হতে নিজের দেহাবশেষ ছুটিয়ে তার উদ্দেশ্যে বললো,
–“খিদে পেয়েছে?”
ইয়াদের নজরের রং পরিবর্তন হলো।দুআর গালে হাত রেখে মোলায়েম কণ্ঠে আওড়ালো সে,
–“তুমি নামক খিদে পেয়েছে আমার।”
দুআ বিস্ফোরিত নজরে ইয়াদের পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই বুঝলো ইয়াদ ইতোমধ্যে তার চাদর ছুঁড়ে ফেলেছে নিচে। কামিজের আড়ালে ইয়াদের বেশামাল স্পর্শে দুআর শ্বাস ভারী হয়।শব্দ দ্বারা কিছু ব্যক্ত করতে নিলেই দুআর অধরে নিজের অধর আটকে দেয় ইয়াদ।
.
রাতের ভোজনে নামতে গিয়ে দুআ লজ্জায় লাল।তীব্র ঠান্ডার মাঝে অসময়ে স্নান নেওয়া বড্ড দুষ্কর।তবে,এই অসাধ্য সাধন করতে হলো তার একমাত্র খেলোয়াড়ের দরুণ।ইয়াদকে কক্ষে রেখেই দুআ নিচে নামলো।ভেজা চুল পেঁচিয়ে বাঁধলো মেয়েটা।শীতের কারণে চাদর ঘোমটা আকারে বিন্যস্ত করে রেখেছে শরীরের উপর।
খাবারের টেবিলে সকলে ব্যস্ত।দুআ যেতেই জমিদার নিজের কাছাকাছি চেয়ার টেনে বসতে ইঙ্গিত দিলো তাকে।দুআ বসতে নিলেই আহেলী থমথমে কণ্ঠে বলে উঠলো,
–“জামাইকে রেখে নিচে আসলি কেনো?”
–“আম্মা,উনি আসবেন একটু পর।”
দুআ ধীর কণ্ঠে বললো।
–“এইটা কোনো কথা?জামাইকে রেখে মেয়ে চলে আসছে।”
কাকীমা কথাটা বলতেই, মাইশা কাকীমাকে ইশারায় থামার অনুরোধ করলো আর বলে,
–“আমি যাচ্ছি ভাইকে ডাকতে।”
–“দাঁড়াও মাইশা।আমি এমনিও উপরে যাচ্ছি,তুমি খেতে বসো।”
রিজোয়ান উপরের দিকে ছুটলো।দুআ স্থির দাঁড়িয়ে রইলো নির্বিঘ্নে।ইদ্রিস মেয়েকে কয়েকবার চোখ রাঙালো।তাও মেয়ে বসলো না।মায়ের কথা বড্ড গায়ে লেগেছে তার।ঠিকই তো,ইয়াদ বিহীন নিচে নামাটা যতসই বেমানান।
ইয়াদ আসলো রিজোয়ান সমেত।তার টিশার্টের গলার চারদিক হালকা ভিজে আছে।মাত্রই গোসল সারলো ছেলেটা।রিজোয়ানের ডাকে ভেজা তনুতেই টিশার্ট চড়ানোর ফল।ইয়াদ আসতেই দুআ চেয়ার টেনে বসার ইঙ্গিত করলে ইয়াদ নির্দ্বিধায় বলে উঠলো,
–“খেতে বসোনি কেনো?”
–“বসবে বাবা,তুমি বসো আগে।”
আহেলী বললো।
ইয়াদ দুআকে চোখ রাঙিয়ে বসলো।ইদ্রিস ভাতে মশগুল অবস্থায় শুধালো,
–“মাইয়্যা তোমারে ছাড়া খাইতে নারাজ। লও লও বাবা।”
ইদ্রিসের সহিত হাসলো ইয়াদ।বুকের দিকটায় জ্বলছে তার।তার ভালো ভদ্র মেয়েটা কিয়ৎ পূর্বে নখের সাহায্যে তার বুকে যে জখম করেছে, তা যদি ইদ্রিস জমিদার জানতো!
দুআ মাথার ঘোমটা আরো টানলো।বাবা,ভাইয়ের সামনে এই ঘোমটা পড়লে অঘটন ঘটে যাবে।তার গলার বা দিকটার ইয়াদের কামড় স্পষ্ট!লাজে,সংশয়ে কোনো মতে ভাতটুকু শেষ করলো মেয়েটা।
ভোজন পর্ব শেষ হতেই ইয়াদ উপরে উঠেছে।দুআ সিদ্ধান্ত নিলো কিছু সময় নিচে ব্যয় করবে।
তার বাবা,মা খাবার পাট সমাপ্তির পরপর পাড়ি জমালো নিজ কক্ষে।মাইশার সমেত হালকা কথা শেষে দুআ তাকে নিচের কক্ষে পৌঁছে দিলো।খাটে দৃশ্যমান তার ভাই চুপটি করে শায়িত অবস্থায় আছে।
–“ভাইয়া ঘুম মনে হচ্ছে।”
দুআ বিনা দ্বিধায় বললো।
–“হ্যাঁ।একটু পরে দেখবে আমিই উঠিয়ে দিয়েছি তোমার ভাইকে।আটমাস চলাকালীন একটা দিনও আমি শান্তি পায়নি।না শান্তি দিয়েছি তোমার ভাইকে।ইয়াদ ভাইকে ডাকার জন্যে উপরে উঠার সাহস দেখানোর কারণে এমন রেগে আগে শুয়ে পড়লো তোমার আদরের ভাই।”
দুআ মুখে হাত রেখে হাসলো,
–“আহা,কতো ভালোবাসা।তুমিও বেশি করো।এইসময় উপরে উঠবে না আর।আমি যায় কেমন!”
