#আমার_চন্দ্রাবতী-০১
লেখিকা- সালসাবিল সারা
বারোমাসি আমগাছের সামনে তিনজনের একটা ছোট্ট দল বিদ্যমান।তীব্র রোদের তেজ উপেক্ষা করে তারা চোখ পিটপিট করে আম গাছের ডালে দৃষ্টি জ্ঞাপন করছে।মাঝে মাঝে উপর থেকে একজন আম নিক্ষেপ করলে,সেগুলো হাতে থাকা ব্যাগে ভরে নিচ্ছে তারা।গাছের নিচে উপস্থিত তিন মহান ক্যাচদাতার নাম যথাক্রমে,”রামিসা,সঞ্জয় এবং মাহি।” এবং গাছের উপর অবস্থান করছে এই গ্রামেরই জমিদারের একমাত্র মেয়ে “দুআ ফারাবী।” নিজেদের বিশাল ফলমূলের বাগান থাকলেও অন্যের গাছ থেকে চুরি করে খাওয়ার মজা দুআর কাছে জগতের শ্রেষ্ঠ মজা বলে মনে হয়।দুআ নিজ মনে পাকা,আধা-পাকা আম পেড়ে নিচ্ছে। রোদের উত্তাপে তার শরীর এবং মুখমন্ডল ঘামে চুপচুপ হয়ে আছে।নিজের জামার হাতায় মুখ মুছে শেষ নিশানার পাকা আমটিতে যেই হাত দিতে যাবে অমনি সঞ্জয় তাড়া দিলো দুআকে,
–“হরে কৃষ্ণ! জুবিন কাকা এলো রে।দুআর বাচ্চা নাম জলদি।”
নিশানার দিক থেকে নজর না সরিয়ে দুআ এক লাফে আমটি নিজের মুঠোয় নিয়ে জমিনে চলে এলো। পায়ে হালকা চাপ পড়েছে উচুঁ থেকে নির্দ্বিধায় লাফিয়ে পড়ার ফলে।যার কারণে, সে পালানোর পূর্বেই জুবিন ঘোষ তাদের সামনে এসে হাজির হলো,
–“এই এই,একটাও নড়বি না।চোরের দল সব কয়টা।জমিদারের মেয়ে কিভাবে চোর হলো এটাই বুঝি না বাপু।আর সঞ্জয় তোর কাকার গাছের আম চুরি করতে তোর রুচিতে কি বাঁধে না?”
সঞ্জয় ভীতুর ফোয়ারা মুহূর্তেই চুপসে গেলো।দুআ নিজের পায়ে হাত দেওয়া অবস্থায় জবাব দিলো,
–“সব কামারের ছেলে যেমন কামার হয় না,অমনি সব জমিদারের মেয়ে তো আর জমিদারের মতো হবে না!আমি গ্রামের সহজ সরল দুর্দান্ত এক মেয়ে।”
–“ছি ছি ছি,বলে কি এই মেয়ে! ঐ দুআ, আম সব ফেরত দাও।আমি আজই তোমার বাবার কাছে বিচার দিবো।প্রত্যেকবার এই বড় বাড়ির মেয়ে কিভাবে ফলমূল চুরি করে!”
দুআ একটু চমকালো।তার বাবা তার এইসব কুকীর্তির কথা জানলে নিশ্চয় ঘরে আটকে রাখবে দু,তিনদিন!কিন্তু, দুআর কাছে এই দুই – তিনদিনের বন্ধী জীবন কিছুতেই মঞ্জুর না।এরমধ্যে রামিসা চুপসে গেলো জুবিনের হুমকি শুনে।সে আম ভর্তি ব্যাগ জুবিনের দিকে এগিয়ে দিতে গেলে দুআ এতে আপত্তি জানায়।
–“কাকা,আমরা কি আসলেই চোর?আমি এই আমের বদলে আজ আপনাকে টাকা দিতাম অবশ্যই।আমি বুঝেছি পূর্বে আমি বেশ ভুল কাজ করতাম।তবে আজ থেকে আর না।এই নিন,এইখানে দুইশত টাকা আছে।”
দুআ তার সেলোয়ারের পকেট থেকে কচকচে দুইটা একশো টাকার নোট ধরিয়ে দিলো জুবিনকে।জুবিন এর মুখভঙ্গি দেখে কিছুই বুঝা গেলো না,সে খুশি নাকি অখুশি।তবে,জুবিন মুখে বলে উঠলো,
–“আর যেনো গাছে উঠতে না দেখি।যাও আম নিয়ে যাও।”
দুআ এবং বাকি সবই হনহন করে হাঁটতে লাগলো।মাহির আবেগী মন এতক্ষণের তার মনের চাপা প্রশ্ন করেই বসলো দুআকে,
–“সেলোয়ারে পকেট এলো কোথা থেকে?আর তুই কবে থেকে ভালো মানুষ হয়েছিস এইসব কাজের ক্ষেত্রে?”
