আমার_মনপাখি।পর্ব- ২৫
#পলি_আনান
ওয়াশরুম থেকে বেরোতে বেরোতে গুন গুন করে গান গাইছে আহাদ।তার জিবন জুড়ে যেন আর কিছুই পাওয়ার নেই।জিবনের প্রাপ্তির খাতা এখন পরিপূর্ন।আহাদ বিছানা থেকে নিজের মোবাইলটি হাতে নিয়ে একবার চেক করে।তার মুখজুড়ে ফুটে আছে বাকা হাসি।আহাদ বিছানায় মোবাইলটি ছুড়ে রেখে আবার গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে বারান্দায় যায়।বারান্দায় গিয়ে একটা বড় ধরনের ঝটকা খায়।
এদিকে আহাদের মোবাইল দেখার পর রাইফার সবকিছু এলোমেলো লাগছে।সে বিশ্বাস করতে পারছেনা আহাদের মতো একটা ছেলে এই কাজ করতে পারে।রাইফার বুক ফেটে কান্না আসছে তবুও গলার কাছে এসে কান্না গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।তার সব কিছু খালি খালি লাগছে। চারিপাশের মানুষকেও যেন আজ বিশ্বাস করা কষ্টকর।তবুও গাল বেয়ে দুফোটা চোখের জল পড়ে। নিযের মনকে নিজে শান্ত করার চেষ্টা করে,
_ন..ন্না আমি কাদবো না। আমাকে শক্ত থাকতেই হবে।
রাইফা চুপচাপ বারান্দায় গিয়ে আহাদের দোলনায় বসে পড়ে।
আহাদ রাইফাকে বারান্দায় দেখে অবাক হয়ে যায়।নিজের মনের মাঝে ভর নেয় আশংকা,মনে মনে শত বার বলতে থাকে “তবেকি রাইফা জেনে গেল'” আহাদ নিজেকে শান্ত করে রাইফার পাশে ধপ করে বসে পড়ে,
_আমার বউ আজ এতো সকাল সকাল আমার রুমে ঘটনা কি (ভ্রু কুচকে)
_ অনেক ঘটনা আহাদ ভাই। যে ঘটনা গুলো আপনি একের পর এক ঘটিয়েছেন।
রাইফা কথা গুলোর উওর দেয় সোজা সাপটা।তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার মাঝে এখন কোন আবেগ কাজ করছে না।
আহাদ রাইফার কথা শুনে চকিতে তাকায়। তার বুকের মাঝে ধক করে উঠে।মনে মনে ভাবতে থাকে,
_তবে কি রাইফা যেনে গেলো।
নিজেকে কিছুটা চিন্তা মুক্ত করে আহাদ বলে,
_ম.মানে কি ঘটনা বলছো রাইফা।
রাইফা এবার নিলিপ্ত ভাবে গায়ে থাকা ওরনা টি সরিয়ে নেয়।আহাদ রাইফার কর্মকান্ডে অবাক হয়ে যায়।
_ক.কি করছো তুমি। ওরনা কেন সরাচ্ছ।
রাইফা আহাদের কোন কথা না শুনেই তার জামার গলার দিকটা একটু সরিয়ে নেয়।আহাদ নিজের চোখ নামিয়ে নেয়।রাইফা নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বলে _দেখুন না চোখ নামাচ্ছেন কেন।
আহাদ রাইফার কথায় তার চোখের দিকে একবার তাকায়। রাইফার চোখের এই নির্লিপ্ত ভঙ্গি দেখে আহাদের বুকের মাঝে খা খা করে উঠে।
_চোখ নামাবেন না। এই দাগ গুলো তো আপনি দিয়েছেন।আর যখন দাগ গুলো দিয়েছেন তখন এমন লজ্জা কই ছিল আপনার।
রাইফার কথা শুনে আহাদের মুখ হা হয়ে যায়।
_ক..কি বলছো পা.পাগল হয়ে গেছ তুমি।আমি কেন তোমায় এই দাগ গুলো দেব।আমি তো তোমায় এখনো এমন ভাবে ছুয়েই দেখেনি।
_ছুয়েছেন অসংখ্যা বার ছুয়েছেন।তবে আহাদের বেশে নয়।অন্য বেশে।(চিৎকার দিয়ে)
রাইফার কথা গুলো আহাদের কাছে কাটার মতো লাগছে তার গলায়.।