–“আচ্ছা,চাঁদ।”
মাইশা হেসে দরজা বন্ধ করলো।
দুআ ঘোমটা খুলে ভেজা চুল মেলে দিলো বিনা সংকোচে।এই মুহূর্তে দুআকে পর্যবেক্ষণ করার মতো কোনো মানব মানবী উপস্থিত নেই। কক্ষে প্রবেশ করে দুআর নজরে ইয়াদের অবয়ব দৃশ্যমান হলো।ছেলেটা পিঠে স্প্রে করছে।দুআ হচকালো।দৃষ্টি পিটপিট করে ইয়াদের অবস্থা বোঝার অহেতুক চেষ্টা করছে মেয়েটা।পিঠের উপর কেমন কালসিটে দাগ পড়েছে।এর আশেপাশে নখের দাগের আস্তরণ। দুআ বুঝলো না এই দাগ কিসের!মেয়েটা দ্রুত হেঁটে ইয়াদের সম্মুখে দাঁড়ালো,
–“কি হয়েছে,ইয়াদ?”
ভ্রু কুঁচকে তাকালো ছেলেটা,
–“নিচে থেকে যেতে।আসলে কেনো?”
–“আমি তো ভাবীকে..”
–“স্প্রেটা নাও।পিঠে দাগ দেখে ঠিকভাবে দাও।”
ইয়াদ স্প্রে এগিয়ে দিল দুআর পানে।
–“কিভাবে হলো এটা?”
দুআর চিন্তিত কণ্ঠ।
–“মাঠে থাকাকালীন ব্যাথা পেয়েছি।”
ইয়াদের স্ফীত কণ্ঠস্বর।
দুআ স্প্রে লাগানো শেষ করলো।কালো রঙের ফুল হাতা সোয়েটার এগিয়ে দিল সে ইয়াদের পানে।
বিছানা ঠিক করে কম্বল ঠিক করলো দুআ।শোয়ার জন্যে প্রস্তুত সে।আঁখিজোড়া ঘুমে ঢুলুঢুলু। যেই না বিছানায় উঠতে যাবে অমনি নিজেকে আবিষ্কার করলো ইয়াদের কোলে।দুআ আঁতকে উঠলো যেনো,
–“পিঠে ব্যাথা না?”
–“ছাদে যাবো।”
ইয়াদের চেহারায় প্রফুল্লতা।
–“এতো রাতে?”
ইয়াদ চোখ বুঁজে মাথা দুলালো।
ছাদে অবস্থানরত ছোট্ট লাইটের আলোতে ছাদ আলোকিত।ইয়াদ দুআকে নিয়ে চিলেকোঠার সামনেই বসলো।দুআর চাদর খুলে নিয়ে দুইজনের উপরে বিলীন করলো সেটা।ইয়াদের হাত দুআর উন্মুক্ত পেটে জড়াতে দেরী করেনি।দুআ সংকুচিত।ইয়াদের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো পরম সুখে।ইয়াদের থুতনি ঠেকলো দুআর মাথায়।চোখ বুজলো ছেলেটা।বড্ড ঘুমঘুম পাচ্ছে তার।
আকাশটা আজ কুয়াশায় মগ্ন।পরিবেশটা একেবারে নিরিবিলি।দুইজনের শরীরের উত্তাপ এবং চাদরের কারণে ঠান্ডা সহনীয়।ইয়াদের শ্বাস গাঢ় হয়।দুআর গালে অধর ছুঁয়ে সে বলে উঠলো,
–“আমি এইভাবে ঘুমাতে চাই।”
–“পিঠে ব্যাথা আপনার।বিছানায় ঘুমান?”
–“এই কুয়াশাছন্ন রাত,সাথে আমার প্রেয়সী,খোলা আকাশের নিচে আমরা দুইজন এবং আমাদের ঘনিষ্ঠতা;এমন সুখ তুমি রুমে কখনোই পাবে না।এমন প্রকৃতিও সর্বক্ষণ থাকে না।ভালোবাসার এমন বহিঃপ্রকাশ খোলা প্রকৃতিতে বেশ রোমাঞ্চকর।কথা বলো না তো,চন্দ্র।লেট মি স্লিপ।”
নিজ বক্ষদেশে দুআর মাথা চেপে ধরলো ছেলেটা।আরো ঘনিষ্ঠভাবে টেনে নিল ছেলেটা নিজ প্রেয়সীকে,
–“ঘুমাও,চন্দ্র।সকালে নিজেকে বিছানাই দেখবে। ডোন্ট প্যানিক।”
দুআ এক হাত বাড়িয়ে ইয়াদের উদর জড়িয়ে ধরলো।
দুআ নিশ্চিত,সে ঘুমালেই ইয়াদ নিচে নেমে যাবে।ছেলেটা এখন একদমই ঘুমাবে না, শুধু দুআর ঘুমের অপেক্ষায় রইবে।পরম আবেশে দুআর আঁখিজোড়া বুঁজে এলো।মাঝে মাঝে ইয়াদের হাতের আদুরে স্পর্শ উপভোগ করতে ভুলছে না প্রেয়সী।
‘
কেউ অপেক্ষা করছে খুশিমনে নিজ অর্ধাঙ্গিনীকে ঘরে তুলে তাদের বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করতে।আর কেউ অপেক্ষা করছে পূর্ব প্রতিহিংসায়,তাদের সুখের দিনকে কালো দিনে পরিবর্তিত করতে।প্রতিহিংসায় জ্বলন্ত মানুষদ্বয় বড্ড হিংস্র।
চলবে…..