আমার_ভুল,৩,৪

0
529

#আমার_ভুল,৩,৪
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ৩

প্রাপ্তিদের বাসা থেকে পরেরদিন সকালেই আমি বাসায় চলে এলাম। ভাইয়া গিয়ে আমাকে নিয়ে এলো। আমার বান্ধবীরা এলো না।থেকে গেলো। একসাথে বউভাত শেষ করে তবে আসবে। ওদের এই থেকে যাওয়ার সত্যিকারের কারণ আমি জানলেও সেটা নিয়ে মাথা ঘামালাম না। বাসায় এসে আবার পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে দিলাম।

কখন, কীভাবে, কেমন করে প্রিন্স ভাইয়া আমার প্রতি আকৃষ্ট হলেন আমি সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাই নি।

পরীক্ষা শেষে প্রাপ্তিদের বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা হলো। প্রিন্স ভাইয়ার জন্য উনারা আমাকে বউ করতে চান।

বান্ধবীরা বোধহয় মনে মনে দুঃখ পেলো। এই প্রসঙ্গে কোন কথাই উঠালো না। না আমাকে নিয়ে কোনো প্রকার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো। আমি মনে মনে হাসলাম।
শালীনতার একটা দাম আছে। সব ছেলেরা আধুনিকা টাইপ মেয়ে দেখলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে না। এটা ওদের বোঝা উচিৎ।

প্রিন্স ভাইয়া আমাদের চারবান্ধবীদের মধ্যে কারো সঙ্গেই বেশি কথা বলেন নি। কিন্তু উনি নিরবে সব পর্যবেক্ষণ করেছেন।
কে কোন খেয়ালে কি করেছে উনি সব বুঝতে পেরেছেন।
আমার বান্ধবীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নিজেদের আধুনিকা প্রমাণের চেষ্টা, উনাকে দেখলে কন্ঠস্বরে অত্যাধিক কোমল ভাব ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা,
অকারণে অঙ্গভঙ্গি কিংবা আচার আচরণে কৃত্রিম বাচ্চাবাচ্চা ভাব ফুটিয়ে তোলার ঢং কোনটাই উনার নজরে এড়ায় নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সবই বৃথা গেলো। অপ্রত্যাশিত ভাবে উনি আমাকে পছন্দ করে ফেললেন।

‘শালীনতা’ শব্দটার সঠিক মানে আমি জানি না। তবে আমার কাছে লজ্জার পরিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশই শালীনতা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ লজ্জাকে নিজেদের আবেগের দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু আমার কাছে লজ্জার অন্যরকম একটা মানে আছে। সেটা হলো অপ্রকাশিতভাবে ‘না’ বলার ধরণ। আমি কখনোই চাই নি আমার লজ্জা কাউকে হৃদয়ঘটিত ব্যাপারে দুর্বল করে দিক। বরঞ্চ আমি এটাই চেয়েছি যে অপরদিকের মানুষটা আমার এই লজ্জা দেখে নিজের প্রবেশাধিকার সীমানা সম্পর্কে সতর্ক হয়ে যাক। সীমাবদ্ধ করে ফেলুক নিজের আচরণ গতিবিধি।

অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষদের লজ্জার ধরনটা একটু বেশিই থাকে। তাই সবাই তাদের দুর্বল ভাবে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম। আমি স্বভাবের দিক থেকে অন্তর্মুখী হলেও দুর্বল নই। কারণ লজ্জাকে আমি খুবই কমই নিজের দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহার করেছি। আমার কাছে নিজেকে সব রকম অশোভনীয় কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখার হাতিয়ার হলো লজ্জা। আর হাতিয়ার কখনো দুর্বল হতে পারে না।

যাই হোক এই উপলব্ধি সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব। এর সঙ্গে সবাইকে এক মত হতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। জীবনাদর্শ, ধ্যানধারণা সবার একরকম হয় না। একেক মানুষ এক এক ভাবে জীবনযাপন করতে পছন্দ করে।