সব কয়টা গিয়ে বসে পড়লো পুকুরপাড়ের ধারে।ইতিমধ্যে সঞ্জয় আর রামিসা দুআর ইশারায় আমের খোসা ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।দুআ ঠোঁট চৌখা করে মাহির উদ্দেশ্যে বললো,
–“সঞ্জয় আগেই আমাকে ইঙ্গিত করেছিল,আজ জুবিন কাকা আসতে পারে।তাই আমি সব অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছি।আর বাদ বাকি টাকার কথা,টাকাটা নকল ছিলো।সঞ্জয় আমায় জাল টাকা এনে দিয়েছিলো।তুই ভেবেছিস কিভাবে,আমি উনাকে টাকা দিবো!তাও দুই – দুইশত টাকা!ইসস।”
দুআ নিজের মাথার কাপড় গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বড় একখান পাতার সাহায্যে নিজেকে বাতাস করছে।মাহির মুখটা এখনো প্রশ্নে ছেয়ে আছে,
–“উনি বুঝে গেলে,আবারও ঝামেলা করবে না;চাঁদ?আমার কিন্তু চিন্তা হচ্ছে,আজব।”
–“দেখলি না,দুইশত টাকা উনি আরো টাকার সাথে সংমিশ্রণ করে নিয়েছে!এইখানে কেউ কিভাবে বুঝবে?দেখবি পথে পথে আরো টাকা তুলবে সে মানুষ থেকে।তাই চিন্তার কিছু নেই।ভাই,আম খা।এতো প্রশ্ন করিস কেনো?”
দুআ আমে কামড় বসিয়ে বললো।
–“চাঁদের বাচ্চা,তোর মাথায় বুদ্ধির শেষ নেই।শুধু বাহিরের মানুষের সামনে তোর এই বুদ্ধি যায় কোথায়?”
সঞ্জয় বোকার মতো মুখ বানিয়ে বললো।
–“তোরা হচ্ছিস আমার বাচ্চাকালের সাথী।তোদের সাথে থাকলে আমার মধ্যে সংকোচবোধ তো দূরে থাক,অতিরিক্ত একটা শক্তি অনুভব করি।কিন্তু,
আসলেই আমি জানিনা; বাহিরের মানুষের সামনে আমি এতো বকবক করতে পারি না কেনো!”
–“কারণ,তোর মাথা নষ্ট।”
রামিসা দাঁত কেলিয়ে বলল।
সবাই এক গাল হাসলো রামিসার কথায়। আমের মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করার পাশাপাশি পুকুর পাড়ে দুআর নেতৃত্বে জমজমাট একটা আড্ডা জমালো সবাই মিলে।
–“হুজুর,ঐযে পুকুর পাড়ে দেখা যাইতাছে তাদের।”
তীক্ষ্ণ এমন কণ্ঠ শুনে হিম হয়ে এলো দুআর শরীর।গলার ওড়না মাথায় পেঁচিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো ভনিতা করলো সে।যেনো এই পুকুর পাড়ে বসা ইনসানের মধ্যে সে’ই সবচেয়ে ভদ্র আর শান্ত।ওড়নার সহিত ইতিমধ্যে মুখে লেগে থাকা আমের রসটা মুছে নিলো দুআ।বুকটাও কেমন দ্রিম দ্রিম শব্দ করছে তার।হঠাৎই তার হাত চেপে ধরলো এক যুবক।চোখে মুখে বিরক্তি তার।দুআ সে যুবকের মুখের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলে উঠলো,
–“রিজোয়ান ভাই!”
–“একটা দিবো ধরে।সাত সকালে উঠে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিস!চাচীর সাথে লড়ে তোকে কলেজে ভর্তি করিয়েছি আর তুই কিনা আজ প্রথম দিনেই হাওয়ার মতো ভেসে বেড়াচ্ছিস?আর এইযে রামিসা তোমার আপু কই?সে তোমাকে আজ ধেই ধেই করে বেরুতে দিয়েছে কিভাবে?সব কয়টা বাড়ি যাও।কলেজে যেনো কেউ দেরী না করো।”
গোল মিটিং ফুঁস হয়ে গেলো। রিজোয়ান দুআর হাত চেপে সামনের দিকে পা বাড়ালো।
–“এতো ফাইজলামি করিস কেনো তুই?বাড়ি গিয়ে এখন ঠিকই তো বকা শুনবি চাচীর পক্ষ থেকে।”
–“তুমি আছো তো আমার ভাই!তুমি আমাকে রক্ষা করে নিও,কেমন ভাই!”
দুআ মুচকি হাসলো।
–“হুম,তোর জন্যে আমি ঢাল হিসেবে আছি।আলোক ছাতাটা দুআর মাথার উপর ঠিকভাবে ধর।বড্ড রোদের তেজ আজ।”
আলোক রিজোয়ানের কথামতো কাজ করলো।
দুআ নিজের মুখ বন্ধ রেখেছে। রিজোয়ান তার একমাত্র কাকাতো ভাই।নিজের ভাইয়ের অভাব কখনো সে অনুভব করেনি,শুধুমাত্র এই রিজোয়ানের জন্যে।বাবার পরে যদি নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করে সে,তাহলে সেজন হলো এই রিজোয়ান।রিজোয়ানের জন্যে দুআ কতো অসাধ্য কাজ সাধন করেছে এটা একমাত্র দুআ আর তার আল্লাহ্ জানে।দুআ শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে রিজোয়ানের পানে তাকালো।রিজোয়ান ভ্রু কুঁচকে চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে।
বাড়িতে পৌঁছে দুআর মা তার দিকে তেড়ে এলে রিজোয়ানের পিছে দাঁড়ালো দুআ।
–“এই মাইয়্যা বেরিয়ে আয়।তোর চুল সব ছিঁড়বো আমি আজ।সকালে ঘুম থেকে উঠে নাওয়া নেই,খাওয়া নেই, অমনি দলবল নিয়ে টো টো করতে বেরিয়ে গিয়েছিস।তোকে নিয়ে করবো কি আমি!”
