আহাদ ভাইয়ের রুম থেকে বের হতেই পেছন থেকে কেউ আমাকে হেচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। হঠাৎ এমন কাজে আমি ভয় পেয়ে যাই। যার ফলে চোখমুখ কুচকে ফেলি। আমি অনুভব করি আমার মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাস পড়ছে। আছতে আছতে চোখ মেলে দেখি আহাদ ভাই আমার দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আহাদ ভাইয়ের এমন চাহনি আমার কাছে অসত্বি লাগছে। কিছুক্ষন আগে ওনার রাগ দেখে আমার জান যায় যায় অবস্থা। তবুও কিছুটা সাহস নিয়ে আহাদ ভাইকে প্রশ্ন করলাম,
“আহাদ ভাই কিছু বলবেন ”
আমার কথায় আহাদ ভাই মুখে বাকা হাসি টেনে বললো,
“বলার তো আনেক কিছুই আছে, আবার করার ও অনেক কিছু আছে ”
আহাদ ভাইয়ের কথা শুনে আমি অবাক
হয়ে গেলাম, আমার সাথে ওনার কি কথা থাকতে পারে, আবার আমর সাথে কি বা করবেন। একটু আগেই তো আমাকে রুম থেকে বের করে দিলেন তাহলে এখন আবার কি কথা বলবেন উনি। আমার ভাবনার মাঝেই আহাদ ভাই আমার মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বললেন, “কিরে কি ভাবছিস?
ওনার প্রশ্ন শুনেই উওর দিতে প্রস্তুত হয়ে গেলাম, কিছুটা ঢোক গিলে প্রশ্ন করলাম
” আমার সাথে আপনার কি কথা থাকতে পারে আহাদ ভাই,একটু আগেই তো আমার কথায় বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের করে দিলেন, এখন আবার কি বলবেন ”
আমার কথা যেন আহাদ ভাইয়ের মোটেই পছন্দ হলোনা। তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
“আমি কখন তোকে কছে টানবো, কখন দূরে সরাবো তা আমার ইচ্ছা ”
এবার আহাদ ভাই আমাকে আবাক করে দিয়ে উল্টো করে কাছে টেনে নিলেন যার কারনে আমার পিঠ গিয়ে ওনার বুকে ঠেকলো,। এমন কাজে আমার অসত্বি লাগছিলো। কিন্তু আহাদ ভাইয়ের সে দিকে কোন খেয়াল নেই। তিনি আমার চুলের ঘ্রান নিতেই ব্যস্ত।
এবার উনি ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন
“কি শ্যাম্পু ব্যাবহার করিসরে তুই, কি সুন্দর ঘ্রান, নাম বলতো আমার বউ এর জন্য নেব।
আহাদ ভাইয়ের এমন কথায় আমি চরম মাএার বিরক্ত। তাই ওনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে লাগলাম
কিন্তু আহাদ ভাইয়ের শক্তির সাথে আমি পেরে উঠলাম না। এবার আহাদ ভাই আমার কানে কছে ফিসফিস করে বললেন
” এখনো অনেক হিসাব বাকি আছে রাইফা, আমার বিবশময় প্রতিটি দিন, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ডের হিসাব বাকি। সবেতো শুরু রাইফা ”
এ কথা বলেই আহাদ ভাই আমাকে রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন। আহাদ ভাইয়ের আচরন আমার মাথায় ডুকছেনা। কি বুঝাতে চাইছে আহাদ ভাই।
এদিকে, আহাদ নিজের চুল টেনে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। আর মনে মনে বলছে
“গত কয়েক বছর অনেক লাফায়েছো রাইফা। তোমার ভেবে আমার প্রতিটি দিন বিবশ হয়ে কেটেছে আর তুমি আমার আবেগ, অনুভূতি উপেক্ষা করে অন্য ছেলেদের নিয়ে প্রেম প্রেম খেলছো”।
আহাদ নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। দুপুর সময় তাই সূর্যের তেজ প্রখর। আহাদদের বাড়ির পাশেই আরেকটা বিলিং।যা মূলত রাইফাদের । তাই রাইফার বারান্দার সবকিছু খুব সহযে দেখা যায়। আহাদ দেখলো রাইফার বারান্দায় খাচায় একটি টিয়া পাখি, আর পুরো বারান্দা জুড়ে বিভিন্ন ফুল গাছ লাগানো। যাতে ফুটে আছে হরেক রং এর ফুল।
“তবে তোমার ডানা এবার কাটবো রাইফা, তোমার যে একটু বেশিই উড়া হয়ে গেছে। তোমার অবস্থা হবে তোমার পোষা টিয়ার মতো। তোমার ঠাকানা হবে শুধু আমার রাজ্যে। (বাকা হাসি দিয়ে)”
রাইফা আহাদের রুম থেকে বেরিয়ে আনমনে হাটছে আর ভাবছে, আহাদের কোন কাজই রাইফার মাথায় ঢুকছে না। আহাদ কি তবে আগের সব কথা মনে রেখেছে। রাইফা আবার ভাবতে থাকে কিছুক্ষন আগের কথা।
?
আজ চৌধুরী বাড়ি এবং মির্জা বাড়ি জুড়ে খুশির আমেজ। চৌধুরী বাড়ির পাশেই মির্জা বাড়ি। আহাদ চৌধুরী বাড়ির ছেলে। আহাদের বাবার নাম ওয়াহিদ চৌধুরী, মায়ের নাম হাবিবা চৌধুরী, তাদের সাথে থাকে তাদের দাদিমা জামিলা চৌধুরী, আর আহাদের ছোট ভাই সামাদ চৌধুরী।
আহাদ দীর্ঘ দশ বছর পর দেশে।আসছে তাই সবার মাঝেই আনন্দ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে মির্জা পরিবারে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রাইফা মির্জা, ছোট মেয়ে রাইসা মির্জা, রাইফার বাবার নাম জহির মির্জা রাইফার মায়ের নাম ডালিয়া মির্জা।
রাইফা দেখতে ফর্সা,চঞ্চল,
অন্যদিকে আহাদ দেখতে ফর্সা, ভদ্র, শান্ত – শিষ্ট,তবে ভিষণ রাগি। আহাদ us থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছে। এবার সে বাবার ব্যবসার দেখাশুনা করবে। রাইফার যখন বার বছর বয়স তখন আহাদের পনের বছর বয়স। রাইফা আর আহাদের সবসময় ঝগড়া লেগে থাকতো। আহাদ সব সময় চাইতো রাইফা যেন অন্য ছেলেদের থেকে দুরে থাকে কিন্তু রাইফা নিজের কথামত চলতে পছন্দ করতো। অন্যর হস্ত্যক্ষেপ তার পছন্দ ছিল না। যার কারনে তাদের ঝামেলা লেগেই থাকতো।
একদিন আহাদের বাবা সিধান্ত নে আহাদ কে তার ছোট চাচার কাছে us পাঠাবে পড়া লেখা শেষ করে তবে আসবে আহাদের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাকে জেতে হয় us। এদিকে রাইফা হয়ে যায় স্বাধীন।
এই দীর্ঘ সময় রাইফার সাথে আহাদের কোন যোগাযোগ হয়নি। তবে আহাদ প্রতিদিন রাইফার খোঁজ খবর রাখতো।
কিন্তু রাইফা কি খোঁজে খবর রাখতো?
আমার_মনপাখি পর্ব ঃ১
#পলি_আনান
(ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।)