মূল প্রসঙ্গ ছিলো প্রিন্স ভাইয়াকে নিয়ে!
ভাইয়ের বন্ধু, বান্ধবীর বড় ভাই, বোনের দেবর, ভাবীর ভাই এই শব্দগুলো চিরকালই আমার জন্য বিপজ্জনক। এদের সাথে আমার পরিবারের মানসম্মান জড়িয়ে আছে ভেবে আমি সবসময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে এসেছি। নিজের আচার আচরণে কখনো এমন কোন ইঙ্গিত প্রকাশ পেতে দেই নি যাতে করে ওদের মনে হতে পারে ‘সুযোগ আছে।’

কাউকে নিজের প্রতি দুর্বল করে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বেশি বিশ্বাসী। তাই নিজে সংযত থেকেছি অন্যকেও সংযত রেখেছি।

প্রিন্স ভাইয়াকে ক্ষেত্রেও আমার চরিত্রের সেই ধারা অব্যাহত ছিলো। কোনরকম ব্যত্যয় ঘটে নি। উনি আমার বান্ধবীর বড় ভাই! উনাকে নিয়ে কোনরকম কথা উঠলে সেটা আমার জন্যেও লজ্জাজনক। এই বিষয়টা আমি সবসময় মাথায় রেখেছি।

কিন্তু তবুও কি করে উনি আমার প্রতি আকৃষ্ট হলেন সেটাই আমি বুঝতে পারলাম না। রাতে মায়ের সঙ্গে খোলামেলা ভাবে বিষয়টা আলাপ করলাম। মা হাসিমুখে সব শুনলেন। আমার মনে হলো প্রিন্স ভাইয়া বোকা। বোকা না হলে কাউকে ভালো মতন না জেনে হুট করে বিয়ের মতন এত বড় একটা সিদ্ধান্ত কেউ নিয়ে নিতো না। মায়ের সামনে আমি উনাকে ‘বোকা’ বলেই আখ্যায়িত করলাম।
মা আমার কথায় মৃদু হেসে বললেন,
-‘ছেলে মোটেও বোকা নয় কিরণ। যথেষ্ট ম্যাচিউর ছেলে। ঠিকই খেয়াল করেছে কার চালচলন কেমন! সেইজন্যই এত তাড়াহুড়ো করে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।’


আব্বা প্রস্তাবে সরাসরি না করলেন না। এই পর্যন্ত আমার জন্য যতগুলো সম্বন্ধ এসেছে আব্বা কাউকেই সরাসরি না করেন নি। বোধহয় মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন, ভালো ছেলে পেলে হাতছাড়া করবেন না। তাই সম্বন্ধ এলে আগে যাচাই বাছাই করেন।

প্রিন্স ভাইয়ার ক্ষেত্রেও আব্বা একই কাজ করলেন। ভাইয়াকে নিয়ে সঙ্গে নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নেমে পড়লেন। প্রাপ্তিদের চৌদ্দগুষ্ঠিতে কে কোথায় আছে, কি করছে, লেখাপড়া কতদূর, বংশমর্যাদা কেমন সব। একসপ্তাহের ভেতরেই মোটামুটি সব খবর জোগাড় করে ফেললেন।

পারিবারিক রিপোর্ট ভালো। ছেলের সম্বন্ধেও কোন খারাপ রিপোর্ট পেলেন না। কিন্তু একটা জায়গাতে ঝামেলা লেগে গেলো। সেখানে গিয়েই আব্বা রাজি হলেন না। উনি খবর পেয়েছেন ছেলে ভয়ানক রাগী। পরিবারের সদস্যরা, আত্মীস্বজন সবাই তাঁকে মারাত্মক ভয় পায়।

বিয়েতে আমি প্রিন্স ভাইয়াকে যতটুকু দেখেছি, তাতে আমারও মনে হয়েছে উনি ভীষণ মুডি। শুধু প্রাপ্তি আর প্রান্তর সঙ্গেই ফ্রিভাবে মেলামেশা করেন। এর বাইরে কেউ উনার সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠ হতে পারে না।

অতএব প্রপোজাল রিজেক্টেড! এমন ছেলের কাছে আব্বা কিছুতেই মেয়ের বিয়ে দেবেন না।

আমি প্রাপ্তির কাছ থেকে টুকটাক খবর পাই। যদিও আব্বা ওকে বারণ করে দিয়েছে আমার সাথে এই ব্যাপারে কোন আলাপ না করতে। কিন্তু প্রাপ্তি কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে মাঝেমধ্যে বলে ফেলে।


আব্বা ওদেরকে না করে দিলেন। ছেলের রাগের বিষয়টা আর বললেন না। শুধু বললেন এখন মেয়ের বিয়ে ধরার কোন চিন্তাভাবনা নেই। আপাতত পড়াশোনাটা শেষ হোক।

এদিকে প্রাপ্তিদের বাসায় লঙ্কাকাণ্ড। প্রিন্স ভাইয়া অন্য জায়গায় মেয়ে দেখতে নিষেধ করে দিয়েছেন। উনি এখানে ছাড়া অন্য কোথাও বিয়ে করবেন না। বিয়ে করলে আমাকেই করবেন নইলে করবেন না।

রাস্তায় আংকেলের সঙ্গে আব্বার দেখা হলে উনি আব্বার হাত চেপে ধরে আবদার জানিয়ে বসলেন। আন্তরিক অনুনয় প্রকাশ করে বললেন,’আপনার মেয়েটাকে আমাকে দিতে হবে ভাইসাহেব। এটা আপনার কাছে আমার আবদার। বড় ভাই হিসেবে এই আবদারটা আপনাকে রাখতে হবে।’

আব্বা বিপাকে পড়ে গেলেন। আংকেলের মুখের ওপর না করা অসম্ভব। অভদ্রতা হবে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে আংকেলকে আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে বললেন। বিয়ের বিষয়টা উনি আবার বিবেচনা করে তারপর মতামত জানাবেন।

কিন্তু বাসায় এসে চিন্তায় পড়ে গেলেন আব্বা। তাঁর শান্ত, স্বল্পভাষী স্বভাবের মেয়েটিকে অমন রাগী ছেলের হাতে তুলে দিতে হবে এই ভেবে ভাইয়াকে নিয়ে নতুন ফন্দি আঁটলেন।

ভাইয়া আর আব্বা মিলে প্রিন্স ভাইয়ার জন্য মেয়ে খোঁজা শুরু করে দিলেন। এই খবর আমার আত্মীয়স্বজনরা শুনে সবাই হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার মতন অবস্থা। কনের বাবা তাঁর হবু জামাতার জন্য পাত্রী খুঁজছেন এইরকম ঘটনা বোধহয় ইতিহাসে এবারই প্রথম।
আব্বা পরিচয় গোপন রেখে নিজের পরিচিত সব মেয়েদের বায়োডাটা প্রিন্স ভাইয়াদের বাসায় পাঠান আর প্রিন্স ভাইয়া এক এক করে সব রিজেক্ট করেন।

#আমার_ভুল
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ৪

আব্বাকে বাগে আনতে না পেরে প্রিন্স ভাইয়ার বাবা মানে আংকেল আমাদের আত্মীস্বজনদের ধরলেন। তারাও আংকেলের কথামত আব্বাকে রাজি করানোর জন্য আদাজল খেয়ে নেমে পড়লেন।
সবাই মিলে আব্বাকে বোঝালেন ছেলে ভালো। পরিবার ভালো। এখানে বিয়ে হলে আমি সুখি হবো। উনারা মাটির মানুষ। আমার কোন অযত্ন হতে দেবেন না।

আব্বা ছেলের রাগের বিষয়টা তুললেন। সবাই হেসে উড়িয়ে দিলেন আব্বার কথা। ইয়াং বয়সের ছেলেপুলে একটুআধটু রাগ না থাকলে হয়! এই নিয়ে এত চিন্তা করার কি আছে। ভাগ্যে সুখ থাকলে কেউ ঠেকাতে পারবে না। আব্বা যেন আর বেশিকিছু না ভেবে বিয়েতে রাজি হয়ে যান।