–“আহ,চাচী।ছোট মানুষ এইসব ভুল করেই।বাদ দাও তো এইসব। মা, দুআকে কিছু খাইয়ে দাও।কলেজের সময় হতে চললো।”
রিজোয়ানের কথায় আহেলি বেগম দুআকে নিয়ে ভেতরে গেলো।দুআর মনটা এখন শান্ত হলো যেনো।সে তার কাকীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
–“তুমি আর রিজোয়ান ভাই আছো বলে আমি এখনো টিকে আছি এই বাড়িতে।ভালোবাসি কাকীমা তোমাকে আর রিজোয়ান ভাইকে।”
–“হয়েছে। এখন আবার যাত্রাবাড়ীর নাটক শুরু করিস না।জলদি কর,তোর মা বাঘিনী একবার খেপলে আমরা কিছুই করতে পারবো না।”
দুআর ঠোঁট প্রশস্থ হলো।সে গামছা নিয়ে হাত পা দুলিয়ে আবারও বলে উঠলো,
–“কাকীমা,আমি জানি তুমি আমাকে বাঁচাতে সেই বাঘিনীর সাথে লড়াই করতে সর্বদা প্রস্তুত!”
আহেলি বেগম দুআকে মারার জন্যে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু লাভ হলো না।দুআ নিজেকে বাথরুমে আটকে নিলো। কিটকিটিয়ে দুইজনই দুই প্রান্ত থেকে হেসে উঠলো।
গোসল সেরে নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছে দুআ কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।এই গরমে সবাই হাফ হাতার জামা পড়লেও বাহিরে দুআর জন্যে এই হাফ হাতা জিনিসটা একেবারেই নিষিদ্ধ।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ের ডোরাকাটা দাগ দেখছে সে।দুআর মুখ,গলা,
বুকের কিছু অংশ,হাতের কব্জি ও কব্জির উপরিভাগের কিছু অংশ এবং পায়ের পাতা এইসব ব্যতীত তার পুরো শরীরে এমন ডোরা কাটা দাগ আছে।অর্থাৎ এইসব স্থান ছাড়া তার গায়ের চামড়ার রং একটু চাপা।উল্লেখিত স্থানের রং ধবধবে সাদা হলেও,তার শরীরের বাকি অংশ ছোপ ছোপ বাদামী রঙের।দুআ ছোট কাল থেকেই এমন।অনেকে দুআকে শ্বেত বা ধবল রোগী বললেও,ডাক্তার এই ব্যাপারটা নাকচ করেছে।এটা দুআর একপ্রকার চর্মরোগ।নিজের গায়ের দাগ গুলোর উপর হাত বুলিয়ে দুআ কলেজের কামিজ পরিধান করলো।কি শুভ্র দেখাচ্ছে এখন তাকে!যেনো তার গায়ে ফুলের টোকা পর্যন্ত নেই।দুআ মলিন হাসলো।তার এই রূপে অনেক মানুষ মজে যায়।কিন্তু, দুআ সাড়া দেয়নি কারো ডাকেই।কারণ তার ভয় হয়,সত্যি জানলে সে মানুষটাই না তাকে ছেড়ে যায়!তাই দুআ কখনো না নিজের এই দুর্বলতা প্রকাশ করে, না কখনো কারো সাথে প্রেমে মজেছে।
সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে দুআ রুম ত্যাগ করলো।তাদের খাবার টেবিলে খানা পিনার ধুম চলছে।টেবিলের মধ্য চেয়ারে নিজের বাবাকে দেখে মাথার কাপড়টা ঠিক করে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সে।
–“আসসালামুয়ালাইকুম,আব্বা।”
–“ওয়ালাইকুম আসসালাম,কলেজে যাইবা; আম্মা?”
–“জ্বী।”
দুআ ছোট্ট শব্দে বললো।
–“ঠিক আছে।ভালো মতো পইড়া আব্বার নাম উজ্জ্বল কইরো।প্রেম পিরিতে মজে গেলে আব্বার খারাপ রূপ দেখবা কিন্তু।”
দুআ মাথা নাড়ালো তার বাবা ইদ্রিস জমিদারের কথায়।
–“চাচা,আমাদের দুআ অনেক ভালো মেয়ে।দুআর কাছে নিশ্চয় এইসব কথা মোটেও ভালো ঠেকছে না।আপনারা কেনো আগ বাড়িয়ে মেয়েটাকে কথা শুনিয়ে দিন?”
রিজোয়ান থমথমে কণ্ঠে বললো।
–“শিক্ষক সাহেব,বোনের জন্যে কি চাচার লগেও ঝগড়া করবা?”