_কি বলছো রাইফা তুমি তোমার মাথা ঠিক আছে তো।
_আমার মাথা ঠিকি আছে।
রাইফা এবার তার কামিজটি পেটের দিকটার সরিয়ে নেয়।আহাদ রাইফার কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়।তার দৃষ্টিতে মাটিতে সরিয়ে নেয়।
_ একদম চোখ সরাবেন না। এই পেটে থাকা দাগ গুলোও আপনি দিয়েছেন। কি কারনে দিয়েছেন তা কি আমার আবার মনে করি দিতে হবে।(চিৎকার দিয়ে)
আহাদের মুখদিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না সে চুপচাপ রাইফার দিকে তাকিয়ে আছে।
_ কি হলো কথা বলছেন না কেন।আচ্ছা থাক আর বলতে হবে না আমি বলি।খান বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে গায়ে হলুদের দিন আমার শাড়ি পড়া নিয়ে আপনার সাথে একটা ঝামেলা হয়। তারপর ওই হলুদের অনুষ্টানে একটা বাচ্চা মেয়েকে পাঠিয়ে আমাকে ডেকে নেন।ওই অন্ধকার রুমে আমার সাথে ছিহ্হহহহ।ভাবতেই ঘৃন্যা লাগছে। আপনি এতো নিচু মানষিকতার।
আহাদ রাইফাকে অবাক হয়ে দেখেই যাচ্ছে। রাইফার এমন রুপের সাথে সে পরিচিত নয়।
_ কি উলটা পালটা কথা বলছো তুমি(চোখ রাঙিয়ে।)
_ একদম চোখ রাঙাবেন না। সেই প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে অত্যাচার করে গেছেন কখোন শারীরিক তো কখনো মানসিক।আপনি আমাকে মেসেজে, চিঠিতে সারাক্ষন হুমকি দিতেন। আর এই সব ভয়ে আমি নিযের ছায়া দেখলেও ভয় পেতাম।কেন করেছেন বলুন কেন।আমাকে পাওয়ার জন্য আমাকে তো পেয়েই গেছেন আর কেন এইসব করছেন।(কেদে কেদে)
আহাদ এখনো রাইফার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটাকে আজ বড্ড ক্লান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে সে হাপিয়ে গেসে।আর নিতে পারবেনা এই সব কাহিনী আহাদ রাইফার কাছে আরো দুপা এগিয়ে যায় আর রাইফা পিছিয়ে যায়।
_ এমন করছো কেন রাইফা আমি আবার কি করলাম। তুমি আমাকে কি অপবাদ দিচ্ছ।
_ চুপ একদম চুপ মিথ্যা কথা বলবেন না।শাক দিয়ে তো ভালই মাছ ডাকতে পারেন।এতোদিন ওই অচেনা যে লোকটা মেসেজ দিত,হুমকি দিত সেই লোকটি আপনি। কেন করলেন আহাদ ভাই আমার সাথে এমন টা না করলে ও পারতেন।(কেদে কেদে)
_ আমি কি করেছি তুমি আমায় এতো অপবাদ দিচ্ছ কেন।
_আমি আপনায় আপবাদ দিচ্ছি।আপনি যে এতোদিন নোংরা খেলা খেলেছেন আমি তার প্রমান পেয়ে গেছি।
_ কি প্রমান পেয়েছো তুমি।(বিরক্ত হয়ে)
রাইফার চোখ জোড়ায় নোনা জলের বন্যা।সেই অশ্রু গড়া চোখে ঠোঁটে একচিলতে বিষাক্ত হাসি ফুটিয়ে বলে,
_ মনে আছে কিছুদিন আগে আপনাকে অফিস যেতে দি নাই। আপনাকে বাচাতে পাগলামি করেছি।কিন্তু তখনো যানতাম না ওই বিষাক্ত মুখুশ দারী লোকটি আপনি।আজ আবার একই মেসেজ দিলেন আজো বাচাতে এসেছি কিন্তু যখন দেখলাম আপনি ওয়াশরুমে নিজের মাঝে একটা স্বস্তি আসে। আপনি এখনো অফিস যাননি আপনাকে বাচাতে পারবো।তাই ওই অচেনা লোকটিকে আমি আবার মেসেজ দি।আমার সেই মেসেজ আসে আপনার ফোনে। আপনার ফোন হাতে নিয়ে আমার পুরো পৃথিবী থমকে যায় আহাদ ভাই।এতোটা নিচ আপনি কিভাবে হলেন। এবার তো আমার মনে হচ্ছে অনিকের সাথে ঝামেলাটা আপনি সৃষ্টি করিয়েছেন।ছিহহহ।