মেয়ের বাবা হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যে কত কঠিন সেটা আমি আব্বাকে দেখে প্রথমবারের মত বুঝতে পারলাম। এই বিয়ের ব্যাপারে সবাই সবার মত করে মতামত দিচ্ছে শুধু আব্বা ছাড়া। আব্বার কোন স্যে নেই। ভেতরে ভেতরে টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন।

একদিকে আংকেলকে কথা দিয়ে এসেছেন অন্যদিকে আমার ভবিষ্যৎ। আমি ভালো ছাত্রী। ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়ে নেওয়া আমার জন্য কঠিন কিছু নয়। আংকেল যদিও কথা দিয়েছেন আমার পড়ালেখায় কোন ব্যঘাত ঘটতে দেবেন না।
কিন্তু আব্বার চিন্তা অন্য জায়গায়।
মেয়ে হিসেবে আমি কতটা বাধ্য সেটা আব্বা জানে। আর জানেন বলেই আব্বার চিন্তা এত বেশি। যেই মেয়ে সারাজীবন বাপের মুখের দিকে তাকিয়ে ধৈর্য ধরে এসেছে, নির্দ্বিধায় বাপের নেওয়া সকল সিদ্ধান্ত মেনে এসেছে সেই মেয়ের যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় এই সিদ্ধান্তে। বিয়ের সিদ্ধান্ত যদি আমার জন্য সঠিক না হয়! পাত্রপক্ষ যদি পরে তাদের কথা না রাখে!
ভবিষ্যতে যদি কোনদিন আমার এই ভেবে আফসোস হয় যে, ভালো ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও আব্বা আমাকে পড়ালেন না! শুধুমাত্র মেয়ে ভেবে অবহেলা করেছেন!
এসব ভেবে আব্বা অস্থির হয়ে পড়লেন।
এতদিন যদিও সবাইকে বলেছেন ভালো ছেলে পেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবেন কিন্তু সত্যি সত্যি যখন বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলো তখন আর সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না।

দিনরাত আমাকে নিয়ে টেনশন করতে করতে চোখের ঘুম হারাম করে ফেললেন। উনার অবস্থা দেখে মা ভাইয়া সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো। এই বয়সে এত টেনশন। শেষে কোন অঘটন ঘটে গেলে!
নিরুপায় হয়ে মা হাল ধরলেন। আব্বার মাথায় হাত রেখে আব্বা বোঝালেন,’তোমার মেয়ে। কি করলে ভালো হবে সেটা তোমার চাইতে আর কেউ ভালো বুঝবে না। অনেকে অনেক কথাই বলবে। কারো কথায় কান না দিয়ে নিজের যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো। আমরা আছি তোমার পাশে। তোমার মেয়ে তোমার কথার বাইরে যাবে না।’

আব্বা মায়ের কথা শুনে আশ্বস্ত হলেন। জীবনে যতবার আব্বাকে কোনকিছু নিয়ে ঠেকতে দেখেছি সেখানেই আমার মাকে গিয়ে হাল ধরতে দেখেছি। কোনদিন আব্বাকে কোনকিছুতে একা ছেড়ে দেন নি। সব সমস্যায় দুজনে একসাথে লড়েছেন।

পরেরদিনই আব্বা গিয়ে আংকেলের সঙ্গে দেখা করলেন। নানারকম কথাবার্তার পর বিয়ের প্রসঙ্গটা তুললেন। আংকেল বেশ উৎসাহিত হয়ে আছেন বুঝতে পেরে সরাসরি বারণ না করে অন্যভাবে কথা তুললেন,
-‘আমার মেয়েটা এখনো অনেক ছোট ভাই। ওর সাথের ওর বড় বোনগুলোরও এখনো বিয়ে হয় নি। সবাই পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত। আমার বড় ছেলে রোজ বকাবকি করে। সে বিয়ের কথা শুনতেই রাজি নয়। তার আশা বোনকে অনেক দূর পড়াবে। মেয়েতো আমার মাশাআল্লাহ মেধাবী। আশা আছে ডাক্তারী পড়াবো। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। মেয়ের মায়েরও তাই মত। এখন আপনি আমাকে বুদ্ধি দিন ভাই আমি কি করবো?’