ইদ্রিস হেসে প্রশ্ন করলো।
–“আলবত করবো।আমার নিজের বোন নেই, দুআই আমার জন্যে সব;আমার ভাই,আমার বোন।দুআর ব্যাপারে আপনার থেকেও খারাপ কিছু আমি শুনতে চাই না।”
–“মাস্টার মানুষ,সর্বদা বেশি বুঝে।হেই লাইগ্গা তো জমিদারি না করে মাস্টারি করো।সমস্যা নাই,টাকার অভাব আছেনি আমাগো?যার যেডার মন চায় তাই করো।যাও কইলাম না কিছু তোমার বইনেরে।খেয়াল রাইখো আমার মাইয়্যার।অবশ্য আমি না কইলেও তুমি খেয়াল রাখবা আমি জানি।”
দুআ এবং বাকি মহিলাগণ চুপ করে নাস্তা করে যাচ্ছে।ঘরের এই দুই মুখ্য পুরুষকে সবাই বাঘের মতো ভয় পায়।দুইজনের মধ্যে মতের অমিল সর্বদাই থেকে যায়।কিন্তু,রিজোয়ান তার পরলোকগমন বাবার ন্যায় শ্রদ্ধা করে ইদ্রিসকে এবং ইদ্রিস নিজেও নিজের ছেলের অভাবটা রিজোয়ানের সহিত অনুভব করে না।তাই এই দুই দ্বিমত মানুষের মধ্যে আজও একটা প্রীতির বন্ধন বিদ্যমান রয়েছে।
দুআকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে নিজের গন্তব্যে ছুটলো রিজোয়ান।তাদের গ্রামে অবস্থিত বিরাট নামকরা এক ভার্সিটির প্রভাষক সে।এই ভার্সিটিতে শহরের ছেলেমেয়ের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি।
কলেজ গেইটে সঞ্জয়ের দেখা পেয়ে তার সহিত হেঁটে যাচ্ছে দুআ।গরমের দিনে সবাই নিজের স্বস্থি মতো কাপড় পড়েছে।শুধু একমাত্র দুআ নিজের বেড়াজালে বদ্ধ।গরমে তার গায়ে জ্বালা করছে।সেইসব মাথায় না নিয়ে নতুন কলেজ,নতুন ক্লাস,নতুন মানুষ এইসব দেখতে ব্যস্ত দুআ।ক্লাসে রামিসা এবং মাহি বসে আছে।রামিসার গোমড়া মুখ টেনে দিয়ে দুআ তাকে প্রশ্ন করলো,
–“কি হলো?”
–“তোর ভাইয়া এমন কেনো?হবু শালীকে কেউ ধমকায়?”
–“আমার ভাই তো এমনই।কি আর করার?দুলাভাই পরিবর্তন করবি, এমনও তো সম্ভব না।মাইশা আপু আর আমার ভাইয়ের প্রেম আজ আট বছরের কাছাকাছি।তুই বরং সহ্য করতে শিখ।”
দুআ এক চোখ টিপে ভনিতা করে বললো রামিসাকে।
রামিসা উঠে সজোরে ঘুষি দিলো দুআর পিঠে,
–“আমাকে নিয়ে মশকারি?দেখবি তোর কপালে এমন একজন জুটবে,যে তোকে প্রচুর বকবে।”
–“দুআর কোনো বোন নেই,রিজোয়ান ভাইয়ের শালী।তাহলে ওর দুলাভাই কিভাবে বকবে ওকে? আর এইভাবে কেউ মারে?”
সঞ্জয় উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলো।
–“ওর বোনের জামাই না হোক,ওর জামাই তো হবে!মিলিয়ে নিস।”
–“আজব,কি শুরু করলি?”
মাহির প্রশ্নে তিনজনই তার দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো।
–“সেটাই তো,আজব!”
–“হ্যাঁ,আজব।”
–“একদম,আজব।”
একে একে দুআ,রামিসা এবং সঞ্জয় মাহিকে ভেংচিয়ে বললো।
–“ধুর,আজব।”
মাহি কথাটা বলতেই সবাই হেসে উঠলো।
এরমধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো দুআর ছোট বেলার শত্রু জেরিন।সে এসে দুআর জামার হাতায় টান দিয়ে বললো,
–“এই গরমে এই কাপড় কেনো?গরম লাগছে না তোমার?”
দুআ নিজের হাত গুটিয়ে বুকের সামনে ধরলো।
এই মেয়ে ছোট বেলা থেকে দুআর ত্বকের সম্পর্কে জানে।এই নিয়ে ছোটবেলা থেকে দুআর অনেক ক্ষতি করেছে জেরিন।বুদ্ধি হওয়ার পর তাই এই মেয়েকে দুআ এড়িয়ে চলে।
–“এইখানে কাজ কি?দূরে যাও।”
রামিসার কড়া জবাব।
জেরিন এবং তাদের কথা কাটাকাটির কারণে ক্লাসের অন্য সবার দৃষ্টি এইদিকেই।
–“নাহ ,আমি শুধু দেখতে চাই এই গরমে ফুল হাতা কাপড় পড়ার কি দরকার?”
মাহি উঠে হালকা ধাক্কা দিলো জেরিনকে,
–“তুমি কি সমকামী?দুআর কাপড়ের ভেতর তুমি কি দেখবে,আজব?”