আহাদ এখনো রাইফার দিকে তাকিয়ে আছে।আজ যেন সব খেলা শেষ।শেষের গুটিটা চালতে আহাদ একটু ভুল করেছে আর সেই ভুলে পুরো কাচের মতো স্বচ্চ সর্ম্পক আজ ভেঙ্গে শেষ।
_র….রাইফা তুমি কি বলছো আমি এমন কেন করবো।
_ ছিহহ আপনি এখনো অস্বিকার করছেন।সামান্য লজ্জা লাগেনা আপনার।
_ লজ্জা লাগবে কেন। আমি কী তোমায় মিথ্যা বলছি কে তোমায় মেসেজ দেয় হুমকি দেয় তা আমি জানবো কি করে।
_ ও আপনি সত্যি যানেন না।
_ না আমি জানি না।
রাইফা কিছুক্ষন আহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে আহাদ কিছুতেই রাইফার চোখে চোখ রাখতে পারছে না।
তার নিজের কাছে নিজেকে আজ বড্ড অপরাধী লাগছে।রাইফা আবার আহাদ কে প্রশ্ন করে _আপনি সত্যি সেই লোক না।
_ না (অস্পষ্ট সরে)
আহাদের কথা টি উওর দেওয়ার দেরি কিন্তু রাইফার ফুলের টবের সাইড থেকে ছুরি হাতে নেওয়ার দেরি হয় না।সে যেন এটারি প্রস্তুত ছিল।রাইফা এবার আহাদের দিকে তাকিয়ে বাম হাতে হালকা টান দেয়, যার ফলে রাইফার হাত থেকে রক্ত নিচে গড়িয়ে পড়ে। রাইফার কান্ড দেখে আহাদ ঘাবড়ে যায়।আহাদের মুখ থেকে অজান্ততে কথা গুলো বেরিয়ে যায়।
_মনপাখি এটা তুমি কি করলে।
আহাদ নিযের কথায় আবার নিজেই ফেসে যায়।
_কি হলো এবারো অস্বিকার করবেন আপনি সেই লোক নন।আমায় মনপাখি বলে সম্মোদন করে সেই অচেনা লোকটি তবে আপনার মুখে এই নামটি কেন আহাদ ভাই।(ছলছল চোখে)
আহাদ আর কোন কথা না বলে রাইফার হাত থেকে ছুরিটি ছুড়ে ফেলে দেয়।আহাদ রাইফার হাত ধরলে রাইফা ছিটকে দূরে সরে যায়।
_খবরদার আমায় ছুবেন না।আপনি একটা মিথ্যা বাদী লোক।আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন আপনি।
আহাদ রাইফার কথা না শুনে উলটো কোলে তুলে নেয়।রাইফা ছোটা ছুটি করলে আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ আমার পরিচয় আমার আসল রুপ যখন পেয়েই গেছো তখন এই রুপের তাপটাও তোমাকে সহ্য করতে হবে মনপাখি।তুমি শুধু আমার মনপাখি।আর কারো খাচায় তোমায় তো আমি সহ্য করবো না।তোমার নীড় হবে আহাদের বুকের মাঝে।(রাইফাকে বুকে চাপে ধরে)
আহাদের কথা শুনে রাইফার চোখ বড় হয়ে যায়।
_তোমার সাহস কি করে হলো হাত কাটার। তোমার শরীরের একটা চিমটি কাটতেও আমার অনুমতি নেবে।মনে রেখ তোমার উপর তোমার এখন মাএ ৩০% অধিকার আছে আর বাকি ৭০% আমার। তাই আমার কথা মতো চলতে হবে তোমায়।
আহাদের কথা গুলো রাইফার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।সে শুধু আহাদের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বলে,
_ আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা করবো না কখনো না।
চলবে……।