আব্বা যে বিয়ের ব্যাপারে পিছিয়ে গেছেন সেটা উনার কথা শুনেই আংকেল বুঝে গেলেন। উনি অনেক ভাবে আব্বাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন বিয়ের পর আমার পড়াশোনার কোন ক্ষতি হবে না। উনারা সাধ্যমত চেষ্টা করবেন। কিন্তু আব্বা নিজের সিদ্ধান্তে অটল। আংকেলের হাত চেপে ধরে বললেন,
-‘আপনি আমাকে বাঁচান ভাই। আমাকে মেয়েটাকে বদদোয়া দেবেন না। ভাগ্যে থাকলে আপনার ছেলের জন্য অনেক ভালো মেয়ে পাবেন। আমি দোয়া করি। আপনি মনে কষ্ট রাখবেন না।’

শেষমেশ আব্বার সিদ্ধান্তের কাছে আংকেল হার মেনে গেলেন। নানারকম কথাবার্তা বলে আব্বা উনাকে নরম করে ফেললেন। মেয়ে উনারও আছে। প্রাপ্তি পড়ালেখায় আগ্রহী হলে উনি নিজেও এত তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে দিতেন না।
অতএব বিয়ের পর্ব নিয়ে জল্পনাকল্পনার এখানেই সমাপ্ত হলো। আমি মন দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা শুরু করে দিলাম।

প্রিপারেশন ভালোই ছিলো। মাঝখানে বিয়ের বিষয় ঝামেলা হওয়ায় কিছুদিন সময় নষ্ট হয়েছিলো। তাই মেডিকেলে চান্সটা হলো না। কিন্তু দেশের নামকরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলাম। মেডিকেলে ভর্তি না হতে পারার দুঃখ কেটে গেলো। আব্বা নিজে গিয়ে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন।

ভেবেছিলাম প্রিন্স ভাইয়ার পর্বটাও বিয়ের সাথে সাথে সমাপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু না। নতুন করে সূচনা হলো আমি সেকেন্ড ইয়ারে থাকাকালীন।

আমার দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার শেষ এই সময়ে উনি আমাদের ডিপার্টমেন্টে জয়েন করলেন। প্রাপ্তির কাছে আমি আগেই শুনেছিলাম উনি ভার্সিটিতে জয়েন করার জন্য অনেকদিন থেকে চেষ্টা করছেন। আমাদের বিয়ের কথা উঠবারও আগে থেকে। শেষমেশ সুযোগটা পেয়ে গেলেন। অবশ্য এতে আমার নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের কোন পরিবর্তন ঘটলো না।

আমি আমার মত করে ভার্সিটিতে যাই। পড়াশোনা করি। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করি।
উনাকে দেখতে পাই। উনি উনার মত করে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করেন। উনার দিক থেকে আমি এমন কোন চেষ্টা দেখতে পাই নি যাতে করে আমার মনে হতে পারে হি ইজ এক্সেপ্সনাল। অর হি ইজ কুল ইনাফ!

উনি সাধারণ। খুবই সাধারণ। এতই সাধারণ যে কেউ চিন্তাও করতে পারবে না।
ভার্সিটির বাইরে রিক্সা না পেলে কোনদিন আমাকে রিক্সায় তুলে দেন নি, বর্ষবরণের দিন আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসেন নি কিংবা পরীক্ষায় এটেন্ড করতে না পারলে বাড়তি কোন সুবিধা দেন নি।
আবার আমার সঙ্গে অপরিচিতের মত ব্যবহারও করেন নি। বাকি সবার মত আমারও পড়া ধরেন, ভালো লিখলে ভালো মার্কস দেন, সালাম দিলে স্বাভাবিকভাবে সালামের জবাব দেন।

আমি মাঝেমাঝে অবাক হয়ে যায়। এই মানুষটা সত্যিই আমাকে ভালোবেসেছিলো? নাকি শুধু জেদের বশবর্তী হয়েই বিয়ে করতে চেয়েছিলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here