–“হরে, রাম! মাহি সেই বলেছিস।”
হো হো করে হেসে উঠলো পুরো ক্লাস।জেরিন দুআকে শায়েস্তা করতে এসে নিজেই হাসির পাত্রী বনে গেলো। স্যার আসতেই সবাই নিজের স্থানে অবস্থান করেছে।দুআ ফিসফিস করে মাহিকে বললো,
–“কি দরকার ছিলো এতো কড়া ভাষা ব্যবহার করার?”
–“দেখ চাঁদ,তোকে অপমান করলে আমি কখনো চুপ থাকি না।কিভাবেই বা থাকবো,আজব!”
–“মাহি যা করেছে বেশ করেছে।আমাদের সামনে থাকিস তুই লিডার। আর বাহিরে তোকেই আমাদের বাঁচাতে হয় অন্যের কাছ থেকে।বাদ দে।চিন্তা করবি না,চাঁদ।আমরা থাকতে কেউ তোকে কিছু বলার সাহস পাবে না।”
–“আহা,এতো ভালোবাসা!চোখে পানি চলে এলো।”
দুআ অভিনয় করলো নিজের চোখের পানি মুছে নেওয়ার।অতঃপর তিনজনই মুখ টিপে ক্লাস চলাকালীন সময়ে নিজেদের হাসি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় রইলো।
___________________________
থাইল্যান্ডের ব্যস্ত রাত।শহরের বুকে গভীর রাতে ছেলে-মেয়ে,জোয়ান-বুড়ো সবাই ডুবে আছে কালো জগতের মোহে।কেউ কেউ ডুবে আছে শারীরিক চাহিদা মেটাতে,কেউ আবার ডুবে আছে নেশায় মত্ত হয়ে। “দ্য আয়রন ফেইরিস” এ এই মুহূর্তে শত নরনারী অবস্থান করছে।যার মধ্যে উপস্থিত আছে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক “ইয়াদ বিন তেহরান”। যেখানে বারের সবাই নিজেদের শারীরিক,মানসিক খোরাক মেটাতে প্রস্তুত;সেখানে ইয়াদ বসে কথা বলছে তার কোচের সাথে।বছর চারেক আগে ইয়াদের রূপ ছিলো একেবারে অন্যরকম।বন্ধুদের সহিত দেশ বিদেশে ভ্রমণের পাশাপাশি দেশী, বিদেশী নানান মেয়ের সাথে মেলামেশায় উস্তাদ ছিলো সে।টাকার কমতি তার কখনোই ছিলো না।তাই যখনই যা দরকার হতো হাতের মুঠোয় সেটা পেয়ে যেতো।ছোট কাল থেকে ক্রিকেটের প্রতি তার ঝোঁক ছিলো অত্যন্ত আবেগী।তাই বাছাই পর্বে সিলেক্ট না হলেও বাবার টাকায় একাডেমীতে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলো সে।পরিশ্রমের ফলে অনূর্ধ্ব উনিশের দল থেকেই ক্রিকেটের জগতে ইয়াদ নিজের জন্যে ভালো একটা জায়গা তৈরি করে নেয়।চার বছর পূর্বেই সে জাতীয় দলে আসে এবং বর্তমানে দেশের এবং বিদেশের সবচেয়ে ডিমান্ডিং খেলোয়াড় সে। মুখে মাস্ক ব্যবহার করে এক হাতে গ্লাসে নড়াচড়া করছে,অন্যহাতে কানে মোবাইল চেপে ধরে আছে সে।চারিদিকের আকর্ষণীয় নারী কালো রঙের জ্যাকেট পরিহিত ইয়াদের দিকে আবেদনময়ী দৃষ্টিতে মত্ত হয়ে আছে।আর ইয়াদ নিজের ক্রিকেটের দুনিয়ায় অবস্থানরত।
দূরে বসে ইয়াদকে পর্যবেক্ষণ করছে তার থাইল্যান্ডের বন্ধু, মিচেল।অনেক বছর পরেই ইয়াদের সাথে তার দেখা। মিচেলের সাথে তাদের অন্যসব বন্ধু, ফারসিভ,
ইয়াসির এবং স্পন্দন বসে আছে।মিচেল ইয়াদের এমন অদ্ভুত পরিবর্তনের কথা শুনলেও নিজের স্বচক্ষে তা দেখে ফারসিভকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করলো,
–“ইয়াদের মধ্যে এতো পরিবর্তন কিভাবে? মানে পূর্বে তাকে আমাদের কাছে দিনের বেলায় পেলেও মাঝরাতে সে মেয়েদের মাঝে ডুবে থাকতো।অথচ কিছু সময়ের মধ্যে কতো মেয়ে তার পাশে নানান ইঙ্গিত দিয়েছে,কিন্তু সে মাথা উঠিয়ে পর্যন্ত দেখলো না।এইসব কি সত্যি আদৌ?”
–“একদম সত্যি।জাতীয় দলে আসার পর ইয়াদ এমন পরিবর্তিত হয়েছে।আগের সব প্রেমিকা,বেড পার্টনার সবকিছুই এখন তার লিস্টের বাহিরে।ইয়াদ এখন আমাদের ভদ্র ছেলে।”
ফারসিভ বললো।
–“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।ইয়াদ নিজেকে কনট্রোল না করলে কতো বাচ্চার বাপ হতো সে! ক্রিকেটার অনেকেই তো মেয়েবাজ।মেয়েদের সাথে শোয়া তাদের জন্যে কমন।তাহলে?”
মিচেল পুনরায় প্রশ্ন করলো।
–“আবেগের বশে মানুষ অনেক কিছুই করে,মিচেল।আবার বুঝ এলে সব ছেড়েও দেয়।ক্রিকেট শুধু একটা সুযোগ এনে দিয়েছে ইয়াদের জীবনকে পরিবর্তন করার।”
স্পন্দন ইংরেজিতে জবাব দিলো মিচেলকে।
–“আহ,গ্রেট।”
মিচেল পুনরায় হেসে ইয়াদের পানে তাকালো।ইয়াদ মোবাইল পকেটে পুরে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।কাছাকাছি এলে ইয়াদ নিজের মুখ থেকে মাস্ক খুলে নিলো।ইয়াদের মুখে হাসি বিদ্যমান। সে সামনে এগিয়ে যেতেই অমনি কেউ একজন ইয়াদকে পেছন থেকে আলিঙ্গন করে বলে উঠলো,
–“ইয়াদ!”
ইয়াদের সাথে বাকি সবাই বিস্মিত হয়ে আছে।ইয়াদ বিরক্তি নিয়ে মেয়েটার হাত চেপে তাকে নিজের সামনে দাঁড় করালো।ইয়াদ মেয়েটাকে চিনলো না।ভ্রু কুঁচকে সে মেয়েটার দিকে বুঝার চেষ্টা করছে,কাহিনী কি!
ইয়াদের খরশান চোয়ালে হাত রেখে মেয়েটা ইংরেজিতে বলতে আরম্ভ করলো,
–“এতো বছর পর তোমার দেখা পাবো,আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।”
–“কে?আমি চিনি না।”
ইয়াদের প্রশ্নে মেয়েটা আবারও বলে উঠলো,
–“আমি জেনিফার।মনে নেই! কয়েক বছর পূর্বে ক্রিস্টমাসে আমরা একসাথে রাত কাটিয়েছি!অনেক চেষ্টা করলাম যোগাযোগ করার।কিন্তু তুমি অব্দি পৌঁছাতে পারিনি।”
ইয়াদ নিজের চোয়াল থেকে মেয়েটার হাত সরিয়ে দিলো,
–“মনে নেই।জাস্ট লিভ।”
–“ইয়াদ! আই লাভ ইউ।সেদিনের পর থেকে আমি আমার এই সত্তা অন্যজনকে স্পর্শ করতে দিইনি।”
–“তো? এতে আমার কি কাজ?তোমার শরীর তোমার ব্যাপার।”
কথাটা বলে ইয়াদ সোফায় বসে পড়লো বাকিদের সাথে।টেবিল থেকে সিগারেট নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে নিজের ঠোঁটে চেপে ধরলো সেটা।জেনিফার মেয়েটা ইয়াদের সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়লো,
–“ইয়াদ, আই রিয়েলি লা…”
–“স্টপ!কি করছো কি?এইসব লাভ,ভালোবাসা আমার জন্যে না।আমি এইসব বুঝি না।আর না বুঝবো কোনোদিন।আমার জন্যে মেয়েরা একটা মোহ ছিলো,
ব্যবহারের পর যা শেষ হয়ে যেতো।বর্তমানে আমি আমার লাইফ নিয়ে খুশি আছি মেয়ে বিহীন।আমার ক্যারিয়ারে আমি ফোকাসড।এখন আমার জীবনে কোনো মেয়ে বা ভালোবাসা কিছুর দরকার নেই।আগেও রাত কাটানোর পূর্বে কোনো মেয়েকে ভালোবাসার শর্ত ছিল না। বুঝেছো?জাস্ট লিভ!”
ইয়াদের চিৎকারে মেয়েটা ফ্লোরে বসে পড়লো।
চারদিকের সবাই বিস্মিত।মেয়েটা মুখ চেপে কান্না সংযত রেখে উঠার চেষ্টা করলো। ইয়াদ সোফায় হেলান দিয়ে বসলো।হাতের সিগারেট আবারও ঠোঁটের মধ্যখানে রেখে লম্বা ফুঁক দিলো একটা।এরমধ্যে আবারও ইয়াদের ফোন বেজে উঠলো। অপর পাশ থেকে জবাব শুনে,ইয়াদের গর্জন শোনা গেলো,
–“বারবার টাকার লোভ দেখিয়ে বিপিএলে আমার দল পরিবর্তন করতে পারবেন না।এটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ।যেটা আমার পছন্দ হয়, আমার কাছ থেকে সেটা নেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।স্বয়ং টাকারই নেই।আগে যদি আমার কথা শুনতেন! ইয়াদকে হারালে আফসোসই করা লাগে।আজকের ঘটনা নিজের জীবনের একটা শিক্ষা হিসেবে নিবেন।”
কথাটা বলে ফোন রাখলো ইয়াদ।একে তার মেজাজ খারাপ ছিল,এর উপর আবারও মেজাজ চটে গেলো ইয়াদের।সে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
–“ট্রিপে এসেও,শান্তি দিচ্ছে না আমাকে।যেই ভাবলাম শান্তির সময় কাটাবো,অমনি কাহিনী শুরু। ধেত!”
ইয়াদ নিজের কপালে হাত ঘষলো।
–“আরে মেজাজ খারাপ করিস না।মেয়েটাকে…… ঠিকভাবে বলতে পারতি।”
ইয়াসির একটু থেমে একহাতে মাথায় হেলান দিয়ে বললো।
–“তুই দেখেছিস,আমি অনেক ভালো মুডে ছিলাম।কিন্তু,আমার মেজাজ ভালো থাকা হয়তো কারোই সহ্য হয় না।আমার বিরক্ত লাগে যখন কেউ আমার কথা না বুঝে।তারউপর সেই মেয়েটা!আরে অতীতে কোন মেয়ের সাথে শুয়েছি আমার কিভাবে মনে থাকবে?বেশি মেজাজ খারাপ হলো,যখন মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে বললো।আমার এইসব ভালোবাসা/বাসিতে একেবারে বিশ্বাস নেই।নারী দেহের উপর মোহ ছিলো।রাত শেষ, মোহ শেষ।দিনের বেলায় না আমি তাদের চিনতাম, না তারা আমাকে চিনতো।কিন্তু, তোরাই সাক্ষী আমি এইসব বাদ দিয়েছি।নিজের ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটি আমি এখন।এইসবের জন্যে আমি ফুরসৎ পাইনা,আর পেলেও করি না।বিবেকে বাঁধা দেয়।কেনো, তা জানিনা।”
–“শান্ত হ।চল এইখান থেকে বেরিয়ে যায়।লং ড্রাইভে যাবি?”
স্পন্দন বলে উঠলো।
–“মিচেল,কোন জায়গা ভালো হবে লং ড্রাইভের জন্যে?”
ইয়াদের প্রশ্নে মিচেল ইংরেজিতে জবাব দিলো,
–“এইখানে চারদিকের জায়গা বেশ আকর্ষণীয়।যেদিকে যাবে সেদিকেই ভালো অনুভব করবে।”
–“ওকে।যাওয়া যাক।”
ইয়াদ সব বিরক্তি ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। জ্যাকেটে টান দিয়ে ঠিক করে নিল সে নিজের জ্যাকেট।মুখের মসৃণ ত্বকে হাতের উল্টোপিঠ ঘষে ইয়াদ নিজের পা বাড়ালো।ইয়াদের পায়ের নিচে পিষ্ট হলো মেঝেতে পড়ে থাকা জেনিফারের কানেরদুল।ইয়াদ ইচ্ছে করেই নিজের পা দ্বারা সেটা পিষ্ট করেছে। এতে বুঝা যায়,ইয়াদের মনে জেনিফার বা তার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।ইয়াদ তার রাগের বহিঃপ্রকাশ করতেই এমনটা করলো।
গাড়ি চলছে লং ড্রাইভের উদ্দেশ্যে।ইয়াদ ড্রাইভিং সিটের পাশে বসেছে।অন্ধকার নগরীতে থেকে থেকে আলোর আভাস মিলছে তো আবার শুধু হেডলাইটের আলোয় আলোকিত হচ্ছে রাস্তাটা।গাড়ির জানালা খোলা।সেই খোলা জানালায় ইয়াদের মনের সব প্রশ্ন ধোঁয়ার সহিত উড়িয়ে দিচ্ছে।ইয়াদ ভেবে পায় না,মেয়েটার বলা কথাগুলো কি আসলেই সত্যি? ইয়াদকে ভালোবাসে বলে মেয়েটা অন্য ছেলের স্পর্শে আসেনি?পরক্ষণে ইয়াদ ভাবে,
–“ভালোবাসা!কি হাস্যকর? আমি এইসব ভালোবাসায় কখনো বিশ্বাস করি না। একজন মানুষের অন্যের প্রতি শুধু একটা মোহ থাকতে পারে।যে মোহ কেটে গেলে মানুষটার কথাও ভুলে যাওয়া সম্ভব।এই ইট পাথরের দুনিয়ার মতো পাথরে আবৃত আমার হৃদয়।এই হৃদয়ে অন্য মানুষের জন্যে ভালোবাসা নামক বস্তুর আগমন নিষিদ্ধ।ইয়াদ বিন তেহরান শুধু তার পরিবার এবং ক্যারিয়ারকে ভালোবাসে,কোনো আবেগী ক্ষণস্থায়ী নারীকে নয়।হাহ্, বোকার দল।”
বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাওয়া ইয়াদের জেল মাখানো চুল বাম হাতের আঙ্গুল চালিয়ে ঠিক করছে সে।আবারও ইয়াদ ঠোঁট বাঁকা করে হেসে উঠলো,
–“ভালোবাসা!আমার পায়ের তলায়।”
–“হাসছিস তুই?”
ইয়াসিরের কথায় ইয়াদ নিজের মুখখানা গম্ভীরে পরিণত করলো,
–“নাহ।অযথা হাসি আমার পক্ষ থেকে আশা করিস কিভাবে?আমার দিকে না তাকিয়ে সামনে দেখে গাড়ি চালা।”
ইয়াদ ঠিকভাবে বসলো সিটে।অসময়ে তার অভিব্যক্তি কেউ বুঝলে,তার কাছে সেটা একেবারে সহ্য হয় না।নিজের মুখভঙ্গি বদলাতে ইয়াদ নিজে মসৃণ ভ্রু আবারও কুঁচকে ফেললো।
—————
কলেজের জীবন বেশ ভালই লাগছে দুআর।ক্লাসে শেষে আড্ডা যে দিতে পারে প্রাণখুলে।আজও ক্লাস শেষে মাঠে বসার পরিকল্পনা করলো তারা।নিজের ব্যাগ থেকে খবরের কাগজ বের করে মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে যেই বসতে যাবে দুআ,অমনি চিল্লিয়ে উঠলো মাহি,
–“আমার ইয়াদ!”
দুআ চমকে উঠলো।সোজা হয়ে দাঁড়াতেই মাহি খবরের কাগজ নিজের বুকে টেনে নিলো।
–“কিরে কি হলো এটা?”
–“আজব,ইয়াদ ছিলো পেপারে।”
–“তো?এখন কি পেপারে মানুষের চেহারা দেখে দেখে বসতে হবে?পেপার দে,আজবের বাচ্চা।”
দুআ কোমরে হাত রেখে বলল।
–“দুআ,তুই আমার ভাইয়ের সাথে এমন করবি?এই মাহি ওকে অন্য পেপার দে।”
–“রামিসা তোর মামাতো ভাইয়ার গুষ্টি কিলাই। ঐ সাদা ভূতের জন্যে আমি আমার পেপার হারিয়েছি।দে আমাকে আমার পেপার।”
দুআর মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট।
–“তোকে অন্য পেপার দিচ্ছি। দেশের সেরা ক্রিকেটার উনি।আমাদের উচিত উনাকে সম্মান দেওয়া।”
–“মোটেও না।আমি দিবো না সম্মান।আমাকে পেপার দে।”
কথাটা বলে দুআ মাহি থেকে পেপার নিয়ে বসে পড়লো।
–“তুই আমার ভাইয়ার উপর বসে পড়েছিস কেনো?আমার ভাইয়ার ছবি কেটে মানুষ ঘরে সাজিয়ে রাখে আর তুই কিনা তার ছবি…!”
–“ভাই, চুপ কর তো।এইসব খেলোয়াড় না কি,এইসবের জন্যে আমার মনে দয়া মায়া নেই।তোর ভাইয়ের জন্যে তুই কান্না কর বসে বসে।এই সঞ্জয় বাদাম কিনে আন তো।”
সঞ্জয় হুড়হুড় করে চলে গেলো।
–“ইয়াদ ভাই যদি জানে এইসব,তাহলে সে দুশ্চিন্তায় পড়বে নিশ্চিত।দেশের সবাই ওর জন্যে পাগল।আর তুই কিনা!আমার ভাইয়ার সাথে এতো বড় অপমান?”
–“চুপ কর।মেজাজ খারাপ করবি না।তোর ভাই মিনিস্টার হোক না কেনো,এই দুআর কিছু যায় আসে না।এই দুআ তার নিজস্বতায় খুশি।তোদের সেই সাদা ভূতকে কিভাবে ভালো লাগে আল্লাহ্ ই জানেন।”
–“একবার ইয়াদুর চোখের গভীরতায় তাকিয়ে দেখিস,
প্রেমে পড়ে যাবি,চাঁদ।আজব মানুষ তুই।”
–“দুআর জীবনে প্রেম আসা নিষিদ্ধ।আমার ভয় হয় অনেক।মুখ,হাত,পা দেখে প্রেমে পড়ে,সত্যিটা জানলে না আবার পালিয়ে যায়!তাই,এইসব কথা আমাকে ফের বলবি না।আমি তোদের নিয়ে খুশি অনেক।”
দুআর মুখে হাসি ঝুলে থাকলেও তার অক্ষিজোড়া বিষন্নতায় ঘেরা।এমনটা লক্ষ্য করে মাহি দুআর হাত চেপে বললো,
–“দেখবি,এমন দিন আসবে তোকে একজন বেশ ভালোবাসবে।তার ভালোবাসার আলোয় তোর সকল শঙ্কার ইতি ঘটবে,চাঁদ।আজব,এতো ভাবিস কেনো?”
–“সেটাই।ইয়াদ ভাইয়ার উপর বসে থাক।আমি কিছু বলতাম না আর।তাও মন খারাপ করিস না।এইবার একটু হাসো,চন্দ্রাবতী?”
মাহি আর রামিসা দুআর গলা জড়িয়ে ধরলো।
–“আমি ইয়াদ বিন তেহরানের উপর আবার কই বসলাম?”
দুআ এবং রামিসার কানে কানে কিছু একটা বললো মাহি।আর এতেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তিনজন।
দুআর মন খারাপের হাদীস নেই আর।প্রাণখুলে হাসছে তিন তরুণী। আশে পাশে উপস্থিত সবাই দেখছে তাদের তামাশা।কেউ কেউ দুআর চাঁদের লাহান চেহারা আর গেজ দাঁতের হাসির প্রেমে পড়লো আবার!
চলবে….
ধর্মীয় কারণে, “রহমানের” নাম পরিবর্তন করে “রিজোয়ান” রাখা হলো।